২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫
`

তুরস্কের সামনে নির্বাচন চ্যালেঞ্জ

লেখক : মাসুম খলিলী - ফাইল ছবি

লুজান চুক্তির মাধ্যমে তুরস্কের ওসমানীয় শাসনের আনুষ্ঠানিক সমাপ্তির শত বছর পূর্তির পর প্রথম প্রেসিডেন্ট ও সংসদ নির্বাচন হতে যাচ্ছে আগামী ১৪ মে। দৃশ্যত দুই দশক ক্ষমতায় থাকার পর, এরদোগানের শাসন অনেক পর্যবেক্ষকের কাছে অপ্রতিরোধ্য বলে মনে হতে পারে। তবে একই সাথে এরদোগানের সামনে দেশ বিদেশের শক্তিসমূহের যুগপৎ আয়োজন কঠিন চ্যালেঞ্জও সৃষ্টি করতে পারে। দেশটির ছয়টি প্রধান বিরোধী দল এরদোগান ও তার পিপলস জোটকে হারানোর জন্য প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে একক প্রার্থী দেবার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

ইউরোপ আমেরিকার গভীর ক্ষমতা বলয়ের একটি অংশও যে এই নির্বাচনে এরদোগানের শাসনের অবসান কামনা করছে তাতে সংশয়ের অবকাশ কমই। পশ্চিম ইউরোপে নতুন করে ইসলামফোবিয়া ছড়িয়ে তুরস্কবিরোধী হাইপ তৈরিসহ নানা আয়োজন বিষয়টিকে স্পষ্ট করে। আমেরিকান মিডিয়া ব্লুমবার্গ বলেছে, তুরস্কের এই নির্বাচন হবে ২০২৩ সালে বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন। জার্মান সরকারি মিডিয়ায় এরদোগানোত্তর সরকার কিভাবে গঠন করতে হবে তার রূপরেখা প্রকাশ করেছে। এতে ধারণা করা যায় তুরস্কে পরিবর্তন ঘটানোর চেষ্টা করা হচ্ছে নানা পক্ষ থেকে।

নানা আয়োজন ও এরদোগান
তুরস্কের এবারের নির্বাচন ঘিরে নানামুখী উদ্যোগ আয়োজন নিয়ে শাসক দল ও এরদোগান নিজে একেবারে অন্ধকারে রয়েছেন এমনটি মনে হয় না। তবে তার প্রতিপক্ষ দেশী বিদেশী শক্তিকে একসাথে এই মাত্রায় এর আগে মোকাবেলা করতে হয়নি এরদোগানকে। প্রতিপক্ষের ধারণা এটিই হবে প্রথম নির্বাচন অর্থনৈতিক মন্দা এবং ক্ষমতাসীন দলের মধ্যে ফাটলে দুই দশকে যেখানে এরদোগান স্পষ্টভাবে ফেভারিট নন। বিরোধী জোটের এরদোগানের শাসক ব্লককে পরাজিত করার সম্ভাবনা থাকলেও তাদের বিজয় সংসদীয় গণতন্ত্রে উত্তরণের একটি মসৃণ প্রক্রিয়ার নিশ্চয়তা দেবে না। বিরোধীরা যদি এরদোগানকে পরাজিত করতে পারেন, তাহলে নতুন সরকারকে পশ্চিমা মিত্রদের ইচ্ছানুসারে তুরস্কের কূটনৈতিক কোর্স এবং অর্থনৈতিক নীতি পুনর্গঠন আর সংসদীয় শাসনে ফিরে যাওয়ার কঠিন কাজগুলো গ্রহণ করতে হবে। বিরোধী জোটের বৈচিত্র্যময় গঠনের কারণে, এই লক্ষ্যগুলো অর্জন করা নির্বাচনে জেতার মতো কঠিন হতে পারে। আর তুর্কি জনগণ বিদেশী হস্তক্ষেপে ক্ষমতার পরিবর্তন কতটা চাইবে সেটি প্রশ্ন সাপেক্ষ।

