২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`

নদীতে ভেসে এল কয়েক ডজন লাশ, এলাকায় তীব্র করোনা আতঙ্ক

উত্তরপ্রদেশে গঙ্গাতীরে কোভিডে মৃত স্বজনের দাহ করাতে আসা দুজন আত্মীয়া। - ছবি : বিবিসি

ভারতে বিহার ও উত্তরপ্রদেশের সীমানায় গঙ্গা নদী বেয়ে সন্দেহভাজন কোভিড রোগীদের বেশ কয়েক ডজন পচা-গলা লাশ ভেসে আসার পর ওই এলাকায় তীব্র আতঙ্ক ছড়িয়েছে।

ধারণা করা হচ্ছে, নদীর উজানে গঙ্গাতীরের গ্রামবাসীরা কোভিডে মৃত পরিজনদের শেষ সৎকার না করতে পেরেই লাশগুলো নদীতে ভাসিয়ে দিয়েছেন।

বিহারের বক্সারে জেলা প্রশাসন মাত্র ১০-১২টি লাশ পাওয়ার কথা স্বীকার করলেও স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীরা কেউ কেউ দেড়-দু শ’ লাশ ভেসে এসেছে বলেও দাবি করছেন।

ভারতে কোভিডে মৃত্যুর সরকারি যে পরিসংখ্যান দেয়া হচ্ছে, আসল মৃত্যুর ঘটনা যে তার চেয়ে অনেক বেশি - এটা তারই আরেকটা প্রমাণ বলে অ্যাক্টিভিস্টরা বলছেন।

উত্তর ভারতের জীবনস্রোত যে গঙ্গা, তা উত্তরপ্রদেশ পেরিয়ে বিহারে প্রবেশ করে বক্সার জেলা দিয়ে।

সেই বক্সারের চৌসা জনপদে গঙ্গার ঘাটে সোমবার অনেকগুলো গলিত লাশ ভেসে আসার পর গোটা এলাকায় সংক্রমণের ভয় ছড়িয়ে পড়ে। বহু মানুষ আবার লাশগুলো দেখতে নদীর ধারে জড়ো হন।

স্থানীয় একজন বাসিন্দা বার্তা সংস্থা এএনআই-কে বলছিলেন, ‘চৌসা শ্মশানঘাটের অবস্থা চোখে দেখা যাচ্ছিল না। আমার ধারণা, ২০০ কি ৩০০ কোভিড সংক্রমিত লাশ নদীতে ভেসে এসেছিল।’

‘এরপরই চারিদিকে সবার মধ্যে ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ভয় ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু প্রশাসন তো কিছুই করেনি, সিইও সাহেব এসে শুধু ওপর-ওপর সব দেখে চলে গেছেন।’

‘শুধু শ্মশানের ডোমদের বলে গেছেন তোমরা সব পরিষ্কার করো, রোজ ৫০০ টাকা করে পাবে।’

তবে ঠিক কত সংখ্যক লাশ ভেসে এসেছে, তা নিয়ে প্রত্যক্ষদর্শীরাও নানা রকম পরস্পরবিরোধী বিবরণ দিচ্ছেন।

আরেকজন ব্যক্তি যেমন বলছিলেন, তিনি নিজেই ৩০-৩৫টি লাশ ঘাটে এসে ঠেকতে দেখেছেন।

তার কথায়, ‘তাদের কাউকে হয়তো জলপ্রবাহ দেয়া হয়েছিল, অর্থাৎ সৎকার না করেই লাশ গঙ্গায় ভাসিয়ে দেয়া হয়েছিল।’

‘এছাড়া নদীতে আরো যে লাশগুলো ভাসছিল, সব মিলিয়ে প্রায় এক-দেড় শ’ লাশ ছিল বলেই আমার ধারণা। আর এর সবগুলোই যে কোভিড আক্রান্ত রোগীদের লাশ ছিল, তা নিয়েও আমি নিশ্চিত,’ বলছিলেন চৌসার বাসিন্দা ওই ব্যক্তি।

তবে বিহারের রাজ্য প্রশাসন সরকারিভাবে এখনো স্বীকার করেনি লাশগুলো সব কোভিড রোগীদেরই ছিল।

কিন্তু এগুলো যে সব পাশের রাজ্য থেকেই ভেসে এসেছে, সে কথা তারা জোর দিয়েই বলছেন।

বিকেলের দিকে চৌসা শ্মশানঘাটে আসেন বক্সা সদরের প্রশাসনিক কর্মকর্তা কে কে উপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘এগুলো সবই কোভিড-জনিত মৃত্যু তা কিন্তু বলা যাবে না।’

সাংবাদিকদের উদ্দেশে তিনি আরো বলেন, ‘গঙ্গায় যে আপনারা ১০-১২টা লাশ ভাসতে দেখছেন সেগুলো সবই কিন্তু অনেক দূর থেকে প্রবাহিত হয়ে এখানে এসেছে।’

‘এখন এটা অনুসন্ধানের বিষয় যে লাশগুলো বারাণসী না এলাহাবাদ কোথা থেকে আসছে ... তবে এগুলো যে পাঁচ-সাতদিন ধরে নদীতে ভাসছে তাতে কোনো সন্দেহ নেই, কারণ লাশগুলো সবই ভীষণভাবে ফুলে গেছে।’

বস্তুত গোটা উত্তরপ্রদেশেই শ্মশানঘাটে বা কবরস্তানে কোভিডে মৃতদের অন্ত্যেষ্টি করতে তাদের পরিজনরা যে হিমশিম খাচ্ছেন, বিবিসি বাংলাকে সে কথাই বলছিলেন ওই রাজ্যের সমাজকর্মী আফরিন ফাতিমা।

ফাতিমা এলাহাবাদের বাসিন্দা, তার বাড়ির কাছেই শহরের সবচেয়ে বড় কবরস্থান কালা ডান্ডা।

তার অভিজ্ঞতা বলছে, ‘এখন প্রতিদিন কোভিড রোগীদের অন্তত ১৫-২০টি লাশ সেখানে দাফন করার জন্য আনা হচ্ছে। জায়গা না-পেয়ে অনেককে ফিরেও যেতে হচ্ছে বা অন্যত্র জায়গা খুঁজতে হচ্ছে।’

‘এলাহাবাদের শ্মশানঘাটগুলোতেও হিন্দুদের লাশ নিয়ে একই ধরনের ছবি, ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হচ্ছে মৃতদের পরিজনদের।’

গ্রাম থেকে যারা আসছেন, চিতার কাঠ জোগাড় করতে না-পেরে কিংবা অন্ত্যেষ্টির চড়া খরচ না দিতে পেরে তারা বাধ্য হয়ে মৃত স্বজনের দেহ গঙ্গায় ভাসিয়ে দিচ্ছেন - রাজ্যের নানা প্রান্ত থেকে এমন খবরও আসছে।

এরকমই কয়েকটি লাশ সম্ভবত শত শত মাইল ভেসে বক্সারের ঘাটে গিয়ে ঠেকেছে, কোভিডে দৈনিক মৃত্যুর সরকারি হিসেব যার নাগালই পায়নি!

সূত্র : বিবিসি


আরো সংবাদ



premium cement