২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

ভারতে ভ্যাকসিন নিয়ে ভয়ে স্বাস্থ্যকর্মীরা

ভারতে ভ্যাকসিন নিয়ে ভয়ে স্বাস্থ্যকর্মীরা - ছবি : সংগৃহীত

করোনাভাইরাসের হাত থেকে বাঁচাতে ১৬ তারিখ থেকে গণভ্যাকসিনেশন ড্রাইভ শুরু হয়েছে ভারতে। এর একদম প্রথম পর্যায়ে চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী, নার্স, পুলিশসহ দেশের পরিষেবার প্রথম সারিতে থাকা মানুষজনকে ভ্যাকসিন দেয়ার কাজ শুরু হয়েছে। কিন্তু বেশ কিছু রিপোর্ট বলছে, ভ্যাকসিনের পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া থাকতে পারে। আর তাই ভ্যাকসিন নেয়ার আগে সহকর্মীদের পরামর্শ নিতে শুরু করেছেন স্বাস্থ্যকর্মীরা। অনেকেই গুগলে এর পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া সম্পর্কেও জেনে নিচ্ছেন বলে খবর মিলছে।

ভ্যাকসিন নেয়ার পরই মৃত্যু হয়েছে, এমন অনেক খবরই সামনে এসেছে এই কয়েক দিনে। যদিও সব দেশের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ই দাবি করেছে, ভ্যাকসিনের সঙ্গে মৃত্যুর কোনো যোগসূত্র নেই। তবুও পরিবারের কথা ভেবে, নিজের স্বাস্থ্যের কথা ভেবে চিন্তিত স্বাস্থ্যকর্মীরা। তাদের অনেকেই ভ্যাকসিন নেয়া নিয়ে পরিবারের কাউকে কিছু জানাতে চাইছেন না। আর এই প্রবণতা দেখা গিয়েছে বিশেষ করে দিল্লি ও সংলগ্ন এলাকায়।

দক্ষিণ দিল্লির মূলচন্দ মেডসিটির নার্সিং স্টাফ জয় মহাওয়ের (২৪) জানিয়েছেন, তিনি কোভিড ১৯ ভ্যাকসিনের পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া নিয়ে পড়েছেন। বিষয়টি বিলক্ষণ জানেন। এবং তাই এই বিষয়টি নিয়ে সামান্য হলেও অ্যাংজাইটিতে ভুগছেন। তিনি অবশ্য এই ভ্যাকসিন নিয়ে নিয়েছেন। কিন্তু পরিবারের কাউকে জানানি। তার কথায়, প্রথমের দিকে ভ্যাকসিন নিতে ভয় পেয়েছিলেন। কিন্তু এইইমস-এর ডিরেক্টর রণদীপ গুলেরিয়া ভ্যাকসিনের ডোজ নিয়েছেন, এটা দেখার পর তিনিও ভ্যাকসিন নিতে রাজি হন। এবং ভ্যাকসিন নেয়ার পরের অভিজ্ঞতা বলতে গিয়ে মূলচন্দ বলেন, ভ্যাকসিন নেয়ার পর একটু মাথা ঘুরছিল, ক্লান্তি, ঘুম-ঘুম ভাব ছিল। তবে, বর্তমানে তিনি একদম সুস্থ আছেন বলে জানিয়েছেন।

মূলচন্দ ছাড়াও তার সহ-কর্মীরাও ভ্যাকসিনের ডোজ নিয়েছেন। তাদের একজন ২৪ বছর বয়সী ঋতিক ভাটি জানান, ভ্যাকসিন নেয়ার পর সম্পূর্ণ সুস্থ আছেন তিনি। সকলের উদ্দেশে তিনি বলেন, এতে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। তার এখন পর্যন্ত কোনো পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া চোখে পড়েনি। আর তা ছাড়াও ভ্যাকসিন নিয়েছেন এমন অনেকের সঙ্গেই তিনি কয়েকদিন আগে কথা বলেছেন, তারাও জানিয়েছেন এর কোনো পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া হয়নি। তবে, তিনিও পরিবারকে এই বিষয়ে কিছু জানাননি।