তুরস্কের উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি ও বেকারত্বের হার বৃদ্ধিজনিত ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক সঙ্কটের কারণে এরদোগানের জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি (একেপি) গত এক বছরে জনমত জরিপে নিম্নগামী প্রবণতার সম্মুখীন। এমনকি একেপির সাথে পিপলস অ্যালায়েন্সের অতি-জাতীয়তাবাদী অংশ এমএইচপি জোট হওয়া সত্ত্বেও, এরদোগান রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে জয়লাভের জন্য প্রয়োজনীয় ৫০ শতাংশ ভোট পেতে অসুবিধায় পড়ছেন বলে মনে হচ্ছে। বিপরীতে, বেশির ভাগ জনমত জরিপ অনুসারে, বিরোধী শিবিরের সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দ্বীরা ওয়ান টু ওয়ান ম্যাচে এরদোগানকে ছাড়িয়ে যেতে পারেন।

আরো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, মধ্য-বাম রিপাবলিকান পিপলস পার্টির (সিএইচপি) নেতৃত্বে বিরোধী শিবির, এরদোগানের শাসনামলে যেকোনো সময়ের চেয়েই বেশি ঐক্যবদ্ধ। একেপি থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া দুটি দল-প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী আহমেত দাভুতোগলুর ফিউচার পার্টি (জিপি) ও প্রাক্তন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আলী বাবাকানের ডেমোক্রেসি অ্যান্ড প্রগ্রেস পার্টি (ডেভা) তুর্কি জাতীয়তাবাদী গুড পার্টি (আইয়িপি), ইসলামিস্ট ফেলিসিটি পার্টি (এসপি) এবং মধ্য-ডান ডেমোক্র্যাট পার্টি (ডিপি) নিয়ে গঠিত নেশন অ্যালায়েন্সের সাথে কাজ করছে।

স্পষ্টতই, এরদোগান এতে লড়াই না করে দমে যাবেন না। বিরোধী দলগুলোকে মোকাবেলার জন্য তিনি প্রস্তুত হচ্ছেন। শাসক ব্লকের সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাগুলোতে বিশেষ প্রভাব রয়েছে। বিরোধী দলের জাতীয়তাবাদী ভোটারদের সমর্থন পাওয়ার জন্য, এরদোগান কুর্দি গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে অভিযান জোরদার করতে পারেন, যার মধ্যে সাংবিধানিক আদালতের দ্বারা পিপলস ডেমোক্রেটিক পার্টি (এইচডিপি)-এর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার সম্ভাবনা থাকতে পারে। সে সাথে জনমত গড়ে তুলতে সিরিয়ায় আন্তঃসীমান্ত সামরিক অভিযান শুরু করতে পারে আঙ্কারা। সেই অভিযানের সম্ভাবনা অবশ্য আট দশকের বেশি সময়ের মধ্যে সবচেয়ে প্রলয়ঙ্করি ভূমিকম্পের পর বেশ খানিকটা কমে গেছে, যে দুর্যোগে তুরস্ক সিরিয়া মিলিয়ে ১০ হাজার মানুষের প্রাণহানির আশঙ্কা করা হচ্ছে।

কেউ কেউ ২০২৩ সালের নির্বাচনের প্রাক্কালে পিকেকের সন্ত্রাসী হামলার আশঙ্কা করছেন। এ ধরনের আক্রমণগুলো জনসাধারণের মনোযোগ অর্থনীতি থেকে সন্ত্রাসের দিকে সরিয়ে নেয়, যার ফলে একটি জাতীয়তাবাদী প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয় যা শাসক ব্লকের সমর্থন সৃষ্টি করতে পারে। এই ঘটনাগুলো এরদোগানের সমর্থনে জনমতের পতনকে স্থির করতে পারে।

প্রেসিডেন্ট এরদোগানকে ক্ষমতাচ্যুত করার প্রত্যাশী বিরোধী দলের জোট বলেছে যে তারা আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে জিতলে তুরস্কের সংসদীয় গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করবে। এটি হবে দেশটির নির্বাচন-পরবর্তী ভবিষ্যতের জন্য একটি দীর্ঘ পরিকল্পনার অংশ। তবে এটি ক্ষমতার একটি বৃহত্তর বিভাজনের পূর্বাভাস দেয়। সিএইচপি ছাড়াও ‘টেবিল অব সিক্স’ নামে পরিচিত বিরোধী জোট থেকে দ্বিতীয় বৃহত্তম বিরোধী দল কুর্দিপন্থী এইচডিপি বাদ পড়েছে। জানুয়ারির গোড়ার দিকে, সাংবিধানিক আদালত দলটির কোষাগারের অর্থ অবরুদ্ধ করে এবং নিষিদ্ধ পিকেকের সাথে সম্পর্কের কারণে দলটি নিষিদ্ধ হবার সম্মুখীন।

২০২৩ সালের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন
২০২৩ সালে অনেকগুলো সাধারণ নির্বাচন হবে। যার মধ্যে নাইজেরিয়ায় নির্বাচন হবে ফেব্রুয়ারিতে, পাকিস্তান ও বাংলাদেশে নির্বাচন হতে পারে বছরের শেষার্ধে। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণটি নিঃসন্দেহে হবে ১৪ মে তুরস্কে। ব্লমবার্গের মতে, তুর্কি নির্বাচনের ফলাফল ওয়াশিংটন এবং মস্কোর পাশাপাশি ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য, মধ্য এশিয়া এবং আফ্রিকার রাজধানীতে ভূ-রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক হিসাব নিকাশে প্রভাব ফেলবে। রয়্যাল ইউনাইটেড সার্ভিসেস ইনস্টিটিউট ফর ডিফেন্স অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজের সিনিয়র অ্যাসোসিয়েট ফেলো জিয়া মেরাল বলেছেন, ‘তুরস্কে যা ঘটে তা শুধু তুরস্কেই থাকে না। তুরস্ক একটি মধ্যম শক্তি হতে পারে, কিন্তু বৃহৎ শক্তিগুলোর তার নির্বাচনে অংশীদারিত্ব রয়েছে।’

পশ্চিমা নেতারা এরদোগানের বিদায় দেখে খুশি হবেন। পশ্চিমা দৃষ্টিকোণ অনুসারে, এরদোগান রাশিয়ার কাছ থেকে ক্ষেপণাস্ত্র-প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা অর্জনের মাধ্যমে ন্যাটোর নিরাপত্তা ক্ষুণ্ণ করেছেন, সুইডেন এবং ফিনল্যান্ডের সদস্যপদ অবরুদ্ধ করে ন্যাটো জোটকে হতাশ করেছেন, বারবার শরণার্থী দিয়ে ইউরোপকে প্লাবিত করার হুমকি দিয়েছেন এবং সাম্প্রতিক মাসগুলোতে গ্রিসের দিকে ক্রমবর্ধমান আক্রমণাত্মক বক্তব্য ছুড়েছেন।

ওয়াশিংটনের সাথে আঙ্কারার সম্পর্ক এমন পর্যায়ে উত্তেজনাপূর্ণ হয়ে উঠেছে যেখানে শীর্ষ তুর্কি কর্মকর্তারা নিয়মিতভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে এরদোগানের বিরুদ্ধে অভ্যুত্থান ও সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সাথে জড়িত থাকার অভিযোগ এনেছেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষক সেলিম কোরু বলেছেন, ‘এরদোগানের বিশ্বদর্শন অধিকাংশ পশ্চিমাদের ধারণার চেয়ে অনেক বেশি উগ্র। তুরস্কের নিকটবর্তী প্রতিবেশী বলয়ে যেখানে আঙ্কারা ক্রমবর্ধমানভাবে প্রভাবশালী হচ্ছে সেখানে তার উচ্চাকাঙ্ক্ষা আমেরিকান এবং ইউরোপীয় প্রভাবের পরিপূরক নয়। এই উচ্চাকাঙ্ক্ষা তাদের প্রতিস্থাপন এবং প্রতিরোধ করার।’

পশ্চিমাদের মনোভঙ্গি যাই হোক, ভোটাররা এরদোগানকে বাদ দিয়ে দিয়েছেন এমনটা নিশ্চিত নয়। তুর্কিরা তাদের রাষ্ট্রপতি এবং তার নীতি সম্পর্কে বেশ খানিকটা দোদুল্যমান অবস্থায় রয়েছে এখনো।


মেট্রোপলের অক্টোবরের শেষের দিকের জরিপে দেখা গেছে, এরদোগানের জন্য অনুমোদন হার দাঁড়ায় ৪৭.৬ শতাংশ, যা এক বছর আগে ৩৯ শতাংশ ছিল। তার পরও কেন অনেকেই তুরস্কের পথ সংশোধনের জন্য এরদোগানের দিকে তাকাচ্ছেন? আংশিকভাবে, এর কারণ তারা জানে না কে এরদোগানকে চ্যালেঞ্জ করবে। প্রধান বিরোধী দলগুলোর টেবিল অফ সিক্স এখনো তাদের রাষ্ট্রপতি প্রার্থী ঘোষণা করেনি। দুই প্রধান প্রতিযোগী হলেন শীর্ষস্থানীয় বিরোধী দল, সিএইচপির নেতা ইস্তাম্বুলের মেয়র একরেম ইমামোগলু এবং দলের দীর্ঘদিনের নেতা কামাল কিলিচদারোগ্লু।

তুরস্কের অর্থনীতিকে মেরামত করার জন্য একটি সুস্পষ্ট কৌশল তুলে ধরার জন্য টেবিল অফ সিক্সকে বেশ ধীর মনে হয়। গত মাসের গোড়ার দিকে সিএইচপি অবশেষে একটি এজেন্ডার মত কিছু প্রকাশ করে, কিন্তু এটি ছিল বড় বিনিয়োগের বায়বীয় প্রতিশ্রুতি সর্বস্ব এবং সংক্ষিপ্ত।

এরদোগানের পছন্দের প্রতিপক্ষ হবেন কিছুটা বর্ণহীন প্রবীণ কিলিকদারোগ্লু, যিনি ১২ বছর ধরে সিএইচপির নেতৃত্ব দিচ্ছেন। অনেক তুর্কি রাজনৈতিক বিশ্লেষক বলেছেন যে তরুণ, আরো ক্যারিশম্যাটিক ইমামোগ্লু হবেন শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী। কিন্তু ইমামোগ্লুকে অনেকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখতে চাইছে। গত মাসে, মেয়রকে নির্বাচনী কর্মকর্তাদের অপমান করার অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। যদিও নির্বাচন নিয়ম অনুসারে তার আইনজীবীরা দোষী সাব্যস্ত হওয়াকে চ্যালেঞ্জ করলে তিনি রাষ্ট্রপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার অনুমতি পেতে পারেন।

তবে এরদোগানের এখনো শক্তিশালী সমর্থনে মনে হয় তিনি যে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বীকে আটকে রাখতে পারেন, বিশেষত যদি বসন্তে অর্থনীতিতে পুনরুদ্ধারের লক্ষণ দেখা যায়। এরদোগান সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং সৌদি আরব থেকে বিনিয়োগ এবং ব্যাংক আমানতের ওপর হিসাব কষছেন। আর তুরস্ককে রাশিয়ার প্রাকৃতিক গ্যাস রফতানির কেন্দ্র করার জন্য পুতিনের প্রতিশ্রুতি হতাশা দূর করতে সাহায্য করবে। এরদোগান কৃষ্ণসাগরে তুরস্কের নিজস্ব প্রাকৃতিক গ্যাসের সন্ধান নিয়েও কথা বলছেন, যা নতুন করে স্বপ্ন দেখাচ্ছে। গত মাসে, তিনি ন্যূনতম মজুরি ৫৫ শতাংশ বৃদ্ধির ঘোষণা দেন; গত সপ্তাহে, তিনি বেসামরিক কর্মচারীদের বেতন ও পেনশন বাড়িয়েছেন।

এরদোগান এবং তার দল কুর্দি সন্ত্রাসবাদ ও পশ্চিমা ভ্রষ্টতার পুরোনো বক্তব্যের পাশাপাশি পারিবারিক এবং ইসলামিক মূল্যবোধের জন্য সমকামিতার মতো মূল্যবোধ ও সংস্কৃতিবিরোধী বিষয়ে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। গ্রিসের দখলদারিত্বের প্রতি তার হুমকি জাতীয়তাবাদী চেতনা বাড়িয়ে তুলতে পারে। এসব কৌশল এরদোগানকে আগে নির্বাচনে জিততে সাহায্য করেছে। এসব আবারও সাহায্যকারী হতে পারে। তুর্কিরা তাদের ভোট না দেওয়া পর্যন্ত, পশ্চিমা নেতারা এরদোগান জমানার অবসান ঘটাতে সচেষ্ট থাকতে পারেন।

৬ দলের ঘোষণা ও কৌশলগত নিষ্ক্রীয়তা
এরদোগানকে হারাতে প্রতিরক্ষা, পরিবহন, জ্বালানি, স্বাস্থ্যসেবা, শিল্প, তথ্যপ্রযুক্তি এবং প্রযুক্তিতে (যে এলাকায় ক্ষমতাসীন সরকার উল্লেখযোগ্যভাবে সফল হয়েছে) আরো অগ্রগতি করার অঙ্গীকার করেছে বিরোধী জোট। ঠিক কিভাবে করা হবে তা ব্যাখ্যা না করে বিরোধী জোট মুদ্রাস্ফীতিকে একক অঙ্কে কমিয়ে আনার লক্ষ্য ঘোষণা করেছে।

ছয় বিরোধী দলের অগ্রাধিকার প্রতিফলিত করার পাশাপাশি তাদের ঘোষিত দলিলে আংশিকভাবে অসদস্য এইচডিপিকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। বিশেষত, বিরোধী ব্লক পৌরসভাগুলোতে স্বতন্ত্র ট্রাস্টি নিয়োগের প্রথা বন্ধ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। আর কুর্দিদের মাতৃভাষা হিসাবে স্বীকৃতি ও স্বায়ত্তশাসনের মতো এইচডিপির উগ্র দাবির উল্লেখ না করেই রাজনৈতিক দলগুলোকে নিষিদ্ধ করা আদালতের পক্ষে যাতে কঠিন হয় সেটি গ্রহণের কথা উল্লেখ করেছে।

ক্ষমতাসীন একে পার্টির সরকারের বৈদেশিক নীতিকে ‘যৌক্তিকতার বিপরীতে আদর্শগতভাবে’ আচরণ করার অভিযোগ করে, বিরোধী জোট আন্তর্জাতিকভাবে ‘পক্ষ বেছে না নেওয়ার’ প্রতিশ্রুতি দিয়ে সঙ্কটের মুখে কৌশলগত নিষ্ক্রিয় হওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছে। সাইপ্রাস দ্বীপ, এজিয়ান সাগর, পূর্ব ভূমধ্যসাগর, আজারবাইজান এবং আন্তর্জাতিক সংস্থার সাথে তুরস্কের সম্পর্কসহ অন্যান্য অনেক ক্ষেত্রে সাধারণ বিবৃতি খুঁজে পাওয়া যায় না। তদুপরি, ইউরোপীয় ইউনিয়নে যোগদান, এশিয়ার জন্য একটি দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করা এবং তুরস্ক-আফ্রিকা শীর্ষ সম্মেলনের আয়োজন করা ইতোমধ্যেই বর্তমান সরকারের এজেন্ডায় রয়েছে।


তুর্কি বিশ্লেষক দুরানের মতে, বিরোধী জোট এমন অনেক প্রতিশ্রুতি দিয়েছে যা সরকার এর মধ্যে করেছে বা করছে। এরদোগান নিজেও তার বক্তব্যে এ কথা বলেছেন। বিরোধী ব্লকের ‘সমতার ভিত্তিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সম্পর্কের একটি প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো তৈরির’ অঙ্গীকার একে পার্টির অধীনে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনার মূল কারণ। ৬ দলের জোট বলেছে, ‘আমরা রাশিয়ান ফেডারেশনের সাথে সমতা বোধের সাথে এবং প্রাতিষ্ঠানিক স্তরে একটি ভারসাম্যপূর্ণ ও গঠনমূলক আলোচনার মাধ্যমে আমাদের সম্পর্ক অব্যাহত রাখব।’ এর সাথে বর্তমান নীতির পার্থক্য খুঁজে পাওয়া মুশকিল। বিরোধী পক্ষ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে কূটনীতি একাডেমি চালু করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে - যা ইতোমধ্যেই বিদ্যমান। বিরোধী দলগুলো সন্ত্রাসী সংগঠন পিকেকের নাম উল্লেখ না করে একটি সাধারণ শব্দ ব্যবহার করেছে, সন্ত্রাসবাদ।

বিদেশী নীতি এবং জাতীয় নিরাপত্তার ক্ষেত্রে বিরোধীদের উচ্চাকাঙ্ক্ষা এবং স্পষ্টতার অভাব সবচেয়ে তীব্রভাবে অনুভূত হয়। এই অর্থে, বিরোধী দলের সম্ভাব্য প্রার্থীর লিবিয়া, সিরিয়া, পিকেকের মতো সন্ত্রাসী সংগঠন, এর সিরিয়ার সহযোগী সংগঠন ওয়াইপিজি এবং গুলেনবাদী সন্ত্রাসী গ্রুপ সম্পর্কে কথা বলা সবচেয়ে কঠিন হবে। এসব নিয়ে পশ্চিমের সাথে সরকারের যথেষ্ট উত্তেজনা রয়েছে। বিপরীতে, পিপলস অ্যালায়েন্স ‘তুর্কিয়ের শতাব্দী’ উন্মোচন করেছে যেখানে ভবিষ্যতের জন্য তার দৃষ্টিভঙ্গি, পররাষ্ট্র নীতি, জাতীয় নিরাপত্তা এবং শক্তিশালী প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার কথা রয়েছে। অধিকন্তু, ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রেসিডেন্ট এরদোগানের কূটনৈতিক সাফল্য ভোটারদের প্রশংসা অর্জন করেছে। অবশ্যই, পররাষ্ট্র নীতি, জাতীয় নিরাপত্তা এবং প্রতিরক্ষায় সরকারের সাফল্য ভোটারদের ওপর ন্যূনতম প্রভাবশালী বলে মনে হতে পারে।

অনেকে মনে করছেন, একটি অস্পষ্ট বৈদেশিক নীতির দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করে বিরোধী গ্রুপ স্পষ্টভাবে স্বীকার করেছে যে এই জোট এরদোগানের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবে না। ডেমোক্রেসি অ্যান্ড প্রগ্রেস পার্টি চেয়ারপারসন আলী বাবাকান গর্বিতভাবে বলেছেন যে, তাদের নীতি দলিল ইউরোপীয়দের প্রকাশ্যে স্বীকার করতে প্রভাবিত করবে যে বিরোধীদের প্রধান উদ্বেগ পশ্চিমের মতো অভিন্ন। প্রকৃতপক্ষে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পশ্চিমা মিডিয়ায় তুরস্ক সম্পর্কে ছাপানো বিভিন্ন সমালোচনার প্রতিক্রিয়া হিসাবে বিরোধীরা তুর্কি পররাষ্ট্র নীতির জন্য ক্ষমা চেয়েছে বলে মনে হচ্ছে। এই অভিযোগগুলোর মধ্যে রয়েছে এরদোগানের তুরস্কের পশ্চিম থেকে দূরে সরে যাওয়া, ন্যাটো মিত্রদের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি করা, এর প্রতিবেশী অঞ্চলে কঠোর শক্তি ব্যবহার করা এবং এর বৈদেশিক নীতির সামরিকীকরণের মতো বিষয়।


বিরোধীদের বিশ্বাস যে তুরস্ক শুধুমাত্র আলোচনার মাধ্যমে পশ্চিমের সাথে উত্তেজনা কমাতে পারে। বিপরীতে, এরদোগান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ন্যাটো এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের সম্পর্ক তার সমকক্ষদের সাথে আলোচনায় দুই দশকের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে তৈরি করেছেন। প্রকৃতপক্ষে, দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের সমতার প্রতি এরদোগানের প্রতিশ্রুতির কারণে তুরস্ক তার মিত্রদের সাথে উত্তেজনা অনুভব করে।

