২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টের প্রতিষ্ঠা দিবস ও ভাষা আন্দোলন

ক্যাপ্টেন গণি। - ছবি : নয়া দিগন্ত

১৫ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অন্যতম শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টের প্রতিষ্ঠা দিবস। ৭৫ বছর আগে ১৯৪৮ সালের আজকের এই দিনে ঢাকার কুর্মিটোলা বর্তমান জিয়া কলোনি এলাকায় পাক-ভারত উপমহাদেশের এ ঐতিহাসিক ঘটনার সৃষ্টি হয় বাঙালি জাতির জন্য একটি সামরিক রেজিমেন্ট প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে যা ছিল বাঙালি মুসলমানদের দীর্ঘ ২০০ বছরের ইতিহাসে উত্থানের দিন। একই দিনে একই অনুষ্ঠানে আরেকটি ঐতিহাসিক ঘটনার সৃষ্টি হয়, যা ছিল পাকিস্তানের সেনানায়ক ফিল্ড মার্শাল আইয়ুব খানের উর্দুতে কথা বলার নির্দেশের বিরুদ্ধে বাঙালি অফিসার কর্তৃক মুখের ওপর তা তীব্র ভাষায় প্রত্যাখ্যান ও অমান্য করার দুঃসাহসিক ভূমিকা রাখার।

যে ‘বঙ্গশার্দুল বাহিনী’ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের জন্ম না হলে হয়তো বাংলাদেশ স্বাধীন হতো না এবং দেশ স্বাধীন না হলে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীরও অস্তিত্ব থাকত না, সেই রেজিমেন্ট প্রতিষ্ঠা আজকের এ দিনে। এর অন্যতম পুরোধা বা জনক ছিলেন মেজর গণি। বাংলার আকাশ যখন ঘন কালো মেঘে অন্ধকারাচ্ছন্ন, একদিকে ব্রিটিশ বেনিয়াদের দুঃশাসন, শোষণ, নীলকরদের অত্যাচার, অন্যদিকে এদেশীয় হিন্দু জমিদারদের দৃষ্টিতে ম্লেচ্ছ বা অচ্ছুৎ মুসলমান জাতি নিগৃহীত, নির্যাতিত, নিপীড়িত, ঘোর দুর্দিনে ও সঙ্কটে নিপতিত। এ ছাড়াও ভারতীয় উপমহাদেশে অন্য প্রায় সব বৃহত্তম জাতি-গোষ্ঠীর নামে সেনাবাহিনীতে নিজস্ব রেজিমেন্ট থাকলেও ছিল না কেবল অন্যতম বৃহত্তর বাঙালি জাতির নামে নিজস্ব কোনো রেজিমেন্ট। এমন কঠিন এক সময়ে শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, মওলানা ভাসানী, শামসুল হক প্রমুখ রাজনৈতিক নেতা ব্রিটিশদের কাছ থেকে নিজেদের অধিকার আদায় ও মুক্ত হওয়ার জন্য দেনদরবার করছিলেন। তেমনিভাবে মেজর মুহাম্মদ আবদুল গণিও ব্রিটিশ-ভারতীয় সামরিক বাহিনীতে বাঙালি মুসলমানদের অংশীদারিত্ব বাড়ানো ও নিজ জাতির জন্য সেনাবাহিনীতে একটি রেজিমেন্ট গঠনে তার অদম্য ইচ্ছা, সাহসিকতা নিয়ে যুগপৎ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলেন। ব্রিটিশ শাসনকালে এ প্রচেষ্টা আলোর মুখ না দেখলেও পাকিস্তান কায়েম হওয়ার সূচনালগ্নেই তার স্বপ্ন বাস্তবায়িত হয়। অর্থাৎ প্রতিষ্ঠিত হয় ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টের প্রথম ব্যাটালিয়ন-১ ইস্টবেঙ্গল বা ‘সিনিয়র টাইগারস’। পরবর্তীতে তা সংখ্যায় বৃদ্ধি পেয়ে এ রেজিমেন্টই নেতৃত্ব দেয় বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে এবং দীর্ঘ ৯ মাস যুদ্ধ করে একটি দেশ সৃষ্টিতে সর্বোচ্চ অবদান রাখে। আর এটি সম্ভব হয়েছিল মেজর মুহাম্মদ আবদুল গণির নেতৃত্বে ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্ট প্রতিষ্ঠা হওয়ার কারণে। এ জন্যই মেজর এম এ গণিকে আখ্যা দেয়া হয় ‘ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টের জনক’ হিসেবে। আর এ রেজিমেন্টের নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমেই সৃষ্টি হয় বাংলাদেশ ও আজকের বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।

বাঙালি রেজিমেন্ট গঠনে চিন্তা-চেতনা
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ বীরত্বপূর্ণ অংশগ্রহণ শেষে ১৯৪৬ সালে ক্যাপ্টেন গণিকে ভারতের ঝালনায় কোর সেন্টারে বদলি করা হয়। তখন থেকে তার চিন্তা-চেতনা কাজ করতে থাকে কিভাবে বাঙালি মুসলমানদের নিয়ে একটি রেজিমেন্ট গঠন করা যায়। এ সময়ে তিনি দাক্ষিণাত্যের বিশাখাপত্তম, হায়দরাবাদ, সেকান্দারাবাদ ও মুম্বাইতে সেনাবাহিনীতে লোক ভর্তির দায়িত্ব পালন করেন যা তার জীবনে স্বপ্ন পূরণের জন্য বড় ধরনের একটি অভিজ্ঞতা হিসেবে কাজে লাগে। এখানে তিনি ১২৫৬ ও ১৪০৭ দু’টি পাইওনিয়ার কোম্পানির অধিনায়ক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। ক্যাপ্টেন গণি তার দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি বাঙালি মুসলমানদের নিয়ে রেজিমেন্ট গড়ার স্বপ্ন বাস্তবায়নে সিনিয়র ব্রিটিশ ও বাঙালি অফিসারদের সাথে যোগাযোগ করতে থাকেন। ১৯৪৭ সালে ভারত বিভক্তির পর ব্রিটিশ জেনারেল মেসারভি পাকিস্তান সেনাবাহিনীর প্রথম সেনাপ্রধান নিযুক্ত হন। আগে থেকেই তিনি ক্যাপ্টেন গণিকে চিনতেন এবং মহাযুদ্ধে বাঙালি সৈনিক, অফিসার ও ক্যাপ্টেন, গণির বীরত্বপূর্ণ ভ‚মিকা সম্পর্কে অবগত ছিলেন। সে সুবাদে তিনি জেনারেল স্যার মেসারভিকে বাঙালি মুসলমানদের নিয়ে একটি রেজিমেন্ট গঠন করার অনুরোধ জানিয়ে ডেমি অফিসিয়াল (ডিও) পত্র লিখেন। এ পত্রের সাথে তিনি সব তথ্য ও যুক্তি পেশ করে ২০ পৃষ্ঠার একটি স্মারকলিপিও পেশ করেন। মেসারভি এ প্রস্তাবকে অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে গ্রহণ করেছিলেন এবং এ পত্রের উত্তরে জানালেন-
‘আমি আশা করি, বিশ্বকে তোমরা দেখাতে পারবে বাঙালি মুসলমান সৈনিকরা অন্য সৈনিকদের চেয়ে কোনো অংশে কম নয়।’
ঝালনার কোর সেন্টারের অধিনায়ক লে. কর্নেল মরিয়ার্টি বাঙালি রেজিমেন্ট গঠনের বিষয়ে ক্যাপ্টেন গণিকে পরামর্শ ও উৎসাহ দিয়েছিলেন। উল্লেখ্য, ক্যাপ্টেন গণির অধীনে ১২৫৬ ও ১৪০৭ নম্বর পাইওনিয়ার কোম্পানি দু’টি বাঙালি মুসলমানদের নিয়ে গঠিত ছিল বলে এগুলো পূর্বপাকিস্তান সেনাবাহিনীর অধীনে দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। ফলে ১৯৪৭ সালে ক্যাপ্টেন গণির নেতৃত্বে কোম্পানি দু’টি বিশেষ ট্রেনযোগে মুম্বাই থেকে ঢাকা আনা হয় এবং তাদেরকে বর্তমান ঢাকা সিএমএইচের উত্তর পাশে তাঁবু গেড়ে ক্যাম্প তৈরি করে থাকার ব্যবস্থা করা হয়।

রেজিমেন্ট গঠনের তৎপরতা
ঢাকায় আসার পর বাঙালি রেজিমেন্ট গঠন করার জন্য ক্যাপ্টেন গণি জোর তৎপরতা শুরু করেন। পাকিস্তানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমউদ্দিন ক্যাপ্টেন গণিকে ভালোভাবে চিনতেন এবং তাদের মধ্যে সুসম্পর্ক বিদ্যমান ছিল। ফলে তিনি তাকে বাঙালি রেজিমেন্ট গড়ার বিষয়ে আশ্বাস দেন। এ সময়ে হঠাৎ ক্যাপ্টেন গণিকে রংপুরে ন্যাশনাল গার্ডের অধিনায়ক হিসেবে বদলি করা হয়। অল্প দিনের মধ্যেই মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে রংপুর থেকে তাকে নারায়ণগঞ্জে রিক্রুটিং অফিসার হিসেবে বদলি করা হয় বাঙালি যুবকদের সৈনিক পদে ভর্তি করার জন্য যারা প্রশিক্ষণ শেষে নবগঠিত রেজিমেন্টে যোগ দেবে। তিনি এ সুযোগকে পুরোপুরি কাজে লাগান এবং ছয় ফুট লম্বা সুস্বাস্থ্যবান যুবকদের বেছে বেছে সৈনিক পদে ভর্তি করান, যেন অন্য রেজিমেন্টের চেয়ে বেঙ্গল রেজিমেন্টের সৈনিকরা তুলনামূলক আকর্ষণীয় ও শক্তিশালী হয়। সারা পূর্বপাকিস্তান তিনি ঘুরে বেড়াতে থাকেন উপযুক্ত লোকদের ভর্তি করার জন্য। কঠোর পরিশ্রম করতে থাকেন তিনি সঠিক ব্যক্তিকে রিক্রুট করার জন্য, যাতে পাকিস্তানের সব রেজিমেন্ট থেকে বাঙালি রেজিমেন্টের সৈনিকরা হয় সবচেয়ে উত্তম। এ সব রিক্রুটদের ঢাকার কুর্মিটোলায় কঠোর প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়।

দ্য ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টের প্রতিষ্ঠা
অবশেষে বাংলার বাঙালি মুসলমানদের বহুল প্রতীক্ষিত প্রাণের আকুতি, ক্যাপ্টেন গণির আজীবন লালিত স্বপ্ন বাস্তবে রূপ লাভ করতে শুরু করে। পাকিস্তান জন্ম লাভের শুরুতেই সরকার ক্যাপ্টেন গণি ও আরো অনেকের ইচ্ছানুযায়ী বাঙালি মুসলমানদের জন্য একটি রেজিমেন্ট গঠনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে যার নামকরণ করা হয় ‘দ্য ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্ট’। ১৯৪৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সদর দফতর থেকে এ রেজিমেন্টের প্রথম ব্যাটালিয়ন-১ ইস্টবেঙ্গল গঠন করার জন্য পত্র জারি করা হয়। ক্যাপ্টেন গণি ও ক্যাপ্টেন এস ইউ খানকে দায়িত্ব দেয়া হয় ঢাকা সেনানিবাসে এ ব্যাটালিয়ন প্রতিষ্ঠা করার জন্য। মেজর মুহাম্মদ তোহাম্মল হোসেনকে (এম টি হোসেন) প্রশিক্ষণ কোম্পানির অধিনায়ক এবং মেজর এ ডব্লিউ চৌধুরী ও মেজর সাজাউয়াল খানকে এ ইউনিটের দু’টি কোম্পানির অধিনায়ক হিসেবে নিযুক্ত করা হয়। ক্যাপ্টেন গণি ও অন্যান্য অফিসারের আপ্রাণ চেষ্টায় মাত্র পাঁচ মাসের মধ্যে প্রথম ইস্টবেঙ্গল গঠনের সব প্রস্তুতি চূড়ান্ত রূপ ধারণ করে। ১৯৪৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম দিকে ব্রিটিশ সেনা অফিসার লে. কর্নেল ভি জে ই প্যাটারসনকে প্রথম ইস্টবেঙ্গলের অধিনায়ক হিসেবে নিযুক্ত করা হয়।

প্রথম ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্ট প্রতিষ্ঠার ঐতিহাসিক অনুষ্ঠান
টান টান উত্তেজনা! পাক-ভারত উপমহাদেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠী বাঙালি মুসলমানদের বহু প্রতীক্ষিত ও লালিত স্বপ্ন বাস্তবায়নে অপেক্ষার পালা শেষ হতে চলেছে। মেজর গণির কঠিন ত্যাগ-তিতিক্ষার ফসল বাস্তবে রূপ নিতে যাচ্ছে। অবশেষে প্রতিষ্ঠিত হতে যাচ্ছে একটি রেজিমেন্ট যা বিগত ২০০ বছরেও সম্ভব হয়নি। ১৯৪৮ সালের ১৫ ফেব্রæয়ারি ঢাকার কুর্মিটোলায় (বর্তমানে জিয়া কলোনি) বাঙালি মুসলমানদের বহু প্রতীক্ষিত সে মাহেন্দ্রক্ষণ উপস্থিত হয়। এ ঐতিহাসিক দিনে প্রতিষ্ঠিত হয় ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টের প্রথম ব্যাটালিয়ন-১ ইস্টবেঙ্গল, যা ‘সিনিয়র টাইগার’ নামে পরিচিত। পাকিস্তানের ইতিহাসে অত্যন্ত জাঁকজমকপূর্ণ ও বর্ণাঢ্য এ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পূর্বপাকিস্তানের তৎকালীন গভর্নর জেনারেল স্যার ফ্রেডারিক ব্রেবোর্ন, মুখ্যমন্ত্রী খাজা নাজিমউদ্দিন, তার মন্ত্রিপরিষদের সদস্য নবাব হাবিবউল্লাহ, হাসান আলী, নূরুল আমীন, আফজাল খান, হবিবুল্লাহ বাহার, আবদুল হামিদ খান, সামরিক বাহিনীর উপআঞ্চলিক অধিনায়ক ব্রিগেডিয়ার আইয়ুব খান, উচ্চপদস্থ সব সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তা। পবিত্র কুরআন তিলাওয়াতের পর ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টের পতাকা উত্তোলন করেন গভর্নর জেনারেল স্যার ফ্রেডারিক ব্রেবোর্ন। শুরু হয় বাঙালিদের গৌরবময় ইতিহাসের শুভযাত্রা ও মার্শাল রেস (যোদ্ধা জাতি) হিসেবে নিজেদের প্রমাণ করার সুবর্ণ সুযোগ। অবমোচন হলো ২০০ বছরের গ্লানি ও অবমূল্যায়ন। এর মাধ্যমে বীজ বপন করা হয় বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের বীর সেনানীদের। ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্ট শুরুতেই আত্মপ্রকাশ করে একটি উজ্জ্বল সূর্যের মতো। এ যেন আমাদের জাতীয় পতাকারই রক্তিম লাল সূর্যের প্রতিচ্ছবি। ‘সৌম্য-শক্তি-ক্ষিপ্রতা’র মূলমন্ত্রে দীক্ষিত মাতৃভূমির স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষার দীপ্ত আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে পবিত্র কুরআন ছুঁয়ে শপথ গ্রহণ করার মাধ্যমে যাত্রা শুরু করে ‘বঙ্গশার্দুল’ বাহিনী। তখন কে জানত যে, এ রেজিমেন্টই একদিন মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়ে সর্বোচ্চ আত্মত্যাগের মাধ্যমে বাংলাদেশকে একটি স্বাধীন রাষ্ট্রে পরিণত করবে! আর মেজর এম এ গণির দূরদর্শিতা, অধ্যবসায়, দৃঢ়প্রত্যয়, নিখাদ দেশপ্রেম, নিরলস প্রচেষ্টা ও বাঙালি জাতিকে ভালোবাসার ফসলই হলো আজকের এই ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্ট তথা আমাদের বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। প্রকারান্তরে এ ১৫ ফেব্রুয়ারিকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর জন্মদিবস বললেও ভুল হবে না।

ভাষা আন্দোলনের সূচনা
ভাষা আন্দোলনের প্রকৃত ইতিহাস হলো এই, ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্ট প্রতিষ্ঠার দিনই (১৫ ফেব্রæয়ারি ১৯৪৮) সর্বপ্রথম ভাষা আন্দোলনের সূচনা হয় দু’জন দুঃসাহসী বাঙালি অফিসার মেজর মেজর মুহাম্মদ তোহাম্মল হোসেন ও ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ আব্দুল গণি কর্তৃক। বেঙ্গল রেজিমেন্টের আনুষ্ঠানিক পতাকা উত্তোলন অনুষ্ঠান শেষে চা-চক্রে অভাবনীয় ও দুঃসাহসী এক ঘটনার অবতারণা হয়। পূর্বপাকিস্তানের এরিয়া কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আইয়ুব খান সবার উদ্দেশে তার বক্তব্যে বলেন-‘From now on wards Bengali Soldiers will speak in Urdu and NOT in BENGALI.’ সাথে সাথে এ কথার তীব্র প্রতিবাদ করে মেজর মুহাম্মদ তোহাম্মল হোসেন বলেন-‘Excuse me Sir, in West Pakistan Pathan soldiers are allowed to speak in Pastoo and Urdu. Similarly, our Bengali soldiers should be allowed to speak in Bengali and Urdu.’


