২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

একজনের ভোট নিতে ব্যাপক আয়োজন

- ছবি : সংগৃহীত

ভারতে আসন্ন নির্বাচনের সময় একজন ভোটারের ভোট গ্রহণ করতে মাইলের পর মাইল পাহাড় চড়বেন ১০ জন নির্বাচন কর্মী। আর অন্য আরেকজন ভোটারের ভোট সংগ্রহ করতে ভোটকর্মীদের গভীর জঙ্গল পাড়ি দিতে হবে।

এই দুই ভোটারের একজন হলেন সকেলা তায়াং। তিনি থাকেন চীন, মিয়ানমার ও ভুটানের সীমান্তবর্তী অরুণাচল প্রদেশে। অন্য ভোটার ভারতদাস দর্শনদাসের বাস পাকিস্তান লাগোয়া গুজরাট রাজ্যের গির অভয়ারণ্যে।

এই দুই ভোটারের মধ্যে ব্যবধান প্রায় ৩,৫০০ কিলোমিটার। তারা একজন আরেকজনকে চেনেন না। কিন্তু ৯০ কোটি ভোটারের দেশে বিশ্বের সবচেয়ে বড় গণতন্ত্রের উৎসবে দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে একই ভূমিকায় দেখা যাবে দুই প্রান্তের দুই ভোটারকে।

১১ এপ্রিল থেকে শুরু হচ্ছে ভারতের সাধারণ নির্বাচন। এবার নির্বাচন কমিশনের স্লোগান, ‘‌কেউ বাদ নয়, কারও ভোট বাদ নয়।’ এই স্লোগানকে বাস্তবায়িত করে তুলতে অরুণাচল প্রদেশ ও গুজরাট রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনি কর্মকর্তারা বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে।

সকেলার জন্য
অরুণাচলের রাজধানী ইটানগর থেকে ৩০০ মাইল দূরে আনজাও জেলা। সেখানকার একটি গ্রামের নাম মালোগাম। প্রধান সড়ক থেকে সেখানে যেতে ২৪ মাইল পাহাড়ি পথ পাড়ি দিতে হয়। এই পথ যেতে ভোটকর্মীদের প্রায় ১১ ঘণ্টা সময় লাগবে।

৩৯ বছর বয়সি সকেলা একজন গৃহবধূ। স্বামী, সন্তানদের নিয়ে বসবাস করেন চীন, মিয়ানমার ও ভুটান লাগোয়া ওই গ্রামে। গতবার তার স্বামীও ভোট দিয়েছিলেন। এবার যে-কোনো কারণেই হোক অন্য বুথে স্ত্রীর নাম স্থানান্তর করিয়েছেন তার স্বামী। তবে, আগের মতোই ভোট দেবেন সকেলা।

অরুণাচল রাজ্য নির্বাচন দপ্তরের নোডাল অফিসার লর্ড তাকার এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, ‘‌‘‌একজন ভোটার বলে ভোটগ্রহণ কেন্দ্রের আয়োজন কম হবে, এমনটা নয়। কমিশনের নির্দেশিকা মেনে সব ব্যবস্থাই করতে হচ্ছে। ‘‌একজন ভোটারও যেন বাদ না পড়ে’ কমিশনের এই স্লোগানকে সামনে রেখে আমরা সব ব্যবস্থা করছি। ১০ থেকে ১৮ জন ভোটকর্মী মালোগামে গিয়ে সকেলার ভোট গ্রহণ করবেন।’’‌‌

রাজ্যের ডেপুটি নির্বাচন কমিশনার লিয়েন কোয়ু জানিয়েছেন, ‘‌‘‌রাজ্যে মোট ২ হাজার ২০২ ভোটগ্রহণ কেন্দ্রের মধ্যে সাতটি এমন ভোটগ্রহণ কেন্দ্র এমন আছে, যেখানে মোট ভোটারের সংখ্যা ১০ জনের চেয়ে কম। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী ভোট গ্রহণের দিন, ১১ এপ্রিল সকাল ৭টা থেকে সন্ধ্যা ৫টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ কেন্দ্র খুলে রাখতে হবে। নির্বাচন কর্মী ও অফিসাররা আগের দিন, অর্থাৎ ১০ এপ্রিল রওনা হবেন। জানা নেই, সকেলা কখন ভোট দিতে আসবেন। আগেভাগে ভোট দেয়ার জন্য কাউকেই চাপ দেয়া চলে না।’’

‌আবার রাজ্যে এমন ভোটগ্রহণ কেন্দ্রও আছে, যেখানে ভোটারদের ভোট দিতে যেতে ৩০ মাইল পাহাড়ি পথ পাড়ি দিতে হয়। এমন বুথের সংখ্যা ৫১৮। এই হেঁটে পাহাড়ি পথ বেয়ে সংবাদ আদান-‌প্রদানের জন্য বেশ কয়েকজন ‘‌রানার'‌কে ভাড়া করেছে নির্বাচন কমিশন। বলে রাখা ভালো, ষোড়শ ও সপ্তদশ শতকের সেই মোঘল আমল থেকেই ভারতে হাঁটা পথের সংবাদ বাহকের চল আছে।

ভারতদাসের জন্য
গুজরাটের সোমনাথ জেলার গির অভয়ারণ্য সিংহের জন্য বিখ্যাত। সেই গভীর জঙ্গলে একা বাস করেন এক সাধু। তার নাম ভারতদাস দর্শনদাস। তার জন্যও ইভিএম এবং ভিভিপ্যাট নিয়ে গভীর জঙ্গলের উদ্দেশে রওনা হবেন জনা দশেক ভোটকর্মী। সেখানে ভোটগ্রহণ হবে ২৩ এপ্রিল।

গির সোমনাথের ডেপুটি জেলা নির্বাচন অফিসার ভি এম প্রজাপতি জানান, ‘‌‘‌রাজ্যের উনা জেলার বানেজ এলাকার একমাত্র ভোটার ভারতদাস। কারও ভোট যেন বাদ না পড়ে, সেই লক্ষ্যে তার ভোটগ্রহণ করতে তার কাছে পৌঁছবেন ভোটকর্মীরা। অতীতেও একইভাবে তার ভোটগ্রহণ করা হয়েছে। প্রতিবারই তিনি ভোট দেন।’’

সূত্র : ডয়েচে ভেলে।


আরো সংবাদ



premium cement