‘জানলামও না মানুষটা কেমন’
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ২১:২৮
সবে বিয়ে হয়েছে। একসাথে অনেকটা পথ যাওয়ার কথা ছিল দুজনের। কিন্তু বিয়ের ১২ দিনের মাথায়ই ভেঙে গেল সব স্বপ্ন। দুপুরে ভাত খেয়ে বাড়ি থেকে বের হয়েছিলেন সদ্য বিবাহিত ২২ বছরের আশফাক হুসেন। আর বাড়ি ফেরা হয়নি তার। এমনকি মেলেনি তার লাশটিও। অপর দিকে তিন দিন ধরে গায়ে জ্বর নিয়ে ঘরের কোণে পড়ে আছেন তার স্ত্রী ২১ বছর বয়সী তসলিন ফতিমা। ঘুমের মধ্যেও মৃত স্বামীকে হাতড়ে চলেছেন আর বলছেন, ‘স্বামীকে জানার, চেনার সুযোগটাই যে মিলল না!’
পূর্ব দিল্লির গোকুলপুরীর অন্তর্গত মুস্তফাবাদের ঘিঞ্জি গলির এক পাশে সপরিবারে বাস করতেন অশফাক। পেশায় বিদ্যুৎকর্মী ছিলেন তিনি। গত ১৪ ফেব্রুয়ারি ভ্যালেন্টাইন্স ডেতে উত্তরপ্রদেশের বুলন্দশহরের সাখনিতে তসলিনের সাথে বিয়ে হয় তার। পরিবার পরিজনকে নিয়ে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শেষ করতেই লেগে যায় বেশ কয়েক দিন। ভেবেছিলেন সব আনুষ্ঠানিকতা সেরে দিল্লি ফিরবেন। তসলিনকে নিয়ে সেখানেই নতুন জীবন শুরু করবেন।
কিন্তু কাজের প্রয়োজনে রোববার রাতে একাই মুস্তফাবাদের বাড়িতে ফিরে আসেন আশফাক। ঠিক ওই সময়ই জাফরাবাদ ও মৌজপুরে বিক্ষোভ শুরু হয়। উত্তরপ্রদেশেও সে খবর পৌঁছায়। ২৫ ফেব্রুয়ারি সকালে শ্বশুরবাড়ির লোকজনের সাথে পর দিন ফিরে আসেন তসলিনও। নতুন বউ হিসেবে ওই দিন রান্নার ভার তার কাঁধেই পড়ে। দপুর ২টার দিকে পরিবারের সকলে একসাথে খাওয়া-দাওয়া করেন। এটাই প্রথম পাশাপাশি বসে খাওয়ার সুযোগ হয় তসলিন ও আশফাকের।
কিন্তু দুপুরে খাওয়ার পরই একটি ফোন আসে আশফাকের কাছে। বলা হয়, এক বাড়িতে আচমকা বিদ্যুৎ চলে গেছে। পরস্পরকে সেটাই শেষ দেখা তাদের। সেই যে বের হয় আর ফেরা হয়নি আশফাকের। বাড়ি থেকে কিছু দূর এগোতেই গুলিবিদ্ধ হন তিনি। পরিবারের লোকজন কিছু জানার আগে স্থানীয়রাই তাকে নিউ মুস্তফাবাদের আল হিন্দ হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানেই মৃত্যু হয় আশফাকের। ময়নাতদন্তের জন্য পরে গুরু তেগবাহাদুর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় তার দেহ। কিন্তু শুক্রবার পর্যন্ত তার দেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়নি।
ভারতীয় গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, রোববার রাত থেকেই বন্দুক, লাঠি ও পেট্রল বোমা নিয়ে মুস্তফাবাদে ঢুকতে শুরু করে তাণ্ডবকারীরা। ধীরে ধীরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। পুলিশ এবং দমকলবাহিনীকে একাধিক বার ফোন করা হলেও, কারো দেখা মেলেনি। বুধবার এলাকায় অ্যাম্বুল্যান্সও ঢুকতে পারেনি। এলাকার একটি মসজিদে আগুন ধরিয়ে দেয় দুষ্কৃতীরা। আগুন ধরানো হয় একটি স্কুলেও। একাধিক বাড়িতে ভাঙচুর চালানো হয়। পুলিশ সময় মতো দায়িত্ব পালন করলে পরিস্থিতি এতদূর গড়াত না বলে দাবি করেন আশফাকের চাচা মুখতার আহমেদ। গত তিন দিন ধরে ছেলের ওয়ার্কশপে বসে কেঁদে চলেছেন আশফাকের বাবা। শুধু নিজের ছেলে নয়, চার দিনব্যাপী সহিংসতায় যারা নিহত হয়েছেন তাদের সকলকে শহীদ ঘোষণা করতে হবে বলে দাবি করেন তিনি। এই পরিস্থিতিতেও সরকার অপরাধীদের কড়া শাস্তি দেবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
আর তসলিন? কিছু বলার মতো অবস্থায় নেই তিনি। একটি ঘরে গত তিন দিন ধরে জ্বর নিয়ে পড়ে রয়েছেন। এই তিন দিনে একটি দানাও মুখে তোলেননি তিনি। পানি পর্যন্ত ছুঁয়ে দেখেননি। মুখে একটাই আফশোস, ‘মানুষটা কেমন, তা জানতেও পারলাম না।’
সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা