২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

ফিরে আসছে ‘বোবা’ ফোনের দিন

ফিরে আসছে ‘বোবা’ ফোনের দিন। - ছবি : সংগৃহীত

তথ্যপ্রযুক্তি বর্তমান বিশ্বের মানুষের জীবনধারা পাল্টে দিয়েছে। বিজ্ঞানের বা প্রযুক্তির আর কোনো উদ্ভাবনই প্রায় একই সময়ে, এক সাথে সারা বিশ্বের মানুষের জীবনধারা আমূল পাল্টে দিতে পারেনি। কারণ অন্য কোনো প্রযুক্তিই আবিষ্কারের সাথে সাথে বা এক দশকের মধ্যে বিশ্ব জুড়ে ছড়িয়ে পড়েনি যেমনটা ঘটেছে মোবাইল ফোনের ক্ষেত্রে। এটি নিঃসন্দেহে মানুষের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় বিপ্লব।

বৈদ্যুতিক বাল্ব দিয়ে আলো জ্বালানো শুরু হয় নিউ ইয়র্কে বিংশ শতাব্দী শুরুরও বছর বিশেষ আগে ১৮৮২ সালে। এটি ছিল একেবারেই সীমিত পর্যায়ে। পরবর্তী ৫০ বছরেও নিউ ইয়র্কের ঘরে ঘরে বৈদ্যুতিক আলো জ্বলেনি। আর ঢাকায় বিদ্যুতের আলো জ্বালান নবাব আহসানুল্লাহ ১৯০১ সালে। এ দেশে সব মানুষের ঘরে বিদ্যুৎ সরবরাহের কাজ এখনো শেষ হয়েছে কি? যদি হয়েও থাকে, কত বছর পর? প্রায় দেড়’শ বছর।

মেট্রোরেল প্রথম চালু হয় লন্ডনে ১৮৬৩ সালে। ঢাকায় আসতে এই প্রযুক্তির সময় লাগে ১৬০ বছর। যে আকারে শুরু হলো তাতে পুরো ঢাকাবাসীকে এই সুবিধার আওতায় আনতে কত বছর লাগতে পারে? এই প্রশ্নের জবাব দিতে হলে নস্ট্রাডামুস হতে হবে। সে চেষ্টা না করাই ভালো।

মূল কথা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির যেকোনো আবিষ্কারের সুফল বিশ্বের সব মানুষের কাছে এক সাথে কখনো পৌঁছেনি। যথেষ্ট সময় লেগেছে। কখনো ভৌগোলিক দূরত্ব, কখনো আর্থিক অসঙ্গতি, কখনো বা সামাজিক রাজনৈতিক সাংস্কৃতিক ভিন্নতার কারণে গোটা বিশ্ববাসী নির্দিষ্ট কোনো প্রযুক্তির সুফল ভোগ করা থেকে বঞ্চিত হয়েছে। শুধু এটুকুই নয়, রাজনৈতিক মতাদর্শের কূপমণ্ডূকতা কখনো বিজ্ঞানেরই বাতিল হয়ে যাওয়া তত্ত্ব আঁকড়ে থাকতেও বহু মানুষকে মোহগ্রস্ত করে রাখতে পারে। যেমনটা সম্প্রতি দেখা গেল বাংলাদেশে; শিশুদের বিজ্ঞান শেখানোর নামে ষষ্ঠ শ্রেণীর পাঠ্য বইয়ে সুদূর অতীতে বিজ্ঞানীদের হাতেই নাকচ হয়ে যাওয়া বিবর্তনবাদ চাপিয়ে দেবার চেষ্টায়। তথাকথিত বিজ্ঞানমনস্ক ব্যক্তিরাই, যারা আবার প্রগতিশীল বিশেষজ্ঞ ও পণ্ডিত হিসাবে খ্যাত, ডারউইনের তত্ত্ব বিষয়ে বিজ্ঞানীদের পরবর্তী গবেষণার তথ্যাবলী আড়াল করতে চান অথবা ব্যক্তি বা গোষ্ঠীস্বার্থে চেপে রাখার চেষ্টা করেন।

কিন্তু চতুর্থ শিল্পবিপ্লব তথা তথ্যপ্রযুক্তির বিপ্লব সেই সব দূরত্ব, ব্যবধান এমনকি আদর্শিক কূপমণ্ডূকতা নিজের শক্তিতেই জয় করেছে। আজকের বিশ্বে আমাদের মতো গরিব দেশগুলোতে ঘরে ঘরে কম্পিউটার হয়তো পৌঁছেনি, কিন্তু তথ্যপ্রযুক্তির অন্য সুবিধাগুলো পৌঁছে গেছে। মোবাইল ফোন তথ্যপ্রযুক্তির তেমনই একটি অনুষঙ্গ। এখনকার বিশ্বে কে কোন্ ধর্ম, আদর্শ বা রাজনীতির সমর্থক তার ওপর মোবাইল ফোনের ব্যবহার আটকে থাকেনি। ব্রাহ্মণ থেকে নমশূদ্র, বিলিয়নিয়ার থেকে নিরন্ন, বিশ্বের একনম্বর ক্ষমতাধর ব্যক্তি থেকে দুঃস্থ, সবার কাছেই মোবাইল পৌঁছেছে। হতে পারে সেটের দামে আকাশপাতাল তফাৎ, কিন্তু সুবিধাটা ভোগ করছেন সমভাবে। কিন্তু এই মোবাইলেরই উন্নত সংস্করণ স্মার্টফোনের উদ্ভাবন ও সংশ্লিষ্ট বহু বিচিত্র অ্যাপ্লিকেশনের বিকাশ বিশ্ববাসীর জীবনকে সত্যিকার অর্থে বড় ক্ষতির দিকে ঠেলছে।

আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় সেই স্মার্ট ফোনের ক্ষতি প্রসঙ্গে। গত শতকের শেষ দশকে বাংলাদেশে মোবাইল ফোন সব মানুষের সাধ্যের মধ্যে আসে। তখন ফিচার ফোনের যুগ। সেটগুলোতে বাটন টিপে নম্বর লিখতে হতো। বাটন টিপে টেক্স মেসেজ পাঠানো যেত। খুব নিম্ন মানের দু’চারটে ছবি তোলা এবং খুব সরল গুটিকয়েক গেমও খেলা যেত। সেই ফোনগুলো ছিল সত্যিকারের যোগাযোগের যন্ত্র। কিন্তু বাটন ফোনের যুগ দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। ১৯৯৪ সালেই সিমন ((Simon) নামে একটি স্মার্টফোন আমেরিকার বাজারে আসে। সেটি বিশ্বজুড়ে চলেনি।

২০০০ সালে ব্লাকবেরি, নকিয়ার সিম্বিয়ান প্ল্যাটফর্ম এবং উইন্ডোজ ফোন জনপ্রিয়তা পেতে শুরু করে। কিন্তু স্মার্টফোনে আসল বিপ্লব ঘটে ২০০৭ সালে আইফোন আসার পর। অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেমের হাত ধরে আসে বড় টাচস্ক্রিন, মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন ডাউনলোড, ঝকঝকে ছবি তোলা, ই-মেল, সামাজিকমাধ্যম ব্যবহারসহ নানা সুবিধা। দাম কমে আসার সাথে সাথে বিশ্বজুড়ে সব মানুষের কাছে দ্রুত পৌঁছে যায় এটি। ফলে বাটন ফোন বা ফিচার ফোন নামের আগের সেই যোগাযোগের যন্ত্রটির নাম হয়ে যায় ‘ডাম্ব’ ((Dumb)) ফোন। ডাম্ব মানে যেমন বোবা, তেমনই ডাম্ব মানে নির্বোধও। স্মার্টের বিপরীত তো অথর্ব বা নির্বোধ হওয়াই স্বাভাবিক। আর নির্বোধের সাথে কেইবা মেলামেশা করতে চায়!

বিশ্বে এখন মোবাইল ব্যবহারকারী সাড়ে সাত’শ কোটির কাছাকাছি। বাংলাদেশে ১৮ কোটির বেশি। বাংলাদেশীদের ৪৮ শতাংশই ব্যবহার করেন স্মার্টফোন। স্মার্টফোনের দাম অনেক বেশি। তবে সুবিধার কথা বলে শেষ করা যাবে না। কিন্তু অসুবিধাও কম না। যদিও নতুন জিনিস পেয়ে বেশির ভাগ মানুষ এখনো তাতে নিষিদ্ধ নেশার মতো মজে আছে। তাই অসুবিধার দিকগুলো খুব একটা সামনে আসছে না। বিপুল পরিমাণ সময় নষ্ট হওয়া, বায়বিক সমস্যা, ঘুমের ব্যাঘাত, পড়ালেখার ক্ষতি, শিক্ষার্থীদের মনোসংযোগে খামতি, মানুষে মানুষে দেখা-সাক্ষাৎ কমে যাওয়া, প্রাইভেসি খর্ব হওয়া, সৃজনশীল কাজে সময় দিতে না পারা, সর্বোপরি প্রতিটি মানুষের যন্ত্রের দাসে পরিণত হবার মতো বিষয়গুলো নিয়ে বৃহত্তর পরিমণ্ডলে এখনো সেভাবে আলোচনা হচ্ছে না।

শুধু একটি জরিপের তথ্য থেকেই বোঝা যাবে, স্মার্টফোন আমাদের মহামূল্যবান সময় কিভাবে খেয়ে ফেলছে। যুক্তরাজ্যের একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের জরিপে দেখা গেছে, সে দেশের প্রতিটি মানুষ বছরের ৩৬৫ দিনের মধ্যে গড়ে প্রায় ৩৭ দিনের সমান সময় (৩৬ দিন ১৮ ঘণ্টা) কাটান স্মার্টফোনে সামাজিকমাধ্যম ব্রাউজ করে। আর আমেরিকার প্রতিটি মানুষ গড়ে বছরের ১০৯ দিনের সমান সময় অনলাইনে কাটান। এর মধ্যে সামাজিক মাধ্যমে ব্রাউজ করে কাটান ৩২ দিনের সমান সময়। বাংলাদেশে এ ধরনের কোনো জরিপের তথ্য আমাদের চোখে পড়েনি। তবে নিজের এবং পরিবারের অন্য সদস্যদের দেখে যেমনটা মনে হয়, তাতে আমরা সম্ভবত ব্রিটিশদের চেয়ে দ্বিগুণ সময় সামাজিকমাধ্যমের পেছনে, মূলত ফেসবুকের পেছনে কাটাই।

তবে এই ক্ষতির দিকগুলো মানুষের বিচার-বিবেচনায় আসতে খুব দেরি আছে বলেও মনে হচ্ছে না, বাংলাদেশে সে সময়টা কখন আসবে অনুমান করা শক্ত, তবে সারা বিশ্বে কিন্তু ট্রেন্ড শুরু হয়ে গেছে আরো বছর চারেক আগে। কীভাবে?

২০১৮ সাল থেকে বিশ্বে আবারও সেই পুরনো ফিচার ফোন বা ডাম্ব ফোনের বিক্রি বাড়তে শুরু করেছে। গত বছর মার্চ মাসে বিবিসি এ বিষয়ে একটি ফিচার ছেপেছিল। তাতে লন্ডনের ১৭ বছরের এক স্কুলছাত্রীর কথা তুলে ধরা হয়। বলা হয়, স্কুলছাত্রী রবিন ওয়েস্ট তার অন্য বন্ধুদের চেয়ে একদিক থেকে অনেকটা আলাদা। সে স্মার্টফোন ব্যবহার করে না। টিকটক, ফেসবুক কিংবা ইনস্টাগ্রামের মতো অ্যাপ ব্যবহার করে না। তার বেশির ভাগ বন্ধুর হাতে দামি অ্যান্ড্রয়েড ফোন কিংবা আইফোন। কিন্তু রবিন শুধু যোগাযোগ রক্ষার জন্য একটি বাটন ফোন সাথে রাখে। এতে করে সে পড়াশোনায় কিংবা পরিবার, বন্ধুবান্ধবের সাথে সরাসরি মেলামেশায় বেশি সময় দিতে পারে।

স্মার্টফোন ছেড়ে দুই বছর ধরে ফিচার ফোন ব্যবহার করছেন রবিন ওয়েস্ট। বিবিসিকে তিনি বলেন, এই ফোনটি না কেনা পর্যন্ত খেয়ালই করিনি, স্মার্টফোন আমার জীবনের ওপর কতটা আধিপত্য করছিল। যেন ফোনটি আমার অধীন নয়, বরং আমিই ছিলাম তার গোলাম! আমার কর্মক্ষেত্রের ক্লান্তি দূর করার জন্য যে বিশ্রামটুকু দরকার, আত্মীয়স্বজনের সাথে যতটুকু সময় কাটানো বা কথা বলা দরকার, আমি সে সময় না দিয়ে অ্যাপে ব্যস্ত থাকতাম। দিন শেষে দেখতাম, অনেক কাজই করা হয়নি। সোশ্যাল মিডিয়ায় অতিরিক্ত সময় কাটানো আমার স্বাস্থ্যের ওপর, ঘুমের ওপর প্রভাব ফেলছিল। এখন বাটন ফোন ব্যবহার করছি, সবার সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষার জন্য। রবিন বলেছে, কম্পিউটারে প্রয়োজনীয় কাজগুলো সারছি। এর পর দেখতে পাচ্ছি, আমার হাতে সময়ের অভাব নেই। স্মার্টফোনে বুঁদ হয়ে সারাক্ষণ যে ‘সামাজিক যোগাযোগ’ করতাম সেটি এখন না করলে আর মোটেও খারাপ লাগে না। বরং ভালোই লাগে। নিজেকে ভারমুক্ত মনে হয়।

