২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ভারতে টিকার জন্য হাহাকারের মধ্যে ‘টিকা উৎসব’

ভারতে টিকার জন্য হাহাকারের মধ্যে ‘টিকা উৎসব’ - ছবি- সংগৃহীত

ভারতজুড়ে করোনাভাইরাসের টিকার জন্য হাহাকার দেখা দিয়েছে। দ্রুত কোনো সমাধানের আশাও দেখছেন না দেশটির স্বাস্থ্যকর্মকর্তরা। ভারতের টিকা উৎপাদনকারী কোম্পানি সেরাম ইনস্টিটিউট ও ভারত বায়োটেক তাদের দুই টিকা- কোভিশিল্ড ও কোভ্যাক্সিনের উৎপাদন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিলেও আগামী এক-দেড় মাসের আগে এর সুফল পাওয়া সম্ভব নয়। এই পরিস্থিতিতে অন্য প্রতিষেধকগুলো যত দিন না বাজারে আসছে, তত দিন করোনারভাইরাসের প্রতিষেধক বা টিকার ঘাটতি সামগ্রিকভাবে মেটানো কঠিন বলেই মত দেশটির বিশেষজ্ঞদের।

করোনার টিকার এই সঙ্কটকালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ডাক দিয়েছেন ১১-১৪ এপ্রিল চার দিন ‘টিকা উৎসব’ উদযাপন করার জন্য। শনিবার রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীসহ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সাথে ওয়েবিনার আলোচনায় তিনি এ উৎসব পালনের ডাক দেন। প্রধানমন্ত্রী মোদির ঘোষণা অনুযায়ী, রোববার ভারতে চার দিনের টিকা উৎসব শুরু হচ্ছে। তকে যেখানে টিকা পাওয়াটাই দুষ্কর, সেখানে এ উৎসব কতটা সফল হবে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে খোদ ভারতেই।

প্রশ্ন উঠেছে নরেন্দ্র মোদির কেন্দ্রীয় সরকারের টিকা নীতি নিয়েও। শুরু থেকেই করোনার প্রতিষেধক বণ্টনের প্রশ্নে কেন্দ্রীয়ভাবে নিয়ন্ত্রণের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল নরেন্দ্র মোদির সরকার। রাজ্যগুলোকে খোলা বাজার থেকে প্রতিষেধক কিনতে দেয়া তো দূরে থাক, কোন রাজ্যকে কত প্রতিষেধক দেয়া হবে, এ সিদ্ধান্তও নিয়েছে দেশটির কেন্দ্রীয় সরকার। ফলে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই রাজ্যের দাবিকে উপেক্ষা করার পাশাপাশি অভিযোগ উঠেছে স্বজন ও দলীয় করণেরও। বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলোকে বেশি প্রতিষেধক দেয়ার অভিযোগ আছে শুরু থেকেই।

মহারাষ্ট্রের চেয়ে গুজরাটের জনসংখ্যা অর্ধেক হওয়া সত্ত্বেও দুই রাজ্যকেই সমসংখ্যক প্রতিষেধক দেয়া হয়েছে। এ নিয়ে মহারাষ্ট্রের স্বাস্থ্যমন্ত্রী রাজেশ টোপে কঠোরভাবে প্রতিবাদ জানিয়েছেন। একই অভিযোগ কংগ্রেস শাসিত ছত্তীসগঢ়ের। প্রতিষেধক কুক্ষিগত করে রাখার কেন্দ্রীয় নীতির কারণে পরিস্থিতি আরো ঘোরালো হয়েছে বলেই মত অনেকের। রাজ্যগুলোকে খোলা বাজার থেকে প্রতিষেধক কেনার সুযোগ দেয়া উচিত ছিল বলে বিশেষজ্ঞদের কেউ কেউ মত দিয়েছে।

এ দিকে শনিবার আগের সব রেকর্ড ভেঙে ভারতে এক লাখ ৪৫ হাজার ৩৮৪ জন করোনায় নতুন আক্রান্ত হয়েছে। একই সময়ে মারা গেছে ৭৯৪ জন। দেশটিতে সবচেয়ে খারাপ অবস্থা মহারাষ্ট্র রাজ্যে। এই পরিস্থিতিতে টিকার মাধ্যমে করোনার সংক্রমণ রুখতে ১১ থেকে ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত ‘টিকা উৎসব’ উৎযাপনের ডাক দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।

কিন্তু টিকার অভাবে যখন অধিকাংশ বেসরকারি টিকাকেন্দ্র বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, সেখানে ‘টিকা উৎসব’ হবে কী দিয়ে? এ প্রশ্ন তুলেছেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবাল। টিকার সঙ্কট নিয়ে সরব কংগ্রেসশাসিত রাজ্যগুলোর মুখ্যমন্ত্রী ও রাজনৈতিক নেতারা। যদিও কেন্দ্রী স্বাস্থ্যমন্ত্রী শনিবার জানিয়েছেন, এ মুহূর্তে ৪০ লাখের বেশি টিকা বিভিন্ন রাজ্যে পাঠানোর পর্যায়ে রয়েছে। যা দিয়ে অন্তত আগামী ১০ দিনের টিকাদান চলে যাবে। কিন্তু তাতে সামগ্রিক চিত্র যে বিশেষ বদলাবে না, তা স্বীকার করেছেন দেশটির স্বাস্থ্যকর্মকর্তারা। তারা বলছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে বাজারে তৃতীয় বা চতুর্থ কোনো টিকা না আসা পর্যন্ত বর্তমান ঘাটতি মেটানো কার্যত অসম্ভব।

তবে টিকার ঘাটতি মেটাতে উৎপাদন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সেরাম ইনস্টিটিউট। অক্সফোর্ড–অ্যাস্ট্রাজ়েনেকা সংস্থার তৈরি কোভিশিল্ড টিকা বর্তমানে প্রতি মাসে ছয়-সাত কোটি উৎপাদন করে সেরাম। যা বাড়িয়ে ১০ কোটি করার লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে। যদিও এ জন্য যে বিনিয়োগ প্রয়োজন তা কোম্পানিটি সংগ্রহ করতে পারেনি বলে দু’দিন আগে জানিয়েছিল।

আর এত দিন পরে উৎপাদন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়ায় সেরামের সমালোচনা করেছেন এমসের ডিরেক্টর রণদীপ গুলেরিয়া। তিনি বলেন, ‘দেশে ও বিদেশে যে পরিমাণ টিকার চাহিদা বাড়বে, তা বোঝা কোনো রকেট সায়েন্স নয়।’ অর্থের অভাবে উৎপাদনের কাজ ব্যাহত হচ্ছে বলে সেরামের অভিযোগ প্রসঙ্গে গুলেরিয়া বলেন, ‘বিশ্ব যখন টিকা চাইছে, তখন আমার মতে, অসংখ্য বিনিয়োগকারী সাহায্য করতে বসে রয়েছেন।’ উৎপাদন বাড়াচ্ছে ভারত বায়োটেকও। আগামী মাস থেকে এক কোটি ডোজ টিকা তৈরির লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে তারা।

সূত্র : এনডিটিভি ও আনন্দবাজার পত্রিকা


আরো সংবাদ



premium cement