২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

২২ বিদ্রোহী নেতাকে ভারতের হাতে তুলে দিলো মিয়ানমার

মিয়ানমারের একটি নাগা-অধ্যুষিত এলাকায় মোতায়েন সে দেশের সেনাবাহিনী - সংগৃহীত

ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে সক্রিয় বিভিন্ন সশস্ত্র বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীর অন্তত ২২ জন নেতাকে ভারতের হাতে তুলে দিয়েছে প্রতিবেশী মিয়ানমার।

এই প্রথমবারের মতো মিয়ানমার ভারতকে এ ধরনের সহযোগিতা করল – এবং এত দিন মিয়ানমারে ঘাঁটি গেড়ে থাকা এই জঙ্গী নেতাদের বৃহস্পতিবার বিকেলেই আকাশপথে ইম্ফল বিমানবন্দরে নিয়ে আসা হয়েছে বলে বিবিসি বাংলা জানতে পেরেছে।

এই মুহুর্তে ওই নেতাদের আসামের রাজধানী গুয়াহাটির একটি হোটেলে কোয়ারেন্টিনে রাখা হযেছে – এবং তাদের লালারসের (সোয়াব) নমুনা কোভিড পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে।

পর্যবেক্ষকরা ধারণা করছেন, এই পদক্ষেপ ভারত ও মিয়ানমারের মধ্যে ক্রমবর্ধমান ঘনিষ্ঠতারই আর একটি প্রমাণ – এবং রোহিঙ্গা ইস্যুতে ভারতও যে মিয়ানমারকে কখনওই তেমন চাপ প্রয়োগ করবে না তারই স্পষ্ট ইঙ্গিত।

এর আগে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সশস্ত্র বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীগুলির নেতাদের ধরার ক্ষেত্রে ভারত প্রতিবেশী ভুটান ও বাংলাদেশের সক্রিয় সহযোগিতা পেলেও মিয়ানমারের কাছ থেকে এই ধরনের সাহায্য কিন্তু আগে পাওয়া যায়নি।

এর আগে ২০০৩ সালের ডিসেম্বরে ভুটানের সেনাবাহিনী সে দেশের অভ্যন্তরে আলফা-সহ যে সব গোষ্ঠীর শিবির ছিল, তাদের বিরুদ্ধে 'অপারেশন অল ক্লিয়ার' পরিচালনা করে ওই সব শিবিরগুলো কার্যত নির্মূল করে দেয়।

বাংলাদেশে ২০০৯ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওযামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকে অরবিন্দ রাজখোয়া, অনুপ চেতিয়ার মতো শীর্ষস্থানীয় আলফা নেতাদের এবং বোড়ো আন্দোলনের নেতাদেরও ভারতের হাতে একে একে তুলে দেওয়া হয়েছে – পরে এই নেতারা ভারতের সঙ্গে শান্তি আলোচনাতেও যোগ দিয়েছেন।

ভারতের অনুরোধে যেভাবে সাড়া দিল মিয়ানমার

মিয়ানমারের ক্ষেত্রে পরিস্থিতিটা ছিল একটু আলাদা। বিশেষত নাগাল্যান্ড ও মণিপুরের জঙ্গি গোষ্ঠীগুলো বহুদিন ধরেই সীমান্ত লাগোয়া মিয়ানমারের পাহাড় ও গহীন জঙ্গলগুলোকে নিজেদের ঘাঁটি ও প্রশিক্ষণ শিবির হিসেবে ব্যবহার করে এসেছে।

এমন কী অতীতে মিয়ানমার সরকার ভারতের সীমান্তঘেঁষা এলাকায় প্রশাসন চালানোর জন্য নাগা জঙ্গি গোষ্ঠী এনএসসিএন (খাপলাং) গোষ্ঠীর সঙ্গে একটি সমঝোতাও সই করেছিল – যদিও এনএসসিএন (খাপলাং) তখন ভারতে পুরোপুরি একটি নিষিদ্ধ সংগঠন।

কিন্তু গত বছরের গোড়া থেকে এই ছবিটা পাল্টাতে শুরু করে। এনএসসিএন (খাপলাং) গোষ্ঠীর সুপ্রিমো এস এস খাপলাং-য়ের মৃত্যুর পর ২০১৯-এর ফেব্রুয়ারিতে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী সাগায়িং অঞ্চলে ওই গোষ্ঠীর সদর দফতর দখল করে নেয়।

তার ঠিক আগের মাসেই সীমান্ত এলাকায় অভিযান চালিয়ে তারা আসাম, মণিপুর ও নাগাল্যান্ডের ২৪জন জঙ্গী নেতাকে আটক করে – পরে সে দেশের হকামটি জেলার আদালত তাদের প্রত্যেককে দুবছরের কারাদন্ডও দেয়।

সেটাই ছিল ভারতের প্রতি মিয়ানমারের প্রথম স্পষ্ট সংকেত যে তারা উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ভারতের জঙ্গী দমন অভিযানে সাহায্য করতে প্রস্তুত।

কোন নেতাদের ভারতের হাতে তুলে দেয়া হলো?

