২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

মুসলমান অথচ আরবি ভাষাজ্ঞান নেই

মুসলমান অথচ আরবি ভাষাজ্ঞান নেই। - ছবি : সংগৃহীত

পৃথিবীতে ৫৭টি মুসলিম রাষ্ট্র ছাড়াও সর্বত্রই রয়েছে বিভিন্ন ভাষাবাসীর ব্যাপকসংখ্যক মুসলমান। বাংলাদেশের গ্রামেগঞ্জে সব জায়গায় ছড়িয়ে রয়েছে মসজিদ। রাজধানী ঢাকা বহু আগে থেকেই ‘মসজিদের শহর’ নামে পরিচিত। ‘রমজান’ মাস এলে কানায় কানায় মসজিদ পূর্ণ হয়, ছাদ, এমনকি রাস্তা পর্যন্ত নামাজের জামাত চলে আসে। প্রায় প্রতিটি মসজিদেই খতমে কুরআনের মাধ্যমে এশা ও বিতরের নামাজের সাথেই তারাবি সমাপ্ত করতে হয়, ন্যূনতম ২৯ রাকাত নামাজ একসাথে চলে, সময় লাগে একনাগাড়ে ন্যূনতম দেড় থেকে পৌনে দুই ঘণ্টা, কোথাও কোথাও আরো বেশি সময় ধরে খতমে কুরআন হয়ে থাকে। তারাবিতে ১০ দিনে কুরআন খতম হয় কোথাও কোথাও। অন্যদিকে রমজান মাস ছাড়াও পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ, বিশেষ করে জুমার নামাজেও মসজিদ কানায় কানায় ভর্তি হয়।

বাংলাদেশের মানুষ অসাম্প্রদায়িক কিন্তু ধর্মভীরু। ইউনিভার্সিটিপড়–য়া বা ব্যক্তিজীবনে হতাশ কোথাও কোথাও এমন নাস্তিকের দেখা মেলে যা সংখ্যায় অনেক ক্ষুদ্র। কিছু লোক আছে যারা জ্ঞানপাপী তাদের কথা আলাদা, কারণ তাদের নিয়ে আলোচনার কোনো অর্থই হয় না। অবাস্তব কথা বলে সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করাই তাদের প্রধান উদ্দেশ্য।
দেশে ধর্মের অনুশীলন, বিশেষ করে ৯২ শতাংশ মুসলমানের এ রাষ্ট্রে ইসলামী রীতিনীতি, ধর্মীয় অনুশাসন ও সংস্কৃতি ব্যাপক আকারে পালিত হচ্ছে। কিন্তু অসৎ মানুষ, ভ‚মিদস্যু, মজুদদার, মুনাফাখোর, সুদখোর, ভেজাল খাদ্য প্রস্তুতকারী, লোক দেখানো ইবাদতকারী, মানুষের অধিকার ছিনতাই বা অন্যের জমি দখলকারীর সংখ্যা তো কমছে না; বরং বৃদ্ধি পাচ্ছে। রমজান মাসে রোজা থেকে এক ফোঁটা পানি পান করতে আল্লাহকে যে মুসলমান ভয় পায়, সে মুসলমান অন্যের জমি দখল করতে, এতিমের হক নষ্ট করতে বা অন্যায়-অবিচার, অত্যাচার, জুলুম-নির্যাতন করতে বা সৃষ্টিকর্তার আদেশ অহরহ অমান্য করতে ভয় পায় না কেন? আল্লাহ ইসলামকে শুধু নামাজ রোজার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখেননি। দোয়া কবুলের শর্ত হালাল উপার্জন। এত ইবাদতের পরও দোয়া কবুল না হওয়ার কারণ এটি।

হজরত মুহাম্মদ সা: রাষ্ট্র পরিচালনা থেকে শুরু করে জীবনযুদ্ধ কিভাবে অতিক্রম করা যায় তা নিজ জীবনে অনুশীলন করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। কুরআন সৎপথে চলার জন্য এবং মানুষ হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার প্রতিটি সমস্যার ফায়সালা দিয়েছে। তারপরও ধর্মীয় অনুশাসন থেকে মুসলমানদের বাস্তবে জীবন জীবিকা ও কর্মের দূরত্ব এত বেশি কেন? বাংলাদেশে হাজীর সংখ্যাও কম নয়। হজ ছাড়াও প্রতি বছর ওমরাহ পালন করার মতো লোকের অভাব নেই। তারপরও ধর্মীয় অনুশাসন ও ব্যক্তি জীবনে এর প্রভাব নেই কেন? ধর্মীয় অনুশাসনের সাথে ব্যক্তি জীবন একেবারেই বিপরীত, এ ধরনের মানুষের সংখ্যাই এখন দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

প্রায় প্রতিটি মুসলমান পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ হিসেবে আদায় করে। এ ছাড়াও তাহাজ্জুদের নামাজের প্রতি অনেক গুরুত্ব রয়েছে। নামাজে অবশ্য অবশ্যই সূরা ফাতিহা পাঠ করতে হবে, নতুবা নামাজ সঠিক হবে না। সূরা ফাতিহার বাংলা অনুবাদ নিম্নে উল্লেখ করা হলো-

সূরা ফাতিহার বাংলা শব্দার্থ- ‘১. সব প্রশংসা জগতসমূহের প্রতিপালক আল্লাহরই; ২. যিনি করুণাময়, পরম দয়ালু; ৩. কর্মফল দিবসের মালিক; ৪. আমরা শুধু তোমারই ইবাদত করি, শুধু তোমারই সাহায্য প্রার্থনা করি; ৫. আমাদেরকে সঠিক পথে পরিচালিত করুন; ৬. তাদের পথ, যাদেরকে তুমি অনুগ্রহ দান করেছ; ৭. তাদের পথ নয় যারা ক্রোধে নিপতিত ও পথভ্রষ্ট।’ তারাবির ২০ রাকাত এবং নফল নামাজ ছাড়াও একজন নামাজিকে ন্যূনতম ৩৪ বার সূরা ফাতিহা পড়তে হয়। ওই সূরার সাতটি বাক্যের মধ্যে প্রতিটি বাক্যই খুবই তাৎপর্য ও দিকনির্দেশনামূলক, যা অনুসরণ করলে কারো পক্ষে অন্যের অধিকার হরণ করা সম্ভব নয়। যে নামাজি তারাবি ও অন্যান্য নামাজ ছাড়াও দিনে ন্যূনতম ৩৪ বার সূরা ফাতিহা পাঠ করে সে নামাজি সূরাটির তাৎপর্য উপলব্ধি করে নিজ জীবন ও চরিত্রকে সে দিকনির্দেশনা মোতাবেক চলার জন্য সচেষ্ট হতে পারছে না কেন? অথবা সূরা ফাতিহা কেন দিনে ৩৪ বার পাঠকারীর ওপর প্রভাব বিস্তার করতে পারে না? অথবা নামাজিই কেন সূরাটির মর্মমতে নিজে প্রভাবান্বিত হচ্ছে না? কারণ নামাজে পাঠরত সূরার অর্থ বা মর্মার্থ সংশ্লিষ্ট নামাজি জানে না বা বুঝে না। এ বিষয়গুলো অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ এবং পরীক্ষা-নিরীক্ষাসহ গভীর গবেষণার দাবি রাখে।

