২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

দিলীপের কারণে বিজেপি ছেড়েছেন বাবুল?

দিলীপ ও বাবুল - ছবি : সংগৃহীত

ভারতের ২০১৪ লোকসভা নির্বাচনে ক্ষমতাসীন বিজেপির চমক ছিল আসানসোল। ডাকসাইটে তৃণমূল প্রার্থী দোলা সেনকে হারিয়ে প্রবল বিস্ময় সৃষ্টি করেছিলেন বাবুল সুপ্রিয়। প্রথমবার ভোটে দাঁড়িয়ে এমপি এবং কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। সেই বাবুল শনিবার লিখলেন, ‘চললাম’। লিখলেন এমপি পদ থেকেও সরে যাওয়ার কথা, লিখলেন দিল্লির সরকারি বাংলো ছেড়ে দেয়ার কথা। তিনি নিজেই মনে করিয়ে দিলেন, রাজ্যে তখন বিজেপির মাত্র দু’জন এমপি। দার্জিলিংয়ে তবু গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার সমর্থন ছিল। আসানসোলে একা লড়তে হয়েছিল এই গায়ক থেকে রাজনীতির মঞ্চে আসা প্রার্থীকে।

কাট টু ২০১৯। পশ্চিমবঙ্গে লোকসভা নির্বাচনে অভাবনীয় সাফল্য এলো গেরুয়া শিবিরে। এক লাফে ১৮ জন এমপি। আসানসোল থেকে অভিনেত্রী মুনমুন সেনকে হারিয়ে দ্বিতীয়বার জিতে এলেন বাবুল। আবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। শনিবার যখন তিনি রাজনীতি ও এমপি পদ ছেড়ে দেয়ার কথা লিখলেন, দলের অন্দরে তখন অনেকেই বলছেন বারবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রী থাকায় অভ্যাস নষ্ট হয়েছে বাবুলের। মন্ত্রিত্ব নেই তাই তিনিও নেই। সত্যিই কি তাই? এক এক করে দেখে নেয়া যেতে পারে ইতিমধ্যেই নানান মহলে চর্চিত কারণগুলো। কেন ‘চললাম’ বলছেন বাবুল?

১) নিজের ফেসবুক পোস্টে অবশ্য দ্বিচারিতা করেননি খাতায়-কলমে এখনো আসানসোলের বিজেপি এমপি। স্বীকার করেছেন, মেনে নিয়েছেন। মন্ত্রিত্ব না থাকা তার এই সিদ্ধান্তের নেপথ্যে অন্যতম কারণ।

কিন্তু কারণ শুধু একটা নয়। যে বাবুল সুপ্রিয় রাজনীতি, কেন্দ্রীয় মন্ত্রিত্ব, গান, অভিনয় এত দিন একসাথে চালিয়ে এলেন তিনি হঠাৎ ‘চললাম’ বললেন কেন? এই প্রতিবেদন লেখার সময় পর্যন্ত বাবুল সুপ্রিয়র ফেসবুক পেজে নরেন্দ্র মোদির ছবি রয়েছে। ‘আর নয় অন্যায়’ লোগো রয়েছে। নিচের লেখাতে ও একাধিকবার প্রধানমন্ত্রীর প্রসঙ্গ এনেছেন বাবুল। মোদির প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন তাকে মন্ত্রী করার জন্য। কিন্তু ভোটের প্রচারে পশ্চিমবঙ্গে এসে যে নরেন্দ্র মোদি বলেছিলেন, ‘মুঝে বাবুল চাহিয়ে’, কোথাও কি তার প্রতি অভিমান জন্মেছে বাবুলের? খবরে আগেই প্রকাশ হয়েছিল এবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় রদবদলের আগে রীতিমতো মন্ত্রীদের পারফরম্যান্স পর্যবেক্ষণ করেছেন খোদ প্রধানমন্ত্রী। বাবুলকে মন্ত্রী না রাখার অর্থ কি কোথাও মন্ত্রী হিসেবে তার পারফরমেন্সের ঘাটতি?

২) নিজের পোস্টে বাবুলের অভিযোগ রয়েছে একাধিক রাজ্য নেতার বিরুদ্ধে। গেরুয়া শিবিরে প্রায় সবাই জানেন এবং মানেন, রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের সাথে বাবুলের সম্পর্ক ‘অম্ল মধুর’। ইতিমধ্যেই একাধিক রাজ্য নেতা বলছেন, ভোটের আগে রাজ্যে এবং দিল্লিতে নির্বাচনী বৈঠকে বাবুলের কোনো কথাই সেভাবে শোনা হয়নি। অনেক বৈঠকে তাকে ডাকাও হয়নি। পাল্টা দিলীপ শিবিরের অভিযোগ, বাবুল সুপ্রিয় উন্নাসিক। অনেক ক্ষেত্রেই তিনি নিজের মর্জি মত চলতেন, রাজ্য সভাপতির নির্দেশের তোয়াক্কা করতেন না।

৩) উঠে আসছে জিতেন্দ্র তিওয়ারি প্রসঙ্গ। অনেকেই জানেন, আসানসোল পুরসভার প্রাক্তন মেয়র এবং তৃণমূল কংগ্রেসের প্রাক্তন এই নেতাকে বিজেপিতে নেয়ার ব্যাপারে আপত্তি ছিল বাবুলের। তার এই মতামতকেও গুরুত্ব দেওয়া হয়নি দলের তরফে।

৪) শোনা যাচ্ছে টালিগঞ্জের বদলে আসানসোলের কোনো একটি কেন্দ্র থেকে বিধানসভা ভোটে লড়তে চেয়েছিলেন বাবুল। টালিগঞ্জে বড় ব্যবধানে হেরে যাওয়ার পর নিজের ঘনিষ্ঠমহলে নাকি বারবার বিষয়টি বলেছিলেন তিনি। এমনকী আদতে উত্তর কলকাতার ছেলে হওয়ায় সেখানকার কোনো আসন থেকে লড়তেও আপত্তি ছিল না তার।

৫) দলে ক্রমশ ভিড় বেড়েছে। নিজের পোস্টে বাবুল লিখেছেন, একজন চলে গেলে এখন আর দলের তেমন কোনো ক্ষতি হবে না। তবে কি তৃণমূল কংগ্রেস থেকে একের পর এক নেতার বিজেপিতে যোগ দেয়া এবং কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সঙ্গে তাদের ঘনিষ্ঠতায় গুরুত্বহীন বোধ করেছেন এই ‘সেলিব্রিটি’ এমপি?

তবে রাজনৈতিক মহলের জল্পনায় কিন্তু অন্য সম্ভাবনার কথাও শোনা যাচ্ছে। রাজ্যের শাসকদলের এক সিনিয়র নেতা, যিনি একসময় দলের থেকে দূরে সরে গেলেও সম্প্রতি ফিরে এসেছেন। যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়েই তাকে দলে ফিরিয়ে নেয়া হয়েছে। ঠাণ্ডা মাথা, বিচক্ষণ এই নেতার সাথে অনেকেরই ভালো যোগাযোগ। গুঞ্জন, বাবুলের সাথেও যোগাযোগ রয়েছে তার। কারন মাঝে কিছু দিন একই দলে ছিলেন দু’জনে। প্রশ্ন উঠেছে, আপাতত বিরতি এবং বিরতির পরে তাহলে কি নতুন ইনিংস শুরু করবেন বাবুল সুপ্রিয়? যদিও তিনি নিজে বারবার মনে করিয়ে দিচ্ছেন তার প্রিয় গানের কথা। ‘কুছ তো লোক কহেঙ্গে, লোগো কা কাম হ্যায় কহেনা...’।

সূত্র : আজকাল


আরো সংবাদ



premium cement