১৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৪ বৈশাখ ১৪৩১, ০৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ভারতের সাথে বাণিজ্যের সিদ্ধান্ত পাল্টালো পাকিস্তান

শুল্কমুক্ত তুলা আমদানির দাবি জানিয়েছে পাকিস্তানের টেক্সটাইল শিল্প - ছবি : এএফপি

ভারত থেকে চিনি ও তুলা আমদানির যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল পাকিস্তান, তা পরিবর্তন করা হয়েছে। কাশ্মির ইস্যুতে তেমন কোনো অগ্রগতি না হওয়ার মধ্যেই ভারতের সাথে বাণিজ্য শুরু করার সিদ্ধান্ত নেয়ার পর পাকিস্তান সরকার তুমুল সমালোচনার মুখে পড়ে এবং আমদানি বাণিজ্য স্থগিত করে।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে সুস্থ হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান আবার কাজে ফিরেছেন। বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন তিনি। ওই বৈঠকে আলোচনা করা হয় ভারত থেকে চিনি ও তুলা আমদানি করা হবে কিনা। পাকিস্তানের বিরোধীদল এবং কাশ্মিরি জনগণের পক্ষ থেকে কঠোর সমালোচনা সৃষ্টির পর কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা ভারতের সাথে বাণিজ্যের সিদ্ধান্ত স্থগিত করে।

দুই দেশের সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকার পর ৩১ মার্চ পাকিস্তানের অর্থমন্ত্রী আবারো আমদানি শুরুর ঘোষণা দিলেও বেঁকে বসে মন্ত্রিসভা। এক দিনের ব্যবধানে আমদানির সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে ইসলামাবাদের পক্ষ থেকে বলা হয়, কাশ্মির ইস্যুর সমাধান না হওয়া পর্যন্ত ভারতের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক হবে না। কাশ্মির পরিস্থিতির অগ্রগতি ছাড়া ভারতের সাথে বাণিজ্য শুরুর বিরুদ্ধে জনগণের বিরাট একটি অংশ।

দীর্ঘদিন ধরে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার উত্তেজনার কেন্দ্রবিন্দু হলো এই কাশ্মির ইস্যু। ২০১৯ সালের আগস্ট মাসে ভারত সরকার কাশ্মিরের স্বায়ত্তশাসন বাতিল করার পর পাকিস্তান দিল্লির সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক হ্রাস করে। ভারতের ওই পদক্ষেপ কাশ্মির পরিস্থিতি জটিল করেছে বলে পর্যবেক্ষক মহল মনে করে।

গত বুধবার পাকিস্তানি অর্থমন্ত্রী হাম্মাদ আজহার এক সংবাদ সম্মেলনে ঘোষণা দিয়েছিলেন, ভারতের সাথে বাণিজ্যিক সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠার অংশ হিসেবে চিনি ও তুলা আমদানি ফের শুরু করবে তার দেশ। তিনি বলেছিলেন, পাকিস্তানের অর্থনৈতিক সমন্বয় কমিটি (ইসিসি) বেসরকারিভাবে ভারত থেকে পাঁচ লাখ টন চিনি আমদানির অনুমতি দিয়েছে।

এই ঘোষণার ২৪ ঘণ্টা যেতে না যেতেই বেঁকে বসে দেশটির মন্ত্রিসভা। বৃহস্পতিবার মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মাহমুদ কোরেশি ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ রশিদ জানান, ভারত জম্মু-কাশ্মিরের বিশেষ মর্যাদা ফিরিয়ে না দিলে তাদের পক্ষে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক স্বাভাবিক করা সম্ভব নয়।

জানা গেছে, বৈঠকে শেখ রশিদ, মাহমুদ কোরেশি, মানবাধিকার মন্ত্রী শিরিন মাজারিসহ পাকিস্তানের একাধিক প্রভাবশালী মন্ত্রী ভারত থেকে তুলা-চিনি আমদানির বিরোধিতা করায় বিষয়টি স্থগিত হয়ে যায়।

ভারতশাসিত কাশ্মিরের বিশেষ মর্যাদা বাতিলের জেরে ২০১৯ সালের আগস্ট থেকে চিরবৈরী ভারত-পাকিস্তানের সম্পর্কে আরো অবনতি হয়। সেসময় ইসলামাবাদে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনারকে বরখাস্ত করে পাকিস্তান। ভারতের সাথে সব ধরনের বাণিজ্য, রেল ও বিমান চলাচলও বন্ধ করে দেয় তারা। তবে করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে গত বছরের মে মাসে ভারত থেকে ওষুধ ও কাঁচামাল আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে ইমরান খানের সরকার।

পাকিস্তান অ্যাপারেল ফোরামের চেয়ারম্যান জাভেদ বিলওয়ানির মতে, ভারত থেকে তুলা আমদানির অনুমতি ছিল পুরোপুরি বাস্তবসম্মত সিদ্ধান্ত এবং এই মুহূর্তে তাদের জন্য এটাই প্রয়োজন। সেই অনুমতি বাতিলের সিদ্ধান্ত দ্রুততম সময়ে পুনর্বিবেচনার দাবি জানিয়েছেন তিনি।

ভারত থেকে তুলা আমদানির সিদ্ধান্ত বাতিলের পরপরই এর দাম বেড়ে গেছে জানিয়ে বিলওয়ানি বলেন, সরকার যদি ভারত থেকে তুলা আমদানির অনুমতি না দেয় তাহলে যেন এর প্রাপ্যতা নিশ্চিত করে। এই সংকটের সমাধান না হলে পাকিস্তানের টেক্সটাইল পণ্য রফতানি ব্যাপক হারে কমে যাবে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।

সূত্র : ডন


আরো সংবাদ



premium cement