২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

মমতার সাথে নির্বাচন কমিশনের বিরোধ বাড়ছে

মমতার সাথে নির্বাচন কমিশনের বিরোধ বাড়ছে - ছবি : সংগৃহীত

ভারতের কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশন একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। তবে কমিশনের ভূমিকা নিয়ে দেশটির বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো বিভিন্ন সময় প্রশ্ন তুলেছে। অভিযোগ আছে, নির্বাচন কমিশন (ইসি) মোদি সরকারের অনুগত হয়ে দায়িত্ব পালন করছে। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ও তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ইসির বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ তুলেছেন। যদিও এর জবাবে ভিন্ন কথা বলছে কমিশন।

চলতি বছর রাজ্যসভা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরই পশ্চিমবঙ্গের পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণ চলে যায় নির্বাচন কমিশনের হাতে। বলা হচ্ছে, শতভাগ নির্বিঘ্ন, সুষ্ঠু ও সঙ্ঘাত মুক্ত নির্বাচন করাই কমিশনের লক্ষ্য। অথচ কমিশনের নিরপেক্ষতাই প্রশ্নের মুখে। এমনকি রাজ্যের শাসক দল তৃণমূলের সাথেই নির্বাচন কমিশনের বিরোধ ও দূরত্ব বাড়ছে।

নির্বাচনী বিধিভঙের অভিযোগ
পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচনের ‘আদর্শ’ আচরণ বিধি কার্যকর হয়েছে গত ২৬ ফেব্রুয়ারি। বিজেপির শীর্ষ নেতারা বারবার সফর করছেন রাজ্যে। দিচ্ছেন নানা প্রতিশ্রুতি। একইভাবে রাজ্যের বাঁকুড়া আসনের এক সভা থেকে মমতা ঘরে ঘরে রেশন পৌঁছে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তাতেই নির্বাচন কমিশন স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে অভিযোগ দায়ের করেছে।

দেশটির সংবিধান বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মমতা এখনো মুখ্যমন্ত্রী পদে রয়েছেন। সরকারি প্রকল্প নিয়ে নির্বাচনী সভায় প্রতিশ্রুতি দেয়া কার্যত নির্বাচনী বিধিভঙ্গের সামিল। কিন্তু বিজেপির নেতৃত্বের কেউই রাজ্যের শাসক দলের অংশ নন। তাই আচরণবিধি তাদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়।

নির্বাচনী বিধিভঙ্গের অভিযোগের পাল্টা হিসেবে কমিশনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা। তার অভিযোগ, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ নির্বাচন কমিশনের কাজে হস্তক্ষেপ করছেন। কেন্দ্রের কথায় কমিশন পদক্ষেপ নিচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে আহত পা নিয়ে তিনি কমিশনে অবস্থান ধর্মঘটে বসবেন। বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জগৎপ্রকাশ নাড্ডা পাল্টা বলেছেন, ‘মমতা ভয় পেয়েছেন। পরাজয় নিশ্চিত বুঝে এই অভিযোগ তুলছেন।’

কমিশনকে জড়িয়ে এই রাজনৈতিক টানাপোড়েন প্রসঙ্গে পর্যবেক্ষক অধ্যাপক অনিন্দ্য বটব্যাল বলেন, ‘কমিশনের সাথে প্রশাসনের বিরোধ কোনো নতুন বিষয় নয়। ১৯৯১ সালে বাম সরকারের সাথে কমিশনের বিরোধ হয়েছিল। কিন্তু রাজনৈতিক স্বার্থে যদি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয় তাহলে গণতন্ত্রের পক্ষে তা ক্ষতিকারক।’

কেন মমতার ক্ষোভ?
জানা গেছে, নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে মমতার ক্ষোভের শুরু নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার দিন থেকে। নির্বাচন কমিশন পশ্চিমবঙ্গ আট দফায় ভোট গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অথচ ২৩৯ আসনের তামিলনাড়ু বিধানসভার ভোট নেয়া হবে এক দিনে। মুখ্যমন্ত্রী মমতার প্রশ্ন, কেন পশ্চিমবঙ্গে এত দফায় ভোট নেয়া হবে?

কমিশন এবার রাজ্যে কেন্দ্রীয় বাহিনীর প্রায় ৮০০ সদস্য মোতায়েন করে নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এতেও আপত্তি জানিয়েছে তৃণমূল নেত্রী। বাকি সব রাজ্যে একজন করে বিশেষ পুলিশ পর্যবেক্ষক থাকছেন। অথচ নজিরবিহীন হলেও এবার পশ্চিমবঙ্গে থাকছে দু’জন বিশেষ পুলিশ পর্যবেক্ষক, মৃণালকান্তি দাস ও বিবেক দুবে। এই দুবেকে নিয়ে আপত্তি রয়েছে তৃণমূলের‍।

পরিস্থিতি আরো ঘোলাটে হয়েছে রাজ্য পুলিশের ডিজি বীরেন্দ্রর অপসারণে। পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসনের একাধিক কর্মকর্তাকে বদলি করেছে কমিশন। তাদেরকে মুখ্যমন্ত্রী মমতার বিশ্বস্ত লোক বলে মনে করা হতো।

পর্যবেক্ষকরা বলছেন, রাজ্যের নন্দীগ্রামে মমতার আহত হওয়ার পর তৃণমূল প্রশ্ন তুলেছে, কেন কমিশনের নিয়ন্ত্রণে থাকা পুলিশ তাকে নিরাপত্তা দিতে পারল না? চক্রান্তের অভিযোগ তুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। অথচ কমিশনের রিপোর্ট, নন্দীগ্রামে নিছক দুর্ঘটনা হয়েছে। কোনো চক্রান্ত ছিল না।

এ ছাড়াও নির্বাচন কমিশন সিদ্ধান্ত নিয়েছে, ২৭ মার্চ প্রথম দফার নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রের ১০০ মিটারের মধ্যে শুধু কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকবে। ১০০ মিটারের বাইরে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করবে। বিরোধীদের বক্তব্য, রাজ্য পুলিশকে বুথের কাছে যেতে না দিলে তৃণমূল কারচুপি করতে পারবে না। তৃণমূলের অভিযোগ, বিজেপির ইশারায় এসব সিদ্ধান্ত নিচ্ছে কমিশন।

বাড়ছে তিক্ততা
তৃণমূলের সাথে কমিশনের তিক্ততা বেড়েই চলছে। মুখ্যমন্ত্রী সরাসরি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের দিকে আঙুল তুলে বলেছেন, তিনি হস্তক্ষেপ করছেন। আবার উপ-নির্বাচন কমিশনার সুদীপ জৈন রাজ্য সরকারকে কড়া চিঠি দিয়েছেন। তার দাবি, কমিশন নিরপেক্ষভাবে কাজ করছে। মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্য দুর্ভাগ্যজনক। এই সুদীপ জৈনকে রাজ্যে ভোটের দায়িত্ব থেকে সরানোর দাবিতে ইতোমধ্যে তৃণমূল আন্দোলন করেছে।

সবমিলিয়ে বিরোধের চিত্র দেখা গেলেও এর মধ্যে বাড়াবাড়ি দেখছেন না রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক উদয়ন বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘কমিশন আট দফায় দীর্ঘ সময় ধরে নির্বাচন করাবে। এর ফলে কিছু জটিলতা তৈরি হতেই পারে। বিশেষত পুলিশসহ প্রশাসনকে ব্যবহারের ক্ষেত্রে। এটাকে বড় ধরনের বিরোধ বলে ভাবা ঠিক নয়।

সূত্র : ডয়েচে ভেলে


আরো সংবাদ



premium cement

সকল