২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

প্রিয়তম বন্ধুদেশের নববর্ষের উপহার!

লেখক ড. এ কে এম মাকসুদুল হক। - ছবি : নয়া দিগন্ত

গত ৩১ ডিসেম্বর দিবাগত রাতে লালমনিরহাটের পাটগ্রাম সীমান্তে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষীবাহিনী বিএসএফের গুলিতে বিপুল হোসেন (২১) নামে এক বাংলাদেশী গরুর রাখাল নিহত হয়েছেন। জানা যায়, নিহত বিপুল হোসেন প্রায় ১০ জন সঙ্গীসহ ভোর ৪টার দিকে বুড়িমারী এলাকায় ৮৪৩ নম্বর মেইন পিলারের কাঁঠালের মুড়া সীমান্ত দিয়ে গরু আনতে ভারতে প্রবেশের সময় কুচবিহার ৯৮ বিএসএফ ব্যাটালিয়নের সদস্যরা গুলি করে। বুলেট বিপুলের বুকে বিদ্ধ হলে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। সঙ্গীরা তাকে বাংলাদেশে নিয়ে এলে তার মৃত্যু হয়। (ডেইলি স্টার, ২ জানুয়ারি ২০২৩)

এটিই ছিল আমাদের নিকটতম প্রতিবেশী প্রিয়তম বন্ধুদেশ ভারতের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের জন্য ২০২৩ সালে নববর্ষের উপহার! এর ঠিক এক দিন আগে ৩০ ডিসেম্বর ভোররাতে একই জেলার হাতীবান্ধা উপজেলা সীমান্তে কয়েকজন বাংলাদেশী গরু আনতে গেলে বিএসএফের গুলিতে নাজির হোসেন (৪০) এবং সাদিক হোসেন (২৩) নিহত হয়েছিলেন। আবার ৩১ ডিসেম্বর সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ সীমান্তে বিকেল ৪টায় লাকড়ি সংগ্রহ করতে গিয়ে বাংলাদেশী নাগরিক জৈন উদ্দিন (২০) ভারতীয় খাসিয়াদের গুলিতে ঘটনাস্থলেই মারা যান। এরপর গত ১৩ জানুয়ারি সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার বড়ছড়া সীমান্তে এক বৃদ্ধা পাহাড়ি ছড়ায় পাথর তুলতে গিয়ে সীমান্তের ভারতীয় অংশে ঢুকে পড়লে বিএসএফের এক সদস্য তাকে পিটিয়ে আহত করে। এতে গ্রামবাসী ঘটনাস্থলে এসে প্রতিবাদ করলে বিএসএফের ১৫-২০ জনের একটি সশস্ত্র দল বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে গুলি চালায়। ফলে দেলোয়ার (২৮) পেটে গুলিবিদ্ধ হয় এবং সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। বাংলাদেশের মানবাধিকার সংস্থার ‘আইন ও সালিসকেন্দ্রে’ হিসাব মতে, গত বছরের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশের বিভিন্ন সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে ১২ জন বাংলাদেশী নিহত ও ১৩ জন আহত হয়েছেন এবং আরো আটজন বিএসএফের অপহরণের শিকার হয়েছেন। (নয়া দিগন্ত, ৩০ ডিসেম্বর ২০২২) জানা যায়, ২০০০ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত দুই দশকে এক হাজার ২৩৬ জন বাংলাদেশী নাগরিক বিএসএফের হত্যার শিকার হয়েছেন। সবচেয়ে বেশি ৬৬ জনকে হত্যা করা হয়েছিল ২০০৯ সালে যখন ভারতবান্ধব বলে পরিচিত আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করেছিল। এমনকি ২০২০ সালে করোনা মহামারীর মধ্যেও ৫১ জন বাংলাদেশী নাগরিক বিএসএফের হাতে নিহত হন। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর ও বর্বর সীমান্ত হয়ে উঠেছে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত।

ভারতের বিএসএফের সীমান্ত হত্যাকাণ্ডের সবচেয়ে হৃদয়বিদারক ঘটনা ছিল ফেলানী হত্যাকাণ্ড। ২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী সীমান্তে ফেলানী নামের ১৫ বছরের কিশোরীকে নৃশংসভাবে গুলি করে হত্যা করে মানবাধিকারের সব সীমা লঙ্ঘন করেছিল ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী। কুড়িগ্রাম জেলার নাগেশ^রী উপজেলার দক্ষিণ কালোনিটারি গ্রামের নুরুল ইসলাম ইটভাটায় কাজ করার জন্য ভারতের বঙ্গাইগাঁও এলাকায় সপরিবারে থাকতেন। বড় মেয়ে ফেলানীর বিয়ে ