২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

‘প্রমিজড ল্যান্ড’ এখন ইসরাইলের ধাপ্পাবাজি

‘প্রমিজড ল্যান্ড’ এখন ইসরাইলের ধাপ্পাবাজি - ছবি : সংগৃহীত

পবিত্র কুরআনের সূরা আন নূরের ৫৫ নং আয়াতে বলা হয়েছে- ‘তোমাদের মধ্যে যারা বিশ্বাস স্থাপন করে ও সৎকর্ম করে, আল্লøাহ তাদেরকে ওয়াদা দিয়েছেন যে, তাদেরকে অবশ্যই পৃথিবীতে শাসনকর্তৃত্ব দান করবেন। যেমন তিনি শাসনকর্তৃত্ব দান করেছেন তাদের পূর্ববতীদেরকে এবং তিনি অবশ্যই সুদৃঢ় করবেন তাদের ধর্মকে, যা তিনি তাদের জন্যে পছন্দ করেছেন এবং তাদের ভয়-ভীতির পরিবর্তে অবশ্যই তাদেরকে শান্তি দান করবেন। তারা আমার ইবাদত করবে এবং আমার সাথে কাউকে শরিক করবে না। এরপর যারা অকৃতজ্ঞ হবে, তারাই অবাধ্য।’ ইহুদিদের শাসন কর্তৃত্ব দান বিষয়ে এই আয়াতে কিছু নীতিমালার উল্লেখ রয়েছে। সংক্ষেপে, হজরত মুসা আ:-এর সাথে যারা বিতর্ক করেছিল এবং আল্লাহর বিধান নিয়ে প্রায়ই অপমানসূচক বিতর্ক সৃষ্টি করত তারা হজরত দাউদ আ: এবং সোলাইমান আ:-এর আমলে বিশাল সাম্রাজ্যে সেরা জাতি হিসেবে শান্তিতে বসবাস করেছিল। ইতিহাস আলোচনায় দেখা যায় ‘প্রমিজড ল্যান্ডের’ ওয়াদা আল্লাহপাক রক্ষা করেছেন। বর্তমানে যে প্রমিজড ল্যান্ড বলা হচ্ছে সেটি মূলত রাজনৈতিক ধাপ্পাবাজি।

ইসরাইলি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা ওদিদ ইনুন এক খানা বই লিখেছেন। A Strategy for Israel in the Nineteen Eighties বইটিকে সংক্ষেপে ইনুন পরিকল্পনাও বলা হয়। আরব রাষ্ট্রগুলোকে দখল করে বৃহৎ ইসরাইল রাষ্ট্র তৈরি করা বইটির মূল উপজীব্য। ইসরাইল ছোট হোক বড় হোক দেশটি যেন সামরিক ও আর্থিক দিক দিয়ে ওই অঞ্চলে বলশালী হয় বইতে সে বিষয়টিও বিধৃত রয়েছে। বলশালী হতে হলে পার্শ্ববর্তী আরব রাষ্ট্রগুলোকে ছোট ও দুর্বল রাষ্ট্রে পরিণত করতে হবে। বইয়ে এসব বিষয় আলোকপাত করা হয়েছে এবং কর্মপদ্ধতি পেশ করা হয়েছে। ইহুদি ও জিওনিজমের অত্যন্ত প্রিয় ও আরব বিশ্বে ব্যাপকভাবে প্রচারিত এই বইটি কি আরব শাসকদের হস্তগত হয়েছে?

ইনুন পরিকল্পনায় সিরিয়া, ইরাক, মিসরসহ পুরো আরব দুনিয়াকে দ্রবণীকরণের কথা বলা হয়েছে। অর্থাৎ সব আরব রাষ্ট্রগুলোর সার্বভৌমত্ব বিনষ্ট করার পদক্ষেপ নিতে ইসরাইলি নেতাদের পরামর্শ পরিকল্পনা দেয়া হয়েছে। এটি হাসিল করার জন্য আরব দেশগুলোর মধ্যে বিভেদ, যুদ্ধ, গোষ্ঠীগত বিরোধ, শ্রেণিসঙ্ঘাত এসব জাগিয়ে তোলার কথা বলা হয়েছে। সিরিয়া ও ইরাককে খণ্ডিত করে বিবদমান পক্ষকে দিয়ে শত্রুভাবাপন্ন ছোট নির্জীব রাষ্ট্র বানানো এই পরিকল্পনার একটি বড় অংশ। এই কাজটি প্রেসিডেন্ট বুশের আমলে শুরু হয় এবং সেক্রেটারি অব স্টেট কন্ডোলিজা রাইস তেলআবিব সফরে চূড়ান্ত করেন মর্মে জানা যায়। এটি ইনুন পরিকল্পনার কার্বন কপি মনে করা হয়, কেননা ১৯৮২ সালে ইনুন এটি পেশ করেছিলেন। পবিত্র কুরআনে ইহুদিদের কুৎসিত চরিত্রের কথা বলা আছে। কুরআনে বলা হয়েছে- ‘হে রাসূল! তাদের জন্য দুঃখ করবেন না, যারা দৌড়ে গিয়ে কুফরে পতিত হয়; যারা মুখে বলে, আমরা ঈমান এনেছি, অথচ তাদের অন্তর ঈমান আনেনি। আর যারা ইহুদি তারা মিথ্যা বলার জন্য গুপ্তচরবৃত্তি করে। (তাদের মধ্যে) যারা আপনার কাছে আসেনি তারা অন্য দলের গুপ্তচর। তারা (আল্লাহর) কালামকে স্বস্থান থেকে পরিবর্তন (বিকৃত) করে। তারা বলে, যদি তোমরা এ নির্দেশ পাও, তবে তা গ্রহণ করো আর যদি এ নির্দেশ না পাও, তবে বিরত থেকো। আল্লাহ যাকে পথভ্রষ্ট করতে চান, তার জন্য আল্লাহর কাছে আপনি কিছুই করতে পারবেন না। তারা এমনই যে আল্লাহ তাদের অন্তরকে পবিত্র করতে চান না। তাদের জন্য দুনিয়ায়ও রয়েছে লাঞ্ছনা আর আখিরাতে রয়েছে বিরাট শাস্তি।’ (সূরা আল-মায়েদা-৪১)

সূরা মায়েদার তৃতীয় রুকু থেকে আহলে কিতাবের আলোচনায় তফসিরে বলা হয়েছে- আহলে কিতাবের মধ্যে ইহুদি ও খ্রিষ্টান ছাড়াও কিছু কপট ইহুদি ছিল; তারা কপটতাপূর্ণ মন নিয়ে মুসলমান হয়েছিল। ইসলামী পরিভাষায় তারা মুনাফিক। এরা মুসলমানদের সামনে ইসলাম প্রকাশ করত আর স্বধর্মাবলম্বী ইহুদিদের কাছে গিয়ে ইসলাম ও মুসলমানদের নিয়ে বিদ্রƒপ করত। আল-কুরআনে ইহুদিদের দুশ্চরিত্রের আরো বিবরণ রয়েছে যেমন- প্রথমত, ইহুদিরা মিথ্যা ও ভ্রান্ত কথাবার্তা শোনাতে অভ্যস্ত। তাদের পাদ্রিরা তাওরাত শরিফ বিকৃত করে যেসব বিধান ও অমূলক কিসসা-কাহিনী তাদের শোনাত, সাধারণ ইহুদিরা তা-ই মেনে নিত। দ্বিতীয়ত, ইহুদিদের শ্রেণিভুক্ত মুনাফিকরা গুপ্তচরবৃত্তিতে লিপ্ত ছিল। তৃতীয়ত, ইহুদিদের বদ অভ্যাস ছিল, ঐশী গ্রন্থের বিকৃতি সাধন। তারা আল্লাহর কালামকে যথার্থ স্থান থেকে সরিয়ে তার ভুল অর্থ করত। চতুর্থত, ইহুদিদের বদ অভ্যাস ছিল, ঘুষ ও উৎকোচ গ্রহণ।

ইহুদিরা আরো একটি বিষয় নিয়ে গর্ববোধ করে। তারা জানে যে, পৃথিবীতে তারাই একমাত্র জাতি যারা দুনিয়াতে বসে আসমানি খাবার মান্না ও সালওয়া খেয়েছিল। তারা মনে করে, বিশ্ব শাসন ও নেতৃত্বের যোগ্যতা তাদেরই রয়েছে। এসব ধারণা থেকে বৃহৎ ইসরাইল রাষ্ট্র কায়েমের জন্য ইহুদিরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। বিশাল সাম্রাজ্য, শান্তি ও প্রতিপত্তির ওয়াদা দেয়া হয়েছে হজরত ইবরাহিম আ:-কে। তিনি এবং তাঁর বংশধররা এই নিয়ামত পেয়েছেন। সে ধারায় রয়েছেন জাকারিয়া আ:, ইয়াহইয়া আ: ও ঈসা আ:। এ নবীরা বেশির ভাগ বনি ইসরাইলিদের প্রতি প্রেরিত হয়ে। সেরা জাতি হিসেবে পৃথিবীতে তারা বিচরণ করে। জিওনিজমে প্রমিজড ল্যান্ড এক ধর্মীয় গুরুত্ব বহন করে। মিসরের নীলনদ থেকে ফোরাত নদীর তীর পর্যন্ত যে বিশাল ভূখণ্ড সেটি ইহুদিরা প্রমিজড ল্যান্ড মনে করে।

ওয়াশিংটন পোস্টের সংবাদে প্রকাশ, ডোনাল্ড ট্রাম্প এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ইসরাইলের নিরাপত্তার জন্য তিনি মধ্যপ্রাচ্যে সেনা মোতায়েন অব্যাহত রাখবেন। তার ভাষ্যটি এরূপ, “Now, are we going to stay in that part of the world [the Middle East]? One reason to is Israel. Oil is becoming less and less of a reason because weÕre producing more oil now than weÕve ever produced. So, you know, all of a sudden it gets to a point where you donÕt have to stay there.” এখানে তিনি সৌদি আরবকে লক্ষ করে বলেছেন। সৌদি আরব যুক্তরাষ্ট্রে তেল সরবরাহে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে এবং ইসরাইলের সাথে সখ্য রয়েছে। বলা হচ্ছে- ট্রাম্পের পররাষ্ট্রনীতিতে যুক্তরাষ্ট্র-ইসরাইল-সৌদি আরব এই ত্রিশক্তি কাজ করেছে। ট্রাম্প মনে করেন, সৌদি আরবের সাথে সম্পর্ক না থাকলে ইসরাইল নানামুখী চাপে থাকবে।

এটি অস্বীকারের কোনো উপায় নেই যে, ইসরাইল যাই করুক না কেন, তাকে বিপুল পরিমাণ আধুনিক অস্ত্রসম্ভারে সমৃদ্ধ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। যেকোনো যুদ্ধ ও আক্রমণের সময় তেলআবিব ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে অস্ত্র সরবরাহে আকাশ সেতু প্রতিষ্ঠিত হয়। অস্ত্র সহযোগিতা, অস্ত্র প্রদান, মিসাইল ডিফেন্স প্রদান ও সামরিক সহায়তা খাতে ইসরাইলের সাথে ১০ বছরের চুক্তি রয়েছে, এই চুক্তির আওতায় কোন বছর কী অস্ত্র দেয়া হবে তা নির্ধারিত এবং প্রয়োজনে তা পরিবর্তন করা হয়। ইসরাইলকে আর্থিক সহায়তা দেয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্র তহবিল সংগ্রহ অভিযানও করে। এমন এক অভিযানে ২০১৮ সালে ৩২ মিলিয়ন ডলার উঠে। আমেরিকার ব্যবসায়ী, মানব সহায়তাকারী ধনী শ্রেণী এই সব সহায়তা দিয়ে থাকে। কয়েক বছর আগে নভেম্বরে ক্যালিফোর্নিয়ায় ৬০ মিলিয়ন ডলার তহবিল সংগ্রহ করা হয়েছিল।

একজন সুপরিচিত ও বিতর্কিত ইসরাইলি বসতি স্থাপনকারী, ড্যানিয়েলা ওয়েইস, বলেছিলেন যে ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীর ইসরাইলের সংযুক্তির পরে ভবিষ্যতের ইসরাইল সম্পর্কে তার দৃষ্টিভঙ্গিতে লেবানন, সিরিয়া, মিসর, ইরাক ও ইরানের কিছু অংশ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। অবৈধ পশ্চিম তীরে বসতি স্থাপনের সাবেক মেয়র ওয়েইস দাবি করেছিলেন যে, ভবিষ্যতের ‘বৃহত্তর ইসরাইল’ গঠনের দৃষ্টিভঙ্গি ‘চরম’ নয় বরং ‘মৌলিক ইহুদি দৃষ্টিভঙ্গি’ এবং ‘জায়নবাদ চালিয়ে যাওয়ার একমাত্র উপায়’! Haaretz কলাম লেখক ব্র্যাডলি বার্স্টন পশ্চিম তীরে ইহুদি বসতি স্থাপনের বিরোধিতা করেছিলেন। তিনি মনে করেন, ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরজুড়ে বসতি স্থাপন ও সম্প্রসারণের ফলে ‘দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধান’ অসম্ভব করে তুলবে। এটি সবার জানা, যেকোনো ইহুদি নেতা ফিলিস্তিনি স্বাধীন রাষ্ট্র হোক, তা চায় না।

মূলত বসতি স্থাপনকারী আন্দোলন ইসরাইলের সম্প্রসারণবাদকে অনেকটা ধ্বংস করে দিয়েছে এবং দেশের নিরাপত্তা ও অস্তিত্বকে হুমকির মুখে ফেলেছে। জিয়নবাদের কর্মসূচি সফল করার জন্য ইসরাইলি নেতারা আরো যুক্তি ছড়িয়েছেন এই বলে যে, পশ্চিম তীরে বসবাসকারী ফিলিস্তিনিদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করার জন্য ওটি মূল ইহুদি বা ইসরাইলের সাথে সংযুক্ত থাকা উচিত। তাদের মতে ইসরাইলের ভূমি কেবল ইহুদি জাতির জন্য, যতদূর সার্বভৌমত্বের কথা বলা হয়। আরবরা এখানে বসবাস করতে পারে, তাদের অধিকার থাকতে পারে, মানবাধিকার থাকতে পারে, তারা তাদের শিক্ষা ও সংস্কৃতি পেতে পারে কিন্তু সার্বভৌমত্ব নয়। নেতানিয়াহু পশ্চিম তীরকে সংযুক্ত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। এতদসত্ত্বেও বহু আমেরিকান তরুণ সামরিক দখলদারিত্ব ও বসতি স্থাপনকারী আন্দোলনের বিরূপ সমালোচনা করছেন। বর্তমানে পশ্চিম তীরে অর্ধ মিলিয়ন ইহুদি বসতি স্থাপনকারী রয়েছে। নেতাদের মতো তাদের কথা হলো, বাইবেলের মতে ইহুদি জাতির জন্য ইউফ্রেটিস থেকে নীলনদ পর্যন্ত সমস্ত প্রতিশ্রুত জমি পেতে হবে। তারা নিশ্চিতভাবে বিশ্বাস করে যে, এটি হবে, নিপীড়ন করে হলেও। যেমন পশ্চিম তীরের ফারা আতা গ্রামের সব জলপাই বাগান ধ্বংস করে ফিলিস্তিনিদের নিঃস্ব করে দেয়া হয়েছে। জিওনিস্ট নেতারা মনে করেন, যে লক্ষ্যে পৌঁছাতে হলে সর্বাত্মক যুদ্ধ দরকার যার মাধ্যমে ফিলিস্তিনিরা নিঃশেষ হয়ে যাবে আর দেশগুলোও এগিয়ে আসবে না এমনই ফাঁদ তৈরি করতে হবে।

বিশ্ব ইহুদিবাদী সংগঠন এবং ইহুদিবাদ বা জিয়নিজম প্রতিষ্ঠাতা পিতা থিওডোর হার্জেল সহ ইহুদিবাদী আন্দোলনের প্রথম দিকের নেতারা মধ্যপ্রাচ্যের বৃহৎ ইহুদি রাষ্ট্রকে মিসরের নীলনদ থেকে ইউফ্রেটিস পর্যন্ত প্রসারিত করে সিরিয়া, লেবানন ও ইরাকের অঞ্চলগুলোকে ঘিরে রাখার কথা বলেছেন যা ইতোপূর্বেও আলোচনা করা হয়েছে। তারা মনে করে, প্যাক ম্যান খেলে মুসলিম বিশ্বকে কুপোকাত করবে।

১৯৮২ সালে ইসরাইলি সামরিক কৌশলবিদ ওডেড ইয়িননের পরিকল্পনা ‘বৃহত্তর ইসরাইল’ অর্জনের একটি রোডম্যাপের জন্ম দেয়। পরিকল্পনা অনুযায়ী, উল্লেখযোগ্যভাবে লেবাননে ইসরাইলি আগ্রাসন এবং দখলদারিত্বের সাথে মিলে যায়, মধ্য প্রাচ্যে ইসরাইলের আঞ্চলিক শ্রেষ্ঠত্ব সমগ্র আরব বিশ্বকে ছোট এবং দুর্বল সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রে পরিণত করে সুরক্ষিত করার চিন্তাধারা রয়েছে। পরিকল্পনাটিতে ইরাক, সিরিয়া, জর্ডান, লেবানন, সৌদি আরব এবং মিসরকে বিভিন্ন সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রে বিভক্ত করার পরিকল্পনা ও বিভিন্ন উপায়ে তা অর্জনের জন্য গোপন কমসূচি রয়েছে বলে জানা যায়।

‘বৃহত্তর ইসরাইল’ এর প্রবক্তারা রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্পের সিরিয়ার গোলান হাইটসের সাথে ইসরাইলের সংযুক্তিকরণের কার্যত স্বীকৃতি দ্বারা উৎসাহিত হয়েছিলেন, যদিও এই পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক নিন্দা পেয়েছে অনেক। গোলান হাইটস, ১৯৮১ সালে ইসরাইল সংযুক্ত করেছিল। বৃহৎ ইসরাইলের জন্য গোলান হাইটস খুবই প্রয়োজন এবং সেটি ইসরাইল এর মধ্যেই সম্পন্ন করে সেখানে কৌশলগত সামরিক বাহিনী স্থাপন করেছে এবং জর্দানের মূল কৃষক ও লোকজনকে আসা-যাওয়ার জন্য পারমিট দিয়েছে। অর্থাৎ নিজ দেশে এ জর্দানিরা পরবাসী। বাদশাহর বিরুদ্ধে বিক্ষোভকারী হাজার হাজার জর্দানির জন্য বিশাল বিশাল কারাগার স্থাপন করা হয়েছে।

পশ্চিম তীরের পুরো সংযুক্তিকরণে শেষ ধাপের কাজ শেষের দিকে। ইসরাইলিরা বৃহত্তর ইসরাইল না হওয়া পর্যন্ত আরো বেশি অঞ্চল দখলের জন্য অস্থির। যাই হোক, এই পথটি নিঃসন্দেহে বড় আকারের আঞ্চলিক যুদ্ধ সৃষ্টি করবে। কারণ লেবানন, সিরিয়া, ইরাক, ইরান ও জর্দানের মতো দেশ তাদের ভূখণ্ডের বড় অংশ বিনাযুদ্ধে হস্তান্তর করার সম্ভাবনা খুব কম। তবে এই যুদ্ধের সুযোগ পাওয়াও বড় ভাগ্যের ব্যাপার। ইরান ব্যতীত অন্যদের অবস্থা খুবই খারাপ। ট্রাম্পের নিউক্লিয়ার গেম উল্টো ফল বয়ে এনেছে। ইরান যেকোনো সময় বিনা নোটিসে পরমাণু বোমা বানানোর সক্ষমতা অজন করেছে। সৌদি আরব একটু দেরিতে হলেও গেম প্ল্যানে সাড়া দিচ্ছে না। ইয়েমেন যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার জন্য সহায়তা প্রিন্স মোহাম্মদ সালমান প্রত্যাখ্যান করেছেন এবং ইসরাইলের সমরমন্ত্রীর সাথে আলোচনা করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। সৌদি আরব চীন সমর্থিত ন্যাটো বিরোধী জোট সাংহাই গ্রুপে সদস্য হওয়ার আবেদন জানিয়েছে। যেটি পশ্চিমা ব্লক থেকে সরে যাওয়ার স্পষ্ট ইঙ্গিত। ইরান ইতোমধ্যেই সদস্য হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে থমকে দাঁড়িয়েছে ‘প্রমিজড ল্যান্ড’ প্রকল্প।

লেখক : অবসরপ্রাপ্ত যুগ্মসচিব ও গ্রন্থকার


আরো সংবাদ



premium cement