২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

শর্তহীন আলোচনায় বসতে মোদি সরকারকে বাধ্য করলো কৃষকরা

- সংগৃহীত

কৃষকদের আন্দোলনের কাছে নতিস্বীকার করল ভারতের নরেন্দ্র মোদি সরকার। কৃষকদের সঙ্গে শর্তহীন আলোচনায় রাজি তারা।

সরকারের শর্ত ছিল, আগে দিল্লির সীমান্ত ছেড়ে কৃষকদের ১৬ কিলোমিটার দূরের বুরারিতে চলে যেতে হবে, তারপর আলোচনা করা হবে সংগঠনগুলোর সঙ্গে। কিন্তু কৃষকরা জানিয়ে দিয়েছিলেন, তারা এই শর্ত মানবেন না। বুরারি যাবেন না। আলোচনা করতে হবে নিঃশর্তে। অবশেষে সোমবার গভীর রাতে কৃষকদের শর্তেই তাদের সঙ্গে আলোচনায় বসার কথা জানিয়ে দেয় মোদি সরকার। মঙ্গলবার আলোচনা হচ্ছে।

তবে এরপরেও আলোচনা নিয়ে বিতর্ক যে পুরোপুরি কেটেছে তা বলা যাচ্ছে না। কারণ, ৫০০-রও বেশি সংগঠন এই আন্দোলনে সামিল। তার মধ্যে সরকার আলোচনায় ডেকেছে মাত্র ৩২টি সংগঠনকে। তাই পাঞ্জাব কৃষক সংঘর্ষ কমিটি জানিয়েছে, সব পক্ষকে ডাকা না হলে তারা এই আলোচনায় অংশ নেবে না। যারা ডাক পাননি, তারা ক্ষুব্ধ।

কৃষকরা এখন ট্রাক ও ট্রাক্টর নিয়ে দিল্লির সীমান্তে চলে এসেছেন। তারা কার্যত দিল্লি ঘিরে ফেলেছেন। পাঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তর প্রদেশ, উত্তরাখণ্ড, রাজস্থান ও কেরালা থেকে কৃষকরা বিক্ষোভে সামিল হয়েছেন। ব্যারিকেড তৈরি করে, লাঠিপেটা করে, পানিকামান প্রয়োগ করে, কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটিয়েও তাদের দিল্লি আসা আটকাতে পারেনি মোদির পুলিশ। দিল্লি ঢোকার দুইটি প্রধান রাস্তা বন্ধ। একটি আংশিক বন্ধ।

মোদি সরকার করোনার কারণ দেখিয়ে জানিয়েছিল, কৃষকদের দিল্লিতে ঢুকতে দেয়া হবে না। তখন যোগেন্দ্র যাদবসহ অন্য কৃষক নেতারা প্রশ্ন তোলেন, তা হলে বিহারে কী করে লাখো লোকের জনসভা করলেন প্রধানমন্ত্রীসহ অন্যরা। তখন তো করোনার কথা মাথায় রাখা হয়নি! করোনার কড়াকড়ি কি শুধু কৃষকদের গতিরোধ করার জন্যই চালু হবে? করোনাকালে লাখো লোকের জনসভা করলে কোনো অসুবিধা নেই?

কৃষকদের জেদ, সারা দেশে কৃষক ভোট হারাবার সম্ভাবনা এবং এই যুক্তির সামনে অসহায় হয়ে পড়ে সরকার। তারপরই আলোচনার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

মোদি সরকারের কৃষিমন্ত্রী নরেন্দ্র তোমর বলেন,‘আমরা আগেই আলোচনা করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু কৃষকরা আন্দোলনের সিদ্ধান্তে অনড় ছিল। এখন শীত ও করোনার কথা ভেবে তাদের সঙ্গে আলোচনায় বসার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। বেলা তিনটে নাগাদ আলোচনা শুরু হবে।’

কৃষক নেতারা অবশা বলছেন, শীতের কথা মাথায় রাখলে গত ছয়দিন ধরে সমানে কৃষকদের উপর পানিকামান চালানো হতো না। বারবার করে আন্দোলনকারী কৃষকরা ভিজেছেন, আহত হয়েছেন, কিন্তু জমি ছেড়ে নড়েননি। আর করোনার কথা ভাবলে প্রথমেই নিঃশর্তে আলোচনার প্রস্তাব মেনে নিত মোদি সরকার।

কৃষকদের প্রধান দাবি দুইটি। কৃষি আইনের সংশোধন করে কর্পোরেটের সুবিধা করে দিয়ে যে সব ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে, তা বাতিল করতে হবে। আর সরকার যে ফসলের ন্যূনতম সংগ্রহ মূল্য বেঁধে দিয়েছে, তাকে আইনি মর্যাদা দিতে হবে। অর্থাৎ, বেসরকারি সংস্থা বা ব্যক্তি যদি ফসল কেনেন, তা হলে ওই দামেই কিনতে হবে। না দিলে তাদের শাস্তি হবে। এই ব্যবস্থা না করলে ন্যূনতম সংগ্রহ মূল্য বেঁধে দিয়ে কোনো লাভ হচ্ছে না কৃষকদের। কারণ, তাদের উৎপাদনের অনেকটাই বেসরকারি সংস্থা বা ব্যক্তির কাছে বিক্রি করতে হয়। তখন তারা অনেক কম দাম পান। সরকার এখন এই দাবি মানে কি না সেটাই দেখার বিষয়। সূত্র : ডয়চে ভেলে


আরো সংবাদ



premium cement