একই সময়ে ব্রিটেনের সেরা পত্রিকা গার্ডিয়ানের এক ফিচারে একই কথা বলেন নিবন্ধকার। সেই নিবন্ধকার তার আরো কয়েক বন্ধুসহ ছিনতাইয়ের শিকার হন। ছিনতাইকারীরা অস্ত্রের মুখে তাদের মোবাইল ফোনগুলো ছিনিয়ে নেয়। কিন্তু নিবন্ধকার যখন তার ফিচার ফোনটি ওদের হাতে তুলে দেন তখন তারা সেটি ফিরিয়ে দেয়। রীতিমতো অপমানজনক ঘটনা। নিবন্ধকার প্রশ্ন করেছেন, এমনকি ছিনতাইকারীরা যে ফোন প্রত্যাখ্যান করে সেই ‘বোবা ফোন’ কেন আবার ফিরে আসছে? গার্ডিয়ানের নিবন্ধের শিরোনামে ছিল ওই প্রশ্নটিই।

হ্যাঁ, ইউরোপ, আমেরিকায় আবার ফিচার ফোন জনপ্রিয় হচ্ছে। সফটওয়্যার সংস্থা ‘এসইমারশ’ এর রিপোর্ট উদ্ধৃত করে বিবিসি জানায়, ২০১৮ সালের পর থেকে গুগলে ফিচার ফোনের ব্যাপারে সার্চ করার পরিমাণ প্রায় ৯০ শতাংশ বেড়েছে। ২০২০ সালে ১০০ কোটির বেশি ফিচার ফোন বিক্রি হয়েছে। এর আগের বছর বিক্রি হয় ৬০ কোটি। এদিকে, অ্যাকাউন্টেন্সি গ্রুপ ডেলয়েটের গবেষণায় বলা হয়, যুক্তরাজ্যে বর্তমানে প্রতি ১০জন মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর মধ্যে একজনের হাতে দেখা যাচ্ছে একটি বাটন ফোন। ভাববেন না যে, শুধু স্বল্প শিক্ষিত শ্রমিক মজুর বা অসচ্ছল লোকেরা এটি ব্যবহার করছে। বরং ধনাঢ্য পরিবারের শিক্ষার্থী, অনেক উপার্জন করা চাকরিজীবী নারী, পুরুষ কিংবা ভিআইপিদের হাতে হাতেও দেখা যাচ্ছে ‘বোবা’ ফোন। এমনকি ভারতেও ৪০ কোটির বেশি মানুষ ব্যবহার করছে এটি। যুক্তরাষ্ট্রেও হু হু করে বাড়ছে এসব ফোনের বিক্রি। নতুন প্রজন্মের একটি বড় অংশ হাতে রাখছে শুধুই ফিচার ফোন। ঘরে একটি স্মার্টফোন রেখে কেউ ‘বোবা’ ফোন হাতে নিয়ে ঘুরছে, ব্যাপারটা এমনও না। আসলে এরা মনে করেন, বোবা ফোন তাদের আনস্মার্ট করেনি, বরং আরো বেশি স্মার্ট করেই তুলছে। কারণ গবেষকরা তো আগেই বলে দিয়েছেন, স্মার্টফোন মানুষের বুদ্ধিদীপ্ততার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে, মেধার ব্যবহার সীমিত করছে, আর স্বাস্থ্যের ক্ষতি তো আছেই।

