বদরে আল্লাহর অলৌকিক সাহায্য
- কর্নেল (অব:) মোহাম্মদ আবদুল হক পিএসসি
- ২৮ মার্চ ২০২৪, ০৫:১১
সর্বশক্তিমান আল্লাহ যা চান তা-ই হবে। আল্লাহ বলেন- ‘তিনি (আল্লাহ) আসমানসমূহ ও জমিনের স্রষ্টা। আর যখন তিনি কোনো বিষয়ের সিদ্ধান্ত নেন, তখন কেবল বলেন ‘হও’ ফলে তা হয়ে যায়।’ (সূরা বাকারা-১১৭) পৃথিবীতে যুদ্ধবিদ্যার প্রচলিত নীতি হলো বিজয় লাভ করতে হলে শত্রুর তুলনায় তিনগুণ শক্তি বেশি থাকতে হবে; যা আমরা সামরিক ভাষায় বলি ১ : ৩। কিন্তু এ থিওরি যে সবসময় সঠিক হয় তাও নয়। কেননা, শক্তির ভারসাম্যের সাথে সাথে বিজয় লাভের আরো বহু ফেক্টর এখানে কাজ করে। যেমন- পলাশীর যুদ্ধে ক্লাইভের তুলনায় নবাব সিরাজউদদৌলার শক্তিমত্তা ছিল বহুগুণে বেশি; কিন্তু তারপরও নবাবের শোচনীয় পরাজয় ঘটে।
ইতিহাস সাক্ষী, মুসলমানরা যখনই ঈমানের বলে বলীয়ান হয়ে যুদ্ধ করেছে, সেসব যুদ্ধে বহুগুণে শক্তিশালী বাহিনীর বিরুদ্ধে তারা জয়লাভ করেছে। সূচনালগ্ন থেকে সত্য-মিথ্যার লড়াই চলমান। এসব যুদ্ধের মধ্যে অন্যতম হলো- হিজরি ২ সালের ১৭ রমজানে বদর নামক প্রান্তরে লড়াই; যা ছিল ইসলামী আদর্শ ও মুসলিম জাতির অস্তিত্বের লড়াই। আর সেটি ছিল এক অলৌকিক যুদ্ধ। যে যুদ্ধে জাগতিক কোনো হিসাবেই মুসলমানরা জয়ী হওয়ার কথা না। কেননা, শত্রুর তুলনায় মুসলমানদের না ছিল সংখ্যাধিক্য, না ছিল কোনো প্রশিক্ষণ, না ছিল অস্ত্র-সরঞ্জামাদি, না ছিল আর্থিক সামর্থ্য, না ছিল যুদ্ধবাজ কমান্ডার, না ছিল আশপাশের কোনো সহযোগিতা; মোট কথা- সবই ছিল ‘না’। তাহলে কিভাবে, কী কারণে তারা বিশাল বিজয় লাভ করলেন? এ জয় ছিল অলৌকিক। মুসলমানদের কমান্ডার ছিলেন আল্লাহর রাসূল হজরত মুহাম্মদ সা:।
মহান আল্লাহ সত্যের অনুসারীদের বিভিন্ন সময়ে অলৌকিক সহযোগিতা করে তাঁর শক্তিমত্তা বুঝিয়ে থাকেন। সর্বশেষ রাসূল অলৌকিক মুহাম্মদ সা: সম্পর্কে যদিও আল্লাহ বলেছেন- ‘বলো, আমি তো তোমাদের মতো একজন মানুষ মাত্র, আমার কাছে প্রত্যাদেশ হয়েছে যে, তোমাদের উপাস্য নিশ্চয়ই একক উপাস্য, সুতরাং তাঁর দিকে সোজাসুজি পথ ধরো, আর তাঁরই কাছে পরিত্রাণ খোঁজো। আর ধিক বহুখোদাবাদীদের প্রতি...’ (সূরা হা-মিম আস-সাজদা-৬)
যদি আমরা গভীর মনোযোগ দিয়ে মুহাম্মদ সা:-এর জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত জীবনী পাঠ করি তাহলে বুঝতে পারব, তাঁর জীবন কিভাবে আল্লাহ সাজিয়ে দিয়েছেন। বদর প্রান্তরে পরাক্রান্ত কুরাইশ বাহিনীর বিরুদ্ধে ক্ষুদ্র্র ও দুর্বল মুসলমান শক্তির যে অসম যুদ্ধ হয়েছিল তাতে কোনো ক্রমেই মুসলমানদের বিজয়ী হওয়ার ছিল না। কিন্তু আল্লাহ বলেন- ‘আর অবশ্যই আল্লাহ তোমাদেরকে বদরে সাহায্য করেছেন অথচ তোমরা ছিলে হীনবল। অতএব তোমরা আল্লাহকে ভয় করো, আশা করা যায়, তোমরা শোকরগুজার হবে।’ (সূরা আল ইমরান-১২৩)
১৭ রমজান বদর নামক স্থানে উভয় পক্ষ মোকাবেলার সময় নবী দেখলেন, তিনজন শত্রুর বিরুদ্ধে মাত্র একজন মুসলমান, যাদের তেমন শক্তিশালী অস্ত্র সাথে ছিল না। এমতাবস্থায় তিনি মহান আল্লাহর কাছে অত্যন্ত কাতর কণ্ঠে ও কান্নাবিজড়িত স্বরে দোয়া করলেন। মহান আল্লাহ কবুল করলেন নবীর দোয়া। তিনি ফেরেশতাদের পাঠালেন মুসলমানদের সহযোগী হিসেবে। এত কমসংখ্যক সৈন্য নিয়েও অস্ত্রে সজ্জিত কাফিরদের বিরুদ্ধে মুসলমানদের জয়লাভের অন্যতম কারণ ছিল ফেরেশতা দিয়ে সাহায্য করা।
এ সাহায্যের উদ্দেশ্য সম্পর্কে আল্লাহ বলেছেন- ‘আর আল্লাহ এটি করেছেন, তোমাদেরকে সুসংবাদ দেয়ার জন্য এবং যাতে এর দ্বারা তোমাদের অন্তর প্রশান্ত হয়। সাহায্য শুধু মহাপরাক্রমশালী আল্লাহর পক্ষ থেকে।’ (সূরা আলে ইমরান-১২৬)
আল্লাহ মুমিনদের সাহস জোগানোর একটি চিত্র তুলে ধরেছেন। ইরশাদ হয়েছে- ‘স্মরণ করো! যখন আল্লাহ তোমাকে স্বপ্নে দেখিয়েছিলেন, তারা সংখ্যায় অল্প। যদি তিনি তাদের সংখ্যায় বেশি দেখাতেন তবে তোমরা সাহস হারাতে এবং যুদ্ধের ব্যাপারে নিজেদের মধ্যে মতবিরোধ তৈরি করতে। কিন্তু আল্লাহ রক্ষা করেছেন। নিশ্চয় তিনি অন্তরের খবর জানেন।’ (সূরা আনফাল-৪৩)
আল্লাহ আরো বলেন- ‘স্মরণ করো, যখন তোমার রব ফেরেশতাদের প্রতি ওহি প্রেরণ করেন যে, নিশ্চয়ই আমি তোমাদের সাথে আছি। সুতরাং যারা ঈমান এনেছে তোমরা তাদের অনড় রাখো।’ অচিরেই আমি ভীতি ঢেলে দেবো তাদের হৃদয়ে, যারা কুফরি করেছে। অতএব তোমরা আঘাত করো ঘাড়ের ওপর এবং আঘাত করো তাদের প্রত্যেক আঙুলের অগ্রভাগে।’ (সূরা আনফাল-১২)
আল্লাহ বলেন- ‘আর অবশ্যই আল্লাহ তোমাদের বদরে সাহায্য করেছেন অথচ তোমরা ছিলে হীনবল। অতএব তোমরা আল্লাহকে ভয় করো, আশা করা যায়, তোমরা শোকরগুজার হবে। স্মরণ করো, যখন তুমি মুমিনদের বলছিলে, তোমাদের জন্য কি যথেষ্ট নয় যে, তোমাদের রব তোমাদের তিন হাজার ফেরেশতা পাঠিয়ে দিয়ে সাহায্য করবেন? হ্যাঁ, যদি তোমরা ধৈর্য ধরো এবং তাকওয়া অবলম্বন করো, আর তারা হঠাৎ তোমাদের মুখোমুখি এসে যায়, তবে তোমাদের রব পাঁচ হাজার চিহ্নিত ফেরেশতা দিয়ে তোমাদের সাহায্য করবেন।’ (সূরা আলে ইমরান : ১২৩-১২৫) বদর যুদ্ধে অংশ নেয়া সাহাবি ও ফেরেশতাদের বিশেষ মর্যাদা দান করেছেন আল্লাহ।
পরিশেষে এ কথা নির্দ্বিধায় বলা যায়, বদর যুদ্ধে সত্যের জয় হয়েছিল এবং এ জয়টি ছিল সরাসরি মহান আল্লাহর অলৌকিক শক্তির সাহায্যের মাধ্যমে। বর্তমান সময়েও সত্যের পথের সৈনিকদের বিজয় লাভ সম্ভব হবে না মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর মদদ ব্যতীত। তাই তাঁর সান্নিধ্য পাওয়ার সব চেষ্টা করতে হবে ঐক্যবদ্ধভাবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা