২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ছোট হয়ে আসছে শাসকদের পৃথিবী

দেশ জাতি রাষ্ট্র
-

তথ্যপ্রযুক্তি বিপ্লবের ফলে ‘ছোট হয়ে আসছে পৃথিবী’। আর বাংলাদেশের বর্তমান বাস্তবতায় ছোট হয়ে আসছে আওয়ামী পৃথিবী। আওয়ামী পৃথিবী মানে তাদের ক্ষমতা, প্রভাববলয় ও প্রতিপত্তি। বাংলাদেশ তাদের পৃথিবী। বাংলাদেশ তাদের ক্ষমতার প্রভাববলয়। এখানেই তাদের প্রবল প্রতিপত্তি। এটিই যেন তাদের নিজস্ব সম্পত্তি। এরকম আচরণ করে তাদের অনেকেই। জীবনানন্দ বলেছিলেন, ‘বাংলার রূপ আমি দেখিয়াছি, তাই আমি পৃথিবীর রূপ দেখিতে যাই না আর।’ তারাও বাংলার রূপ-রস-গন্ধে আকুল-ব্যাকুল হয়ে আছে। তবে তারা জীবনানন্দের মতো বেরসিক নন, পৃথিবীও ভেজে খেতে চান তারা। তারা মানিলন্ডারিংয়ে অতুলনীয়। বিদেশী ব্যাংকে আছে তাদের বিপুল বৈভব। তাদের আছে বেগমপাড়া। আছে সেকেন্ড হোম। ১৯৭২-’৭৫ সালে তাদের ভাষা ছিল- ‘ওলট-পালট করে দে মা লুটেপুটে খাই’। এখন পুরো দেশটাই তাদের দখলিস্বত্ব। তবে, ‘দিনে দিনে বাড়িয়েছে দেনা, শুধিতে হইবে ঋণ’। ঘরে-বাইরে তাদের জন্য ছোট হয়ে আসছে পৃথিবী। ছোট হয়ে আসছে দেশ। সা¤প্রতিক ঘটনাবলি প্রমাণ করছে, অভ্যন্তরীণ ও বৈশ্বিক ক্ষেত্রে ছোট হয়ে আসছে তাদের পৃথিবী।

সর্বশেষ এবং এই মুহূর্তে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতি। বাংলাদেশের আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু করার ক্ষেত্রে যারা বাধা সৃষ্টি করবে তাদের বিধিনিষেধে আনার কথা বলা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতিতে। মূলত বিগত বছরগুলোতে গণতন্ত্র তথা মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় আওয়ামী লীগ সরকারের অব্যাহত অনিচ্ছা ও ব্যর্থতার কারণে এই ভিসানীতি ঘোষিত হলো। ইতঃপূর্বে প্রাথমিকভাবে পুলিশ ও র‌্যাবের বিরুদ্ধে বিধিনিষেধ আরোপ করে তারা বাংলাদেশকে সংশোধনের সুযোগ দেয়। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নীতিগতভাবে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে বিষয়টির মোকাবেলা না করে অকূটনৈতিক ভাষায় আক্রমণাত্মক মন্তব্য করে। ভিসানীতি ঘোষণা করার সময় কূটনৈতিক মারপ্যাঁচে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে ভাষায় কথা বলেছে তার সুবিধাজনক ব্যাখ্যা দিতে চায় আওয়ামী লীগ। ভেতরে ভেতরে অস্বস্তি, অস্থিরতা ও অসহায়ত্ব দেখা দিলেও বাগাড়ম্বর করে তাদের মুখ রক্ষা করতে চাইছে। একই সাথে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্রের এই নীতির প্রভাব কী সুদূর প্রভাব ফেলতে পারে তা বুঝতেও তাদের কষ্ট হচ্ছে। অনেকেই বিষয়টিকে হালকাভাবে দেখার চেষ্টা করছে অথচ পদক্ষেপটি তাদের বিরুদ্ধে একটি গুরুতর কর্মসূচি।

