২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ফেলে দেয়া পিপিই থেকে তৈরি হবে বায়োফুয়েল

ফেলে দেয়া পিপিই থেকে তৈরি হবে বায়োফুয়েল - সংগৃহীত

করোনা মহামারির থাবায় সারা বিশ্বে রোজই নতুন সংক্রমণের রেকর্ড গড়ছে। মারণ ভাইরাস করোনা কোথায় গিয়ে থামবে তার হিসাব এখনো পর্যন্ত অজানা রয়েছে বিজ্ঞানীদের কাছে। গত পাঁচ দিন ধরে দৈনিক নতুন সংক্রমিতের সংখ্যার নিরিখে আমেরিকা ও ব্রাজিলকে টপকে বিশ্বের শীর্ষে রয়েছে ভারত।

এই অবস্থায় করোনা মহামারী রুখতে কোন দেশ আগে ভ্যাক্সিন আনবে সেই প্রতীক্ষায় চাতকের মতো চেয়ে রয়েছে গোটা পৃথিবীর মানুষজন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বাজারে ঠিক কবে ভ্যাক্সিন আসতে পারে তা এখনই নিশ্চিতভাবে বলা মুশকিল। তবে যতদিন না পর্যন্ত এই রোগের কোনও প্রতিষেধক বের হচ্ছে ততদিন করোনা বধে আমজনতার মাক্স, পিপিই, গ্লাভস বাধ্যতামূলক হয়ে পড়েছে।

যদিও ব্যবহৃত মাক্স, পিপিই যেখানে সেখানে ফেললে এর থেকে করোনার সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। ফলে এগুলির ব্যবহার অত্যন্ত সচেতনভাবে করতে হবে। তবে চিকিৎসক, স্বাস্থ্য কর্মীদের এই ব্যবহৃত পিপিই ফেলে না দিয়ে তা বায়োফুয়েলে রূপান্তরিত করা যেতে পারে। সম্প্রতি একটি গবেষণাপত্রে এমনটাই দাবি জানিয়েছেন একদল ভারতীয় বিজ্ঞানী।

‘বায়োফুয়েলস’ নামক জার্নালে প্রকাশিত সমীক্ষায় বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, ‘পাইপোলাইসিস’ নামক উচ্চ তাপমাত্রার রাসায়নিক প্রক্রিয়া ব্যবহার করে অব্যবহৃত পিপিইর কয়েক বিলিয়ন আইটেমকে প্লাস্টিক থেকে বায়োফুয়েলে রূপান্তর করা যেতে পারে।

উত্তরাখণ্ডের দেরাদুনের ‘দ্য ইউনিভার্সিটি অফ পেট্রোলিয়াম অ্যান্ড এনার্জি স্টাডিজের’ শীর্ষস্থানীয় লেখিকা স্বপ্না জৈন তার একটি বিবৃতিতে উল্লেখ করেছেন যে, ‘জৈব ক্রুডে রূপান্তরিত এক ধরণের সিন্থেটিক জ্বালানি পরিবেশের উপর কোনো মারাত্মক প্রভাব ফেলবে না। বরং এটি মানবজাতি তথা পরিবেশে নতুন এক শক্তির উৎস হবে।’

তিনি আরো বলেন, বর্তমানে গোটা বিশ্বই করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নেমেছে। যার ফলে অর্থনৈতিক সঙ্কটসহ বাস্তুসংস্থানগত ভারসাম্যহীনতার সম্মুখীন হচ্ছি আমরা। করোনার হাত থেকে বাঁচতে গিয়ে ধসে যাচ্ছে অর্থনীতি। ঘাটতি পড়ছে রাজকোষে।

এই অবস্থায় কীভাবে অর্থনীতির চাকা সচল রাখা যায় সেই দিকটা সবার প্রথমে আমাদের দেখতে হবে। আর এক্ষেত্রে বর্তমানে স্বাস্থ্যক্ষেত্রে পরিষেবা দিতে প্রচুর পিপিইর ব্যবহার হচ্ছে। যেগুলি ব্যবহারের পর ফেলে না দিয়ে জৈব রাসায়নিক পদ্ধতিতে বায়োফুয়েলে রূপান্তরিত করা যেতে পারে।

যার ফলে কিছুটা হলেও আমাদের শক্তির চাহিদা মিটবে। ঘুচবে আর্থিক সঙ্কট।

গবেষকদের মতে, এই প্লাস্টিকের উপকরণগুলো যখন পরিবেশে ফেলে দেয়া হয় তখন সেগুলো নানাভাবে মাটিতে অথবা পানিতে গিয়ে পড়ে। আর এই প্লাস্টিকে এমন কিছু উপাদান থাকে যেগুলো পরিবেশ থেকে পুরোপুরি নিমূর্ল হতে কয়েক দশক লেগে যায়।

সেক্ষেত্রে এই ব্যবহৃত পিপিই পরিবেশে ছুঁড়ে ফেলে পরিবেশ দূষণ না ঘটিয়ে তা থেকে বায়োফুয়েল উৎপাদন করা অনেক শ্রেয়। এতে যেমন পরিবেশের কোরো ক্ষতি হবে না, ঠিক তেমনই জৈব শক্তির চাহিদা বাড়বে। এই সমীক্ষায় বিজ্ঞানীরা পিপিই এবং পলিপ্রোপিলিনের সামগ্রীগুলোকে জৈব জ্বালানিতে রূপান্তরিত করেছে।

তারা পলিপ্রোপিলিনের কাঠামো, পিপিই’এর উপযুক্ততা এবং প্লাস্টিকের উপাদানগুলোকে পুনর্ব্যবহার করার পদ্ধতিগুলিও দেখিয়েছেন। তাদের বিশ্লেষণের ভিত্তিতে বিজ্ঞানীরা পিপিই বর্জ্যকে পাইরোলাইসিস পদ্ধতিতে ব্যবহার করে জ্বালানিতে রূপান্তরিত করার আহ্বান জানিয়েছেন।

আর এই পাইরোলাইসিস পদ্ধতিটি হল, অক্সিজেন ছাড়াই এক ঘণ্টার জন্য ৩০০ থেকে ৪০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস উচ্চ তাপমাত্রায় প্লাস্টিক ভাঙার একটি রাসায়নিক প্রক্রিয়া। বিশেষজ্ঞদের দাবি, পাইরোলাইসিস হল সর্বাধিক ব্যবহৃত রাসায়নিক পদ্ধতি। যার মধ্যে রয়েছে উচ্চ পরিমাণে বায়ো-অয়েল উৎপাদন করার ক্ষমতা।

যা সহজেই বায়োডেজেডেবল হয়। শুধু তাই নয়, আমাদের দৈনন্দিন জীবনে জ্বালানি চাহিদা মেটাতে সবসময় একটি বিকল্প জ্বালানির প্রয়োজন হয়। আর প্লাস্টিকের এই পাইরোলাইসিস আমাদের জ্বালানি সঙ্কট প্রশমিত করার অন্যতম একটি উপায়।

গবেষকদের আরও দাবি, পিপিইর বর্জ্য থেকে আমাদের শক্তির চাহিদা অনেকটাই মিটবে। এছাড়াও পিপিই কিট থেকে তরল জ্বালানির সমস্যা সমাধান করা যেতে পারে। প্লাস্টিক থেকে উৎপাদিত তরল জ্বালানি পরিষ্কার এবং জীবাশ্ম জ্বালানির সমতুল্য এই জ্বালানি।


আরো সংবাদ



premium cement