২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন ও জাতীয় নিরাপত্তা

একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন ও জাতীয় নিরাপত্তা। - ছবি : সংগৃহীত

সব ঠিক থাকলে আর আট মাস পরই অনুষ্ঠিত হবে আমাদের জাতীয় নির্বাচন। এখন পর্যন্ত পুরো জাতি একটি ধোঁয়াশার মধ্যে রয়েছে। বড় দুই দল এই নির্বাচন নিয়ে যার যার অবস্থানে অনড়-অটল রয়েছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বলছে- এই সরকারের অধীনেই হবে নির্বাচন যা সংবিধানে আছে। আর বিএনপি বলছে- ক্ষমতাসীন সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন নয়, কারণ তারা বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়েছে এবং সংবিধান নিজেদের মতো করে সংশোধন করে নিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে মার্কিন নেতৃত্বে পশ্চিমারা সুষ্ঠু ও সর্বজনীন গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পক্ষে শক্ত অবস্থান নিয়েছে যা পরোক্ষভাবে বিএনপির পক্ষে যাচ্ছে বলে পর্যবেক্ষকরা মনে করেন। অন্যদিকে চীনের বর্তমান সরকারের পক্ষে সরাসরি অবস্থানটি দৃশ্যমান। আর প্রিয় বন্ধু ভারত আমাদের বর্তমান সরকারকে দিয়ে যাচ্ছে নীরব সমর্থন। আমাদের নির্বাচন নিয়ে পরাশক্তিগুলোর এমন দ্বান্দ্বিক পরিস্থিতি দেশ ও জাতির নিরাপত্তার জন্য কখনো ইতিবাচক হতে পারে না।

ভ‚-রাজনীতির মানচিত্রে বাংলাদেশের অবস্থান সহসাই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। বৈশ্বিক রাজনীতিতে কোনো দেশ বা অঞ্চলের স্থান বদলায় না। বদলায় যেটি সেটি হলো- পরাশক্তির খেলার মাঠ। তখন সেই খেলার মাঠকেন্দ্রিক আঞ্চলিক রাষ্ট্রগুলো হয়ে উঠে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই প্রক্রিয়াই বাংলাদেশকে চীন ও আমেরিকার কাছে অতি প্রয়োজনীয় করে তুলেছে। অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে চীনের উত্থান এবং দেশে দেশে তার বাণিজ্য ও আর্থিক সহযোগিতার বিস্তার যুক্তরাষ্ট্রকে ভীষণভাবে ভাবিয়ে তুলছে। সেই সাথে প্রশান্ত মহাসাগরে চীনের ক্রমবর্ধমান আধিপত্য মার্কিনিদের চরমভাবে শঙ্কিত করে তোলে। আর চীনের ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ’ (BRI) নামক বাণিজ্যিক ও কূটনৈতিক উদ্যোগ চীনকে আরো অপ্রতিরোধ্য করে তোলে। প্রশান্ত মহাসাগরীয় আঞ্চলিক দেশ জাপান ও অস্ট্র্রেলিয়াও শঙ্কিত হয়ে উঠে। তাই চীনের চিরবৈরী ভারত, জাপান, অস্ট্রেলিয়া এবং পশ্চিমের দেশগুলোকে নিয়ে আমেরিকা বিভিন্ন ধরনের চুক্তি ও জোট করে চীন ঠেকানোর জন্য সর্বশক্তি নিয়োজিত করতে থাকে। ভারতের সহযোগিতায় সহজেই প্রশান্ত মহাসাগরে আমেরিকার যাতায়াতের জন্য ভারত মহাসাগর উন্মুক্ত রাখতে পারলেও ভারত মহাসাগরে চীনের প্রবেশদ্বার হতে পারে বঙ্গোপসাগর। বঙ্গোপসাগর তীরের আরেকটি দেশ মিয়ানমার মোটামুটি অঘোষিতভাবে চীনের অদৃশ্য উপনিবেশ হয়ে আছে। কিন্তু বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত স্বাতন্ত্র্য বজায় রাখলেও আপাত দৃষ্টিতে চীনের দিকে ঝুঁকে পড়তে পারে বলে আমেরিকা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে। এটিই হলো, বাংলাদেশের ভূ-রাজনৈতিক গুরুত্ব। কাজেই পরাশক্তিগুলোর প্রতিযোগিতার কেন্দ্র এবার দক্ষিণ এশিয়া তথা ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে স্থানান্তরিত হয়েছে বিধায় এই অঞ্চলের ভূ-রাজনৈতিক গুরুত্ব চৌম্বকীয় হয়ে উঠেছে। আর বাংলাদেশ রয়েছে এর একেবারে কেন্দ্রভূমিতে। এ জন্যই এখন বড় প্রশ্ন উঠেছে, বাংলাদেশ কার পক্ষে থাকবে? সে জন্য এবার এ দেশে কোন প্রক্রিয়ার নির্বাচনের মাধ্যমে কোন দল ক্ষমতায় আসবে সেটিও খুব প্রাসঙ্গিক প্রতীয়মান হচ্ছে প্রতিদ্ব›দ্বী পরাশক্তিদ্বয়ের কাছে। দেশের নিরাপত্তা হুমকির বীজটি এভাবেই বপন করা হয়েছে।

