২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

এ সংবিধান ‘জনগণের অভিপ্রায়ের অভিপ্রায় ও অভিব্যক্তি; কোনো দল ও মতের নয়’

-

সম্প্রতি প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, নির্বাচনকালীন সরকারব্যবস্থা প্রশ্নে বড় দুই দলের অনড় অবস্থান দেশের জন্য বিপজ্জনক। অন্য দিকে ক্ষমতাসীনদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, আওয়ামী লীগের সাথে বিএনপির তুলনা হতে পারে না। দু’পক্ষের এমন বক্তব্যের মধ্যে অবশ্যই সত্যতা আছেই। এই দ্ইু বক্তব্য নিয়ে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের অবকাশ রয়েছে ওয়াকিবহাল মহলের জন্য। অবশ্য সেই বক্তব্যের প্রেক্ষিত ও প্রেক্ষাপট ভিন্ন। এসব কথা অনেককেই কিছুটা ভাবনায় ফেলেছে।

সিইসি যে মন্তব্য করেছেন দু’পক্ষকে নিয়ে, সে ব্যাপারে যে যার ব্যাখ্যা করতে পারেন তাদের মতো করে। তবে এ কথা স্বীকার করতেই হবে দুই দলের যে ভিন্ন ভিন্ন অবস্থান, তাকে এক পাল্লায় তুলে মাপা সঠিক হবে না। কেননা দেশের অন্যতম বড় রাজনৈতিক সংগঠন বিএনপি যে প্রশ্নে অনড়, সেটা সাদামাটা চোখে বিচার করা কোনোভাবেই ঠিক হবে না। তার প্রথম কারণ হচ্ছে, বিএনপির নিজ মতের প্রতি অটল থাকার সাথে দেশের অধিকাংশ মানুষের একমত থাকার পাশাপাশি তার সাথে সুষ্ঠু নির্বাচনব্যবস্থার একটা ইতিবাচক প্রশ্ন জড়িত। বিএনপি নির্বাচনকালীন সরকারব্যবস্থার যে ধারণাটি বিভিন্ন সময় কয়েকটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় সফলতার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ। অর্থাৎ নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে দেশে যে কয়টি সংসদ নির্বাচন হয়েছে তার প্রতিটি অবাধ, সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক ছিল। শুধু সব দলের অংশগ্রহণেই তা সীমাবদ্ধ ছিল না, সর্বস্তরের মানুষ শান্তিপূর্ণ পরিবেশে স্বস্তির সাথে ভোট দিতে পেরেছে। ভোট অনুশীলনে একটা কথা বহুল প্রচলিত, ‘আমার ভোট আমি দেবো, যাকে খুশি তাকে দেবো।’ এসব কথার শতভাগ পূরণ হয়েছিল সেসব নির্বাচনে। সেসব নির্বাচন নিয়ে শুধু দেশের মানুষই সন্তুষ্ট ছিল না, আন্তর্জাতিক বলয়েও সে নির্বাচনের প্রশংসা পর্যন্ত করা হয়েছে। সে নির্বাচনব্যবস্থা বিএনপি সংবিধানে সূচনা করেছিল বটে, কিন্তু এমন ব্যবস্থার অধীনে প্রথম অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বিএনপিই হেরে গিয়েছিল বটে। কিন্তু তা নিয়ে তাদের কোনো অনুতাপ অভিযোগ কিছুই ছিল না। তারা বরং বিজয়ী আওয়ামী লীগকে অভিনন্দিত করেছিল। এটাই গণতান্ত্রিক চেতনাকে সমৃদ্ধ করে ও সৌন্দর্য বিকশিত করে।

আজ বিএনপি অতীতের সেই গণতান্ত্রিক চেতনাকে সমৃদ্ধ করা, সুষ্ঠু ভোট ব্যবস্থাকে সংহত ও নিশ্চিত করার জন্যই নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রশ্নে অনড়। একে তুচ্ছ, তাচ্ছিল্য করে এ প্রশ্নে বিএনপিকে প্রচ্ছন্ন ‘ছাড়’ দেয়ার জন্য সিইসি কিছুটা শ্লেষের সাথেই উপরোক্ত কথাগুলো বলেছেন। এর দ্বারা এমন প্রশ্ন জনগণের মনে চলে আসতে পারে, নির্বাচন কমিশন (ইসি) একটা ভালো নির্বাচনের জন্য বিএনপির অটল থাকাকে খুব ইতিবাচকভাবে নিতে পারছে না। ইসি প্রথম থেকেই যদি প্রমাণ করতে পারতেন, তারা সবার কাছে গ্রহণযোগ্য মানের নির্বাচন করতে পারা নিয়ে যথেষ্ট সক্ষম ও যোগ্য; তবে কেবল বিএনপি কেন, দেশের সব শ্রেণী-পেশার মানুষ ও প্রধান বিরোধী দলের দাবিকে অগ্রাহ্য করতে এতটুকু দ্বিধায় ভুগতো না। তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে ব্যবস্থার বিকল্প হিসেবে ইসিকে গ্রহণ করতে দ্বিধা করত না। কিন্তু শুধু আজকের এই ইসিই নয়, অতীতে আওয়ামী লীগ সরকার যতগুলো ইসি তৈরি করেছে, সেসব ইসির কোনো একটি নির্বাচনকেও মানোত্তীর্ণ, প্রশ্ন মুক্ত করতে সক্ষম হয়নি।

এখন দেখা যেতে পারে, আওয়ামী লীগ কোন প্রশ্নে শুধু অনড়ই নয়, তারা অনেকটা মারমুখী। সে বিষয়টা হলো বিএনপির যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার দাবি তুলেছে, সেটাকে তারা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছে না। এটাকে কেউ যদি অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচনের বিপক্ষে আওয়ামী লীগের অবস্থান নেয়া হিসেবে মনে করে, তবে তার প্রমাণটা কোথায়। আবার বলছি, বিগত তিনটি নির্বাচনকে যদি ঘুরে ফিরিয়ে দেখা হয়, তবে কারো পক্ষেই সেসব নির্বাচনের কোনোটিকে গ্রহণযোগ্য হিসেবে মেনে নেয়া যায় না। বরং সবগুলো নির্বাচনকেই নেতিবাচক বিশেষণ দিয়ে জুড়িয়ে দেয়া যায়। এমন সব নির্বাচনের প্রশ্নে আওয়ামী লীগের অনড় অবস্থান নেয়াটা কতটা যৌক্তিক? এই প্রেক্ষাপটে আওয়ামী লীগকে গণতান্ত্রিক চেতনার ধারক হিসেবে পরিগণিত করার অবকাশ নেই। তাই ইসির ব্যাপারে অনেকেরই দুই দল বিএনপি ও আওয়ামী লীগকে এক নিক্তিতে তোলা এবং দেশের জন্য তা বিপজ্জনক বলে অভিহিত করা কোনোভাবেই সঠিক বিচার হতে পারে না। এতে ইসি শুধু তাদের নিরপেক্ষতার বিষয়টি প্রশ্নের মুখে ফেলেনি। সেই সাথে তারা তাদের অধীনে যে খারাপ মানের নির্বাচন করিয়ে চলেছে, তার পক্ষে সাফাই গাওয়ার শামিল।

এখানেই আর একটি বিষয় অবশ্যই সবার কাছেই গুরুত্ব পাওয়া উচিত যে, বাংলাদেশ নিজেকে গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে বিশ্বের কাছে নিজ পরিচিতি তুলে ধরতে প্রয়াসী বটে। কিন্তু গণতান্ত্রিক দেশের যে অনুষঙ্গগুলো রয়েছে, বাংলাদেশের সে ক্ষেত্রে প্রচুর ঘাটতি রয়েছে। সে কারণেই চলতি মাসে যুক্তরাষ্ট্রের যে গণতান্ত্রিক দেশগুলোর সম্মেলন হতে চলেছে, সেখানে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। বিশ্বের ১১১টি দেশের প্রতিনিধিরা সেই সম্মেলনে যোগ দিচ্ছে। স্মরণ করা যেতে পারে, এর আগে প্রথম যে গণতান্ত্রিক সম্মেলন যুক্তরাষ্ট্রে হয়েছিল, সেখানেও বাংলাদেশকে ডাকা হয়নি। এ নিয়ে দু’বার গণতন্ত্র সম্মেলনে দাওয়াত না পাওয়াটা অবশ্যই একটা গ্লানির বিষয়। একে উপেক্ষা বা তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করা হলে অবশ্য এ বিষয়টি বাংলাদেশের জন্য আন্তর্জাতিক অঙ্গনের কম বেদনাদায়ক হতে পারে না। মাত্র কিছুদিন আগে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের কাউন্সিলর ডেরেক শোলে ঢাকা সফর করে গেছেন। শোনা যায়, সে সময় তিনি বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষের কাছে গণতন্ত্রের পথে এগিয়ে যাওয়ার জন্য একটা রোডম্যাপ প্রত্যাশা করেছিলেন। কিন্তু বাংলাদেশ তেমন একটি রোডম্যাপ হাজির করতে সক্ষম হয়নি। তার জের হিসেবে এবারো ঢাকাকে যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠিতব্য গণতন্ত্র সম্মেলনে যোগ দেয়ার আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। বাংলাদেশের মানুষের গণতন্ত্র প্রীতির যে বিরাট ঐতিহ্য রয়েছে, যেমন আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সেসব মৌলিক চেতনা, তার অন্যতম হচ্ছে গণতন্ত্র। বাংলাদেশের স্থপতি ও এ দেশের প্রাণপুরুষ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার পরপরই দেশবাসীকে যে দুটো জিনিস উপহার দিয়েছিলেন তার একটি অতি স্বল্প সময়ে একটি গণতান্ত্রিক সংবিধান ও তার আলোকে খুব স্বল্প সময়ে একটি নির্বাচন। কিন্তু সেই ঐতিহ্যকে ধরে রাখা সম্ভব হয়নি বলেই, তার উত্তরসূরিদের আমলে এখন যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠিতব্য গণতন্ত্র সম্মেলনে আমাদের দাওয়াত না পাওয়ার বিষয়টি জড়িত। বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম ঐতিহ্যকে যদি পোক্ত করে ধরে রাখা যেত তবে কেউই আমাদের আমন্ত্রণ পাওয়ার বিষয়টি ঠেকাতে পারতো না।

গণতন্ত্র সম্মেলনে দাওয়াত না পাওয়াটা কিন্তু আরো কিছুর বিষয়েও জড়িত। আমাদের যারা যারা প্রকৃত উন্নয়ন সহযোগী, তাদের সবাই কিন্তু পশ্চিমের গণতান্ত্রিক বিশ্বের সদস্য। তাদের সাথে আমাদের সম্পর্কটা এই সময়ে ধরে রাখা যেত, সেটাও আমাদের পররাষ্ট্রনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হতো। সেখানে যেন ভাটার টান না পড়ে সে দিকে লক্ষ রাখাটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল। কিন্তু গণতন্ত্রের প্রশ্নে আমরা যে কেবলই পিছিয়ে যাচ্ছি সেটা কিন্তু আমাদের উন্নয়ন কর্মসূচিতে পশ্চিমের দেশগুলোকে আমাদের পাশে থাকতে নিরুৎসাহীই করতে পারে। এসব বিষয়ের প্রতি এখন খুব একটা লক্ষ রাখা হচ্ছে, এমন প্রমাণ নেই। আমরা এখন চরম অর্থনৈতিক মন্দা মোকাবেলা করছি, সেখানে আমরা যাদের নতুন বন্ধু হিসেবে বিবেচনা করছি তারা কিন্তু আমাদের সাহায্যের জন্য খুব একটা এগিয়ে আসছে না। তা ছাড়া তাদের সামর্থ্য এতটা নয় যে, তারা বাংলাদেশের বিপদে হাত বাড়াতে পারবে। এমন মনে করার কোনো যৌক্তিক কারণই নেই। সে জন্য আমাদের ঘুরে ফিরে পশ্চিমের আইএমএফের কাছেই যেতে হচ্ছে।

দ্বিতীয় যে বিষয়ের কথা আমরা উল্লেখ করেছি, আওয়ামী লীগের সাথে বিএনপির কোনো তুলনা হতে পারে না। আমরা এ ধারণার সাথে পুরোপুরি একমত। দূর ও নিকট অতীত থেকেই আমরা দুটি উদাহরণসহ কিছু কথা তুলে ধরতে চাই। যেমন ১৯৭৫ সালে দেশে গণতন্ত্রের কফিনে শেষ পেরেকটি এভাবে ঠুকে দিয়েছিল তৎকালীন সরকার যারা বর্তমান সরকারের পূর্বসূরি, ‘বাকশাল’ নামক এক নতুন রাজনৈতিক ধারণা প্রবর্তন করে যার মোদ্দা বিষয় ছিল, সব রাজনৈতিক দল বন্ধ করে শুধু তারাই থাকবেন। সব গণমাধ্যম বন্ধ করে দিয়ে শুধু তাদেরই জন্য চারটি সংবাদপত্রকে রাখা হয়েছিল নিজেদের মুখপত্র হিসেবে। একটি গণতান্ত্রিক সমাজ বিনির্মাণের যে ধারণা, সেই পদক্ষেপ ছিল তার অন্তরায়; সেই সংবিধানের একাধিক অনুচ্ছেদের সাথে গৃহীত পদক্ষেপ ছিল পুরোপুরি সাংঘর্ষিক। তৎকালীন আওয়ামী সরকার মাত্র ১২ মিনিটে সংবিধানের এমন এমনটি স্পর্শকাতর গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত ক্ষণকালের মধ্যে, পাস করিয়ে নিয়েছিল যা সে সময় সর্বস্তরেই হতবিহ্বল করেছিল। এমনকি সেই সংসদের সদস্যের কাউকেই সেই সংশোধনী সম্পর্কে কিছুই অবহিত করা হয়নি। এমন কর্মকাণ্ডের বিপরীতে ১৯৭৯ সালে বিএনপি সরকার সংবিধানের ৪র্থ সংশোধনীর যাবতীয় ‘কালো আইন’ দ্বিতীয় জাতীয় সংসদে গৃহীত পরবর্তী সংশোধনীর মাধ্যমে বাতিল করা হয়েছিল। এতে বহুদলীয় গণতন্ত্র আবার প্রাণ ফিরে পায়; সেই সাথে বন্ধ করে দেয়া গণমাধ্যমগুলোর প্রকাশনা আবারো বিকশিত হওয়ার সুযোগ লাভ করেছিল। বিএনপির সে উদ্যোগ সব মহলেই প্রশংসিত হয়। এসব বিষয় যদি বিবেচনায় নেয়া হয় তবে বিএনপির সাথে আওয়ামী লীগের কোনো তুলনাই হয় না। বিএনপির এই ইতিবাচক ভূমিকার পাশাপাশি আওয়ামী লীগের ভূমিকাকে নেতিবাচক না বলে উপায় থাকে না।

বিএনপি আমলে যতগুলো সংসদ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, তার প্রতিটি প্রাণবন্ত-সজীবও ছিল। জবাবদিহিতার সংস্কৃতি যেসব সংসদে পত্র-পল্লবে বিকাশ লাভ করেছিল। অথচ চলতি সংসদ ও বিগত সংসদে জবাবদিহিতার কোনো বালাই নেই। তাই বিএনপির আমলে গঠিত সংসদ ও হালের সংসদের মধ্যে কিভাবে তুলনা চলতে পারে?

এখন একটি সরল প্রশ্ন হচ্ছে, সংবিধান নিয়ে অনড় থাকা কথা বলার বিষয়ে আসলে প্রথমে বুঝতে হবে, সংবিধানটা কাদের জন্য! কোনো দলের না জনগণের? এ প্রশ্নের চমৎকার জবাব খোদ সংবিধানের প্রস্তাবনায় রয়েছে। ‘...সে জন্য বাংলাদেশের জনগণের অভিপ্রায়ের অভিব্যক্তি স্বরূপ এই সংবিধানের প্রাধান্য অক্ষুণ্ণ রাখা এবং ইহার রক্ষণ, সমর্থন ও নিরাপত্তা বিধান আমাদের পবিত্র কর্তব্য;’ এই প্রস্তাবনায় মর্মবাণী হচ্ছে, এই সংবিধান কোনো বিশেষ মত ও পথের মানুষের নয়। এতে দেশের ৫৬ হাজার বর্গমাইলের ১৬ কোটি ৫১ লাখ ৫৮ হাজার ৬১৬ জন মানুষ মন-মানসেরই প্রতিধ্বনি করছে বাংলাদেশের এই শাসনতন্ত্র। এ থেকে কেউ একচুল হটবেন কি হটবে না, সে সিদ্ধান্ত দেবে জনগণ। আজ জনগণ একটা শুদ্ধ পথে হাঁটতে চায়- এই জনপদের অধিকাংশ শ্রেণী-পেশার মানুষ। সেই বিশুদ্ধ পথ তখন রচিত হতে পারে যখন একটি প্রশ্নহীন নির্বাচনের মাধ্যমে সত্যিকার জনপ্রতিনিধিরা নির্বাচিত হয়ে আসতে পারবেন।

ndigantababar@gmail.com


আরো সংবাদ



premium cement