২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`

নির্বাচনী রাজনীতিতে কূটনীতির উত্তাপ

নির্বাচনী রাজনীতিতে কূটনীতির উত্তাপ। - ছবি : সংগৃহীত

এই বছরের ডিসেম্বর অথবা ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে আমাদের দেশে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এই নির্বাচন নিয়ে আমরা তো বটেই, বিদেশীরাও অত্যন্ত ব্যস্ত হয়ে উঠেছেন বলে মনে হয়। তারা অবশ্য প্রায় আরো এক বছর আগে থেকেই আমাদের নির্বাচনে তাদের স্পর্শকাতরা তা আশা-আকাক্সক্ষার বিষয়ে বলাবলি করে আসছেন। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে পশ্চিমা বিশ্ব থেকে আমাদের নির্বাচনের বিষয়ে নানান ধরনের উপদেশ দেয়া হচ্ছে। বর্তমান ভূরাজনৈতিক বাস্তবতায় তারা বাংলাদেশের ক্ষমতায় কারা থাকবে বা না থাকবে সেই বিষয়ে অত্যন্ত সজাগ রয়েছেন বলে মনে হচ্ছে।

গত ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২২ তারিখে নির্বাচন কমিশন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করেন। সেই মতে, আগামী নভেম্বরে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে। পরে ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে অথবা ২০২৪ সালের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহের মধ্যে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে (নয়া দিগন্ত : ১৫/০৯/২০২২)। রোডম্যাপ ঘোষণার সময় নির্বাচন কমিশনার মো: আলমগীর বলেন, কোনো দল অংশগ্রহণ না করলে তার দায় ‘ইসি’ নেবে না। তিনি সম্ভবত ‘বিএনপি’কে ইঙ্গিত করেই এটি বলেছেন। এ ধরনের ঘোষণা অহমিকামূলক ও একতরফা নির্বাচন অনুষ্ঠানের হুমকিস্বরূপ। সাংবিধানিক পদধারী সম্মানিত ব্যক্তিবর্গের নিকট জাতি আরো ইতিবাচক ও দায়িত্বশীল বক্তব্য আশা করে। তিনি যে কথাটি বলেননি তা হলো, নির্বাচনের সমতল ময়দান এবং নিরাপদ-নিরপেক্ষ পরিবেশ সৃষ্টির পরও কোনো দল নির্বাচনে অংশ নিতে ব্যর্থ হলে তার দায় তো সংশ্লিষ্ট দলকেই বহন করতে হবে। ‘ইসি’র এভাবে বলার অক্ষমতা বা সীমাবদ্ধতা যদি থাকে তবে তাকে সদিচ্ছার ঘাটতি হিসেবেই পর্যবেক্ষকরা দেখছেন।

তবে ‘ইসি’র নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণার আরো অনেক আগে থেকেই দেশের পরবর্তী নির্বাচন নিয়ে বিতর্ক চলছেই। স্বয়ং নির্বাচন কমিশনও কখনো কখনো বিতর্কের সূত্রপাত করেছেন। এই ‘ইসি’ গঠন থেকে শুরু করে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচন, বিভিন্ন স্থানীয় সরকার নির্বাচন, গাইবান্ধার উপনির্বাচন, নির্বাচনে ইভিএমের ব্যবহার ইত্যাদি নিয়ে হাজারো বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। ফলে জনমনে আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহের সৃষ্টি হয়েছে। বরং এ পর্যন্ত এই নির্বাচন কমিশন তাদের কথাবার্তা ও কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে ক্ষমতাসীনদের ছাড়া অন্য কারো আস্থা অর্জন করতে পেরেছেন বলে দেশের বিরোধী দলগুলো মনে করে না। নির্বাচন কমিশনের অবস্থান, ক্ষমতাসীনদের মনোভাব এবং দেশের নিপীড়নমূলক রাজনৈতিক বাস্তবতার মুখে, দেশের বাইরেও আমাদের নির্বাচন নিয়ে মনোযোগের সৃষ্টি হয়েছে। এতে সবচেয়ে বেশি সংবেদনশীলতা প্রদর্শন করছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তার অনুসারী পশ্চিমা দেশগুলো। আগে পশ্চিমারা ‘সন্ত্রাস’ নামক অস্ত্র ব্যবহার করত ভিন্ন দেশে হস্তক্ষেপ করার জন্য।

সেই অস্ত্র ভোঁতা হয়ে যাওয়ায় এখন তারা ‘মানবাধিকার ও গণতন্ত্র’ নামক উছিলা ব্যবহার করছে অন্য দেশে হস্তক্ষেপকে বৈধতা দেয়ার জন্য। তারা বেশ কয়েক বছর আগে থেকেই চীনের উত্থান মোকাবেলায় এবং মার্কিন আধিপত্য প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে প্রশান্ত মহাসাগর ও ভারত মহাসাগরে অবাধ ও মুক্ত চলাচলের জন্য ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজি বা ‘আইপিএস’ ধারণা নিয়ে অগ্রসর হচ্ছিল। আবার দক্ষিণ এশিয়া থেকে ভারত মহাসাগরে প্রবেশ পথ বঙ্গোপসাগরের তীরে রয়েছে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার। বস্তুত দীর্ঘ দিন ধরে চীনের ছায়াতলে থাকায় বাংলাদেশ মার্কিনদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এ দিকে বাংলাদেশ সরকার চীন ও ভারতের মধ্যে ভারসাম্যপূর্ণ ক‚টনীতি করে এলেও মার্কিন প্রশ্নে চীনের ছায়াতলে আশ্রয় নেয়ার বাস্তবতা দৃশ্যমান হচ্ছে বলে বিশ্লেষকরা মনে করেন। অন্য দিকে ভারত-চীনের চিরবৈরিতা এবং ভারত-মার্কিন সুসম্পর্ক বিদ্যমান। তা ছাড়া ভারতের নিজস্ব সামর্থ্য, ক‚টনৈতিক দক্ষতা, আত্মনির্ভরতা ও আত্মপ্রত্যয়, নিজস্ব সিদ্ধান্ত গ্রহণের সাহসিকতা এবং বৈশ্বিক রাজনীতিতে শক্ত অবস্থানের কারণে চীন প্রশ্নে ভারতের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো পিছুটান নেই। কিন্তু বর্তমানে বাংলাদেশের সাথে চীনের অর্থনৈতিক, বাণিজ্যিক, ক‚টনৈতিক ও উন্নয়নবিষয়ক সম্পর্কের কারণে যুক্তরাষ্ট্র উদ্বিগ্ন হয়ে আছে। উল্লেখ্য, অন্য দেশের রাজনীতিতে চীন সাধারণত কোনো হস্তক্ষেপ না করলেও দেখা গেছে, বাংলাদেশে গত ২০১৮ সালের নির্বাচনটি সারা বিশ্বে প্রশ্নবিদ্ধ হলেও চীন সরকার তাৎক্ষণিকভাবে ওই নির্বাচনে জয়ীদেরকে অভিনন্দন জানিয়েছে। এর পর থেকে চীন বাংলাদেশের ক্ষমতাসীনদের সাথে সম্পর্ক আরো গভীরে নিয়ে যায় এবং অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে থাকে। ফলে ‘কোয়াডে’ যোগদানের বিষয়ে বাংলাদেশকে সরাসরি হুমকি দিয়েছে। এভাবে বাংলাদেশের বর্তমান ক্ষমতাসীনদের নিয়ে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে একটি অনানুষ্ঠানিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা শুরু হলে মার্কিনিরা প্রমাদ গোণে। ফলে তারা বাংলাদেশের বর্তমান ক্ষমতাসীনদের মানবাধিকার লঙ্ঘনের এবং গণতন্ত্র অনুশীলনের নেতিবাচক দিকগুলোকে পুঁজি করার সিদ্ধান্ত নেয় এবং সরব হতে থাকে। উল্লেখ্য, রাশিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য ইউরোপের মাধ্যমে ইউক্রেনের ‘প্রক্সিওয়ার’ যথেষ্ট কিন্তু চীনকে ঠেকাতে দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশকে যুক্তরাষ্ট্রের দরকার। কারণ ভারত এমনিতেই চীনের প্রতি বৈরী। জাপানের সাথে চীনের রয়েছে চলমান ঠাণ্ডা যুদ্ধ, আর এশিয়ার দক্ষিণ-পূর্ব কোণের পরে অবস্থিত অস্ট্রেলিয়াও চীনের বিপরীতে আমেরিকার সাথে যুক্ত হয়েছে। এমতাবস্থায় মার্কিন নেতৃত্ব বাংলাদেশের ক্ষমতায় এমন কাউকে দেখতে চায় যারা চীনের আশীর্বাদপুষ্ট নয়, বরং যুক্তরাষ্ট্রের তল্পিবাহক হবে। সেই লক্ষ্যেই আমেরিকা ও তার পশ্চিমা মিত্ররা বাংলাদেশে তাদের সব তৎপরতার কেন্দ্রবিন্দুতে সামনের জাতীয় নির্বাচনকে রেখেছে।