আওয়ামী লীগের নেতানেত্রীরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপ সব রাজনৈতিক দলের জন্যই দেয়া হয়েছে। অথচ নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করার ব্যাপারে রাষ্ট্রনেতৃত্ব ও সরকার দায়ী এবং দায়িত্বশীল ব্যাখ্যা যাই দেয়া হোক না কেন, বিষয়টি আওয়ামী লীগ ও সরকারকে চিন্তায় ফেলেছে। ইতোমধ্যেই এই পদক্ষেপের প্রভাব অভ্যন্তরীণভাবেও অনুভূত হচ্ছে। কারণ, এযাবৎকাল বিরোধী দলের আন্দোলন পণ্ড করার জন্য এরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসনকে কাজে লাগিয়ে আসছে। এদিকে নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপি তাদের আন্দোলন জোরদার করার কথা বলছে। যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতি ঘোষণার পর আগের মতো যদি পুলিশকে ব্যবহার করে তাহলে পুলিশ ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় পড়বে। এ অবস্থায় পুলিশ বাহিনী কতটা ঝুঁকি গ্রহণ করবে তা একটি চিন্তার বিষয়। সরকারের অভ্যন্তরের খবর যারা রাখেন তারা বলেন, ‘দেশ চালান আমলারা, রাজনীতিকরা নন। ভিসানীতির কারণে আমলারা যদি বেঁকে বসেন, বেকায়দায় পড়বে আওয়ামী লীগ।’
এসব বিবেচনায় নিঃসন্দেহে চাপের মধ্যে পড়েছে শাসক আওয়ামী লীগ। উল্লেখ্য, বিএনপি দীর্ঘদিন ধরে আন্তর্জাতিক মহলে যোগাযোগ করে চাপ সৃষ্টির চেষ্টা করছিল। বিএনপি ঘরানার লোকেরা বলাবলি করছিল- নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আসছে। আওয়ামী লীগ না-সূচক উত্তর দিয়ে আসছিল। কিন্তু এখন যখন একটি বড় ধরনের নিষেধাজ্ঞা আরোপিত হলো তখন আওয়ামী লীগ এটিকে যতটা সম্ভব নিজের পক্ষে ব্যাখ্যা করছে। এ ছাড়া দেশের সংবিধানের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের যে প্রক্রিয়া নিয়ে সরকার এগোচ্ছে তার প্রতি এই ভিসানীতি সমর্থন করে। এমন উদ্ভট ব্যাখ্যা দিয়ে আত্মতুষ্টি লাভের চেষ্টা করছে আওয়ামী লীগ। আর বিএনপি বলছে, এই ভিসানীতি জনগণের দাবির প্রতিধ্বনি। জনাব ফখরুল এক বিবৃতিতে বলেন, ‘বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্যভাবে আয়োজনে সব প্রক্রিয়া নিশ্চিত করার জন্য এই ভিসানীতি আরোপ করা হয়েছে। একই সাথে ভোটে কারচুপি, ভোটারদের ভয় দেখানো, জনগণের শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করার স্বাধীনতা ও অধিকার চর্চাকে সহিংসভাবে দমনের যেকোনো নীতির বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র সরকার অবস্থান নিয়েছে। এটি বাংলাদেশের মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিরই সুস্পষ্ট প্রতিধ্বনি।’