আমেরিকার সাইকোলজিক্যাল সোসাইটি অতিরিক্ত মোবাইল ব্যবহারের বিষয়টিকে এখনো নেশা বা আসক্তি হিসাবে স্বীকৃতি দেয়নি। কিন্তু বিশ্বের বহু মনস্তাত্ত্বিক তেমনটাই মনে করেন। আর স্মার্ট ফোন নির্মাতারা তো আসক্তিকে কীভাবে স্থায়ী করে ফেলা যায় তাই নিয়ে রাতদিন গবেষণায় ব্যস্ত। প্রতিটি মানুষকে কীভাবে সামাজিক মাধ্যমে আরো বেশি নেশাগ্রস্ত করে তোলা যাবে, সেটি নিয়ে গবেষণা করে ফেসবুক, টুইটারের মতো সংস্থাগুলো। এ অপকর্মে তারা ব্যবহার করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ফোন যত স্মার্ট হয়েছে মানুষের প্রাইভেসিও তত খর্ব হয়েছে। সময় নষ্ট কিংবা স্বাস্থ্যঝুঁকির বাইরে আপনি জ্ঞাতসারে কিংবা অজ্ঞাতসারে আপনার ব্যক্তিগত তথ্য কিংবা ছবি কত জায়গায় শেয়ার করেছেন তা হয়তো মনে করতে পারবেন না। এসব তথ্য কিংবা ছবি অপব্যবহারের সম্ভাবনা যথেষ্ট।

ব্রিটিশ মোবাইল বিশেষজ্ঞ আর্নেস্ট ডকু বলেন, মানুষের মন পরিবর্তনশীল। বাটন ফোন থেকে যখন স্মার্টফোনের যুগ, সোশ্যাল মিডিয়ার যুগ শুরু হলো তখন মানুষের মনে হয়েছিল, এটাই বুঝি জীবন। কিন্তু অনেকের কাছে এখন এসব ডিজিটাল যোগাযোগ কিংবা ডিজিটাল বিনোদন একঘেঁয়েমির বিষয় হয়ে উঠেছে। তাই ফিরে যাচ্ছে ফিচার ফোনে। নিজেকে আরো বেশি করে সময় দিচ্ছে। সারাদিন স্ক্রিনে সময় দেয়ার বদভ্যাস থেকে খুব বুঝেশুনেই বেরিয়ে আসতে চাইছে নতুন প্রজন্মের অনেক মানুষ। তারা নিজের জীবনের জন্য সময় দিতে চায়। পরিবার ও সমাজের জন্য সময় দিতে চায়। অনেক বাবা-মা বাচ্চাদের হাতে স্মার্ট ফোন না দিয়ে ফিচার ফোন দিচ্ছেন। এভাবেই ধীরে ধীরে ফিচার ফোন আবারও জায়গা করে নিচ্ছে মানুষের দৈনন্দিন জীবনে। সর্টলিস্ট ( (Sortlist) নামের একটি কোম্পানির জরিপে দেখা গেছে, ইউরোপের ৩৫ বছরের কম বয়সী লোকেদের ৩২ শতাংশ সামাজিক মিডিয়ায় সময় দেয়া কমিয়ে দিয়েছে। কাজেই ট্রেন্ড কিভাবে পাল্টে যাচ্ছে, তা প্রমাণিত। তারা ঘরের বা অফিসের কম্পিউটারে শুধু প্রয়োজনীয় কাজের সময়টুকু অনলাইনে যাচ্ছে। এই সুযোগে বিশ্ববিখ্যাত নকিয়াসহ বিভিন্ন কোম্পানি নতুন করে ফিচার ফোন বাজারে ছেড়েছে। তৈরি করছে বাহারি সব বাটন ফোন।

সামাজিকমাধ্যম ব্যবহার থেকে বেরিয়ে আসা বা স্মার্টফোনকে ‘না’ বলাটা অনেকটাই দুঃসাহসিক কাজ হবে। প্রচণ্ড মনের জোর থাকার দরকার হবে এতে। হয়তো একদিনে সবার পক্ষে সম্ভব হবে না। আমাদের সমাজে একজন বড় ব্যবসায়ী বা বড় আমলা হাতে বোবা ফোন নিয়ে ঘুরছেন এটা তার নিজের কাছেও যেমন অস্বস্তির কারণ হবে, তেমনই সমাজেরও অনেকের চোখ টাটাবে। অর্থাৎ এর সাথে ‘পাছে লোকে কিছু বলে’র একটা সম্পর্ক থেকে যাচ্ছে। কিন্তু শুরু করে দিলে সেটাই হয়ে উঠবে অন্যদের জন্য ভালো দৃষ্টান্ত।

mujta42@gmail.com


আরো সংবাদ



premium cement