প্রশ্ন হলো, কেন আমাদের নির্বাচনের বিষয়ে বিদেশীরা এত তৎপর? এর বেশ কয়েকটি সুনির্দিষ্ট কারণ রয়েছে। প্রথমত, বাংলাদেশের ভূরাজনৈতিক গুরুত্ব বৃদ্ধি পাওয়ায় বৈশ্বিক মেরুকরণের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠেছেন। এ মেরুকরণের প্রক্রিয়ায় মার্কিন নেতৃত্বে পশ্চিমা দেশগুলো এবং রুশ-চায়না জোট এই দুই ব্লকের উভয়ই বাংলাদেশকে নিজেদের পক্ষ চাচ্ছে। সে ক্ষেত্রে এ দেশের ক্ষমতায় যারা থাকবে তারাই নির্ধারণ করবে বাংলাদেশ কোন্না দিকে যাবে। আপাত দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশের ক্ষমতাসীনরা ভৌগোলিক ও উন্নয়নগত কারণে চীন-ভারতের দিকে ঝুঁকে আছে এবং চীন-ভারতও সরাসরি সহযোগিতা করছে বর্তমান সরকারকে। কাজেই মার্কিনিরা মরিয়া হয়ে উঠছে নতুন একটি সরকার ক্ষমতায় আনতে যারা চীনের বলয়ের বাইরে থাকবে।

দ্বিতীয় কারণ হলো : বাংলাদেশের বিগত দু’টি নির্বাচনেই বিদেশীদের হস্তক্ষেপ ছিল। ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব সুজাতা সিং সরাসরি হস্তক্ষেপ করে গেছেন। আর ২০১৮ সালের নির্বাচনের পরপরই প্রশ্নবিদ্ধ ফলাফল সত্ত্বেও চীন দ্রুতগতিতে সরকারকে সমর্থন জানিয়ে ওই নির্বাচনকে আন্তর্জাতিক বৈধতা দেয়ার চেষ্টা করেছে। বৈদেশিক হস্তক্ষেপের অন্যতম কারণ হলো : আমাদের সম্মানিত পরাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন প্রকাশ্যে এক সভায় বলেছেন, তিনি বাংলাদেশের বর্তমান সরকারকে ক্ষমতায় রাখতে যা যা করণীয় তা করতে ভারতকে অনুরোধ করেছেন। এ ছাড়াও আমরা দেখেছি, সাবেক ভারতীয় হাইকমিশনার দোরাইস্বামী সারা দেশ চষে বেড়িয়েছেন। এমনকি ক্ষমতাসীন দলের পার্টি অফিসেও নেতৃবৃন্দের সাথে বৈঠক করেছেন। অন্য দিকে গত ১৬ মার্চ রাতে ভারতের বর্তামান হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধিদলকে নৈশ ভোজে আমন্ত্রণ জানান এবং বৈঠক করেন। আমাদের নির্বাচন নিয়ে বিদেশী হস্তক্ষেপের আরো একটি বড় কারণ হলো, আমাদের সাংবাদিক সমাজ। বিদেশী কোনো কর্তাব্যক্তি সফরে এলেই তারা বাংলাদেশের নির্বাচন ও অন্যান্য অভ্যন্তরীণ বিষয়ে প্রশ্ন করে থাকেন। গত এক বছরে দেখা গেছে, বাইরের যত ক‚টনীতিক বাংলাদেশের নির্বাচন সম্পর্কে কথা বলেছেন, প্রায় সবই বলেছেন সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে। এ ছাড়াও আমরা উন্নয়নশীল দেশ হওয়ায় উন্নত দেশগুলো আমাদের উন্নয়নের অংশীদার হওয়ায় তাদের স্বার্থের বিষয়টিও এখানে জড়িত থাকে। যেমন জাপান আগে কখনো কিছু না বললেও সম্প্রতি তারা মার্কিন সুরের সাথে সুর মিলিয়ে আমাদের নির্বাচন সম্পর্কে কথা বলছে।

