২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

কৃষি, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নের সম্পর্ক

লেখক আবদুল আউয়াল মিন্টু। - ফাইল ছবি

শেষ পর্ব

টিকা (১) পাঠকের অবগতির জন্য; এ প্রবন্ধে একটি বিষয়কে একাধিক নামে ব্যবহার করা হয়েছে। যেমন;
জেনোমিক্স - জন্ম সম্বন্ধীয় - সৃষ্টি সম্বন্ধীয়।
ডিএনএ : ছড় রাসায়নিক বর্ণমালা - সূক্ষ্ম সূত্র তন্তু - জীবন নকশা।
জিন : বংশানু
সিকোয়েন্সিং: বিন্যস্ত - বিন্যাস
বৈশিষ্ট্য: বৈশিষ্ট্য - প্রলক্ষণ
মোলেকুলার: অণু-মাফিক পদার্থ - অণুভ‚মিকত্বে - আনবিক পর্যায়ে

জিনের (বংশানু) সংখ্যা, অবস্থান ও
মানুষের দেহে ২০ প্রকৃতির, ২০০ রকমের (ভিন্ন ভিন্ন আদর্শের), আনুমানিক ৩৭ ট্রিলিয়ন (৩৭,০০০ - সাইত্রিশ হাজার কোটি) কোষ (Cell) আছে। তবে এ সংখ্যা নিয়ে বিভ্রান্তি আছে (‘আয়তন’ পদ্ধতিতে নির্ণয় করলে ১৫-১৬ ট্রিলিয়ন, ওজন পদ্ধতিতে নির্ণয় করলে ৬০ থেকে ৭০ ট্রিলিয়ন পর্যন্ত হতে পারে)। প্রতিটি দেহকোষের কেন্দ্রবিন্দু (Nuclei) তে ২৩ জোড়া বা ৪৬টি ক্রোমোজম (Chromosome) আছে। ২৩ নাম্বার জোড়া হলো; লিঙ্গ ক্রোমোজম। এই ক্রোমোজমটি পুরুষ ও নারীর আলাদা। এ রকম প্রত্যেক জীবের দেহকোষ আছে। দৃষ্টান্ত হিসেবে উদ্ভিদের বেলায় ক্রোমোজমের সংখ্যা আমের ৪০; টমেটোর ২৪; গমের ৪২; ধানের ২৪; আনারসে ৫০; ইক্ষুর ৮০। পশুর বেলায়; মহিষের ৪৮; গরুর ৬০; কুকুরের ৭৮; বিড়ালের ৩৮; শৃগালের ৩৪; বাঘের ৩৮ জোড়া। জীবাণুর বেলায় যেমন কলেরা ব্যাকটেরিয়াতে ২ জোড়া, E. Col. ব্যাকটেরিয়াতে ৪.৬ এমবি অযুগ্ন ক্রোমোজম। প্রত্যেকটি ক্রোমোজম ডিএনএ-এর দ্বৈত (double) তন্তু (Molecular Strands) দিয়ে গঠিত। ডিএনএর তন্তু যুগল বিধায়, অনেক বিজ্ঞানী মনে করেন, ৪৬টি নয়, বরং প্রত্যেক দেহকোষে ৯২টি ডিএনএ-এর তন্তু (Strands) আছে। এই ৪৬ বা ৯২টি তন্তুতে, ৩ বিলিয়ন (৩০০ কোটি) ডিএনএ-এর যুগল ইউনিট (base pair-bp) আছে। গড়ে একটি ডিএনএ-এর তন্তু ৫ সেন্টিমিটার লম্বা। এই তুলাদণ্ডে (Scale) মানুষের একটি দেহকোষের মধ্যে অবস্থিত ডিএনএ তন্তুর (Strands) যোগফল হবে, আনুমানিক ৩ কি.মি. লম্বা।

ডিএনএ-এর তন্তু লম্বা যাই হোক, এখন পর্যন্ত বলা যায় যে, মানুষের ২৩ জোড়া ক্রোমোজমের প্রত্যেকটিতে ২০ থেকে ২৫,০০০ প্রোটিন সংগৃহীত (Protein Coding) জিন বা বংশানু আছে। মানব জিনোমিক বিন্যাসের একেবারে প্রথম দিকে ধারণা করা হয়েছিল, প্রতিটি ক্রোমোজমে জিনের সংখ্যা প্রায় এক লাখ। কিন্তু নতুন প্রজন্মের মেশিন আবিষ্কারের পর বহুভাবে ডিএনএ-এর তন্তু বিন্যাসের মানোন্নয়ন হয়েছে। সেই সাথে এ সংখ্যা কমে ২০-২৫,০০০ এ দাঁড়িয়েছে। এগুলোর মধ্যে বিজ্ঞানীরা এখন পর্যন্ত প্রায় ১৭০০০ জিন, কোনটা কী কর্ম-ক্রিয়ায় ব্যস্ততা চিহ্নিত করতে সক্ষম হলেন। মানুষের মতোই সব জীব ও জীবাণুর দেহকোষে বহু ক্রিয়াসাধক জিন আছে। এগুলোর কর্মপ্রক্রিয়া ও পদ্ধতি এক ও অভিন্ন।

