চাকরির বয়সসীমা প্রসঙ্গ
- অধ্যাপক ডা: শাহ মো: বুলবুল ইসলাম
- ২৭ মে ২০২৪, ০৫:২৭
বাংলাদেশে শিক্ষার লক্ষ্যই হচ্ছে যেন শিক্ষা শেষে চাকরিজীবী হওয়া। ছাত্রাবস্থায় কমবেশি সবার মনেই একটি সুপ্ত আকাক্সক্ষা থাকে- সরকারি চাকরিতে যোগদানের। লাখ লাখ শিক্ষিত তরুণের জন্য চাকরির জোগান স্বাভাবিকভাবেই যেকোনো সরকারের পক্ষেই সম্ভব নয়। তাদের সীমিত সরকারি চাকরির জন্য কঠোর প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হতে হয়। গত কয়েক বছর ধরে সরকারি চাকরির পূর্ব নিধারিত বয়সসীমা ৩৫ বছর করার জন্য চাকরিপ্রার্থীরা আন্দোলন করে আসছেন। ২০-২১ সালের কোভিড মহামারীর কারণে সরকারি চাকরির নিয়োগ বন্ধ থাকায় তারা বয়সসীমা বাড়াতে চাইছেন। কোভিড মহামারীর সময় পৃথিবীজুড়ে স্বাভাবিক কাজকর্ম বন্ধ হয়ে যাওয়ার প্রান্তে পৌঁছেছিল নিঃসন্দেহে। পরবর্তী সময়ে প্রায় প্রতিটি দেশই কোভিডজনিত স্থবিরতা কাটিয়ে উঠেছে। আমাদের দেশেও এর ব্যত্যয় ঘটেনি। শুধু শিক্ষাঙ্গন এখনো এর জের বয়ে চলছে। এর নেতিবাচক প্রভাব সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমায় পড়েছে।
স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়কে পুষিয়ে নেয়ার জন্য ঘন ঘন পরীক্ষা নিয়ে অত্যন্ত দ্রুততার সাথে সেশনজট সাধারণ পর্যায়ে নিয়ে আসা হয়েছিল। কিন্তু এখন সেশনজটের ভোগান্তি বাড়ছে। একজন শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন শেষ করতে প্রায় ২৮-২৯ বছর লেগে যায়। দেশের ভবিষ্যৎ কাণ্ডারীদের জীবন থেকে এভাবে ৪-৫টি বছর হারিয়ে যাচ্ছে অজান্তেই। অথচ অতি সাধারণ হিসেবে এইচএসসিতে দুই বছর, অনার্সে চার বছর, মাস্টার্সে এক বছর হিসেব করলে ২৩ বছরের ভেতর শিক্ষাজীবন শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু সেশনজটের কারণে তা হচ্ছে না। ফলে চাকরির বয়স বিতর্ক বাড়ছে। ২৮ বছর সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়স সীমা নির্দিষ্ট করা যায় যদি সেশনজট মুক্ত শিক্ষাজীবন হয়। সেশন জটের কারণে ছাত্রছাত্রীদের জীবন থেকে ৫-৭টি বছর হারিয়ে যাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশের ভবিষ্যৎ, জাতীয় অর্থনীতি ও জাতীয় উৎপাদন। একই সাথে তারা বিদেশে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে অসুবিধায় পড়েন।
২৮-২৯ বছরের শিক্ষা সময়ের হিসেবটাকে বিদেশে গ্রহণ করতে চায় না। শিক্ষায় জড়িত কুশীলবরা এ হিসেবটা যে জানেন না তা নয়; তার পরও সেশনজটের নামে বছরের পর বছর ছাত্রছাত্রীদের জীবন থেকে মূল্যবান সময় নষ্টের দায়ভার কে নেবে? অথচ পাশাপাশি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নির্দিষ্ট সময়েই পরীক্ষা নিয়ে ফলাফল ঘোষণা করে যাচ্ছে। এসব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিক্ষা শেষ করে বেরুবার সাথে সাথে অথবা অল্প সময়ের মধ্যে এসব প্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীরা উচ্চতর শিক্ষা অথবা প্রশিক্ষণের জন্য বিদেশে যাওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন। নিয়োজিত হচ্ছেন বিভিন্ন চাকরিতে। এর ফলে মধ্যবিত্ত শ্রেণীর অধিকাংশ অভিভাবক এসব প্রতিষ্ঠানে ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার জন্য ঝুঁকছেন; যদিও এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষা খরচ বেশ ব্যয়বহুল। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষা সময় অযাচিতভাবে দীর্ঘ হওয়ার কারণে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বেশ জমজমাট শিক্ষাবাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে। একই দেশে একই সময়ে সরকারি এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষাক্ষেত্রে সময় বৈষম্য তৈরি করছে। এটা কারোরই কাম্য হতে পারে না।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রয়েছে নির্দিষ্ট শিক্ষা সময়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বছরের নির্দিষ্ট সময়ে ছাত্রছাত্রী ভর্তি করে উদ্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই শিক্ষা জীবন শেষ করে। ফলে এসব প্রতিষ্ঠানে কোনো সেশনজট নেই। নেই সেশনজটের নামে অযাচিত সময়ক্ষেপণের মাধ্যমে জাতীয় উৎপাদন ও অর্থনীতির অপূরণীয় ক্ষতি। অবশ্য এই শিক্ষা সময়কে ভাগ করে নিয়ে প্রলম্বিত করার সুযোগও সেখানে রয়েছে। তবে তা শিক্ষার্থীর ব্যক্তিগত ইচ্ছার ওপর।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং শিক্ষার সাথে সম্পর্কিত নীতিনির্ধারকরা এসএসসি পাসের ক্ষেত্রে ১৬ বছর বয়সসীমা হিসাব করে সর্বোচ্চ ২৪ বছর শিক্ষা সময় নির্ধারণ এবং বাস্তবায়ন করলে চাকরির বয়সসীমা সমস্যা থাকার কথা নয়। প্রয়োজন সরকারের দৃঢ় সিদ্ধান্ত এবং তার বাস্তবায়ন। বয়সসীমা ৩৫ বছরের পক্ষে করায় যেমন যৌক্তিকতা রয়েছে, এর বিপক্ষেও তেমনি যুক্তির শেষ নেই। সবচেয়ে বড় অসুবিধা হলো ৩৫ বছরের সীমায় যারা সরকারি চাকরিতে ঢোকার ক্ষেত্রে অকৃতকার্য হবেন তারা কোথায় যাবেন? এ ক্ষেত্রে বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানেও চাকরির বয়সসীমা বাড়াতে হবে। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো স্বশাসিত। এসব প্রতিষ্ঠানকেও সময়সীমা বাড়িয়ে ৩৬ বা ৩৭ বছর করার ব্যাপারে সরকারের সীমাবদ্ধতাকে অবশ্যই বিবেচনায় নিতে হবে। ফলে বয়স্ক শিক্ষিত বেকার জনগোষ্ঠীর পরিমাণ বাড়তেই থাকবে। যা সামগ্রিক অর্থনীতির ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করবে। অবশ্য এ ব্যাপারে সিদ্ধান্তের এখতিয়ার সরকারের।
এই সমস্যার সমাধান করতে হলে শিক্ষার মূল লক্ষ্য চাকরি করা এই ধারণার অপনোদন করতে হবে। ঢালাওভাবে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করা দরকার। পেশাভিত্তিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা এবং এর যথাযথ মান বজায় রেখে নির্দিষ্ট সময়ে শিক্ষা সময় শেষ করা যেন শিক্ষাজীবন শেষে তারা দেশে এবং বিদেশে কাজের সুযোগ পেতে পারে। এতে রাস্তা ঝাড়ু দেয়া শ্রমিক হওয়ার প্রবণতা কমবে, রেমিট্যান্স প্রবাহও বৃদ্ধি পাবে। দ্বিতীয়ত; প্রতিবন্ধী ছাড়া সরকারি চাকরির কোটা সংস্কৃতি বন্ধ করা প্রয়োজন। এটি একটি অসম প্রতিযোগিতা। পাশাপাশি জেলা পরিষদ, উপজেলা পরিষদ এবং ইউনিয়ন পরিষদেও নিম্নতম শিক্ষাগত যোগ্যতা এবং বয়সের সীমা নির্ধারণ প্রয়োজন। যারা সেশনজটের ফলে তাদের জীবনের অমূল্য সময় হারিয়েছেন তাদের ক্ষেত্রে সদয় ভূমিকার জন্য কর্তৃপক্ষকে সবিনয় অনুরোধ করছি। এটা তাদের দোষ নয়। দোষ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের। যাদের অসাবধানতার জন্য এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এ ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষগুলোকে দায়বদ্ধতার আওতায় আনা প্রয়োজন। নতুবা এ ধারা চলতেই থাকবে।
লেখক : চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞ
[email protected]
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা