২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

ভারতে ১৪ রোহিঙ্গা আটক, যেভাবে ধরা পড়লো

- ছবি : সংগৃহীত

কক্সবাজারের শরণার্থী শিবির থেকে পালিয়ে ভারতের একটি ট্রেনে চেপে যাওয়ার সময় ১৪ জন রোহিঙ্গা শরণার্থীর একটি দল পুলিশের হাতে ধরা পড়েছে।

গত সপ্তাহে ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলা থেকে বিশেষ ট্রেনে করে দিল্লি যাওয়ার সময় মাঝপথে তাদের আটক করা হয়।

ভারতীয় রেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, ভুয়া নাম-পরিচয়ে এরা টিকিট কেটেছিলেন এবং তাদের কারোর কাছেই বৈধ পরিচয়পত্র ছিল না।

এদিকে বাংলাদেশে বসবাসকারী রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ভারতে ঢোকার চেষ্টা যদিও নতুন নয়, তাদের ত্রিপুরা সীমান্ত ব্যবহার করার ঘটনা একেবারে হালের প্রবণতা বলেই ওই অঞ্চলের বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।

ত্রিপুরার আগরতলা থেকে যে সম্পূর্ণ বাতানুকূল ও দ্রুতগামী বিশেষ রাজধানী এক্সপ্রেস দিল্লিতে যায়, সেই ট্রেনেই যাত্রী হিসেবে ছিলেন এই রোহিঙ্গারা।

১৪ জনের দলে ১০ জনই ছিলেন নারী, একটি শিশু আর বাকি তিনজন পুরুষ। ট্রেনটি যখন ত্রিপুরা ও আসাম ছাড়িয়ে পশ্চিমবঙ্গে ঢোকে, তখন কামরার অন্য যাত্রীদের সঙ্গে তারা বাক বিতন্ডায় জড়িয়ে পড়লে রেল পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করা হয়।

তার ভিত্তিতেই মঙ্গলবার বেশি রাতে শিলিগুড়ি শহরের কাছে নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশনে পুলিশ তাদের আটক করে।

ভারতের পূর্বোত্তর সীমান্ত রেলের প্রধান মুখপাত্র শুভানন চন্দা বলছিলেন, "এরা সবাই অন্য নামে টিকিট কেটেছিলেন এবং তাদের কারও কাছেই আইডি ছিল না।"

"টিকিট পরীক্ষক যখন চেকিং করছিলেন তারা কেউই আইডি দেখাতে পারেননি এবং তাকে কেন্দ্র করে বাগবিতন্ডা শুরু হয়।"

"অন্য যাত্রীরা আলিপুরদুয়ারে রেলের হেল্পলাইনে ফোন করলে রেল পুলিশ পরের স্টেশনেই গিয়ে তাদের আটক করে এবং রোহিঙ্গাদের ওই দলটিকে গভর্নমেন্ট রেলওয়ে পুলিশ বা জিআরপি-র হাতে তুলে দেওয়া হয়।"

তবে কীভাবে তারা ভারতে ঢুকলেন ও রাজধানী এক্সপ্রেসের মতো নিরাপত্তা-সম্পন্ন ট্রেনে উঠতে পারলেন রেলের কাছে তার কোনো সদুত্তর নেই।

শুভানন চন্দা বলছেন, "কীভাবে তারা এদেশে এসেছেন আমাদের জানা নেই - তবে ধরা পড়া মাত্রই আমরা জিআরপি-র হাতে তাদের তুলে দিয়েছি। পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের অধীন ওই সংস্থাই এখন তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করছে।"

জেরার মুখে ওই রোহিঙ্গারা স্বীকার করেছে তারা মাত্র গত সপ্তাহেই সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে ঢুকেছিলেন এবং ভারতে ঢোকার পরদিনই তারা আগরতলা রাজধানীতে যান। টিকিটের ব্যবস্থা করা ছিল আগে থেকেই।

তবে ত্রিপুরা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অনিন্দ্য সরকার বলছিলেন, এই রুট দিয়ে রোহিঙ্গাদের ভারতের ঢোকার ঘটনা তাকে বেশ অবাক করেছে।