স্পষ্টতই, তুরস্ক পিকেকে এবং গুলেনপন্থীদের আশ্রয় দেওয়া দেশগুলোর সাথে দ্বিমত পোষণ করেছে। সরকার এজিয়ান এবং পূর্ব ভূমধ্যসাগরে গ্রিসের সর্বোচ্চ দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে। সিরিয়া এবং লিবিয়াতে, এটি তার গুরুত্বপূর্ণ স্বার্থ রক্ষার জন্য কঠোর শক্তির আশ্রয় নিয়েছে। সব প্রাতিষ্ঠানিক প্রক্রিয়া ব্যর্থ হলে এরদোগান নেতা থেকে নেতার কূটনীতিতে যুক্ত হন। আন্তর্জাতিক সংকটের মুখে, তিনি তার বিশাল অভিজ্ঞতার সাহায্যে নিজেকে একজন নেতা হিসাবে আলাদা করে তুলে ধরেছেন।

দুরান মনে করেন, যারা বর্তমানে পশ্চিমাদের বলছে যে তারা রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে পশ্চিমাদের পাশে থাকতে চায়, তারা একটি বিপজ্জনক খেলা খেলছে। পশ্চিমের সাথে সম্প্রীতির নামে তুর্কি কৌশলগত স্বায়ত্তশাসনকে ক্ষুণ্ণ করা হলে জ্বালানি ও নিরাপত্তা ঝুঁকি বাড়বে। তা না করা হলে, পশ্চিমা জোটকে নতুন তুর্কি বাস্তবতাকে স্বীকৃতি দিতে হবে।

তুরস্কে জোট সরকারের রেকর্ড খুব বেশি শক্তিশালী নয়। ১৯৫০ সালে তুরস্কের বহুদলীয় গণতন্ত্রে রূপান্তরের পর থেকে কোনো জোট সরকার তার মেয়াদ পূর্ণ করতে পারেনি। এ কারণে রাজনৈতিক স্থিতি এবং অর্থনৈতিক ধারাবাহিকতার প্রতি তুর্কিরা এবার গুরুত্ব দিতে পারে। এর পাশাপাশি তুরস্কের বর্তমান নেতৃত্ব নিজস্ব শক্তিমত্তা সৃষ্টির যে পররাষ্ট্র কৌশল নিয়েছে সেটির প্রতি বৃহত্তর তুর্কি জনগোষ্ঠীর সমর্থন লক্ষ করা যায়। এছাড়া তুরস্কের প্রতিবেশী দেশগুলো এবার মধ্যপ্রাচ্যে শাসন পরিবর্তনে পাশ্চাত্যের টুলস হিসাবে ব্যবহার হবে বলে মনে হচ্ছে না। এসব বিবেচনায় এরদোগানের সামনে প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে সফলভাবে নতুন নির্বাচনী চ্যালেঞ্জ উত্তরণের।
mrkmmb@gmail.com


আরো সংবাদ



premium cement
জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় বাংলাদেশের প্রয়োজন ৫৩৪ বিলিয়ন ডলার : পরিবেশমন্ত্রী সাকিবকে ডিপিএলে চান বিসিবি প্রধান নির্বাচক কাতারের সাথে যৌথ বাণিজ্য কাউন্সিল গঠনে এফবিসিসিআইয়ের চুক্তি টি-২০ খেলতে সিলেটে পৌঁছেছে ভারতীয় নারী ক্রিকেট দল খুলনায় হিটস্ট্রোকে এক ব্যক্তির মৃত্যু ভারতের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে কী বলল যুক্তরাষ্ট্র? জিম্বাবুয়ে সিরিজের জন্য বাংলাদেশের প্রাথমিক দল ঘোষণা বৃষ্টির জন্য রাজশাহীতে ইসতিসকার নামাজ আদায় গাজীপুরে মহাসড়কের পাশ থেকে মৃত হাতি উদ্ধার প্রচণ্ড গরমের মধ্যে লোডশেডিং ১০০০ মেগাওয়াট ছাড়িয়েছে দুই ভাইকে পিটিয়ে হত্যা : প্রতিবাদ সমাবেশে পুলিশের গুলির নিন্দা জামায়াতের

সকল