এর আগে গত ডিসেম্বরেও রাশিয়া যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের অভিযোগ তুলেছিল। অর্থাৎ চীন ও রাশিয়ার অবস্থান বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকারের অনুকূলে বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা। আবার পশ্চিমাদের অবস্থান ক্ষমতাসীনদের বিপক্ষে আছে বলে মনে করছেন অনেকে। বিশেষ করে ‘মায়ের ডাক’ নেত্রীর বাসায় মার্কিন দূত পিটার হাসের হাজির হওয়াতে তাই মনে করছেন বিশ্লেষকরা। এমতাবস্থায় বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন নিয়ে অনেক সংশয় তৈরি হচ্ছে। চীন ও ভারতের বক্তব্যের পর ক্ষমতাসীনদের আত্মবিশ্বাস বেড়ে যায় আবার পশ্চিমাদের মন্তব্যের পর সরকার বিরোধীরা আত্মপ্রত্যয়ী হয়ে ওঠেন বলে সমালোচকরা মনে করে। এভাবে দেশের ওপর এক সুগভীর অনিশ্চয়তা ভর করছে। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি উভয়ে যার যার অবস্থানে অনড়। এর মধ্যেই সুপ্রিম কোর্টের নির্বাচনে দেশের বর্তমান নির্বাচনী ব্যবস্থার প্রকৃত চিত্র ফুটে উঠেছে। কাজেই দেশ ও জাতির স্বার্থে দুই দলের মধ্যে সমঝোতা অত্যন্ত জরুরি। দেশটা আমাদের। রুশ-মার্কিন বা চীন-ভারতীয়রা তাদের স্বার্থই দেখবে, আমাদেরটা নয়। ক্ষমতাসীনরা যদি মনে করেন, যেকোনো মূল্যেই তাদের অধীনে নির্বাচন করে আবার ক্ষমতায় আসবেন; আর বিএনপি যদি মনে করে, পশ্চিমারা তাদেরকে ক্ষমতায় বসিয়ে দিয়ে যাবে, তবে তা জাতির জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর হবে। দেশ আমাদের, নির্বাচন আমাদের। কিসে দেশ ও জাতির কল্যাণ তা আমাদের উভয়পক্ষের জাতীয় নেতৃবৃন্দকে অনুধাবন করতে হবে। অন্য যেকোনো বিদেশী পক্ষ আমাদের কল্যাণের চেয়ে তাদের স্বার্থটাই উদ্ধার করতে চাইবে। কাজেই আমাদের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য আমাদেরকেই দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখতে হবে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহ কোনো জাতির অবস্থার পরিবর্তন করেন না যতক্ষণ না তারা নিজেরা নিজেদের অবস্থার পরিবর্তন করে’ (সূরা রাদ-১৩:১১)।

