২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

নিউ ইয়র্কে ‘কাশ্মির আমেরিকান ডে’: ভারতের ক্ষোভ, স্বাগত পাকিস্তানের

কাশ্মির সংহতি দিবসে পতাকা হাতে এক অংশগ্রহণকারী - ছবি : সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের আইন পরিষদের নিম্নকক্ষ স্টেট অ্যাসেম্বলিতে ৫ ফেব্রুয়ারিকে ‘কাশ্মির আমেরিকান ডে’ হিসেবে ঘোষণার প্রস্তাব পাস করা হয়েছে। ৩ ফেব্রুয়ারি স্টেট অ্যাসেম্বলির এক সভায় পাস হওয়া এই প্রস্তাবের প্রতিক্রিয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে ভারত। অপরদিকে, নিউ ইয়র্ক স্টেট অ্যাসেম্বলির একই প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়েছে পাকিস্তান।

এর আগে নিউ ইয়র্ক স্টেট অ্যাসেম্বলির ডেমোক্রেট দলীয় দুই সদস্য নাদের সাইয়েগ ও নিক পেরি অ্যাসেম্বলিতে এই প্রস্তাব উত্থাপন করেন।

প্রস্তাবে বলা হয়, ‘কাশ্মিরি সম্প্রদায় সব প্রতিকূলতা অতিক্রম করে তাদের অধ্যাবসায়ের মাধ্যমে নিউ ইয়র্কের অভিবাসী সম্প্রদায়ের মধ্যে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছে।’

এতে আরো বলা হয়, ‘বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে থাকা কাশ্মিরি জনগণ কশুর ভাষায় কথা বলে এবং ইসলাম, হিন্দু ও শিখ ধর্মের নিজস্ব প্রাচীন আচার অনুশীলন করে। হিমালয়ের পাদদেশ থেকে উদ্ভুত তাদের অনন্য সাংস্কৃতিক পরিচয় ও থরে থরে সাজানো ইতিহাসের স্বীকৃতি কাশ্মিরি পরিচিতিকে জীবন্ত রাখবে।’

প্রস্তাবে আরো বলা হয়, ‘নিউ ইয়র্ক রাজ্য যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান অনুসারে ভিন্ন সংস্কৃতি, জাতি ও ধর্মীয় পরিচয়ের স্বীকৃতির বিধান অনুসারে সকল কাশ্মিরি জনগণের ধর্ম, আন্দোলন ও মত প্রকাশের স্বাধীনতাসহ মানবাধিকার রক্ষার সমর্থন করছে।’

ভারতের অধীন কাশ্মিরি জনগণের সংগ্রামের স্বীকৃতি ও তাদের প্রতি সংহতি প্রকাশে পাকিস্তান ও বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে বসবাস করা কাশ্মিরি সম্প্রদায় ৫ ফেব্রুয়ারি ‘কাশ্মির সংহতি দিবস’ পালন করেন।

নিউ ইয়র্ক রাজ্যের এই পদক্ষেপে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে ভারত। ওয়াশিংটনে ভারতীয় দূতাবাসের এক মুখপত্র জানান, নিউ ইয়র্ক রাজ্যের এই পদক্ষেপকে তারা ভারতের সম্মানের ওপর আঘাত হিসেবে দেখছেন।

তিনি বলেন, বিচিত্র ও সমৃদ্ধ ভিন্ন ভিন্ন সাংস্কৃতিক নকশাকে ভারত ধারণ করেছে। জম্মু ও কাশ্মির এই সাংস্কৃতিক নকশারই অখণ্ড ও অবিচ্ছেদ্য অংশ।

ভারতীয় দূতাবাসের ওই মুখপাত্র বলেন, ‘আমরা উদ্বেগের সাথেই লক্ষ্য করছি জম্মু ও কাশ্মিরের সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ও সামাজিক নকশাকে মানুষের মাঝে বিভেদ তৈরি করে স্বার্থ হাসিলের জন্য ভুলভাবে উপস্থাপনের চেষ্টা করা হচ্ছে। ভারত-যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক ও বিচিত্র ভারতীয় প্রবাসীদের সংশ্লিষ্ট সকল বিষয়েই আমরা নিউ ইয়র্কের রিপ্রেজেন্টেটিভদের সাথে আলোচনা করবো।’

অপরদিকে নিউ ইয়র্কের পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছে পাকিস্তান। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র জাহিদ হাফিজ চৌধুরী এক বার্তায় বলেন, ‘এই প্রস্তাব কাশ্মিরি জনগণের সাহস ও অধ্যাবসায়ের প্রশংসা করেছে এবং তাদের অনন্য সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় পরিচয়ের স্বীকৃতি দিয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘এই প্রস্তাব কাশ্মিরি জনগণের প্রতি আন্তর্জাতিক সমর্থনের আরেকটি নিদর্শন যারা শুধু তাদের আত্মনিয়ন্ত্রণের মৌলিক অধিকার রক্ষায় লড়াই করছেন। যা জাতিসঙ্ঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাবনারই অন্তর্ভুক্ত। এটি আরেকটি প্রমাণ যে, ভারত কাশ্মিরের জনগণের মানবাধিকার লঙ্ঘনের স্থূল ও নিয়মতান্ত্রিক পন্থা কোনোভাবেই গোপন করতে পারবে না।’

এর আগে নিউ ইয়র্কে পাকিস্তানের কনস্যুল জেনারেল আয়েশা আলী প্রস্তাব পাসের জন্য অ্যাসেম্বলির সদস্য ও সংশ্লিষ্ট থাকা অন্য ব্যক্তিদের শুভেচ্ছা ও স্বাগত জানান।

১৯৪৭ সালে ব্রিটেনের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভের পর প্রতিবেশী ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনার সম্পর্ক চলে আসছে। কাশ্মিরের অধিকারের প্রশ্নে এই উত্তেজনা ভিন্ন মাত্রা পেয়েছে এবং দেশ দুইটি অঞ্চলটির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দুই দফা যুদ্ধে জড়িয়েছে।

সূত্র : দ্যা হিন্দু, ডন


আরো সংবাদ



premium cement