গত ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের নির্বাচনে মার্কিনিদের মনোযোগ এ দেশে ছিল না। তখন তারা ভারতের লেন্স দিয়ে দেখত বাংলাদেশকে। কিন্তু ভারত বাংলাদেশে চীনের পেনিট্রেশানকে ঠেকাতে ব্যর্থ হয়েছে বলে মনে করছে আমেরিকা। তা ছাড়া তখন চীনের এ ধরনের অপ্রতিরোধ্য উত্থান শুরু হয়নি। কিন্তু এখন বাংলাদেশে মার্কিন নীতিই হলো চীনের প্রভাববলয় থেকে বাংলাদেশকে দূরে রাখা। এমতাবস্থায় দুই পরাশক্তির টানাপড়েনের মধ্যে পড়ে বাংলাদেশের নিরাপত্তা হুমকির মধ্যে পড়তে পারে। কারণ পরাশক্তির দ্বন্দ্বের ‘ফল আউট’ বা বিপর্যয়কর পরিণতি বহুমুখী ও বহু ধরনের হতে পারে। এর তাৎক্ষণিক ও দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব পড়তে পারে দেশ ও জাতির ওপর। অর্থনৈতিক, বাণিজ্যিক ও অবকাঠামোগত প্রভাব এবং এমনকি স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বও হুমকির সম্মুখীন হতে পারে। আমরা জানি, পরাশক্তিগুলো সাধারণত তৃতীয় কোনো দেশে তাদের শক্তির পরীক্ষা করে থাকে।

আপাতদৃষ্টিতে যুক্তরাষ্ট্র এই দেশে একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন চাইছে। কিন্তু তাদের এই চাওয়া আমাদের ভালোর চেয়ে বেশি প্রয়োজন তাদের ভূ-রাজনৈতিক উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার জন্য। কারণ, চীনের প্রভাবমুক্ত করতে না পারলে বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে বঙ্গোসাগর হয়ে ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরে মার্কিন আধিপত্য কায়েম সহজ হবে না। অন্যদিকে চীনের চাওয়া হলো, বাংলাদেশকে মার্কিন প্রভাবমুক্ত রেখে দক্ষিণ চীনসাগর ও প্রশান্ত মহাসাগরে তাদের আধিপত্য কায়েম করা ও তাইওয়ানকে আগলে রাখা। এমন পরিস্থিতিতে এ দেশে একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হলে নতুন সরকার হয়তো বা চীনের বলয় থেকে খসে পড়ে আমেরিকার দিকে ঝুঁকে পড়তে পারে। অথচ যেকোনোভাবে একটি নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতাসীন সরকার পুনরায় ক্ষমতায় এলে তাদেরকে চীনের সহযোগিতা অবশ্যই নিতে হবে। তবে ভারত এখানে একটি সংবেদনশীল পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে। তারা একই সাথে ক্ষমতাসীনদেরই পুনরায় ক্ষমতায় আনতে চায়। তবে তা হতে হবে অবশ্যই চীনের প্রভাবমুক্ত হয়ে। কাজেই চীন-মার্কিন এই প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে ভারত মৃদুভাষী হয়ে থাকলেও বর্তমান ক্ষমতাসীনদের সর্বাত্মক সহযোগিতার জন্য প্রস্তুত রয়েছে বলে পর্যবেক্ষকরা মনে করেন।

