২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

দিল্লিতে দলিত শিশুকে ধর্ষণ করে জ্বালিয়ে দেয়ায় পুরোহিত গ্রেফতার

- ছবি- সংগৃহীত

ভারতের রাজধানী দিল্লিতে মাত্র নয় বছরের মেয়েকে শ্মশানঘাটে ধর্ষণ করার পর ধর্ষণকারীরাই তার জীবন্ত পুড়িয়ে হত্যা করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। নিহতের পরিবার ও এলাকার বাসিন্দারা এই ঘটনার প্রতিবাদে বিক্ষোভ শুরু করলে ঘটনার প্রায় ৪০ ঘণ্টা পর দিল্লি পুলিশ অভিযুক্ত একজন পুরোহিত ও তার তিনজন সঙ্গীকে গ্রেফতার করেছে।

দিল্লির সরকারও প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ওই ঘটনার দ্রুত বিচার নিশ্চিত করা হবে। তবে বিভিন্ন দলিত সংগঠন বলছে, ধর্ষণের শিকার মেয়েটি যেহেতু দলিত বা নিম্নবর্ণীয় সমাজের, তাই এই ঘৃণ্য অপরাধের বিরুদ্ধে তেমন জোরালো প্রতিবাদ লক্ষ্য করা যাচ্ছে না।

দক্ষিণ-পশ্চিম দিল্লিতে ক্যান্টনমেন্ট এলাকার পাশ ঘেঁষেই রয়েছে একটি বাল্মিকী বস্তি, যে সম্প্রদায়ের লোকজন মূলত পরিচ্ছন্নকর্মী হিসেবেই জীবন ধারণ করেন।

যে নৃশংস ঘটনার বিরুদ্ধে ওই এলাকার বাসিন্দারা সোমবার থেকে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেছেন, সেটি ঘটেছিল তার আগের দিন রাতে।

নিহত মেয়ের মা বলেন, আমরা সেদিন গ্রামে গিয়েছিলাম। বাচ্চা শ্মশানঘাটের ওয়াটার কুলার থেকে খাবার পানি নিতে গিয়েছিল। শ্মশানের মন্দিরের পুরোহিত আমাদের ফোন করে হঠাৎ খবর দেয়, কুলার থেকে পানি নিতে গিয়ে আমাদের মেয়ে নাকি বিদ্যুতায়িত হয়ে মারা গেছে। ওই রাতেই তাড়াহুড়ো করে ওর সৎকার করে দেয়া হয়। কিন্তু আমাদের বিশ্বাস পন্ডিতজি (পুরোহিত) আর ওর দলবল আমাদের মেয়েকে জীবন্ত পুড়িয়ে দিয়েছে।

রাধেশ্যাম নামে মূল অভিযুক্ত ওই পুরোহিতকে সোমবার রাতেই পুলিশ গ্রেফতার করেছে। সাথে আটক করা হয়েছে লক্ষ্মীনারায়ণ, কুলদীপ ও সালিম নামে তার তিন সঙ্গীকেও।

তাদের বিরুদ্ধে ধর্ষণ, হত্যা, ভয় দেখানো ও প্রমাণ লোপাট করাসহ বিভিন্ন অভিযোগ আনা হয়েছে।

পুরানা নাঙ্গাল নামে ওই এলাকায় অবশ্য এখনো পুলিশের বিরুদ্ধে অসন্তোষ তীব্র। অনেকেই বলছিলেন, চারজন অভিযুক্তকে পুলিশই জিপে করে সরিয়ে নিয়ে গিয়েছে। তারা গরিব ও নিম্ন সম্প্রদায়ের বলেই বিচার পাচ্ছেন না।

কেউ কেউ আবার জানাচ্ছেন, নিহত মেয়ের মা-বাবাকে থানার ভেতরেই উল্টো মারধর করা হয়েছিল। আর পুলিশের মদতেই ওই শ্মশানঘাটে বহুদিন ধরে চলছিল জুয়া, মদ্যপান ও বিভিন্ন অসামাজিক কাজকর্মের আখড়া।

এই মুহূর্তে অভিযুক্তদের মৃত্যুদণ্ড ছাড়া তারা যেকোনো শাস্তিতেই সন্তুষ্ট হবেন না বলেও দলিত সম্প্রদায়ের লোকেরা তা স্পষ্ট ঘোষণা দিয়েছেন।

পুরোহিত ও তার সঙ্গীদের ফাঁসির দাবিতে পুরানা নাঙ্গাল সরব হলেও দিল্লি সরকারের ক্যাবিনেট মন্ত্রী রাজেন্দ্র গৌতম ওই বস্তিতে গিয়ে কথা দিয়ে এসেছেন, দোষীদের অবশ্যই উপযুক্ত শাস্তি হবে। গৌতম বলেন, দেশের রাজধানীতে এমন ঘটনা ভাবাই যায় না। উত্তরপ্রদেশের দেহাত অঞ্চলে শোনা যায় ভিক্টিমের পরিবারকেই ভয় দেখিয়ে বয়ান বদলাতে বাধ্য করা হয়। কিন্তু দিল্লিতেও কেন এ জিনিস ঘটবে? যদিও দিল্লিতে আইনশৃঙ্খলা আর পুলিশ রাজ্য সরকারের হাতে নেই। তবু নির্দিষ্ট সময়ের ভেতর দোষীরা যাতে সাজা পায় আমরা তা নিশ্চিত করব।

নিম্নবর্ণের বলেই জোরালো প্রতিবাদ নেই
তবে দলিত সংগঠনগুলো এই প্রশ্নও তুলছে যে এরকম পাশবিক ঘটনাতেও দিল্লির প্রতিবাদ স্তিমিত কেন। ভীম আর্মির নেতা হিমাংশু বাল্মিকী বিবিসি বাংলাকে বলেন, এদেশে একটা গরু মরলেও মিডিয়া থেকে আরএসএস হইচই শুরু করে দেয়। কিন্তু এখন তারা চুপ কেন? অভিযুক্তরা মুসলিম হলে বিজেপি এতক্ষণে কী করত ভাবুন তো? ১০ মাইল দূরে পার্লামেন্টের অধিবেশন চলছে। অথচ কারো মুখে একটা আওয়াজ পর্যন্ত নেই।

তিনি আরো বলেন, ‘ওই মেয়েটি দলিত না-হলে সব বড় দলের নেতাদের তো এখানে এসে ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করার হিড়িক পড়ে যেত! আমাদের বস্তিতে আসতে ওনাদের কি নাকে দুর্গন্ধ লাগে?

প্রায় নয় বছর আগে দিল্লিতে নির্ভয়াকাণ্ড নামে পরিচিত ধর্ষণ মামলায় নিহত মেয়েটি যে উচ্চবর্ণের ছিল ও গোটা দিল্লি যে প্রায় সাথে সাথেই প্রতিবাদে মুখর হয়েছিল, দলিত নেতারা তাও মনে করিয়ে দিচ্ছেন।

সূত্র : বিবিসি


আরো সংবাদ



premium cement