একই অভিজ্ঞতা ওই হাসপাতালের ২৩ বছরের অনুজা মেহতারও। তিনিও পরিবারকে কিছু জানানি ভ্যাকসিন নেয়ার ব্যাপারে। পাশাপাশি তিনিও বাকি সহকর্মীদের জিজ্ঞাসা করেছেন ডোজ নেয়ার আগে। তিনি বলেন, তাকে পরিবার বলেছিল যে এখনই ভ্যাকসিন নিতে হবে না। কিছু দিন অপেক্ষা করার পরামর্শ দেয়া হয়েছিল। কিন্তু যারা ভ্যাকসিন এর আগে নিয়েছেন, তাদের অভিজ্ঞতার কথা শুনে অনুজের ভালোই লাগে, ফলে তিনিও ভ্যাকসিন নিয়ে নেন।

দিল্লিতে ইতিমধ্যে ৪ হাজার ৩১৯ জন স্বাস্থ্যকর্মীকে অর্থাৎ যতজন ভ্যাকসিনের জন্য রেজিস্ট্রেশন করেছিলেন, তার ৫৩.৩ শতাংশকে শনিবার ভ্যাকসিনের ডোজ দেয়া হয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভ্যাকসিন নিয়ে কমিউনিকেশনের অভাবে, মানুষকে বোঝানোর অভাবে অনেকেই ভ্যাকসিন নিতে পিছ-পা হচ্ছেন এবং কিছু দিন দেখে নিয়ে পরে ভ্যাকসিন নেয়ার দিকেই ঝুঁকছেন। প্রথম পর্যায়ে অনেকেই ভ্যাকসিন নিতে নাকচ করছেন।

একই কথা বলেন রাজীব গান্ধী সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালের মেডিকেল ডিরেক্টর বি এল শেরওয়াল। তার কথায়, ভারতের সবার মধ্যেই একটা ওয়েট অ্যান্ড ওয়াচ ব্যাপার রয়েছে। গাড়ি কিনুক বা ভ্যাকসিন ডোজ নিক, সবাই অন্যের অভিজ্ঞতার উপরে ভিত্তি করে তা নিজের উপরে প্রয়োগ করতে চাইছেন। তার হাসপাতালে মোট ৪৫ জন প্রথম দিন অর্থাৎ শনিবার টিকা নিয়েছেন। তিনি বলেন, ভ্যাকসিন নিয়ে মানুষের মধ্যে আরো অনেক বেশি সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে। আত্মবিশ্বাসী করে তুলতে হবে। শনিবার থেকে এখন পর্যন্ত কারো কোনো পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।

তবে, ভ্যাকসিন নেয়ার পর এইইএমএস-এর একজন নিরাপত্তারক্ষীর গায়ে অ্যালার্জি দেখা দেয়। তাকে বর্তমানে পর্যবেক্ষণে রেখেছেন চিকিৎসকরা। শনিবার ডোজ দেয়ার পর মোট ৫১ জনের শরীরে এমন ব়্যাশেস বা অ্যালার্জি, মাথা ঘোরা বা জ্বর দেখা গেছে। তবে, শেরওয়ালের কথায়, ৫৩ শতাংশ মানুষই সুস্থ রয়েছেন। তিনি বলেন, পোলিওর টিকা বাজারে আনতে ও মানুষকে পোলিও প্রয়োজনীয়তা বোঝাতে ২০ বছর সময় লেগেছিল। কিন্তু সে ক্ষেত্রে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ করা হয়েছিল। সেই একই পদক্ষেপ করোনা ভ্যাকসিনের ক্ষেত্রেও করতে হবে।
সূত্র : নিউজ ১৮


আরো সংবাদ



premium cement