এদিকে চীনকে চারদিক থেকে ঘিরে বিচ্ছিন্ন করে ফেলার জন্য যুক্তরাষ্ট্র এই অঞ্চলে বিভিন্ন জোট ও ফোরাম গঠন করেছে। ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজি (IPS), কোয়াড, ইন্দো-প্যাসিফিক ইকোনোমিক ফ্রেমওয়ার্ক (IPEF)’, অকাস : অস্ট্র্রেলিয়া, ইউকে ও ইউএস (AUKUS) ইত্যাদি গঠন করে সেগুলোতে বাংলাদেশকে যোগদানের জন্য চাপ প্রয়োগ করছে। বিশেষ করে বৃহত্তর আঞ্চলিক কৌশল আইপিএসেতে অংশীদার হওয়ার জন্য অব্যাহতভাবে চাপ প্রয়োগ করছে। অন্যদিকে চীন প্রকাশ্যেই বাংলাদেশকে এসবে যোগদানের জন্য বারণ করছে, এমনকি মৃদু হুমকিও ছুড়েছে। বিশেষ করে প্রতিরক্ষা জোট কোয়াডে (যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, অস্ট্রেলিয়া ও ভারত) না যোগদানের বিষয়ে চীন বাংলাদেশকে কড়া বার্তা দিয়ে রেখেছে। কূটনৈতিক এই ‘টাইট রশির’ উপর দাঁড়িয়ে সম্প্রতি বাংলাদেশ আইপিএস নীতি প্রকাশ করেছে। নির্বাচনপূর্ব জাপান, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র সফর শুরুর আগ মুহূর্তে প্রকাশিত এই আইপিএস রূপরেখা মূলত সব পক্ষের সন্তুষ্টি বিবেচনায় রেখেই করা হয়েছে বলে বোদ্ধারা মনে করেন। তবে এতে যুক্তরাষ্ট্র কতটুকু সন্তুষ্ট হবে বা ছাড় দেবে তা সামনের মাসগুলোতেই বোঝা যাবে। কারণ মার্কিনিদের হাতে অনেক উপকরণ রয়েছে চাপ প্রয়োগের। আইএমএফ, বিশ্বব্যাংক, জাতিসঙ্ঘ শান্তি মিশন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ইত্যাদি মোটামুটি তাদেরই নিয়ন্ত্রণে। তা ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ আমাদের সবচেয়ে বড় রফতানি গন্তব্য। গত ২০২১ সালে যুক্তরাষ্ট্র ছিল বাংলাদেশের একক বৃহত্তম পণ্য রফতানি করা রাষ্ট্র। গত করোনা মহামারীর সময় তারা আমাদেরকে ছয় কোটি ডোজ টিকা বিনামূল্যে দিয়েছে যা পৃথিবীর কোনো একটি দেশে আমেরিকার সবচেয়ে বড় টিকা অনুদান। যুক্তরাষ্ট্র এসব কিছুই করছে বাংলাদেশের সাথে চীনের তুলনায় মজবুত সম্পর্ক গড়ার উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে। অর্থাৎ বাংলাদেশকে ঘিরে নীরব চীন-মার্কিন একটি প্রতিদ্বন্দ্বিতাও চলমান রয়েছে। অন্যদিকে চীন বাংলাদেশের সদ্য উন্মোচিত আইপিএস নীতিতে কিছুটা হোঁচট খেতে পারে! আবার চীন আমাদের সবচেয়ে বড় উন্নয়ন অংশীদার। নগদ অর্থ থেকে শুরু করে আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, অবকাঠামো উন্নয়ন ইত্যাদিতে রয়েছে চীনের সর্ববৃহৎ অংশীদারিত্ব। তবে সাম্প্রতিক শ্রীলঙ্কার স্মরণকালের ভয়াবহতম অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের সময় চীন খুব একটা উপকার করতে পেরেছে বলে মনে হয় না। অথচ চীনের হাত ধরেই শ্রীলঙ্কার অবকাঠামোগত উন্নয়নের শীর্ষে যাওয়ার প্রচেষ্টা চলছিল বলে অনেকেই মনে করেন। সব কিছু মিলে মার্কিন-চীন দ্বৈরথের মধ্যে বাংলাদেশের কূটনৈতিক অবস্থান অত্যন্ত সংবেদনশীল ও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। এ জন্যই হয়তো বা আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন বলেই ফেলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও ভারতের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা বড় চ্যালেঞ্জ । (নয়া দিগন্ত, ৩০ জানুয়ারি-২০২৩)