বিএনপি-আওয়ামী লীগ নির্বাচন নিয়ে পরস্পর কঠোরভাবে বিপরীতমুখী অবস্থানে থাকলেও একটি বিষয়ে তারা একমত হয়েছেন যে, তারা পরস্পরের সাথে আলোচনায় বসবেন না! প্রধানমন্ত্রী বলেছেন বিএনপির সাথে কোনো আলোচনা নয়। আর মির্জা ফখরুল বলেছেন আলোচনা তো নয়ই, বরং এই সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে দেয়া হবে না। তাহলে কি সঙ্ঘাত ও সহিংসতা অনিবার্য? এক দিকে দেশের অভ্যন্তরীণ দলগুলোর মুখোমুখি অবস্থান অন্য দিকে এ নির্বাচনকে নিয়ে পশ্চিমাদের বিপরীতে চীন-রুশের অবস্থান। এই শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থার বিস্ফোরণটি কখন কিভাবে ঘটবে, অনুমান করা মুশকিল। তবে আওয়ামী লীগ শেষ মুহূর্তে পশ্চিমা চাপের কাছে নতি স্বীকার করলে বা দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিলে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে দেশে সুষ্ঠু নির্বাচন করা সম্ভব হবে। সে ক্ষেত্রে সবাই মিলে রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। কারণ দলের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী জনাব ওবায়দুল কাদের এর আগে জাতিকে জানিয়েছিলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতা হারালে দেশে লক্ষাধিক মানুষের নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটতে পারে! অন্য দিকে বিএনপিকেও কৌশলে দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে। অন্য দেশ বা বহির্শক্তি কোনো দলকে ক্ষমতায় বসিয়ে দিতে পারবে না। বিদেশীরা বড়জোর একটি ইতিবাচক পরিবেশ সৃষ্টিতে সহায়তা করতে পারবে। সরকারের ওপর মূল চাপটি বিরোধীদেরকেই জনমতের মাধ্যমে তৈরি করতে হবে। তবে চাপ সৃষ্টির আন্দোলনকে কোনোক্রমেই সহিংসতার কলঙ্ক লেপনের সুযোগ দেয়া যাবে না। এ ব্যাপারে বিএনপিকে সর্বদা সজাগ থাকতে হবে। আর জেল-জুলুম, গ্রেফতার, মামলা-হামলা ইত্যাদি যেকোনো আন্দোলনের অলঙ্কার। এসবের ভয় যারা পায় তারা কখনো আন্দোলনে সফল হতে পারে না। ভোট যদি অধিকার হয় তবে তা আদায় করে নিতে হবে। কেউ কোনো দিন কোনো অধিকার কোলে তুলে দিয়ে যায় না। কাজেই ক‚টনীতিকদের দ্বারে দ্বারে ধরনা দেয়া বাদ দিয়ে সহিংসতাহীন কঠোরতা, ধৈর্য, সাহসিকতা ও বুদ্ধিবৃত্তিক আন্দোলনের ধারাবাহিকতার মাধ্যমেই লক্ষ্য অর্জনে ব্রতী হতে হবে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে শক্তিধর পশ্চিমা বলয় মনে হচ্ছে, বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের পক্ষে শক্ত অবস্থানে আছে। তাদের ক‚টনীতিকরা প্রতিটি বক্তব্যে ওই সব কথাই বারবার বলছেন এবং সাথে সাথে ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনকে খারাপ নির্বাচন বলে সেই ধরনের নির্বাচন না করার জন্য সরকারকে পরামর্শ দিচ্ছেন। পশ্চিমাদের এই চাওয়াটা নৈতিক হলেও তা যদি বিশেষ কোনো দলকে ক্ষমতায় আনার জন্য হয়ে থাকে, সেটা হবে অনৈতিক। অন্য দিকে চীন-রাশিয়ার কর্তৃত্ববাদী একনায়কতান্ত্রিক ও ভারতের গণতান্ত্রিক কর্তৃত্ববাদী ও হিন্দুত্ববাদী ক্ষমতাসীনদের ভাবমর্যাদা বিশ্বব্যাপী খুব ভালো অবস্থানে নেই। কাজেই এসব দেশের হস্তক্ষেপকেও আমাদের দেশবাসী স্বাগত জানাবে বলে মনে হয় না। প্রশ্ন হলো, কেন বিদেশীরা আমাদের দেশের ভেতরের বিষয়ে তাদের আশা-আকাক্সক্ষার সবক দেবে? এটি অনাকাক্সিক্ষত হলেও আমরাই তো তাদেরকে হস্তক্ষেপের এই পথ সুগম করে দিয়েছি! সুতরাং এখনো সময় আছে। আমরা নিজেরাই এ সমস্যার সমাধান করতে পারলে তাদের আশা-আকাক্সক্ষায় আমাদের কিছু যাবে আসবে না। তবে পূরণ হবে জাতির আশা-আকাক্সক্ষা। বিজয়ী হবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা।

লেখক : নিরাপত্তা বিশ্লেষক
Email: maksud2648@yahoo.com


আরো সংবাদ



premium cement
চুয়েট শিক্ষার্থীদের সড়কে অবস্থান অব্যাহত, ঘাতক বাসচালক গ্রেফতার তামাক পণ্যে সুনির্দিষ্ট করারোপের দাবিতে এনবিআর চেয়ারম্যানের কাছে ২৫ সংসদ সদস্যের চিঠি প্রাণিসম্পদ প্রদর্শনীতে মহিষের আক্রমণে বাবা-ছেলেসহ আহত ৪ গফরগাঁওয়ে গৃহবধূর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার তীব্র মাত্রায় হিংস্র হয়ে উঠেছে সরকার : মির্জা ফখরুল মিরসরাইয়ে মৃত্যুর ১৫ দিন পর ব্যাংক কর্মকর্তার কবর থেকে লাশ উত্তোলন দেশে দেড় হাজার মেগাওয়াট লোডশেডিং, দুর্ভোগে মানুষ রংপুরে মহানবী সা:-কে নিয়ে কটূক্তি করায় ছাত্রলীগ কর্মী গ্রেফতার বাড়ছে না শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছুটি, অনলাইনে ক্লাস চালুর চিন্তা বিশ্বের অন্যতম স্মার্ট হজ ব্যবস্থাপনা হবে বাংলাদেশে : ধর্মমন্ত্রী সিলেটে ৪৪ লাখ টাকার ভারতীয় চিনিসহ গ্রেফতার ৪

সকল