২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

চিনি

চিনি। - ছবি : সংগৃহীত

গত ১১ মে এক দিনে ১৬ টাকা দাম বাড়ানো হয়েছে প্রতি কেজি চিনিতে। এরপর পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতাদের ‘হাত’ তো থাকবেই। বর্তমান আমলে দেখা যাচ্ছে, এখনকার সরকার যে দাম বেঁধে দেয়, বাস্তবে বিক্রি হয় তার চেয়ে বেশি দামে। বিক্রেতারা এর পক্ষে নানা অজুহাত দাঁড় করান। খুচরা বিক্রেতারা পাইকারদের দায়ী করেন ও পাইকারি বিক্রেতারা দোষী বানান আমদানিকারক বা মিল মালিকদেরকে। কিন্তু কেউ বাজারে কম দামে পণ্য বিক্রি করেন না দেশের সাধারণ মানুষের কাছে অর্থাৎ ‘পাটা পুতায় ঘষাঘষি; মরিচের জান শেষ’। কথিত আছে, ‘রাজায় রাজায় যুদ্ধ হয়; উলু খাগড়ার প্রাণ যায়’। অর্থাৎ সব ক্ষেত্রে ভুক্তভোগী সাধারণ মানুষ। তাদেরকে অতিরিক্ত টাকা দিয়েই পণ্য ক্রয় করতে হয় কখনো ঈদ বা রোজা উপলক্ষে, কখনো করোনা মহামারীর নামে, কখনো রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কথা বলে। মোটকথা, নিম্নবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত শ্রেণীর ওপর দিয়ে সব ধকল যায়।

‘সাউথ এশিয়ান ন্যাশানস ইকোনমিক মডেল (সানেম) পরিচালিত এক সাম্প্রতিক জরিপে দেখা গেছে, নিম্ন বিত্ত শ্রেণী করোনার অভিঘাত বেশি সহ্য করেছে। তারা এ সময়ে বেশি আয় হারিয়েছে এবং তারাই আয়-বৈষম্যের বেশি শিকার। এখন চিনির দাম বাড়ানোর কারণে এই সাধারণ মানুষই বেশি ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। তারাই General Mass বা সাধারণ মানুষ এবং তারাই জনগণের বেশির ভাগ। তাদের সংগ্রামের মাধ্যমে এ দেশ স্বাধীন হয়েছে। তাই তাদেরকে গুরুত্ব দিতে হবে প্রতিটি ক্ষেত্রেই।

সময়ের সাথে সাথে অনেক রকম রেওয়াজ বিলুপ্ত হয়েছে। তাই বিয়ের সাথে সম্পর্কিত, বরকে চিনি খাওয়ানোর প্রথাও উঠে যাওয়া উচিত। বিয়ের পান চিনি প্রথাও না থাকলে ভালো হয়। তার পরও এসব কারণে অনেক চিনির প্রয়োজন হচ্ছে।

রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন, ‘চিনি ওগো চিনি, দূর বিদেশিনী...।’ একজন ‘রবীন্দ্রবিশারদ’ বলেছিলেন, গুরুদেবও বুঝি চিনির জন্য লালায়িত ছিলেন।’ চিনি ওগো চিনি/ওগো নন্দিনী, কার মন নীতি বাজে রিনিঝিনিঝিনি’ গানটি শুনলে তিনি কী বলতেন? রবীন্দ্রনাথের জীবনে বিদেশিনী এসেছিলেন সত্য; এ প্রসঙ্গে আর্জেন্টিনার কবি ভিক্টোরিয়া ওকাম্পো এবং মারাঠি তরুণী আন্না তড়খড়ের নাম উল্লেখ করা যায়। কিন্তু তিনি চিনি নিয়ে কোনো কিছু লিখেছিলেন বলে জানা যায়নি।

ডায়াবেটিস রোগীর জন্য যত খারাপ হোক চিনি, এর প্রয়োজন কমেনি। এ জন্য চিনির উৎস যে আখ, তা আমাদের অন্যতম প্রধান শস্য।
একটি ইংরেজি শিশুতোষ কবিতায় আছে :
Johny Johny
- Yes, Papa.
Eating sugar?
- No, Papa
Telling lies?
- No, Papa.
Open Your mouth
- Ha-Ha-Ha.

এমন অভিজ্ঞতা আমাদের অনেকের শৈশবেও।
শেওড়াপাড়া বাজারের এক পরিচিত মুদি দোকানি থেকে অনেক দিন ৫৮ টাকা কেজি দরে চিনি কিনেছি। এখন তারাও পরিস্থিতির সুযোগে দাম বাড়াতে বাধ্য হচ্ছে। সম্প্রতি ওরাই বিক্রি করেছে ১০৪ টাকা এক কেজি চিনি। দাম যেভাবে বাড়ছে, হয়তো ওরাও ১৫০ টাকা কমে বিক্রি করতে পারবে না। একটি পত্রিকার রিপোর্টার কাওরানবাজারের খুচরা বিক্রেতা নূর আলমকে জিজ্ঞাসা করলে সে বলে, ‘সরকার চিনির দাম বাড়ানোর পরে আর চিনি তুলিনি। সরকার যে রেট বেঁধে দিয়েছে, তাতে কি তুলে জরিমানা দেবো? আমরা যাদের কাছ থেকে চিনি কিনি, তারা বিক্রির কোনো রসিদ দেয় না। কিন্তু ম্যাজিস্ট্রেট এসে আমাদের কাছে চিনি কেনার রসিদ চায়।’

অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল মজুমদার বলেছেন, ‘নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য এত বেশি বেড়েছে যে, মানুষ বাজারে গিয়ে কাঁদছে।’ তিনি বলেছেন, ‘অর্থনীতি ও বাজার, দুই জায়গাতেই সিন্ডিকেট রয়েছে। ফলে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা ঝরে পড়ছে। বাজারে অস্থিরতার কারণ পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি’। তিনি আরো বলেন, ‘সিন্ডিকেট ভাঙতে না পারলে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীদের দায়িত্বে থাকা উচিত না। দেশে ব্যবসার নামে লুটপাট ও নৈরাজ্য চলছে। কোনো কিছুর অভাব নেই, তার পরও পণ্যের মূল্য বাড়ছে।

পাদটীকা : ডাক্তার বললেন, ‘জামশেদ সাহেব, আপনার হার্টের অবস্থা খারাপ। এখন থেকে চিনি কম খাবেন। ভুলেও বাজারে গিয়ে চিনি কিনবেন না।’ জামশেদ সাহেব অবাক, ‘চিনি তো শুনেছি ডায়াবেটিস রোগীর জন্য নিষিদ্ধ। আমার তো ডায়াবেটিস নেই।’ ডাক্তারের মুখ গম্ভীর, ‘জামশেদ সাহেব, বাজারে গিয়ে চিনির দাম শুনলে আপনার দুর্বল হার্ট তা সহ্য করতে পারবে না। তাই সাবধান করে দিলাম।’


আরো সংবাদ



premium cement