এদিকে নির্বাচন যতই এগিয়ে আসছে মার্কিন চাপ ততই বাড়ছে আমাদের সরকারের ওপর। গত স্বাধীনতা দিবসের শুভেচ্ছাবার্তায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন লিখেছেন, ‘বাংলাদেশে নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে আসার সময় মনে করিয়ে দিতে চাই যে, আমাদের দুই দেশ গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের প্রতি সম্মান এবং অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্ব দেয়।’ (প্রথম আলো, ২৮ মার্চ-২০২৩) গত ১০ এপ্রিল ওয়াশিংটনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেনের সাথে বৈঠকে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন বলেছেন, ‘বাংলাদেশের আগামী নির্বাচনের দিকে যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি সারা বিশ্বের দৃষ্টি রয়েছে। এই অঞ্চল এবং সারা বিশ্বের অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ যেন উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়, তা নিশ্চিতের বিষয়ে সবার মনোযোগ রয়েছে।’ (প্রথম আলো, ১২ এপ্রি-২০২৩) এমন একটি পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী সংসদে বলেছেন, ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চাইলে যেকোনো দেশের ক্ষমতা উলট-পালট করতে পারে। (নয়া দিগন্ত, ১১ এপ্রিল-২০২৩)

আমাদের জন্য এখন বড় চ্যালেঞ্জ হলো, সামনে অনুষ্ঠেয় নির্বাচনটি কিভাবে সম্পন্ন হবে? বিশেষ করে ক্ষমতাসীন সরকার ক্ষমতায় থেকে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্পন্ন করার মতো একটি কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি হয়ে পড়েছে। প্রথমত, দেশ ও জাতির নিরাপত্তার স্বার্থে একটি সুষ্ঠু, অবাধ, অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজন করা। দ্বিতীয়ত, ঘটনাপ্রবাহের ওপর নির্বাচনকে ছেড়ে দেয়া এবং তৃতীয়ত, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে কৃত্রিম শৃঙ্খলা চাপিয়ে দিয়ে নিজেদের মতো করে সাজিয়ে নির্বাচন করে পুনরায় ক্ষমতায় আরোহণ করা। প্রথমটি ছাড়া বাকি দু’টো পথই হবে জাতির জন্য দুর্ভাগ্যজনক, অনিরাপদ এবং অনিশ্চিত গন্তব্যের দিকে যাত্রা।

ঘটনাপ্রবাহের ওপর নির্বাচনকে ছেড়ে দিলে দেশে দেখা যাবে চরম বিশৃঙ্খলা ও সহিংসতা যা দেশকে নৈরাজ্যের দিকে ঠেলে দেবে। আর শক্তি প্রয়োগ করে কৃত্রিম শৃঙ্খলা চাপিয়ে নির্বাচন করলে জাতি পড়বে এক অন্ধকারাচ্ছন্ন খাদে। তবে সেই পথে চীন-ভারত সন্তুষ্ট হবে এবং সহযোগিতাও করবে। কিন্তু পুরো জাতি অবস্থান করবে একটি বারুদস্ত‚পের উপর। যেকোনো সময় বিস্ফোরণ ঘটতে পারে, যেখানে জ্বলব আমরা সবাই; ক্ষমতাসীন-ক্ষমতাহীন কেউ তা থেকে রক্ষা পাবে না। অন্য দিকে, মার্কিন নেতৃত্বের পশ্চিমারা হবে অসন্তুষ্ট। তাদের হাতে রয়েছে চাপ প্রয়োগের জন্য শক্তিশালী অনেক পথ। ইতোমধ্যেই আমরা নির্মাণাধীন রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণসামগ্রী নিয়ে নিষেধাজ্ঞাভুক্ত রাশিয়ান জাহাজের বাংলাদেশ ও ভারতের বন্দরে নোঙ্গর করার বিষয়ে মার্কিন চাপের ভয়াবহতা অনুভব করতে পেরেছি! তা ছাড়া মার্কিনিরা বাংলাদেশের ইতিবাচক সাড়া না পেলে ইতোমধ্যে বিকল্প চিন্তা করে রেখেছে বলে অনেকে মনে করেন। সম্প্রতি মার্কিন কংগ্রেস ‘বার্মা অ্যাক্ট’ পাস করেছে যার মাধ্যমে তারা মিয়ানমারে প্রবেশের পথ তৈরি করে রেখেছে। আর ‘বার্মা অ্যাক্ট’ কার্যকর হলে তার নেতিবাচক প্রভাব প্রতিবেশী রাষ্ট্র হিসেবে সরাসরি বাংলাদেশে পড়তে পারে। আমরা সাম্প্রতিককালে, দেখেছি, চীন-ভারত শ্রীলঙ্কাকে সামান্যই সাহায্য করতে পেরেছে। এমনকি আমাদের গলার কাঁটা ‘রোহিঙ্গা সমস্যাটি’ পর্যন্ত সমাধানে চীন প্রয়োজনীয় ভ‚মিকা রাখছে না। শুধু নামেমাত্র ‘ঠোঁটের সেবাটুকুই’ দিয়ে যাচ্ছে। অথচ এই সমস্যা সমাধান চীনের জন্য শুধু সিদ্ধান্তের বিষয়! ২০১৭ সালে মিয়ানমারের সাথে দ্বিপক্ষীয় সমাধানে গেলে তখন হয়তো পুরো বিশ্বকেই পাশে পাওয়া যেত। কিন্তু তখন চীনের পরামর্শে চীনকে তৃতীয় পক্ষ হিসেবে নেয়ার ফলেই এই সমস্যাটি ঝুলে আছে এবং হয়তো বা যুগ যুগ ধরেই চীন তা ঝুলিয়ে রাখবে। কারণ এই সমস্যা জিইয়ে রাখলে চীনেরই লাভ বেশি হবে এবং তারাই এর সবচেয়ে বড় সুবিধাভোগী!

আমাদের আসন্ন নির্বাচন নিয়ে দেশ ও জাতি এক মহাসঙ্কটে পড়তে যাচ্ছে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন। কারণ, গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্পন্ন করতে ব্যর্থ হলে অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক দুই দিক থেকেই আমরা নিরাপত্তা ঝুঁকিতে পড়ে যেতে পারি। কিন্তু আমরা বিশ্বাস করতে চাই, আমাদের জাতীয় নেতারা অত্যন্ত দূরদর্শী ও দেশ প্রেমিক। তারা কিছুতেই চাইবেন না দেশ ও জাতি নিরাপত্তা ঝুঁকিতে পড়–ক। তারা অবশ্যই গ্রহণযোগ্য ও সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করবেন। কারণ, নেতারাই জাতিকে শিখিয়েছেন, ‘ব্যক্তির চেয়ে দল বড়, দলের চেয়ে দেশ বড়’। তারাই বলেন, ‘ক্ষমতার লোভে নয়, দেশসেবাই রাজনীতিবিদদের ব্রত’।

লেখক : নিরাপত্তা বিশ্লেষক
Email: maksud2648@yahoo.com


আরো সংবাদ



premium cement
কক্সবাজারে ভুল চিকিৎসায় প্রসূতির মৃত্যু, স্বজনদের হাসপাতাল ঘেরাও বঙ্গোপসাগরে ১২ নাবিকসহ কার্গো জাহাজডুবি ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে বাংলাদেশকে ‘নেট সিকিউরিটি প্রোভাইডার’ হিসেবে দেখতে চায় যুক্তরাষ্ট্র রাজশাহীতে তাপমাত্রা ৪১ দশমিক ৮ ডিগ্রি রাজশাহীতে টানা তাপদাহ থেকে বাঁচতে বৃষ্টির জন্য কাঁদলেন মুসল্লিরা শরীয়তপুরে তৃষ্ণার্ত মানুষের মাঝে পানি ও খাবার স্যালাইন বিতরণ জামায়াতের এক শ্রেণিতে ৫৫ জনের বেশি শিক্ষার্থী নয় : শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী নজিরবিহীন দুর্নীতির মহারাজার আত্মকথা ফতুল্লায় ১০ লাখ টাকা চাঁদার দাবিতে নির্মাণকাজ বন্ধ, মারধরে আহত ২, মামলা পার্বত্যাঞ্চলে সেনাবাহিনী: সাম্প্রতিক ভাবনা গফরগাঁওয়ে ব্রহ্মপুত্র নদে টিকটক করতে গিয়ে স্কুলছাত্রের মৃত্যু

সকল