এ ছাড়াও প্রতি শুক্রবার উপচেপড়া নামাজির উপস্থিতিতে একটি আবেদনময়ী পরিবেশে জুমার নামাজ আদায় হয়। ইমাম সাহেব প্রদত্ত খুৎবা জুমা নামাজের অংশ এবং তা মনযোগসহ শ্রবণ করা প্রতিটি নামাজির ওপর নির্দেশনা রয়েছে। ইমাম সাহেব খুৎবাতে কী বললেন তা কিন্তু আরবি ভাষাজ্ঞান না থাকার কারণে বুঝতে পারি না, ফলে জুমার নামাজে খুৎবা নামাজিদের চরিত্র গঠনে বা সমস্যা সমাধানে কোনো প্রভাব বিস্তার করতে পারছে না। ‘ভাষা’ যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম। কোকিলের সূর বা অন্য যেকোনো পাখির ভাষা তথা কিচিরমিচির আওয়াজ শুনতে খুব ভালো লাগে কিন্তু আমরা সে ভাষা বুঝি না। আল্লাহ বলেছেন- ‘তুমি কি দেখো না যে, আকাশ ও পৃথিবীতে যারা আছে তারা ও উড়ন্ত পাখিরা আল্লাহর পবিত্র মহিমাকীর্তন করে। সকলেই তার প্রশংসা ও পবিত্র মহিমা (সালাত ও তাসবিহ) ঘোষণার পদ্ধতি জানে। আর ওরা যা করে সে বিষয়ে আল্লাহ ভালো করেই জানেন।’ (সূরা-নূর, আয়াত-৪১) কুরআনের বক্তব্য মতে, পাখিদেরও নিজস্ব ভাষা ও সালাত রয়েছে কিন্তু আমরা তা বুঝতে পারি না বা আমাদের বোধগম্য নয় বিধায় তাদের ভাষা আমাদের ওপর কোনো প্রভাব বিস্তার করতে পারে না। অনুরূপ আরবি ভাষার অর্থ বুঝতে পারি না বিধায় আমরা কুরআন দ্বারা প্রভাবিত হই না। ভাষা সম্পর্কে আল্লাহ বলেন- ‘ভাষা তার (আল্লাহর) নিদর্শনাবলির মধ্যে অন্যতম নিদর্শন, আকাশ ও পৃথিবীর সৃষ্টি এবং তোমাদের ভাষা ও বর্ণের বৈচিত্র্য। এতে জ্ঞানীদের জন্য অবশ্যই নিদর্শন রয়েছে।’ (সূরা-রুম, আয়াত-২২) আল্লাহ আরো বলেছেন- ‘আমি প্রত্যেক রাসূলকেই তার স্বজাতির ভাষাভাষী করে পাঠিয়েছি, তাদের কাছে পরিষ্কারভাবে ব্যাখ্যা করার জন্য।’ (সূরা ইবরাহিম, আয়াত-৪)।

আল্লাহ আরো বলেছেন
১. ‘আমি তোমার ভাষায় এ (কুরআন) সহজ করে দিয়েছি যাতে তুমি তার দ্বারা (আল্লাহ) সাবধানীদের সুসংবাদ দিতে পারো ও তর্কপ্রিয় সম্প্রদায়কে সতর্ক করতে পারো।’ (সূরা মরিয়ম, আয়াত-৯৭)
২. ‘কুরআন আমি তো আরবি ভাষায় অবতীর্ণ করেছি যাতে তোমরা বুঝতে পারো।’ (সূরা ইউসুফ, আয়াত-২)
৩. ‘আরবি ভাষায় এ কুরআন যার মধ্যে কোনো জটিলতা নেই, যাতে মানুষ সাবধানতা অবলম্বন করে।’ (সূরা জুমার, আয়াত-২৮)
৪. ‘এই আরবি কুরআন যারা বোঝে সেই সম্প্রদায়ের জন্য কিতাবের আয়াতের বিশদ ব্যাখ্যা দেয়, সুসংবাদ দেয় ও সতর্ক করে। কিন্তু অনেকেই মুখ ফিরিয়ে নেয়, ফলে ওরা শুনতে পায় না।’ (সূরা হা-মিম-আসসিজদা, আয়াত : ৩-৪)
৫. ‘আমি আজমি (অ-আরবি) ভাষায় কুরআন অবতীর্ণ করতাম ওরা অবশ্যই বলত, এর আয়াতগুলো বিশদভাবে ব্যাখ্যা করা হলো না কেন? (কী আশ্চর্য, ভাষা অন্য) আজমি আর (রাসূল) আরবীয়?’ (সূরা হা-মিম-আসসিজদা, আয়াত-৪৪)
৬. ‘এভাবে আমি তোমার ওপর আরবি ভাষায় কুরআন অবতীর্ণ করেছি যাতে তুমি সতর্ক করতে পারো জনপদগুলোর কেন্দ্র (মক্কার) অধিবাসীদেরকে ও তার আশেপাশে যারা বাস করে তাদেরকে আর সতর্ক করতে পারো সমবেত হওয়ার দিন সম্পর্কে, যার ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। সেদিন একদল জান্নাতে ও আরেক দল জাহান্নামে প্রবেশ করবে।’ (সূরা-শুরা, আয়াত-৭)
৭. ‘আমি আরবি ভাষায় এ কুরআন অবতীর্ণ করেছি যাতে তোমরা বুঝতে পারো।’ (সূরা জুখরুফ, আয়াত-৩)
৮. ‘এ কিতাব মুসার কিতাবের সমর্থক, আরবি ভাষায়।’ (সূরা আহকাফ, আয়াত-১২)
৯. ‘এভাবে আমি আরবি ভাষায় অবতীর্ণ করেছি এক নির্দেশ।’ (সূরা রাদ, আয়াত-৩৭)
১০. ‘আল্লাহ মানুষকে গুছিয়ে চিন্তা করতে ও সুষ্ঠুভাবে কথা বলতে শিখিয়েছেন।’ (সূরা আর রহমান, আয়াত-৪)
কুরআনে ভাষার ওপর গুরুত্ব দিয়ে উপরোক্ত নির্দেশনা জারি করেছে। ফলে ভাষাজ্ঞান ক্ষেত্রবিশেষে অত্যন্ত অপরিহার্য্য। বাংলাদেশের মুসলমানদের আরবি ভাষাজ্ঞান না থাকলেও নামাজে পড়ার সময় এবং যেকোনো সময় আরবি ভাষায় কুরআন তিলাওয়াত করে শুধু সওয়াবের আশায়। নির্দেশনামূলক কুরআনের বাণী উপলব্ধি করার জন্য নয়। এ ধরনের অনুশীলনে সওয়াবের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে কি না নিশ্চিত নয়। কিন্তু আল্লাহর নির্দেশনা বা চাহিদা না জানার কারণে তারা সমূহ বিপদে পড়বেন এক সময়। উপলব্ধি ছাড়া কুরআন পাঠ কিংবা শুধু পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ মুসলমানদের সঠিক পথে পরিচালনা করতে কোনো প্রকার সহায়ক ভূমিকা পালন করে না। আমাদের সমাজ পরিবার ও রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা তারই প্রমাণ দিচ্ছে।

বাংলা আমাদের মাতৃভাষা। বাঙালিরা মাতৃভাষাকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য রাজপথ রক্তে রঞ্জিত করেছে। সব জাতি মাতৃভাষা প্রতিষ্ঠা করার জন্য জীবন দেয়নি। যেহেতু ইংরেজি একটি আন্তর্জাতিক ভাষা এবং অনেক গবেষণামূলক বই ইংরেজিতে প্রকাশিত, সেহেতু দুনিয়াবি একটি সফল জীবন যাপনের জন্য ইংরেজি ভাষায় পারদর্শী হওয়া আবশ্যক। এখানে একটি বিষয় অনুধাবনযোগ্য যে, আরবি মুসলমানদের ধর্মীয় ভাষা। প্রতিটি মানুষেরই তার ধর্মীয় ভাষাজ্ঞান থাকা অপরিহার্য্য। নতুবা ধর্মের যে গুরুত্ব তা সে উপলব্ধি করতে পারবে না। ফলে মুসলমানরা শতভাগ ধর্ম পালন করলেও বাস্তবে ধর্মীয় অনুশাসন থেকে অনেক দূরে। মাদরাসাপড়–য়া ছাত্ররা মুখস্ত করে কুরআনে হাফেজ হয় বটে, আরবি ভাষায় পারদর্শী বলে মনে হয় না। আমাদের সমাজে নিজ সন্তানদের ইংরেজি শিক্ষায় শিক্ষিত করতে পারলে নিজেকে গৌরবান্বিত মনে করে। আল্লাহর রহমতে আমার নিজ কন্যাদ্বয় ইংল্যান্ডে পড়াশোনা করেছে। আমি নিজেও পিএইচডিসহ ইংরেজি ভাষায় তিনটি মাস্টার্স ও এলএলবি ডিগ্রি অর্জন করে ৭১ বছর বয়সে আরবি ভাষা শিক্ষার হাতেখড়ি নিয়েছি, আরবি ভাষা শিক্ষার জন্য ২০২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষা ইনস্টিটিউটে ভর্তি হয়ে আশানুরূপ অগ্রগতি না হওয়ায় এখন নিজ চেষ্টায়ই আরবি ভাষা শিখছি। আমার দুই নাতিরও ইংরেজি-বাংলার পাশাপাশি আরবি ভাষা শিক্ষার প্রতি আত্মনিয়োগ করেছি, ইনশাআল্লাহ।

