১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

আসামে বিজেপির নতুন মুখ্যমন্ত্রী, এনআরসিও কি নতুন করে?

এনআরসিতে নাম উঠেছে কি না, তা দেখতে আসামের মোরিগাঁওতে মানুষের লাইন। - ছবি : বিবিসি

ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য আসামে বিজেপি টানা দ্বিতীয়বার বিধানসভা নির্বাচনে জেতার পর সোমবার রাজ্যের নতুন মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন হিমন্ত বিশ্বশর্মা। মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরেই তিনি জানান, তার সরকার জাতীয় নাগরিকপঞ্জী বা এনআরসি তালিকা ‘রিভেরিফাই’ করবে।

নতুন মুখ্যমন্ত্রী প্রথম দিনেই আরো বলেছেন, তাদের লক্ষ্য হল আসামের বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে যাদের নাম এনআরসি-তে উঠেছে তাদের অন্তত কুড়ি শতাংশ নাম রিভেরিফাই করা বা নতুন করে যাচাই-বাছাই করা।

আসামের এই জেলাগুলো সবই মুসলিম-অধ্যুষিত। এছাড়া রাজ্যে সীমান্তবর্তী নয়, এমন জেলাগুলোতেও তালিকায় ওঠা অন্তত ১০ শতাংশ নাম নতুন করে পরীক্ষা করার লক্ষ্যমাত্রা স্থির করেছে আসাম সরকার।

প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালের ৩১ আগস্ট এনআরসির যে চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশিত হয়েছিল তাতে আসামের বাসিন্দা অন্তত ১৯ লাখ মানুষের নাম বাদ পড়ে। আশঙ্কা দেখা দেয়, এই বিপুল সংখ্যক মানুষ ‘রাষ্ট্রহীন’ নাগরিকে পরিণত হবেন।

তবে তখন স্থানীয় ও জাতীয় স্তরের গণমাধ্যমে এটাও রিপোর্ট করা হয়েছিল যে বাদ-পড়া এই এই ১৯ লাখ মানুষের মধ্যে বেশির ভাগই হিন্দু, তাদের তুলনায় মুসলিমদের সংখ্যা অনেক কম।

তবে এ বিষয়ে সরকারিভাবে কোনো পরিসংখ্যান প্রকাশ করা হয়নি।

যেকোনো কারণেই হোক, আসামে ক্ষমতাসীন বিজেপি এনআরসির চূড়ান্ত তালিকাকে ওই আকারে মেনে নিতে চায়নি।

এনআরসির কট্টর সমর্থক হিমন্ত
এনআরসির দাবিতে আগাগোড়া সোচ্চার হিন্দুত্ববাদী ওই শক্তিটি তখন থেকেই প্রকাশিত এনআরসিতে ‘সংশোধন’ আনার দাবি জানিয়ে আসছে।

আসামে নতুন করে এনআরসি প্রক্রিয়া আবার চালু করার দাবিতে বিজেপির যে নেতা বরাবর সবচেয়ে সরব ছিলেন, তিনি হিমন্ত বিশ্বশর্মা। আর এখন তিনিই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর পদে।

গত পাঁচ বছর ধরে বিজেপি নেতা সর্বানন্দ সোনোওয়াল আসামের মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করলেও তার ক্যাবিনেটে সবচেয়ে প্রভাবশালী সদস্যের নাম ছিল হিমন্ত বিশ্বশর্মা।

কোভিড মহামারী থেকে বন্যা নিয়ন্ত্রণ, রাজ্যের প্রায় প্রতিটি ব্যাপারেই মুখ্যমন্ত্রীরও আগে মুখ খুলতে দেখা যেত হিমন্ত বিশ্বশর্মাকে।

বস্তুত রাজ্য পরিচালনার প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে তখনকার অর্থমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মাই ছিলেন কার্যত শেষ কথা।

শুধু আসামেই নয়, উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বাকি রাজ্যগুলোতেও বিজেপির প্রভাব বিস্তারের দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল হিমন্ত বিশ্বশর্মাকে, যে কাজ তিনি সফলভাবে সামলেছেন।

ত্রিপুরা, মণিপুর, অরুণাচল প্রদেশ বা মেঘালয়ে বিজেপি বা তার জোটসঙ্গীদের নিয়ে সরকার গঠনেও বড় ভূমিকা ছিল তার।

এ কারণেই যদিও কোনো মুখ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি রাজ্য ধরে রাখতে পারলে সচরাচর নেতৃত্বে বদল করা হয় না, আসামের ক্ষেত্রে তার ব্যতিক্রম করা হলো।

সর্বানন্দ সোনোওয়ালকে সরিয়ে হিমন্ত বিশ্বশর্মাকে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী করার সিদ্ধান্তে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব তো বটেই, সায় দিয়েছেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও।

শপথ গ্রহণের ঠিক পর পরই তাকে টুইটারে অভিনন্দনও জানিয়েছেন মোদি।

গোড়া থেকে আবার শুরু এনআরসি?
এহেন হিমন্ত বিশ্বশর্মা মুখ্যমন্ত্রীর পদে আসার পর রাজ্যে নতুন করে এনআরসি চালু করার প্রয়াস গতি পাবে বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা।

আসামের শিলচরে অধ্যাপক ও ভাষ্যকার জয়দীপ বিশ্বাস বিবিসিকে বলছিলেন, “আসলে বিজেপি চায় এনআরসি নিয়ে একটা ‘ডি নোভো এক্সারসাইজ’, অর্থাৎ একেবারে গোড়া থেকে একেবারে সব কেঁচে গন্ডূষ করতে। হিমন্ত বিশ্বশর্মা যে সেটাই করতে চাইবেন তাতে কোনও সন্দেহ নেই।”

নতুন করে এনআরসি অভিযান শুরু করার জন্য আসাম সরকারের পিটিশন এই মুহূর্তে সুপ্রিম কোর্টে বিবেচনাধীন আছে।

হিমন্ত বিশ্বশর্মার সরকার এই ব্যাপারে শীর্ষ আদালতকে তাগাদা দিতে শুরু করবে বলেও অধ্যাপক বিশ্বাস মনে করছেন।

’আসামে যে বিজেপি জোট আবার জিতে ক্ষমতায় এলো, এটাকে এনআরসি নিয়ে তারা তাদের অবস্থানের এনডোর্সমেন্ট বলেই মনে করছে।’

‘মানুষের রায় পাওয়া গেছে, অতএব বিজেপি আবার যে এনআরসি নিয়ে ঝাঁপাবে তা তো বোঝাই যাচ্ছে,’ বলছিলেন জয়দীপ বিশ্বাস।

আসামের নির্বাচনের আগে বিজেপির প্রকাশিত ইশতেহারেও বলা হয়েছিল, তারা রাজ্যে ‘রিভাইজড’ বা ‘সংশোধিত’ এনআরসি আনতে চায়।

সেই ইশতেহার প্রণয়নেরও প্রধান রূপকার ছিলেন হিমন্ত বিশ্বশর্মা, যিনি আজ মুখ্যমন্ত্রীর পদে আসীন।

আসামে নতুন সরকারের দায়িত্ব নিয়েই যিনি বুঝিয়ে দিয়েছেন – যতই এনআরসির ‘চূড়ান্ত তালিকা’ প্রকাশিত হোক, সেটা তাদের কাছে কোনো ‘ক্লোজড চ্যাপ্টার’ নয়।

সূত্র : বিবিসি


আরো সংবাদ



premium cement