১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

‘করোনা রোগীকে অপরাধী বানিয়ে দেবেন না’

কোভিড-১৯ এর সাথে লড়াইয়ে সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি বদলের ডাক দিয়েছেন এক করোনা-রোগী। - প্রতীকী ছবি

কোভিড-১৯ এর সাথে লড়াইয়ে সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি বদলের ডাক দিয়েছেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গের দ্বিতীয় করোনা-রোগী। ২২ বছরের ওই তরুণ বলছেন, ‘করোনায় আক্রান্ত হয়েছে মানে অপরাধী বানিয়ে দেবেন না! সমাজের মানসিকতা না বদলালে রোগ লুকোনোর প্রবণতা বাড়বে। সেটা খুবই ভয়ের।’

বালিগঞ্জের বাসিন্দা ওই যুবক লন্ডন বিজনেস স্কুলের ম্যানেজমেন্টের ছাত্র। তিনি ছাড়াও তার বাবা, মা এবং বাড়ির পরিচারক করোনার শিকার হয়ে বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। তার বাবা সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরেন ৩১ মার্চ। শনিবার ছুটি হয় তরুণ এবং তাদের গৃহকর্মীর। দ্বিতীয় দফায় লালারসের নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট নেগেটিভ আসার পরে বুধবার মায়েরও ছুটি হয়েছে। তাদের সকলেই আপাতত ১৪ দিনের জন্য হোম কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন।

বালিগঞ্জের তরুণ এ দিন বলেন, ‘আমি আক্রান্ত হওয়ায় আমার পরিবারকে কার্যত অপরাধী বানানো হয়েছে। এটা ঠিক নয়। আমি তো জেনেবুঝে আক্রান্ত হইনি। উপসর্গ দেখা না দিলে বুঝব কী করে যে, আমি আক্রান্ত! বন্ধুদের গ্রুপের আলোচনা থেকে বুঝেছি, এই মানসিকতার জন্য অনেকে ভয়ে পরীক্ষার জন্য এগিয়ে আসছেন না। পরীক্ষা করাতে গেলে তার পরিবারের সাথে দুর্ব্যবহার করা হবে ভেবে অনেকে পিছিয়ে যাচ্ছেন। করোনার সাথে লড়াই করতে হলে এই মানসিকতার বদল ঘটাতে হবে।’

হাসপাতালে থাকলেও দেশে-বিদেশে কী ঘটছে, নেট-দুনিয়ার মাধ্যমে সেই বিষয়ে অবহিত ছিলেন ওই তরুণ। ইনদওরে চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীদের উপরে যে পাথর ছোড়া হয়েছে, সেটা তার অজানা নয়। এ রাজ্যে আইডি-সহ বিভিন্ন হাসপাতালের চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মীদের একাংশও সামাজিক ফতোয়ার মুখে পড়েছেন। ‘চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মীদের উপরে পাথর ছোড়া হচ্ছে। তাদের ঘরে থাকতে দেয়া হচ্ছে না। এ-সব কী,’ প্রশ্ন তরুণের।

১৩ মার্চ লন্ডন থেকে দিল্লি হয়ে কলকাতায় ফেরেন ওই তরুণ। দিল্লি ও কলকাতা বিমানবন্দরে তার কোনো উপসর্গ ছিল না। হালকা জ্বরের উপসর্গ নিয়ে ১৭ মার্চ তিনি আইডি হাসপাতালে যান। সেদিন তাকে ভর্তি করা হয়নি। আইডি থেকে ফেরার পরে তরুণ জানতে পারেন, অন্য রাজ্যের বাসিন্দা, তার দুই বন্ধুর করোনা ধরা পড়েছে। পরের দিন তরুণকে ভর্তি করে নেয় আইডি।

তরুণ জানান, তার জ্বর কখনো একশোর উপরে ওঠেনি। বহির্জগৎ এই ভাইরাস নিয়ে কতটা আতঙ্কিত, হাসপাতালে থাকাকালীন সেটা ভালই টের পেয়েছেন তিনি। ওই তরুণ জানান, ইনফ্লুয়েঞ্জার মৌসুমে সামান্য জ্বর হলেও পরিচিতরা ফোন করে জানতে চাইতেন, করোনা হয়নি তো! তরুণের কথায়, ‘করোনা রোগ নিয়ে এত ভয় পাওয়ার কিছু নেই। এর মোকাবিলা করার প্রতিরোধক্ষমতা কমবয়সীদের মধ্যে রয়েছে।’

একই সাথে ওই তরুণ জানাচ্ছেন, এক জন কমবয়সীর জন্য একটি বয়স্ক মানুষ যাতে সংক্রমিত না হন, সেই দায়িত্ব পালন করতে হবে। যেসব প্রবীণের অন্য অসুখ রয়েছে, তাদের এই ভাইরাস থেকে রক্ষা করতে হবে। আতঙ্ক নয়, দরকার সতর্কতা।

ছেলের বক্তব্য সমর্থন করে বাবা জানান, স্ত্রীর একাধিক নমুনা পজিটিভ হওয়ায় তিনি কিছুটা চিন্তিত ছিলেন। তবে এখন সেসব অতীত। বছর আটচল্লিশের ওই প্রৌঢ় ডায়াবেটিসের রোগী। ইনসুলিন নেন। তার কথায়, ‘করোনাকে ভয় পাবেন না। আমাদের রাজ্যে যে চিকিৎসা হচ্ছে, তা বিদেশের সাথে তুলনীয়। ছোট ছোট জিনিসও খেয়াল রাখা হচ্ছে। সরকারি হাসপাতালে এত ভালো পরিষেবা পাব, আশা করিনি। আতঙ্কিত না হয়ে পারস্পরিক দূরত্ব মেনে চলুন। সেটাই সব নাগরিকের কর্তব্য হওয়া উচিত।’

সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা


আরো সংবাদ



premium cement