ক্ষুব্ধ আইয়ুব খান কঠিন ভাষায় বলে উঠলেন- ‘Nonsense, absurd, sit down.’ এরপর ক্যাপ্টেন গণি আবেগতাড়িত হয়ে বলে উঠলেন ‘Excuse me Sir, whatever Major M. T. Hossain has said is correct. We Bengali soldiers will never speak in Urdu, but in our mother tongue Bengali.’


এর জবাবে আইয়ুব খান ক্ষুব্ধ কণ্ঠে- ‘Shut up. Sit down’ বলে ক্যাপ্টেন গণিকে থামিয়ে দেন। ১৪ ডিভিশনের জেনারেল অফিসার কমান্ডিং তথা পূর্বপাকিস্তানের সর্বোচ্চ পদের সামরিক কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুহাম্মদ আইয়ুব খান এ দুই নির্ভীক অফিসারের ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণে তাদের ওপর ভীষণ ক্ষিপ্ত হন। এ দুঃসাহসিক ভ‚মিকার জন্য এ সময় থেকেই তাকে ‘টাইগার গণি’ হিসেবে আখ্যা দেয়া হয়। এর কিছু দিনের মধ্যে উর্দুতে কথা বলার নির্দেশ জারি হলে মেজর এম টি হোসেন ও ক্যাপ্টেন গণি তা অমান্য করেন এবং এ জন্য তাদের ওপর নিবর্তন চলতে থাকে। কিছু দিনের মধ্যে তাদের পল্টন থেকে বদলি করা হয় ও তাদের পদোন্নতি বন্ধ করা হয়। এরকম স্পষ্টবাদিতার উদাহরণ আজকের দিনে একেবারেই বিরল এবং ইউনিফর্ম পরিহিত অবস্থায় অকল্পনীয়। তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হলো- এ ১৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৪৮ সালেই প্রকৃতপক্ষে ভাষা আন্দোলনের সূচনা হয় এবং মেজর এম টি হোসেন ও মেজর গণি হলেন এ অদৃশ্য আন্দোলনের সূচনাকারী এবং মহানায়ক। জাতি হিসেবে আমরা প্রায় অকৃতজ্ঞ। কেননা, এ সব বীরপুরুষকে আমরা কদাচিৎ স্মরণ করি এবং নতুন প্রজন্ম এদের ইতিহাস সম্পর্কেও অবহিত নয়। তাই হয়তো কবি বলেছেন-
‘God and soldier all men adore,
In times of danger and not before.
When danger is over and things are righted,
God is forgotten and poor soldier is slighted.’

লেখক : সামরিক ইতিহাস ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক
Email : hoque2515@gmail.com


আরো সংবাদ



premium cement
নেতাদের মুক্তির দাবিতে রিজভীর নেতৃত্বে নয়াপল্টনে বিএনপির মিছিল বৃষ্টির জন্য দেশবাসীর প্রতি ইস্তিস্কার নামাজ আদায়ের আহ্বান আমিরে জামায়াতের সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পে চুক্তি স্বাক্ষর করল তুর্কি, ইরাক, কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাত ঢাকায় ‘হিট স্ট্রোকে এক ব্যক্তির মৃত্যু শ্যামবাজার ঘাটে লঞ্চে আগুন, নিয়ন্ত্রণে ৪ ইউনিট ‘আমার শিশু মেয়েটির যে সর্বনাশ সে করেছে’ বান্দরবানের ৩ উপজেলায় নির্বাচন স্থগিত চুয়াডাঙ্গায় বৃষ্টির জন্য ইস্তিস্কার নামাজে মুসুল্লিদের ঢল বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের চাবিটা মনে হয় পার্শ্ববর্তী দেশকে দিয়েছে সরকার : রিজভী চীনের দক্ষিণাঞ্চলীলের গুয়াংডংয়ে সর্বোচ্চ স্তরের বৃষ্টিপাতের সতর্কতা জারি আজমিরীগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান মর্তুজা হাসান গ্রেফতার

সকল