২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

'কুৎসিত' মেয়েকে কেউ ধর্ষণ করে নাকি! বিচারপতির মন্তব্যে বিতর্ক

'কুৎসিত' মেয়েকে কেউ ধর্ষণ করে নাকি! বিচারপতির মন্তব্যে বিতর্ক - সংগৃহিত

কর্নাটক হাইকোর্টের বিচারপতির মন্তব্যে ঘিরে শুরু হয়েছে বিতর্ক। এই ঘটনার প্রতিবাদ করে প্রায় ২০০ জন আইনজীবী, আইন শিক্ষীর্থী এবং নাগরিক সমাজের একাংশ তীব্র ধিক্কার জানাচ্ছেন। তারই সঙ্গে একটি খোলা চিঠিতে কর্নাটক হাইকোর্টের বিচারপতির মন্তব্যকে 'সহানুভূতিহীন এবং অন্যায্য' বলে দাবি করেছেন। ধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্তকে জামিন দেওয়ার ক্ষেত্রে বিচারপতির এমন মন্তব্য ঘিরে তীব্র নিন্দার ঝড় উঠেছে।

গত ২৩ জুন বিচারপতি কৃষ্ণা এস দীক্ষিতের মন্তব্য ঘিরেই শুরু হয়েছে বিতর্ক। ধর্ষণের শিকার এক নারীর ব্যাপারে আপত্তিকর মন্তব্য করে বেকায়দায় পড়েছেন তিনি। অভিযোগ, ধর্ষণের ব্যাপারে অভিযোগকারিণী নারীর দেওয়া বয়ান বিশ্বাসযোগ্য বলে মনে করেননি বিচারপতি। এমনকী ভুক্তভোগী নারীকে 'কুৎসিত' হিসেবে বিবেচনা করে তাঁর সঙ্গে এ ধরনের ঘটনা ঘটার ব্যাপারেও সন্দেহ প্রকাশ করেছেন তিনি।

এ ছাড়া ধর্ষণে অভিযুক্তদের গত সপ্তাহেই জামিন দিয়েছেন বিচারপতি কৃষ্ণা এস দীক্ষিত। কর্ণাটক আদালতের বিচারপতি কৃষ্ণা এস দীক্ষিতের দাবি, 'ওই নারীর বয়ান বিশ্বাস করা কঠিন।'

ভুক্তভোগী নারীকে তিনি প্রশ্ন করেছিলেন, কেন এত রাতে- ১১টার সময় অফিসে গিয়েছিলেন? কেন মদ খেয়েছিলেন? কেন সকাল পর্যন্ত তাঁকে (অভিযুক্তদের) থাকতে দিলেন? তিনি আরো বলেন, ভারতের কোনও নারী যখন অসম্মানের শিকার হয়, তখন তাদের আচরণ এ ধরনের হয় না।

এর পরই বিচারপতির এ ধরনের বক্তব্যের ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। বিক্ষোভও হয়েছে। অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, তাহলে ভারতে ধর্ষণের শিকার নারীদের বয়ান কেমন হবে, সে ব্যাপারে ধর্ষিতাদের জন্য গাইড কিংবা নির্দেশিকা থাকবে নাকি? কিংবা কোনও বিচারপতি আদর্শ ধর্ষণের শিকারের মানদণ্ড ঠিক করে দেবেন?

দিল্লির সিনিয়র আইনজীবী অপর্ণা ভাট দেশের প্রধান বিচারপতি এবং সুপ্রিম কোর্টের তিনজন নারী বিচারকের উদ্দেশে খোলা চিঠিতে লিখেছেন, 'যে ঘটনা সম্পর্কে আমি অবগত নই বা আইনে লেখা নেই, সে ব্যাপারে কি বিচারের কোনও বিধান নেই? আর ভারতীয় নারী মানেই কি একটি ফরম্যাটের সঙ্গে মিলে যাবে? তার হেরফের হলেই সমস্যা!'

বেঙ্গালুরুর নারী অধিকারকর্মী মধু ভূষণ বলেছেন, 'বিচারপতি যে ধরনের ভাষা ব্যবহার করেছেন, তা একেবারে হতাশ হওয়ার মতো।' এই মামলার পর্যবেক্ষণেই বিচারপতি কৃষ্ণা এস দীক্ষিত ধর্ষণের পর নারীর ঘুমিয়ে পড়া নিয়েও প্রশ্ন তুলেছিলেন। অভিযুক্ত রাকেশ বি-কে গ্রেফতারির আগেই জামিনে মুক্তি দিয়েছিল আদালত। বার ও বেঞ্চের দাবি অনুযায়ী জামিনের আবেদনের শুনানিতে বিচারপতি কৃষ্ণা দীক্ষিত বলেন, 'অভিযোগকারিণী জানিয়েছেন, ধর্ষণের পর তিনি ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। একজন ভারতীয় মহিলা এটা করতে পারেন না। আমাদের মেয়েরা ধর্ষিত হওয়ার পর এমন আচরণ করেন না।'

গত দু বছর ধরে নিগৃহীতার অফিসেরই কাজ করতেন অভিযুক্ত। বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে সে মেয়েটির সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করেছিল বলে অভিযোগ। তার অপরাধের একাধিক প্রমাণ রয়েছে বলে দাবি করে জামিন নাকচের আবেদন জানিয়েছিলেন সরকারপক্ষের আইনজীবী। অভিযুক্তকে জামিন দেওয়া হলে, তদন্তে ভুল পথে চালিত হতে পারে বলেও আদালতে জানিয়েছিলেন তিনি। তবে সেই আবেদন খারিজ করে দেয় কর্নাটক হাইকোর্ট। সূত্র: এই সময়


আরো সংবাদ



premium cement