২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

উচ্চ পর্যায়ের সামরিক বৈঠকে ভারত-চীন

- সংগৃহীত

ভারত এবং চীনের মধ্যে সাম্প্রতিক উত্তাপ কমাতে শনিবার উচ্চ পর্যায়ের  বৈঠকে বসছে দুই দেশের সেনা আধিকারিকেরা। এই ধরনের বৈঠক বহু দিনের মধ্যে হয়নি বলেই জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।

সংঘর্ষ শুরু হয়েছিল সিকিমে। ভারত-চীন সীমান্ত নাকু লা-তে। সেই ঘটনার রেশ পৌঁছে গিয়েছিল লাদাখে ভারত-চীন সীমান্তে। সীমান্তে হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়েছিল দুই দেশের সেনা। পরিস্থিতি এতটাই উত্তপ্ত হয়েছিল যে দেশের সেনাবাহিনীকে যুদ্ধের জন্য তৈরি থাকার নির্দেশ দিয়েছিলেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। ভারতও যুদ্ধের প্রস্তুতি শুরু করেছিল। এ বার সেই উত্তাপ কমাতেই লাদাখ সীমান্তে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকের সিদ্ধান্ত হলো। শনিবার সেই বৈঠকে যোগ দেবেন দুই দেশের কোর কম্যান্ডার স্তরের আধিকারিকেরা। বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, এই বৈঠকের পরে দুই দেশের মধ্যে তৈরি হওয়া উত্তাপ খানিকটা কমতে পারে।

লাদাখে ভারত-চীন সীমান্তের মাঝে আছে বিশাল প্যাংগং লেক। যার এক তৃতীয়াংশ ভারতে এবং দুই তৃতীয়াংশ চীনে। ওই লেকের ওপর দিয়েই তৈরি হয়েছে এলওসি বা লাইন অফ কন্ট্রোল। যা দুই দেশের সীমান্ত চিহ্নিত করে। মুশকিল হলো ১৯৬২ সালের যুদ্ধের সময় থেকেই ওই অংশের সীমান্ত নিয়ে দুই দেশের মধ্যে বিতর্ক আছে। ভারতের বেশ খানিকটা অঞ্চল চীন নিজের ভূখণ্ড বলে দাবি করে। আবার চীনের খানিকটা অঞ্চল ভারত নিজের বলে দাবি করে।

গত কয়েক বছর ধরে সীমান্তের এই বিতর্ক নতুন রূপ পেয়েছে। ডোকালমে ভারত এবং চীনের সৈন্যদের মধ্যে হাতাহাতি থেকে যার সূত্রপাত। এর পর লাদাখ সীমান্তে এমন হাতাহাতির ঘটনা বার বার ঘটেছে। হয়েছে পাথর ছোড়াছুড়ি। কিন্তু প্রতিবারেই স্থানীয় স্তরের ফ্ল্যাগ মিটিংয়ের মধ্য দিয়ে সমস্যার সমাধান হয়েছে। খুব বেশি হলে মেজর জেনারেল স্তরের অফিসাররা বৈঠক করে সমাধান সূত্র বার করেছেন।

কিন্তু কয়েক সপ্তাহ আগে প্রথমে সিকিমে এবং পরে লাদাখে যে গণ্ডগোল হয়েছে তার জল গড়িয়েছে বহু দূর। ভারতের অভিযোগ, সীমান্তরেখার খুব কাছে রীতিমতো বাঙ্কার তৈরি করে ফেলেছে চীন। শুধু তাই নয়, সীমান্তের ওপারে ফাইটার জেট সহ অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান নিয়ে এসেছে চীন। চীনও পাল্টা অভিযোগ করে, ভারত সীমান্তের খুব কাছে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে ফেলেছে। বস্তুত, দু'টি অভিযোগেরই প্রমাণ মিলেছে। চীন যেমন জানিয়েছে সীমান্তে যুদ্ধের জন্য তারা প্রস্তুত। ভারতও জানিয়েছে প্রত্যুত্তরের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সামরিক ভাষায় একে বলে 'মিরর পজিশন'। অর্থাৎ দুই পক্ষই প্রায় সমান সামরিক বাহিনী প্রস্তুত করে মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছে।

এই পরিস্থিতির মধ্যেই চীনের প্রেসিডেন্ট গত সপ্তাহে জানিয়ে দেন, দেশের সৈন্য যেন যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত থাকে। এ কথা কী তিনি ভারত-চীন সীমান্তের কথা মাথায় রেখে বলেছেন? করোনা আবহে অ্যামেরিকার সঙ্গেও চীনের সম্পর্ক তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। বিশ্বের আরও বেশ কয়েকটি দেশ চীনকেই করোনা সংক্রমণের জন্য দোষারোপ করছে। এই পরিস্থিতিতে কোন কথা মাথায় রেখে দেশের সেনা বাহিনীকে প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন শি জিনপিং, তা স্পষ্ট নয়। তবে তাঁর ওই মন্তব্যের পরেই ভারতও দেশের সামরিক বাহিনীকে সতর্ক করেছিল।

অবসরপ্রাপ্ত লেফটানান্ট জেনারেল উৎপল ভট্টাচার্য বলেছেন, ''চীন আগে সেনা ও সামরিক সরঞ্জাম বাড়ানোয় ভারতকেও বাড়াতে হয়েছে। আলোচনায় বসার আগে নিজের শক্তি ও প্রস্তুতি ঠিক রাখা দরকার। তা হলেই সমানে সমানে আলোচনা হয়।''

সীমান্ত পরিস্থিতি নিয়ে দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক স্তরে কথাও হয়। তারই জেরে শনিবারের বৈঠক বলে মনে করছে বিশেষজ্ঞ মহল। বলা হচ্ছে কোর কম্যান্ডার স্তরের এমন বৈঠক বহু দশকের মধ্যে ঘটেনি। পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখেই উত্তাপ কমাতে এমন আলোচনার ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে মনে করছেন অনেকে। তবে বিশেষজ্ঞদের একাংশের বক্তব্য, শনিবারের বৈঠক সফল হলেও অদূর ভবিষ্যতে লাদাখ সীমান্তে মিরর পজিশন উঠবে বলে মনে হয় না। কোনও দেশেই দ্রুত সামরিক সরঞ্জাম সরিয়ে নেবে না। হয়তো ভাগে ভাগে তা কমানো হবে। সূত্র : ডয়চে ভেলে


আরো সংবাদ



premium cement