২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

করোনাভাইরাস : ভারতে মাওলানা সাদ ও তাবলিগ জামাত কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে মামলা

- সংগৃহীত

তাবলিগ জামাতের নেতা মাওলানা সাদ ও নিজামুদ্দিন মারকাজ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। মঙ্গলবার মহামারি আইনে এই মামলা করা হয়েছে বলে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলোতে বলা হয়।

এনডিটিভি, ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, কোলকাতা ২৪-সহ ভারতীয় বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়, নিজামুদ্দিন মারকাজের সমাবেশে এসেছিলেন কয়েক হাজার মানুষ। সেখান থেকে শতাধিক মানুষের মধ্যে করোনা সংক্রমণের সম্ভাবনা তৈরি হয়। এখন পর্যন্ত ওই জমায়েতে ছিলেন এমন ২৪ জনের শরীরে ভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে। এছাড়া সাতজনের মৃত্যু হয়েছে করোনায় আক্রান্ত হয়ে। ইতোমধ্যেই সিল করে দেওয়া হয়েছে সেই মসজিদ। সেখানকার আবাসিকদের বাড়িও পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় তাবলিগ জামাতের সদস্যদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। মহামারি আইনে মামলা করা হয়।

দিল্লির পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সামাজিক, রাজনৈতিক বা ধর্মীয় জমায়েতের ক্ষেত্রে সরকারি আদেশ লঙ্ঘনের দায়ে মহামারি রোগ আইনের ধারা এবং ভারতীয় দণ্ডবিধির অন্যান্য ধারায় মাওলানা সাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।

ভারতের রাজধানী দিল্লির একটি মসজিদে হওয়া ধর্মীয় সমাবেশ থেকে ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়েছে করোনা সংক্রমণ। তাবলিগ-জামাতের ওই সমাবেশে যোগ দিয়ে বহু মানুষ করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। আর এরই মধ্যে করোনায় আক্রান্ত হয়ে সাত জনের মৃত্যু হয়েছে। মারকাজ নিজামুদ্দিন নামে পরিচিত ওই মসজিদটি তাবলিগ জামাতের সাদপন্থীদের কেন্দ্রীয় দপ্তর হিসেবে পরিচিত।

এরপরই নিজামুদ্দিনে অনুষ্ঠান আয়োজন করার জন্য মাওলানা সাদ ও অন্যান্য উদ্যোক্তাদের বিরুদ্ধে ভারতের ১৮৯৭ সালের এপিডেমিক ডিজিজ অ্যাক্ট, ১৮৯৭ ও ভারতীয় দণ্ডবিধির অন্য ধারা অনুযায়ী মামলা দায়ের করা হয়েছে।

এদিকে, এই মসজিদটিতে একটি ধর্মীয় সমাবেশ উপলক্ষে মার্চ মাসের ২১ তারিখে অন্তত দুই থেকে আড়াই হাজার লোক সমবেত হয়েছিলেন। শহরের একটি অত্যন্ত ঘিঞ্জি এলাকায় একটি ছয় তলা ভবনের ডর্মিটরিতে তারা সবাই গাদাগাদি করে ছিলেন। এর মধ্যে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের মুসলিমরা যেমন ছিলেন, তেমনি ছিলেন বহু বিদেশি নাগরিকও। ওই সমাবেশে যোগ দিয়ে নিজেদের রাজ্যে ফিরে যাওয়ার পর গতকাল (সোমবার) তেলেঙ্গানাতে ছ'জন ব্যক্তি করোনাভাইরাস সংক্রমিত হয়ে মারা গেছেন। আর এর আগে নিজামুদ্দিন থেকে ফিরে গিয়ে কাশ্মীরের এক ধর্মীয় নেতাও শ্রীনগরে কয়েকদিন আগে মারা যান। তিনি আবার কাশ্মীরে ফেরার আগে উত্তরপ্রদেশের দেওবন্দেও ঘুরে যান এবং কাশ্মীরে গিয়েও বেশ কয়েকটি ধর্মীয় সমাবেশে যোগ দেন। 

এছাড়া তামিলনাডুতে দুটি এবং দিল্লিতে আরো একটি করোনাভাইরাস-জনিত মৃত্যুর সঙ্গেও দিল্লির এই তাবলীগ জামাতের সংযোগ টানা হচ্ছে, যদিও সেই দাবি এখনো পুরোপুরি নিশ্চিত করা যায়নি। মারকাজ নিজামুদ্দিনে অবস্থানরত প্রায় তিনশ ব্যক্তিকে করোনাভাইরাসের মতো উপসর্গ নিয়ে সোমবার দিল্লির বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে, যার মধ্যে অন্তত ২৪ জনের আজ পরীক্ষার ফল 'পজিটিভ' এসেছে।

এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়, অবহেলার কারণে কয়েকশ লোকের জীবন বিপন্ন হওয়ায় দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল নিজামুদ্দিন মসজিদ প্রশাসনের বিরুদ্ধে মামলার নির্দেশ দিয়েছেন পুলিশকে। তিনি জানিয়েছেন, ওই মারকাজ মসজিদ থেকে বেরিয়ে আসা ৪৪১ জনকে করোনা ভাইরাসের লক্ষণসহ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

করোনা ভাইরাসের কারণে সামাজিক দূরত্বের নিয়ম উপেক্ষা করে প্রায় ২ হাজার লোক সেই মসজিদ কমপ্লেক্সে অবস্থান করছিলেন। ৮ থেকে ১০ মার্চ পর্যন্ত তাবলিগ জামাতের দুই দিনের ধর্মীয় সমাবেশ ২৮০ জন বিদেশিও ছিলেন। এদের মধ্যে মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড, নেপাল, মিয়ানমার, কিরঘিস্তান, সৌদি আরব, আফগানিস্তান, আলজেরিয়া, জিবুতি, বাংলাদেশ, ইংল্যান্ড, ফিজি, ফ্রান্স বা কুয়েতের মতো বিভিন্ন দেশ থেকে আসা প্রায় ৩শ তাবলিগ সদস্য ছিলেন।

দিল্লির স্বাস্থ্যমন্ত্রী সত্যেন্দ্র জৈন বলেছেন, নির্দেশ অমান্য করে সমাবেশ করায় তাদের বিরুদ্ধে যাতে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয় সেই জন্য সুপারিশ করে দিল্লির লেফটেন্যান্ট গভর্নরের কাছেও চিঠি লিখেছি।

এদিকে তাবলিগ জামাত কর্তৃপক্ষ এক বিবৃতিতে দাবি করেছে, প্রথমে দিল্লি সরকার এবং পরে প্রধানমন্ত্রী মোদি লকডাউন ঘোষণা করার পরই সারা দেশে ট্রেন ও বাস চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। সে কারণেই তাদের সদস্যরা আটকা পড়েন এবং এক জায়গায় ঠাসাঠাসি করে থাকতে বাধ্য হন।

আনন্দবাজার পত্রিকা জানায়, তাবলিগ জামাতের সদর দফতর নিজামুদ্দিন মারকাজের এক মুখপত্র ইউসুফ বলেন, ওই সভা সরকারি সমস্ত আইন মেনেই হয়েছিল। তারা স্থানীয় থানার সঙ্গে যোগাযোগ করে চলেছেন।

টাইমস অব ইন্ডিয়ার খবরে বলা হয়, শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ওই ধর্মীয় সম্মেলনে অংশ নেওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে ৫০ জন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন।

এদিকে নিজামুদ্দিনের ঘিঞ্জি এলাকার ভেতর অবস্থিত ওই ছয় তলা মসজিদ ভবনটিকে আজ মঙ্গলবার সকালে পুলিশ সিল করে দেয়। ভেতরে তখনো যে সাতশর মতো লোক ছিলেন তাদের সবাইকে সরকারি বাসে করে দিল্লির বিভিন্ন প্রান্তে কোয়ারেন্টিন সেন্টারগুলোতে পাঠানো হয়েছে। সূত্র : ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস


আরো সংবাদ



premium cement