অতি সাম্প্রতিককালে প্রাণপ্রযুক্তির অগ্রগতি- জিন সম্পাদনা
অতি সাম্প্রতিককালে বিজ্ঞানীরা অভীষ্ট জিন চিহ্নিত করতে এক মহা শক্তিশালী পদ্ধতি আবিষ্কার করেছেন। এ প্রযুক্তির নাম দিয়েছেন ক্রিসপর-সিএএস৯ জিন সম্পাদনা প্রযুক্তি (CRISPR-CAS9 gene-editing technology) ১। এই প্রযুক্তি ইতোমধ্যেই ডিএনএ-এর জীবতত্ত¡ বুঝতে রীতিমতো বিপ্লব নিয়ে এসেছে। আবিষ্কারের পর থেকে প্রাণবিজ্ঞান জগতে যেন এক কোলাহল শুরু হয়ে গেছে। ফলে আল্লাহ সৃষ্ট মানব জীবনে ভবিষ্যতে কী ঘটতে পারে বা পরিবর্তন আসে, তা নিয়ে গুঞ্জনের কোনো শেষ নেই। প্রতিদিনই রোগ-জীবাণু প্রতিরোধ ও চিকিৎসার জগতে নতুন খবর আসছে। এই প্রযুক্তির সুফলে বা পরিণামে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের গড় আয়ু, বর্তমানে ৮০-৯০ থেকে, ১১০ বা ১২০ বছরে গিয়ে ঠেকবে বলে গুঞ্জন চলছে। এসব ভালো-মন্দ খবর কেবল মানুষের বেলায় নয়, পশু-ফসল ও সব জীবের বেলায় প্রযোজ্য।

এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে জীবের জিন সম্পাদনা করা এখন জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। বিজ্ঞানীরা এখন কর্ষণ প্রযুক্তি (Tilling technology)১ ব্যবহার করে জিনের কর্ম-প্রক্রিয়া অনুযায়ী সঠিকভাবে অভীষ্ট জিন (লপ্ত) চিহ্নিত করতে পারেন। তার পর CRISPR-Cas9 প্রযুক্তি ব্যবহার করে জীবের ডিএনএ-এর তন্তু (Strand) থেকে সেই লপ্ত (Stretch) বা নির্দিষ্ট বংশানু (জিন) সূ²তার সাথে কেটে ফেলে দিতে পারেন। এখানেই শেষ নয়, বরং সেই জায়গায় আরেকটি জিন বা বংশানু প্রতিস্থাপন করে, জিন মেরামত বা সংশোধন করতে পারেন। শুধু তাই নয়, অতি সাম্প্রতিককালে বিজ্ঞানীরা নতুন এক পদ্ধতি বের করেছেন, যা ব্যবহার করে জিন মেরামত করার পর যদি কোনো ভুল পাওয়া যায়, তাও চিহ্নিত করে সংশোধন করতে পারবে। এ পদ্ধতির নাম দিয়েছেন; চ্যাম্প (CHAMP – Chip hybridized affinity mapping platform)। এমন কি, ঐ লপ্ত বা জিন কেটে ফেলে দিয়ে ডিএনএর ধারাবিন্যাস বদলে দিতে পারেন।

ক্রিসপার + সিএএস৯ (CRISPR + Cas9) প্রযুক্তি হলো, আরএনএ (রাইবোনিউক্লেইক অ্যাসিড-rNA))২ পরিচালিত অভীষ্ট জিন সম্পাদনার হাতিয়ার বা সাধনী। অথবা আরএনএ (rNA) টার্গেটেড জিনোমি এডিটিং টুল (rNA guided targeted genome editing tool)। এই নতুন প্রযুক্তি জীবকোষের কেন্দ্রে অবস্থিত ক্রোমোজমের মধ্যে থাকা ডিএনএর তন্তু থেকে অভীষ্ট বংশানু চিহ্নিত করতে বিজ্ঞানী ও গবেষকদের সাহায্য করে এবং সেই বংশানু বাতিল বা সংশোধন করতে সহায়তা করে। কথাটা এভাবেও বলা যায় যে, যদি কোনো বংশানু বা জিনের mutation) গঠন, প্রকৃতি, সংযুক্তি (structure) পরিবর্তন হয়ে যায়, যার ফলে ঐ জিন নবরূপ (ধারণ করে (transformation) বা ভিন্নতায় রূপ নেয় (transmutation), বা জিনের কর্ম-প্রক্রিয়া (function) বন্ধ হয়ে যায়, বা চরিত্রের ব্যতিক্রম ঘটে, তাহলে তা সংশোধন করতে পারে। যেমন ধরুন, কোন জিন যদি নবরূপ ধারণ করে ভিন্নতায় রূপ নেয় এবং তার ফলে যদি কেউ ভবিষ্যতে ক্যান্সার বা ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, তাহলে ঐ জিনগুলোকে শনাক্ত করে, সেগুলোকে আগেভাগেই কেটে ফেলে দিতে পারেন। ফলে ঐ মানুষ ভবিষ্যতে সম্ভবত ক্যান্সার বা ডায়াবেটিস রোগ এড়াতে পারবে। এর পরিণামে কোষের রাসায়নিক বর্ণমালা (ডিএনএ) এবং জিনের সংগঠন ((Structural genomics) এবং ক্রিয়ামূলক পদ্ধতির (functional genomics) মাঝে একটা সেতুবন্ধন তৈরি হয় বলে অনুমান করা যায়।

পরিণামে হয়তো বা এ প্রযুক্তির প্রয়োগে একটা উল্লম্ফন ঘটবে। এই উল্লম্ফন ভবিষ্যতে বিপ্লবের রূপ নিয়ে হয়তো বা ‘শিল্প বিপ্লব, সবুজ বিপ্লব ও তথ্য প্রযুক্তি বিপ্লবের’ মতো ‘প্রাণপ্রযুক্তি বিপ্লব’ হিসেবে পরিচিতি পাবে। একই ভাষ্য ফসলের রোগ-জীবাণুর ক্ষেত্রেও প্রযোগ্য। দেহকোষ, ক্রোমোজম, ডিএনএ-তে তন্তুর সংখ্যা ও পরিসর, বা তন্তুতে যত সংখ্যক জিন থাকুক না কেন, প্রত্যেক জীব ও জীবাণুর বেলায় জিনের ক্রিয়া-প্রক্রিয়া ও কার্যসম্পাদন পদ্ধতি এক ও অভিন্ন।

CRISPR+Cas 9, লেখা দেখলেই বোঝা যায় এ প্রযুক্তির দুটি অঙ্গ-উপাদান আছে। দুই অঙ্গের দুই কাজ। প্রথমত, Cas 9 পদ্ধতি বিজ্ঞানীদের নির্দিষ্ট জিন চিহ্নিত করার পথপ্রদর্শক হিসেবে কাজ করে। ফলে ডিএনএ-এর তন্তুতে অভীষ্ট জিনের অবস্থান সুনির্দিষ্টভাবে নির্ণয় করতে পারেন। আর দ্বিতীয়ত, ক্রিসপার (CRISPR)) হলো, জিন এডিটিং বা সম্পাদনার পদ্ধতি। বিজ্ঞানীরা এখন জিন সম্পাদনার সামর্থ্যকে ফসলের রোগবালাই প্রতিরোধে কাজে লাগাচ্ছেন। উন্নত দেশগুলোতে এখন বহু বিজ্ঞানী উদ্ভিদের (ফসল) উপর যেসব জৈব ও অজৈব নিয়ামক চাপ (biotic and abiotic stress) সৃষ্টি হয়, সেগুলোর প্রতিরোধক ক্ষমতা বাড়াতে বা সেগুলোর প্রভাবমুক্ত উদ্ভিদ উদ্ভাবনের উপায় নিয়ে গবেষণায় নিয়োজিত রয়েছেন। দৃষ্টান্ত দিয়ে বলা যায়, মার্কিন বিজ্ঞানীরা ক্রিসপার (CRISPR) প্রযুক্তি ব্যবহার করে টমেটো গাছের ডালগুলোকে যথেষ্ট মজবুত করার জন্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছেন, যাতে টমেটোর ফলন বেশি হলে সেগুলোর ওজনে ডাল ভেঙে না যায়।
এ জন্যই বলা যায় যে, আগামী দিনের খাদ্য উৎপাদন ও উৎপাদশনশীলতার ক্ষেত্রে এই প্রযুক্তি এক অতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। আগেই বলেছি যে, আমরা যে খাদ্য গ্রহণ করি তার প্রধান উৎস, হয় উদ্ভিদ না হয় পশু-পাখি-প্রাণী। এ কারণেই খাদ্য উৎপাদন ও উৎপাদনশীলতা বাড়াতে এই নতুন প্রযুক্তির ভবিষ্যৎ প্রবণতা যেন পাঠকদের অনুভূতিকে স্পর্শ করে, সে জন্য বিষয়টি বিশদ পরিসরে আলোচনায় আনা হয়েছে। আরেকটা কারণ হলো, নীতি-নির্ধারকদের মনোযোগ আকর্ষণ করা। এক জাতের পাট বা একটি মহিষের জিনোমের ধারাবিন্যস্ত করার কাজটি আসলে এই প্রযুক্তির একেবারেই প্রারম্ভ বা সূচনা মাত্র। এ কাজটি হলো, উদ্দিষ্ট অর্জনের একটা উপায় মাত্র, এটি নিজে কোনো উদ্দিষ্ট নয়।