মিয়ানমারের সাগায়িং এলাকায় একটি নাগা বাড়ি। এনএসসিএন (খাপলাং)-এর মূল ঘাঁটি ছিল এ অঞ্চলেই
ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছে, গত বছরের জানুয়ারিতে ধরা পড়া ২৪ জন বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতার মধ্যে ২২ জনকেই এ সপ্তাহে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী 'তাতমাদও' ভারতের হাতে তুলে দিয়েছে।

এদের মধ্যে সুপরিচিত নাম হলো সশস্ত্র বোড়ো গোষ্ঠী এনডিএফবি (এস)-এর স্বঘোষিত স্বরাষ্ট্রসচিব রাজেন দইমারি, মণিপুরের ইউএনএলএফ-এর ক্যাপ্টেন সনাতোম্বা নিংথৌজাম এবং প্রিপাক (প্রো) গোষ্ঠীর লে: পশুরাম লাইশরাম।

এছাড়া এনডিএফবি (সংবিজিৎ) এবং কামতাপুর লিবারেশন অর্গানাইজেশনের (কেএলও) বেশ কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় নেতাও ওই দলে রয়েছেন।

বৃহস্পতিবার বিকেলে বিশেষ বিমানে এই নেতারা ইম্ফলে এসে পৌঁছলে তাদের প্রথমে মণিপুর পুলিশের হাতে তুলে দেয়া হয়।

পরে সড়কপথে তাদের নিয়ে আসা হয় আসামে। এই জঙ্গী নেতারা ভারতের সঙ্গে সহযোগিতায় প্রস্তুত কি না, সেটা যাচাই করে দেখার পরই তাদের ব্যাপারে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে।

মোদি ও সু চি-র ঘনিষ্ঠতা বাড়ছে?

তবে জঙ্গি নেতাদের প্রত্যর্পণে মিয়ানমারের এই সিদ্ধান্তকে ভারতে অনেক পর্যবেক্ষকই একটি খুব গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ বলে বর্ণনা করছেন।

সাম্প্রতিক অতীতে মিয়ানমারে ভারতের রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন করেছেন এমন একজন সাবেক কূটনীতিকের কথায়, "নরেন্দ্র মোদির আমলে যে দেশগুলোর সঙ্গে ভারতের সম্পর্কে খুব দ্রুত উন্নতি হয়েছে তার অন্যতম হল মিয়ানমার।"

"মিয়ানমারে চীনেরও প্রভাব বিস্তারের প্রবল চেষ্টা আছে ঠিকই, কিন্তু তার পরও সে দেশের সেনাবাহিনী ও স্টেট কাউন্সেলর আং সান সু চি – উভয়ের সঙ্গেই ভারতের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে উঠেছে।"

"দিন-পনেরো আগেও মোদি ও সু চি-র মধ্যে টেলিফোনে দীর্ঘ আলাপ হয়েছে।"

"আর এই জঙ্গী নেতাদের হস্তান্তর এটাই বুঝিয়ে দিচ্ছে যে রোহিঙ্গা ইস্যুতে ভারতও মিয়ানমারের বিরুদ্ধে মোটেই কঠোর অবস্থান নেবে না – তা সে এই অঞ্চলের অন্যান্য দেশের প্রত্যাশা যা-ই হোক না-কেন!", বলছিলেন ওই সাবেক রাষ্ট্রদূত, যিনি নিজের নাম প্রকাশ করতে রাজি নন।
সূত্র : বিবিসি


আরো সংবাদ



premium cement
আমরা একটা পরাধীন জাতিতে পরিণত হয়েছি : মেজর হাফিজ তরুণীর লাশ উদ্ধারের পর প্রেমিকসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা ভিয়েনায় মুসলিম বিশ্বের রাষ্ট্রদূতদের ইফতারে ইসলামিক রিলিজিয়াস অথোরিটি আমন্ত্রিত এবার বাজারে এলো শাওমির তৈরি বৈদ্যুতিক গাড়ি সকল কাজের জন্য আল্লাহর কাছে জবাবদিহিতার অনুভূতি থাকতে হবে : মাওলানা হালিম বিএনপি জনগণের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য রাজনীতি করে : ড. মঈন খান সাজেকে পাহাড়ি খাদে পড়ে মাহিন্দ্রচালক নিহত জমি রেজিস্ট্রি করে না দেয়ায় বাবার কবরে শুয়ে ছেলের প্রতিবাদ ইসরাইলি হামলায় গাজায় আরো ৭১ জন নিহত পানছড়ি উপজেলায় চলমান বাজার বয়কট স্থগিত ঘোষণা আওয়ামী লীগ দেশের স্বাধীনতাকে বিপন্ন করেছে : দুদু

সকল