নৈতিকতা ব্যতীত বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চ ডিগ্রি একজনকে বিষয়ভিত্তিক শিক্ষিত করে তোলে বটে, কিন্তু মানবিক গুণসম্পন্ন মানুষ বা আদর্শ নাগরিক তৈরি করে না। ফলে অনেক উচ্চ শিক্ষিত ব্যক্তিও নরাধম পশুর মতো আচরণ করে। অনেক ডিগ্রিধারী শিক্ষিত মানুষের বৃদ্ধ মা-বাবাকেও বৃদ্ধাশ্রমে মৃত্যুবরণ করতে দেখা যায়। প্রতিবেশীর সাথে বা পরিবারের সাথে এমন আচরণ করা হয় যা ইসলাম সমর্থন করে না। দুর্নীতি আজ সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে যা শিক্ষিত ব্যক্তিদের দ্বারাই বেশি সংঘটিত হচ্ছে। ধর্ম মানুষকে নৈতিক হতে শিক্ষা দেয়। ধর্মীয় ভাষায় জ্ঞান ব্যতীত ধর্মের মর্মার্থ উপলব্ধি করা সম্ভব নয়। বাংলাদেশে মুসলিম জাতীয়তাবাদী চিন্তাধারা অনেক শক্তিশালী কিন্তু তারা ঐক্যবদ্ধ নয়। ইসলামী দল ও দেশের পীর মাশায়েখদের অনেক অনুসারী রয়েছে কিন্তু তারা একে অপরের বিরুদ্ধে। বাম দল শক্তিশালী অবস্থানে নেই কিন্তু তারা একে অপরের বিরুদ্ধে বলে না, নিজ দলের মার্কা ছেড়ে নৌকা মার্কা নিয়ে জাতীয় নির্বাচন করে, অথচ প্রয়োজনে তারা ঐক্যবদ্ধ হতে পারে, যা ইসলামী দলগুলোর পক্ষে সম্ভব হয় না।

প্রতিটি স্কুল-কলেজে প্রতিটি মুসলিম শিক্ষার্থীকে আরবি ভাষায় পারদর্শী করার দাবি ইসলামী দলগুলো থেকেই করা উচিত ছিল, যা তারা করছে না। তাদের মধ্যে অনেকেই নিজস্ব মসজিদ-মাদরাসার জন্য সরকার থেকে সুবিধা নিচ্ছে, ফলে সরকারের মুখোমুখি হতে পারে না, অন্যদিকে অনেক ইসলামী চিন্তাবিদ রয়েছেন যারা সরকারের অনৈতিক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে আপসহীন লড়ে যাচ্ছেন কিন্তু ইসলাম ধর্মকে পাবলিকলি হৃদয়াঙ্গম করার প্রতিবন্ধকতা কোথায়, তা কি খুঁজে দেখছেন? মাতৃভাষা, আন্তর্জাতিক ভাষা ও ধর্মীয় ভাষাজ্ঞান একজন পরিপূর্ণ মানুষের জন্য সমহারে গুরুত্বপূর্ণ। নৈতিকতাপূর্ণ মানবিক গুণসম্পন্ন মানুষের জন্য ধর্ম একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ, তাই ধর্মীয় জ্ঞান পরিপূর্ণভাবে অর্জনের জন্য ধর্মীয় ভাষায় পারদর্শী হওয়া অপরিহার্য, ব্যর্থতায় সমাজ, রাষ্ট্র, পারিবারিক ও ব্যক্তি জীবন বর্তমানে যে অবস্থায় চলছে তার উন্নতি তো হবেই না; বরং দিন দিন অবনতি ঘটবে।

লেখক : রাজনীতিক, কলামিস্ট ও আইনজীবী (অ্যাপিলেট ডিভিশন)
E-mail: taimuralamkhandaker@gmail.com


আরো সংবাদ



premium cement

সকল