জিএমও (GMO) বনাম জিন সম্পাদিত (Gene Editing) ফসল
Genetically Modified Organism (GMO), বাংলাতে বলা যায় উত্তরাধিকার সূত্রের বৈশিষ্ট্যের পরিমিতিকৃত (modified) জীব (Organism))। বহু লোকই জিএমও নিয়ে ভীত-সন্ত্রস্ত। জিএমও নিয়ে বিভিন্ন দেশে বৈরী প্রতিক্রিয়া নতুন কিছু নয়। অথচ মানুষ যে ভুট্টা খাচ্ছে, যে সয়াবিন তেল দিয়ে নিত্যদিনের রান্নাবান্না করছে, তার সবটাই প্রায় জিএমও বীজ থেকে উৎপাদিত। উল্লেখ্য, জিএমও (GMO) কোনো নিখুঁত পদ্ধতিমাফিক পরিমিতিকৃত (Modified) সৃষ্ট জীব (organism) নয়। বিজ্ঞানীরা অন্য একটা জীব থেকে, একটা বিশেষ বৈশিষ্ট্যের জিন বের করে, কোনো জীবাণু বা ভাইরাস এর মাধ্যমে, আরেকটি জীবের দেহকোষের (Cell) মূল অংশে বা কেন্দ্রতে (Nuclei) প্রবিষ্ট করিয়ে দেন। ধরুন, শীতল পানিতে যে মাছ বসবাস করে সেই মাছের দেহকোষে ঠাণ্ডা সহ্য করা বৈশিষ্ট্যের জিন আছে। অপর দিকে টমেটো গাছ একেবারেই ঠাণ্ডা সইতে পারে না। ঠাণ্ডা একটু বেশি হলেই সেটি মারা যায়। বিজ্ঞানীরা এ ঠাণ্ডা পানির মাছের একটা কোষ বের করে, প্রথমে ব্যাকটেরিয়াতে প্রবিষ্ট করে। পরবর্তীতে ঐ ব্যাকটেরিয়াকে টমেটো গাছের দেহকোষে প্রবিষ্ট করে দেন। তাতে নতুন এই টমেটো গাছ, ঠাণ্ডা সহ্য করার বৈশিষ্ট্য অর্জন করে। এটা করা হলো এক জীব থেকে আরেক জীবে পুরো কোষ স্থানান্তর করে, তাও পরোক্ষভাবে আরেকটা জীবের মাধ্যমে।

পক্ষান্তরে, CRISPR-Cas9 প্রযুক্তি ব্যবহার করে জিন সম্পাদনা (gene editing) করা সম্পূর্ণ ভিন্ন। এই প্রযুক্তিতে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে, এক জীবের কোষ অন্য কোনো জীবে, স্থানান্তর করা হয় না। বরঞ্চ খোদ জীবের দেহকোষে সৃষ্ট (থাকা) ডিএনএর মধ্যে জিনের রদবদল করা হয়। এ কারণেই অনেক দেশ এখন নিজ কোষের ডিএনএর মধ্যে থাকা জিনের সংশোধন বা পরিবর্তনের ব্যাপারে আপত্তি করছে না। এটাকে তারা জিএমও বলে গণ্য করে না। পদ্ধতিটি সব জীবের বেলায় প্রয়োগযোগ্য।

নিবন্ধের মূল বিষয়; কৃষি উৎপাদন ও উৎপাদনশীলতায় ফিরে যাবার আগে পরিষ্কার করে বলা প্রয়োজন যে, জীবের অণুভূমিকত্বে (Molecular level)) প্রাণের ক্রিয়া-প্রক্রিয়া ব্যতিক্রমবিহীনভাবে এক ও অভিন্ন। এই প্রাণ (জীব) হতে পারে ভাইরাস, জীবাণু, পোকা-মাকড়, কীটপতঙ্গ, উদ্ভিদ, জন্তু বা মানুষ। সর্ব-জীবে দেহকোষ আছে। সব দেহকোষের কেন্দ্রবিন্দুতে ক্রোমোজম আছে। সব ক্রোমোজমে ডিএনএ আছে। সব ডিএনএ সর্পিল সদৃশ প্যাঁচানো। সব ডিএনএতে জিন আছে। এই জিনের স্বাভাবিক ক্রিয়া-প্রক্রিয়া ও ধর্ম এক ও অভিন্ন।

উৎপাদনশীলতা বাড়াতে গবেষকদের ভূমিকা ও গবেষণা কার্যক্রম
শিল্পায়ন, নগরায়ন ও নদী ভাঙন যত দিন হবে, ততোই কৃষি জমি কমে যাবে। সেই সাথে সমাজে বয়স্ক লোকের সংখ্যা বেড়ে যাবে। ফলে কৃষি খাতে শ্রমশক্তির জোগান কমে যাবে। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জাপান, ইউরোপের বহু দেশ, এমন কি চীনকেও এ ব্যাপারে দৃষ্টান্ত হিসেবে ধরে নেয়া যায়। এ সমস্যা ভবিষ্যতে আরো গুরুতর হয়ে দাঁড়াবে বলে ধারণা করা যায়। অতএব, এ সমস্যা সমাধানে কৃষি খাতে শ্রমের উৎপাদনশীলতা বাড়ানো একান্ত জরুরি বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। বহু দেশ এখন এই উদ্দেশ্য সাধনে বিশ্বমানের গবেষণাগার স্থাপন করছে। এর লক্ষ্য হলো, জনগোষ্ঠীর কল্যাণে নতুন নতুন প্রযুক্তির উদ্ভাবন, বিদ্যমান প্রযুক্তির উন্নয়ন ও সেগুলোর ব্যবহারিক প্রয়োগ নিশ্চিত করা। অনেক বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত বিশেষজ্ঞ বা বিজ্ঞানী আছেন বিদেশে। তাদেরকে প্রণোদনা দিয়ে দেশে ফিরিয়ে আনা উচিত। দেশে ফিরে আসলে তাদেরকে এসব নতুন প্রযুক্তি ব্যবহারে, গবেষণার কাজে উৎসাহিত করা উচিত। সরকার, বেসরকারি খাত ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলো একযোগে, হাতে হাত মিলিয়ে এ গবেষণাকে জোরদার করা উচিত। নতুন নতুন প্রযুক্তি ও বিজ্ঞান, যাতে জনসমষ্টির কল্যাণে সর্বোত্তমভাবে প্রয়োগ করা যায় সে জন্য অবশ্যই সবাইকে সম্মিলিতভাবে প্রয়াসী হতে হবে।

গবেষণাগারে গবেষণা পরিচালনার দায়িত্ব দিতে হবে সেরা ও উজ্জ্বলতম বিজ্ঞানীদের হাতে। সেখানে পরিবেশ থাকতে হবে রাজনীতিমুক্ত। বিজ্ঞানীরা সবে স্বাধীন চিন্তা-চেতনার প্রতীক। বিজ্ঞানীদের হতে হবে রাজনীতি নিরপেক্ষ, অরাজনৈতিক। গত দুই দশকের পর্যালোচনায় দেখা যায়, যখনই দেশে সরকার পরিবর্তন হয়েছে তখনই আমলাতন্ত্র ও পুলিশের মতো, গবেষণামূলক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রধান থেকে শুরু করে পরিচালক পর্যন্ত, এমনকি উদ্ভাবনী গবেষণায় নিয়োজিত বিজ্ঞানীদের এক গবেষণার কেন্দ্র ও ক্ষেত্র থেকে অন্যত্র বদলে দেয়া হয়। মাঝে মাঝে চাকরিচ্যুত করা হয়। এর ফলে গবেষকরা সম্ভবত উদ্ভাবনী গবেষণার পরিবর্তে রাজনীতি বেশি করতে পছন্দ করেন, অথবা বাধ্য হন। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয় যে, গবেষণায় কৃতিত্ব যাই হোক, রাজনীতিই হলো ভবিষ্যৎ পদ-পদবী জোটানোর মোক্ষম মাধ্যম। সবাইকে বুঝতে হবে যে, দেশে-বিদেশে আওয়ামী-বিএনপি রাজনীতি থাকলেও, কোনো আওয়ামী বা বিএনপি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি নেই। বিজ্ঞান নিরাসক্ত, নিরপেক্ষ ও অরাজনৈতিক বিষয়। কাজেই বিজ্ঞানীদেরও অরাজনৈতিক হওয়া একান্ত বাঞ্ছনীয়।