তার কথায়, "বাংলাদেশ ও ত্রিপুরার সীমান্ত যে নিশ্ছিদ্র তা মোটেই বলা যাবে না, আর বৈধ ও অবৈধ পথে এ অঞ্চলের মানুষজনের মধ্যে যাতায়াতও আছে। কিন্তু রোহিঙ্গারাও যে এই রুট ব্যবহার করছে তা আমি এই প্রথম শুনলাম।"

"কারণ তারা যদি ভারতের মেইনল্যান্ডে যেতে চান তাহলে এখান দিয়ে যেতে হলে তাদের অনেক ঘুরপথে যেতে হবে। বরং পশ্চিমবঙ্গের মালদা বা বনগাঁ সীমান্ত দিয়ে ঢোকা তাদের জন্য অনেক সুবিধাজনক।"

"আগরতলা রাজধানী এক্সপ্রেসের রুটটা দেখলেও দেখবেন, ত্রিপুরা থেকে আসামের করিমপুর-হাফলং-গুয়াহাটি হয়ে অনেক ঘুরপথে জলপাইগুড়ি হয়ে তারপর তাদের দিল্লি অভিমুখে যেতে হচ্ছে।"

"ফলে বলা মুশকিল কেন তারা এই রুট ব্যবহার করছেন। হয়তো তাদের কাছে খবর ছিল যে ত্রিপুরা সীমান্ত দিয়ে ভারতে ঢোকা অনেক সহজ হবে", বলছিলেন অধ্যাপক সরকার।

আগরতলায় অর্থনীতিবিদ ও গবেষক সালিম শাহ অবশ্য মনে করছেন, কক্সবাজারের শিবির থেকে পালিয়ে এসে কুমিল্লা সীমান্ত দিয়ে রোহিঙ্গাদের ত্রিপুরায় ঢোকাটা তেমন কঠিন কোনও ব্যাপার নয়।

তিনি বিবিসিকে বলছিলেন, "কক্সবাজার থেকে কুমিল্লা সড়কপথে বড়জোর আড়াই ঘন্টার রাস্তা। আর কুমিল্লা শহর বা রেলস্টেশন থেকে সীমান্তে এদিকের সোনামুড়া চেকপোস্ট মাত্র দশ-পনেরো কিলোমিটার।"

"শরণার্থী শিবির থেকে বাংলাদেশের নানা প্রান্তে রোহিঙ্গারা যেভাবে ছড়িয়ে পড়ছেন বলে খবর পাই, তাতে এটুকু রাস্তা পাড়ি দেওয়া কি খুব কঠিন?"

"আর একবার সোনামুড়া সীমান্ত পেরোলেই দেড় ঘন্টার রোড জার্নিতে আগরতলা পৌঁছে যাওয়া যায়। তারপর আগরতলা স্টেশন থেকেই ট্রেনে চাপা সম্ভব।"

"কিন্তু যেটা আমাকে বিস্মিত করেছে তা হল রাজধানীর মতো ট্রেনে কীভাবে তারা চাপতে পারলেন? তার মানে একটা দালাল চক্র এখানে কাজ করছে, অর্থের বিনিময়ে তাদের টিকিট বা জাল আইডি-র ব্যবস্থা করে দেওয়া হচ্ছে।"

"ঠিক যেমন ত্রিপুরা সীমান্তে কাঁটাতার বসানো হয়ে যাওয়ার পরও গরু পাচার বন্ধ হয়নি, সেভাবেই নিশ্চয় কোনও না কোনওভাবে তারা ভারতে ঢুকতে পেরেছেন", বলছিলেন সালিম শাহ।

ত্রিপুরা সীমান্তে দুজন বা তিনজন রোহিঙ্গার ধরা পড়ার ঘটনা প্রথম সংবাদমাধ্যমে আসে মাত্র কয়েক মাস আগে - কিন্তু এখন যেভাবে চোদ্দজনের একটি দল ধরা পড়েছে তাতে স্পষ্ট যে এই রুটটি কক্সবাজারের শরণার্থীদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।

রোহিঙ্গারা নৌকা বা ছোট জাহাজে সমুদ্রপথে মালয়েশিয়া বা থাইল্যান্ড পাড়ি দেওয়ার চেষ্টা করছেন বহুদিন ধরেই, কিন্তু এখন তাদের এই নতুন রুটের হদিশ ভারতের নিরাপত্তা সংস্থাগুলোকেও উদ্বেগে ফেলেছে।

সূত্র : বিবিসি


আরো সংবাদ



premium cement