বিবৃতিতে আরো বলা হয়, বিএনপি বিশ্বাস করে- বর্তমান সরকারের অধীন কোনোভাবেই অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব হবে না। আর সে কারণেই বিএনপি দেশের সব গণতান্ত্রিক দল ও শক্তিকে এক সাথে নিয়ে নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ কেয়ারটেকার সরকার আদায়ের লক্ষ্যে নিয়মতান্ত্রিক ও শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করে চলছে। উল্লেখ্য, বাইডেন প্রশাসন গণতন্ত্র ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য এভাবেই অন্যান্য দেশেও ভিসানীতি প্রয়োগ করছে। ১৫ মে নাইজেরিয়ার জন্য ভিসানীতি ঘোষণা করে। এর আগে সোমালিয়া, উগান্ডা, নিকারাগুয়া ও বেলারুশের জন্য একই ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। ভিসানীতির একটি বিশ্লেষণ দিয়েছেন ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের সাবেক ডেপুটি চিফ অব ভিশন জন ডানিলোভিকজ। তিনি আশা করেন, যুক্তরাষ্ট্রের অন্যান্য মিত্র যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া প্রভৃতি দেশ অনুরূপ পদক্ষেপ নেবে। তিনি ভিসানীতির যথার্থ প্রায়োগিকতার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। এই ভিসানীতির প্রতি আওয়ামী লীগ সরকারের মিত্র দিল্লির কি দৃষ্টিভঙ্গি হতে পারে তা-ও তিনি ব্যাখ্যা করেন। তিনি বলেন, ‘দিল্লির দিক থেকে প্রতিবাদ আসতে পারে, তা জানা সত্ত্বেও বাইডেন প্রশাসন নতুন পদক্ষেপের দিকে এগিয়েছে। অতীতে বাংলাদেশ প্রশ্নে যুক্তরাষ্ট্রের নীতিতে দৃশ্যত ভেটো দিয়ে এসেছে ভারত। প্রতিবেশী ইস্যুতে ওয়াশিংটন ও দিল্লির অবস্থানগত পার্থক্যের কারণে ভারত এই ভেটো দিয়েছে।

বাইডেন প্রশাসন ভারতের সাথে যখন তাদের সম্পর্ক শক্তিশালী করার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে, তখন তারা এই বার্তাও দিতে চেয়েছে যে, বাংলাদেশ প্রশ্নে যুক্তরাষ্ট্র ভারতের সাথে একমত হতে পারে আবার নাও হতে পারে। এখন অন্যান্য দ্বিপক্ষীয় ও বহুপক্ষীয় বন্ধুদের ক্ষেত্রেও সময় এসেছে বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও মানবাধিকার প্রশ্নে সমর্থনের অঙ্গীকার করা। এদিকে বিবিসি বাংলার এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, ভারত সরকার আওয়ামী লীগের হয়ে দেনদরবার করবে না। ভারতের জিন্দাল স্কুল অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্সের অধ্যাপক এবং দক্ষিণ এশিয়ার বিশ্লেষক প্রফেসর রাধা দত্ত বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগ দিল্লির ওপর ভরসা করে এবং এখনো করবে। কিন্তু ভারতেরও কিছু সমস্যা রয়েছে। ভারত কি আমেরিকাকে বলবে- বাংলাদেশ নিয়ে তোমরা যা করছ সেটি ঠিক নয়? আমার মনে হয় না ভারত তা করবে।’ তিনি বলেন, ‘এটি ঠিক যে কূটনীতি বিভিন্ন চ্যানেলে হয়। ভারত হয়তো ট্র্যাক টু বা ট্র্যাক থ্রি চ্যানেলে এ কথা তুলবে। কিন্তু ভারত সরকার কখনোই মার্কিন সরকারের কাছে গিয়ে বাংলাদেশ বা আওয়ামী লীগের হয়ে দেনদরবার করবে না।’ তিনি আরো বলেন, ‘রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে বাংলাদেশের চাপ থাকলেও ভারত মিয়ানমার সরকারের ওপর কখনোই খোলাখুলিভাবে চাপাচাপি করেনি।’

এদিকে এক ওয়েবিনারে বিশিষ্টজনরা মন্তব্য করেছেন, মার্কিন ভিসানীতির প্রভাব হবে সর্বব্যাপী। তারা আশঙ্কা প্রকাশ করেন, এখন থেকে নির্বাচন এই মধ্যবর্তী সময়ে যুক্তিরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে আরো ব্যবস্থা দেখা যেতে পারে। গত ২৮ মে বাংলাদেশ স্টাডিজ নামে একটি সংগঠনের ওয়েবিনারে এসব কথা বলেন বিজ্ঞজনরা। সেখানে এই অভিমত ব্যক্ত করা হয় যে, এই নীতির কারণে ভারত নীতি পরিবর্তন করে ফেলবে এরকম মনে হয় না। ভারত তার স্বার্থ রক্ষা করতে চাইবে। একইভাবে চীনও তার স্বার্থ সংরক্ষণ করবে। দৃশ্যত বাংলাদেশ একটি ত্রিশঙ্কু অবস্থায় রয়েছে। ওয়েবিনারে বলা হয়, বিগত বছরগুলোতে ক্রমাগত বাংলাদেশকে এমন একটি জায়গায় ঠেলে দেয়া হয়েছে যেখানে বাংলাদেশ হয়ে দাঁড়িয়েছে ভারত-চীন-যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিযোগিতার ক্ষেত্র। এমন অবস্থা সৃষ্টির কারণ, ১৪ সাল থেকে ম্যান্ডেড ছাড়া সরকারের ক্ষমতায় থাকা। ত্রিশঙ্কু স্বার্থের জাঁতাকলে পড়ে আওয়ামী লীগ সরকার এখন ‘নোম্যান্স ল্যান্ডে’ অবস্থান করছে বলে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের ধারণা। সুতরাং আওয়ামী লীগের জন্য ছোট হয়ে আসছে পৃথিবী। কেউ তার নয়।
নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে তাদের বিপদ-আপদও তীব্র হয়ে উঠছে। বিরোধীদলীয় আন্দোলন দিন দিন আরো অধিক হারে জনসম্পৃক্ততা অর্জন করছে। সব দল ও মতের সমন্বয়ে যুগপৎ আন্দোলনের খসড়া রূপরেখা তৈরি করেছে বিরোধী দলগুলো। ঈদের পরপরই সম্মিলিতভাবে এক দফার তীব্র আন্দোলন শুরু হবে। এদিকে নির্বাচনী মাঠেও তাদের বেহাল দশা। বিএনপিবিহীন ভোটেও তারা গাজীপুর সিটি নির্বাচনে জিততে পারেনি। ওই ভোটে ক্ষমতার দাপটবিহীন একজন বিদুষী মায়ের কাছে তাদের পরাজয় হয়েছে। তাদের অভ্যন্তরীণ অনৈক্য ও জনগণের অনাস্থা খাদের কিনারায় নিক্ষেপ করছে তাদের। অনেকেই মনে করেন, বিএনপিবিহীন নির্বাচনে তাদের এই দশা হলে জাতীয় নির্বাচনে বিএনপির মোকাবেলায় তাদের কী ফল ঘটবে? রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল মনে করে, গাজীপুরের পরাজয়কে ছোট করে দেখার অবকাশ নেই। আগামীতে যদি বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ না-ও করে তা হলেও গাজীপুর স্টাইলের পরাজয় তাদের গ্রাস করবে। তাদের বিদ্রোহীদের সংখ্যা এতই বেশি যে, বিগত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দলীয় প্রতীক নিয়ে হেরেছে ৪৯ শতাংশ প্রার্থী। বিরোধীরা পেয়েছে ৫১ শতাংশ। সুতরাং অঘটন ঘটতেও পারে। গাজীপুর গোটা জাতির পক্ষ থেকে ক্ষমতাসীনদের প্রতি একটি বার্তা। বাস্তবে দেশজ ও আন্তর্জাতিক অবস্থান এরকম দাঁড়িয়েছে যে, যেকোনো ধরনের নির্বাচনী সরকারব্যবস্থা ব্যতীত বিরোধী দলগুলো নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না। আন্দোলন তীব্রতর হলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা গ্রহণ ব্যতীত নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনা নেই। সে ক্ষেত্রে ক্ষমতাকামী আওয়ামী লীগ ভবিষ্যৎ নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হবে- এই আশায় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা কায়েম করে বিদায় নিতে পারে।

এদিকে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সর্বনাশের ইঙ্গিত দিচ্ছেন অর্থনীতিবিদরা। দেশের অর্থনীতি স্মরণকালের সবচেয়ে খারাপ সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে বলে দাবি করেছে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ-সিপিডি। সম্প্রতিক সময়ের মার্কিন ভিসানীতিকে দেশের জন্য অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেও বিপজ্জনক মনে করে সিপিডি। তারা তথ্য প্রকাশ করে, মানুষজন যেসব দেশে গেছে সেখান থেকে প্রত্যাশিত রেমিট্যান্স আসছে না। এত দিন ধরে সৌদি আরব থেকে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স পাঠানো হলেও যুক্তরাষ্ট্র এখন সে জায়গা দখল করেছে। গত ২০২১-২২ অর্থবছরে সৌদি থেকে ৩.৮৬ বিলিয়ন ডলার বাংলাদেশে এসেছে। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে একই সময়ে ৩.০৪ বিলিয়ন ডলার। গত অর্থবছরের একই সময়ে আমেরিকা থেকে রেমিট্যান্স এসেছিল ২.৮৭ বিলিয়ন ডলার। হঠাৎ যুক্তরাষ্ট্র থেকে রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধিকে কালো টাকার কারসাজি সন্দেহ করছে সিপিডি। অপর একটি অর্থনৈতিক প্রতিবেদনে বলা হয়, নানামুখী সঙ্কটের কারণে সরকারের ত্রিমুখী দায় বেড়েছে। প্রথমত রাজস্ব আয় কমে যাওয়ায় দেশের ভেতর থেকে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে পৌনে এক লাখ কোটি টাকার বেশি ঋণ নিয়েছে সরকার। দ্বিতীয়, বৈশ্বিক সঙ্কটের কারণে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলসহ অনেক পণ্যের দাম বেড়ে গেছে। এতে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১০ হাজার কোটি টাকা বেশি ভর্তুকি ও প্রণোদনা গুনতে হচ্ছে। সর্বশেষ দায় বাড়ছে মার্কিন ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়নের কারণে ৭১০ কোটি টাকা। দায়ের এ চিত্র তুলে ধরা হয়েছে সংশোধিত বাজেটে। যা ঋণ অনুমোদনের জন্য ১ জুন জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করা হবে। রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সঙ্কট ও বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সঙ্কটের মধ্যে চলতি বাজেট বাস্তবায়ন করতে হচ্ছে। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সঙ্কটের কারণে দেশজ অর্থনীতিতে এর প্রতিঘাত পড়েছে। অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে এ ধরনের সংবাদ সরকারের আয়ু ক্রমেই কমিয়ে ফেলছে।
উপরোক্ত আলোচনায় তিনটি বিষয় প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। প্রথমত- বৈশ্বিক, দ্বিতীয়ত- রাজনৈতিক এবং সর্বশেষ অর্থনৈতিক। প্রতিটি ক্ষেত্রেই সরকারের ব্যর্থতা হিমালয়সম। নির্বাচনের আগ মুহূর্তে রাশি রাশি টাকা ঢেলে নির্বাচনকে অকার্যকর করার বুদ্ধিসুদ্ধিও আছে তাদের। কিন্তু সব কিছুকে অগ্রাহ্য করে সমাগত নির্বাচনকে নিরপেক্ষ ও নির্ভেজাল করতে পারলে চিরতরের জন্য বিলোপ হবে আওয়ামী পৃথিবী। সত্য ও সুন্দরের আগামী পৃথিবী গড়ার প্রত্যয়ে আওয়ামী পৃথিবীকে বলতে হবে গুড বাই। ‘সত্যই সুন্দর, সুন্দরই সত্য’।

লেখক : অধ্যাপক, সরকার ও রাজনীতি বিভাগ
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
Mal55ju@yahoo.com


আরো সংবাদ



premium cement