কৃষি খাতে উৎপাদনশীলতা এবং খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা
কৃষি খাতে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি, কৃষির আধুনিকায়ন ও কৃষি পণ্যের উৎপাদন বৃদ্ধি, বিশ্বের সব দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও অগ্রগতিতে অবদান রেখেছে। বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতিতেও কৃষি খাত বিরাট অবদান রেখেছে। সবচেয়ে বড় কথা হলো; কৃষিপণ্যের উৎপাদন বৃদ্ধির ফলে আকাল ও ক্ষুধাকে জয় করা সম্ভব হয়েছে। অপুষ্টি ও অপুষ্টিজনিত কারণে রোগ-ব্যাধির বিস্তৃতি কমেছে। ফলে মানুষের ক্রয় ও শ্রম ক্ষমতা বেড়েছে। কৃষি খাতে উৎপাদনশীলতা বেড়েছে বিধায় খাদ্য সরবরাহে ঘাটতি কমেছে। দুর্ভিক্ষ জয় করা সম্ভব হয়েছে। বর্ধিত কৃষি উৎপাদনশীলতা এসবের প্রধান কারণ। তবে উন্নততর পরিবহন, দক্ষ ও ক্রিয়াশীল উন্নততর প্রতিষ্ঠান, সংগঠন ও কার্যকর বণ্টন ব্যবস্থারও অংশত অবদান রেখেছে।

সন্দেহাতীতভাবে ব্যাপক ঐকমত্য রয়েছে যে, খাদ্যের বর্ধিত সরবরাহ অপুষ্টি কমানোর ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ও ব্যাপক অবদান রেখেছে। অপুষ্টি দেহের রোগ প্রতিরোধক ব্যবস্থার ক্ষতি করে। সংক্রামক রোগ-ব্যাধির প্রতিরোধ ক্ষমতাকে দুর্বল করে দেয় এবং সাধারণ মানুষের উৎপাদন সামর্থ্য কমিয়ে দেয়। এতে সংক্রামক রোগ-ব্যাধি বেড়ে যায়। অপুষ্টি প্রকৃতপক্ষে সংক্রামক ব্যাধির সাথে সহ-সম্পর্কিত বিষয়। উন্নয়নশীল দেশগুলোতে মানুষের, বিশেষ করে, শিশু মৃত্যুর উচ্চ হারের সাথে এর সম্পর্ক রয়েছে। অপুষ্টি ও রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা একে অপরের সম্পূরক। আগেকার দিনে বহু দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের মাঝে ছিল জটিল অপুষ্টি। বিভিন্ন কারণে যেমন বন্যা, খরা, ফসলের রোগ-বালাই ইত্যাদি কারণে ফসল ফলনে ঘাটতি থেকে ঘটতো দুর্ভিক্ষ, বাড়তো দারিদ্র্য ও অভাব, অপুষ্টিজনিত কারণে রোগ-ব্যাধির আক্রমণ ছিল ব্যাপক। তাই মৃত্যুহার ছিল উচ্চ। ফলে মানুষের গড় আয়ু ছিল অনেক কম।

বিগত ২০০ বছরে বিশ্বের অর্থনৈতিক কাঠামোর চিত্রপটে সবচেয়ে লক্ষণীয় যে পরিবর্তন ঘটে তাহলো শিল্প ও সেবা শিল্পের উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি। এক হিসাবে দেখা যায়, ১৭৫০ থেকে ১৯৮০-র মেয়াদে বিশ্বের শিল্প উৎপাদন আনুমানিক ৯০ গুণ বেড়েছে। একই মেয়াদে মাথাপিছু উৎপাদন বৃদ্ধি ঘটেছে ১৫ গুণ। সে তুলনায় কৃষি খাতের প্রবৃদ্ধি উল্লেখযোগ্য নয়। উৎপাদনশীলতা বেড়েছে তিনগুণের কাছাকাছি। উৎপাদন বেড়েছে বড়জোর ২০ গুণ। সার্বিক পর্যায়ে বিশ্ব অর্থনীতিতে, বিশেষ করে জাতীয় অর্থনীতি পর্যায়ে উন্নত দেশগুলোতে কৃষির হিস্যা বড় রকমে হ্রাস পেয়েছে। দুই শতক আগে, পশ্চিম ইউরোপের জনসমষ্টির তিন-চতুর্থাংশ কৃষিতে নিয়োজিত ছিল। সার্বিক উৎপাদন ও আয়ের অর্ধেকের বেশি আসতো কৃষি খাত থেকে। এখন সার্বিক উৎপাদনের মাত্র ৫ শতাংশ আসে কৃষি খাত থেকে। এসব দেশে কৃষি খাতে শ্রম নিয়োগ ও আয় ৫ শতাংশ থেকেও কম।

কৃষি - অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ
বর্ধিত খাদ্য সরবরাহ ও উন্নততর খাদ্যের জোগান দেয়া কৃষির একমাত্র কাজ নয়। আধুনিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও মানুষের জীবন মানোন্নয়নে এবং জাতির বৃহত্তর সমৃদ্ধির সহযোগী হিসেবে কৃষির অবদান সবিশেষ উল্লেখযোগ্য। অনেক অর্থনৈতিক ইতিহাসবিদের বিশ্বাস, কৃষিখাতের বড় রকমের অবদান ছাড়া, শিল্পায়ন অগ্রগতির পথে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব হতো না। আঠারো শতক অবধি শ্রম, বিত্ত অর্জন ও রাজনৈতিক ক্ষমতা অর্জনের ক্ষেত্রে কৃষির অবদান ছিল আধিপত্যমূলক। বিভিন্ন পর্যায়ের মধ্য দিয়ে মানব সভ্যতা বর্তমান পর্যায়ে পৌঁছেছে। সভ্যতা বিকাশের প্রাথমিক স্তরে গড়ে উঠে কৃষি সভ্যতা। সেই থেকে আঠারো শতকের মাঝামাঝি পর্যন্ত প্রায় ৮০০০ বছর সম্পদ সৃষ্টির একমাত্র উৎস ছিল কৃষি। কয়লা ব্যবহারের প্রযুক্তি ও ১৭৮০ সালে কয়লা চালিত বাষ্পীয় ইঞ্জিন উদ্ভাবনের পর সভ্যতার এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয় যাকে এক সময় ভাবা হতো অকল্পনীয়, অসম্ভব ও অলৌকিক। এর মাধ্যমে শুরু হয় শিল্প বিপ্লব এবং এর সাথে সম্পদ সৃষ্টির উৎস হিসেবে কৃষির ৮০০০ বছরের একাধিপত্য খর্ব হয়।

ঐ সময় বিশ্ব জনসংখ্যা বেড়েছে, জাতীয় আয় ও শিল্প উৎপাদনও বৃদ্ধি পেয়েছে। এখনো তা-ই ঘটে চলেছে। আয় বাড়ছে। আয় বাড়ার পাশাপাশি খাদ্যের অভ্যাসও বদলাচ্ছে। সে কারণেই কৃষি খাতে উৎপাদনশীলতা ও কৃষি পণ্যের উৎপাদন ক্রমবর্ধিত জনসমষ্টির জন্য কেবল মুখ্য খাদ্যের (ভাত) জোগান নয়, বরং বিত্তবান জনসমষ্টির চাহিদা অনুযায়ী উন্নতমানের পুষ্টিসমৃদ্ধ খাদ্যের জোগান দেয়াও অন্তর্ভুক্ত। আমাদের সামনে এখন বড় চ্যালেঞ্জ হলো, উদ্ভাবনীমূলক প্রযুক্তির ব্যবহার। যে প্রযুক্তি কেবল চাল উৎপাদনের জন্য নয় বরং সেই সাথে আরো বেশি পুষ্টিকর খাদ্য উৎপাদনের জন্য। বাংলাদেশে আবাদযোগ্য জমির আয়তন বৃদ্ধির কোনো সুযোগ নেই, বরং শিল্পায়ন, নগরায়ন, জলবায়ুর পরিবর্তন, নদী ভাঙন, ইট-ভাটার জন্য উপরের উর্বর মৃত্তিকার ব্যবহার, মাটির উর্বরতা ও অপরিকল্পিত জমির ব্যবহারে কৃষি জমি ও ফলন দিন দিন কমে যাচ্ছে। অতএব বাংলাদেশের প্রতি শতাংশ আবাদী জমির উৎপাদনশীলতা বাড়াতে হবে ও জনগোষ্ঠীর চাহিদা অনুযায়ী প্রতিটি ফসলের উৎপাদন বাড়াতে হবে।

উপসংহার
ইতোমধ্যে চরম প্রতিকূল আবহাওয়ার আভাস দিচ্ছেন জলবায়ু বিজ্ঞানীরা। যদি তাদের অনুমান সত্যি হয় তাহলে ২০৫০ সাল নাগাদ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত ফসলহানি ঘটবে। এতে খাদ্য নিরাপত্তা বিপর্যস্ত হবে, দরিদ্রতা বাড়বে। অতএব জৈব, অজৈব নিয়ামকের প্রভাব ও বৈরী আবহাওয়া মোকাবেলার উপযোগী জাতের ফসলের বীজ ও উদ্ভিদ উদ্ভাবন এখন জরুরি। এ লক্ষ্য অর্জনে কৃষি খাতে গবেষণা ও উন্নয়নে বিনিয়োগ বাড়ানো প্রয়োজন। কৃষি খাতে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির পাশাপাশি স্বাস্থ্যকর ও পুষ্টিকর জাতের ফসল উদ্ভাবনে মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করতে হবে। এক দিকে বৈরী আবহাওয়া, অন্য দিকে কৃষি জমি ও জমির উর্বরতা কমে যাওয়ায় ভবিষ্যৎ খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতভাবে বিঘ্নিত হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে গেছে।

তা ছাড়া বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশে ক্ষুদ্র চাষীরা এক দিকে দাবি করবে উচ্চ ফলনশীল বীজ, অন্য দিকে এমন উদ্ভিদ বা বীজ, যে বীজে ফলন হবে বেশি অথচ জমি, পানি, সারসহ অন্যান্য উপকরণ লাগবে কম। যদি কৃষকের হাতে নতুন প্রযুক্তির মাধ্যমে উদ্ভাবিত উচ্চ ফলনশীল ও জৈব-অজৈব চাপ সহনশীল বীজ দেয়া যায় তাহলে উৎপাদন বাড়বে, খাদ্যপ্রাপ্তি সহজ হবে এবং খাদ্য নিরাপত্তাও বাড়বে। সে জন্য নীতি-নির্ধারকদের এমন সব নীতি অবশ্যই গ্রহণ করতে হবে, যেগুলো কেবল কৃষকবান্ধবই হবে না, বরং কৃষি খাতে বিনিয়োগকারীদের জন্যও সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। তাহলে বিনিয়োগকারীরা নতুন প্রযুক্তিতে নতুন নতুন জাতের ফসল উদ্ভাবনে প্রয়াসী হবে। এ ব্যাপারে সরকারের নীতি প্রয়োগ হতে হবে স্পষ্ট, বোধগম্য ও নিরপেক্ষ। শুধু অনুকূল নীতিমালাই নতুন জাতের ফসল উদ্ভাবনে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগকারীদের উৎসাহিত করবে। তারা নতুন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি কাজে লাগানোর সুবাদে চাষীদের জন্য নতুন হাতিয়ার জোগান দেবে, যেগুলো চাষ করে ফসলের ফলন বাড়াবে সেই সাথে আগামীর বর্ধিষ্ণু জনগণের চাহিদা মেটাতে সক্ষম হবে। একই সাথে পুষ্টির জোগান বাড়বে। দরিদ্রতা কমবে। স্বাস্থ্যের উন্নতি হবে। মানুষের গড় আয়ু বাড়বে ও সাধারণ জনগণের জীবনমান উন্নয়ন হবে। অর্থাৎ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সাথে সাথে অর্থনৈতিক উন্নয়ন সমান তালে এগিয়ে যাবে।

১ 1 Tilling (Targeting Induced Local Lesions IN Genomes) technology is a reverse genetic, developed by McCallum et. el. (McCallum et. El – Nature Biotechnology; New York 18.4 (APR 2000): 455-7.

২ rNA; ডিএনএ-র (DNA) মতোই আরএনএ (rNA) নিউক্লিওটিডস চেনের মতো (ক্রোমোজমে) বিন্যস্ত থাকে। তবে আরএনএ সাধারণ প্রকৃতিতে ডিএনএর ছড়ে ভাঁজ অবস্থায় পাওয়া যায়। ডিএনএ-র মতো আরএনএ ডবল বা জোড় ছড় নয়। প্রত্যেক জীব তথ্য আদান-প্রদানের জন্য আরএনএ-কে বাহক হিসেবে কাজে লাগায়।

লেখক : এমএসসি- কৃষি অর্থনীতি
সাবেক সভাপতি, এফবিসিসিআই


আরো সংবাদ



premium cement