১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`

আত্মবিশ্বাসী নারীদের ভয় পায় ভারত : সাফুরা জারগার

সাফুরা জারগার - ছবি : সংগৃহীত

কাতারভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরার কাছে ২০২০ সালে দিল্লিতে ভয়াবহ দাঙ্গায় ষড়যন্ত্রের অভিযোগে অভিযুক্ত ভারতীয় নারী অ্যাকটিভিস্ট সাফুরা জারগার বলেছেন, ভারতীয় রাষ্ট্র দৃঢ় আত্মবিশ্বাসী নারীকে ভয় করার কারণেই তাকে আক্রমণের লক্ষ্যে পরিণত করা হয়েছে।

সোমবার সংবাদমাধ্যমটিতে প্রকাশিত এক সাক্ষাতকারে এই মন্তব্য করেন ২৮ বছর বয়সী সাফুরা।

এক বছর আগে ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে কয়েক দশকের মধ্যে ভয়াবহতম সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ঘটে। ওই দাঙ্গা বাধানোতে ষড়যন্ত্রের অভিযোগে নয়াদিল্লির জামিয়া মিল্লিয়া ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তরুণ এই অ্যাকটিভিস্টের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে দিল্লি পুলিশ। দেশটির কঠোর সন্ত্রাস বিরোধী আইন ‘বেআইনি কর্মকাণ্ড (নিরসন) আইন’ বা ইউএপিএ আইনের অধীনে অভিযোগে সাফুরাকে গত বছরের ১০ এপ্রিল গ্রেফতার করে কারাগারে বন্দী রাখা হয়।

কোন প্রকার প্রমাণ না থাকা সত্ত্বেও ওই সময় তিন মাসের গর্ভবতী সাফুরা জারগারকে দিল্লির তিহার কারাগারে কাটাতে হয়। গ্রেফতারির ৭৪ দিন পর ভারতীয় অ্যাকটিভিস্টদের প্রতিবাদ ও আন্তর্জাতিক অধিকার সংস্থাগুলোর সমালোচনার মুখে ২৩ জুন তাকে জামিন দেন দিল্লি হাই কোর্ট।

তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, (ভারতীয়) রাষ্ট্র দৃঢ়চিত্তের নারীদের ভয় পায়, যে কারণে আমি আক্রমণের লক্ষ্য হয়েছিলাম। নারীর কণ্ঠ জোরালোভাবে প্রকাশ পায়, এমন কিছুই রাষ্ট্র চিন্তা করতে পারে না। একারণেই সব ঘটনার দায় দিয়ে নারীকে বলির পাঠা বানানোর চেষ্টা করে সরকার।’

তিনি বলেন, কোনো কারণ ও প্রমাণ ছাড়াই কাউকে কোনো কাজের জন্য দায়ী করা ভারতে নতুন কিছু নয়।

সাফুরা বলেন, ‘আমি এমন দূরতম কোনো ত্রুটি করিনি যার কারণে জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হবো। দেশের আর সকল শিক্ষার্থীর মতো আমি এক প্রতিবাদে অংশ নিয়েছি মাত্র।’

দিল্লিতে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার আগে ভারতের সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন বাতিলের দাবিতে দেশটির মুসলিম সম্প্রদায়সহ সাধারণ মানুষ দেশজুড়ে বিক্ষোভ করে। এর আগে ভারতীয় পার্লামেন্টে ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে আইনটি পাস করা হয়। আইনটিতে বলা হয়, বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে আসা হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ, জৈন, পার্সি ও খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের লোকজন, যারা প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ছাড়া ভারতে প্রবেশ করেছেন, তাদের কারাবন্দী বা বিতাড়িত করা হবে না এবং ভারতে ছয় বছর বসবাসের পর তারা স্থায়ী নাগরিকত্ব পাবেন।

সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদে সারাদেশের মতোই দিল্লিতে বিক্ষোভ করা হয়। দিল্লির শাহীনবাগ, জাফরাবাদসহ বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নিয়ে আইনটি বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভে অংশ নেয় বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ।

এই বিক্ষোভ উচ্ছেদে ক্ষমতাসীন বিজেপির মাঠ পর্যায়ের নেতৃত্বের উস্কানিতে ২৩ ফেব্রুয়ারি দিল্লিতে ভারতে এক দশকের মধ্যে ভয়াবহতম দাঙ্গার শুরু হয়।

কারাগারে তাকে নির্জন কারাবাসে রাখা হয়েছিল জানিয়ে সাফুরা জারগার বলেন, তাকে প্রথমে জানানো হয়েছিল করোনা সংক্রমণে সতর্কতায় কোয়ারেন্টিনের জন্য তাকে আলাদা রাখা হয়েছে। কিন্তু পরে তিনি লক্ষ্য করেন, তারা পরে আসা বন্দীদের হাঁটা চলা করার সুযোগ করে দেয়া হয়েছে।

সাফুরা বলেন, গর্ভবতী অবস্থায় যথাযথ চিকিৎসার জন্য সেখানে কেউই ছিল না।

তিনি বলেন, ‘আমি নিজের মনকে তৈরি করেছিলাম, যে কোনো মুহূর্তে আমার গর্ভপাত হতে পারে। যখনই আমি বাথরুমে যেতাম, আমি এটির ভয় করতাম।’

কঠোর সন্ত্রাসবিরোধী ইউএপিএ আইনে তার বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, তার কোনো ধারণাই ছিল না তার বিরুদ্ধে অভিযোগপত্রে কী বলা হয়েছে। রাত সাড়ে ১১টায় বন্দী করে পুলিশ তাকে জাফরাবাদ পুলিশ স্টেশনে নিয়ে যায়। মধ্য রাতে তাকে অপর একটি পুলিশ স্টেশনে নিয়ে নিরাপত্তা হেফাজতে রাখা হয়।

তিনি বলেন, আদালতে পেশ করার সময় তার আইনজীবীদের জানানো হয়েছিল দিল্লির মানদোলি কারাগারে তার বিরুদ্ধে শুনানি করা হবে।

পরে তার পক্ষের কোনো আইনজীবীর অনুপস্থিতিতে তিহার জেলে ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ উপস্থাপন করা হয়।

তিনি বলেন, ’আদালতে আমার উকিলের জন্য প্রশ্ন করলে তারা আমাকে জানায়, শুনানির সকল কিছুই প্রকাশ করা হবে এবং তোমার উকিল সবকিছু জানবেন।’

তিনি বলেন, ‘১৫ দিন পর আমাকে জানানো হয় ইউএপিএ আইনের অধীনে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে। আমি একেবারেই তা বিশ্বাস করতে পারিনি। আমি চিন্তা করেছিলাম, এখানে (জেলে) আমাকে আরো দুই-তিন বছর কাটাতে হবে। ওই সময় আমি এতোটাই আশাহত ছিলাম।’

তিনি বলেন, ‘ওই সময় আমি বেশি চিন্তিত ছিলাম আমার সন্তানকে নিয়ে। আমি তার জন্য সর্বোত্তমটাই চাচ্ছিলাম। আমি চাচ্ছিলাম সে যেনো তার পরিবারের সাথেই একটি ভালো হাসপাতালে জন্ম নেয়। আমার উকিলদের তখন বলেছিলাম সবকিছু ছেড়ে যেনো ভালোভাবে আমার সন্তান জন্ম দেয়াকে নিশ্চিত করে এবং আমার পছন্দের জায়গাতেই তাকে জন্ম দেয়ার ব্যবস্থা করে দেয়। আমি চাচ্ছিলাম না তার জন্ম সনদে লেখা থাকুক, সে তিহার জেলে জন্ম নিয়েছে। পরে অবশ্য আমি উপলব্ধি করলাম, জন্ম সনদে হাসপাতালের নাম থাকে।’

কারাগার থেকে জামিনে মুক্তির পর গত বছরের ১২ অক্টোবর এক ছেলে সন্তানের জন্ম দেন সাফুরা জারগার।

কারাগারে থাকা অবস্থায় তাকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ট্রল করার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, কারাগারে থাকা অবস্থায় এই সম্পর্কে প্রথমে তার কোনো ধারণা ছিল না। পরিবারও তাকে কখনোই এই বিষয়ে জানায়নি।

তিনি বলেন, ‘(প্রথম) এক নারী পুলিশ আমাকে জিজ্ঞেস করেন আমি বিবাহিত কিনা। আমি তার দিকে তাকিয়ে চিন্তা করলাম কী ধরনের প্রশ্ন এটি। পরে আমি কৌতুক করে তাকে জবাব দিলাম, না আমি বিবাহিত নই।’

সাফুরা বলেন, ‘আমার এক সহবন্দী আমাকে বিষয়টি গুরুত্বের সাথে নেয়ার জন্য বললে আমি বলি : হ্যা, দুই বছর আগে আমার বিয়ে হয়েছে। কেন আমাকে এই প্রশ্ন করছেন?’

সাফুরা জানান, ওই নারী পুলিশ তখন তাকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারিত সব অপবাদ ও মিথ্যা অভিযোগের বিষয়ে জানান।

সাফুরা বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার করা হয় তিনি বিবাহিত নন এবং শাহীনবাগের আন্দোলনে গিয়ে তিনি গর্ভবতী হয়েছেন।

তিনি বলেন, ‘আমাকে এমন কিছুর জন্য বিচারের আওতায় নেয়া হয়েছে, যাতে আমার যাওয়ার কথা ছিল না। ভালো, আমার অ্যাকটিভিজমে আপনার সমস্যা আছে, আপনি আমার চিন্তাকে চাপাতে চান, মতকে দমন করতে চান। আপনি তা করতে পারেন। আমাকে পাল্টা যুক্তি দিন। আমি কী বলেছি তা নিয়ে কথা বলুন। আমার রাজনৈতিক চরিত্রের যেভাবে ইচ্ছা নিন্দা করুন। কিন্তু, যখন একজন নারী কথা বলেন, তিনি কী বলছেন তা দেখা হয় না। তিনি কী পরেছেন, কেমন দেখতে, মোটা না পাতলা, তালাকপ্রাপ্ত, বিবাহিত না একাকি... এই বিষয়গুলোই সবাই দেখে। এই সব কিছুই আপনার ক্ষোভের জন্ম দিতে পারে। কিন্তু আমি এতে আবদ্ধ না থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’

সূত্র : আলজাজিরা


আরো সংবাদ



premium cement
মোস্তাফিজের বিকল্প ভাবছে চেন্নাই, দলে ভিড়িয়েছে এক ইংলিশ পেসার বিদেশ যাওয়া হলো না আশরাফুলের, বাসচাপায় মামাসহ নিহত ‘সন্ত্রাসীদের ঘরে ঢুকে মারা’ বিষয়ে নরেন্দ্র মোদির মন্তব্য নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিক্রিয়া মাতৃভূমি রক্ষা করা আমাদের প্রধান কর্তব্য : সেনাপ্রধান ব্রিটিশ হাই কমিশনারের সাথে বিএনপি নেতাদের বৈঠক ১ হাজার টাকার জন্য পেশাদার ছিনতাইকারীরা খুন করে ভ্যানচালক হারুনকে দেশের মানুষ পরিবর্তন চায় : মতিউর রহমান আকন্দ টানা ১১ জয়ে ডিপিএলের প্রথম পর্ব শেষ করলো আবাহনী দেশে করোনায় আরো একজনের মৃত্যু উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিদের স্বজনের অংশ নিতে মানা সবল-দুর্বল ব্যাংক একীভূত করার কাজ শেষ হতে কত দিন লাগবে?

সকল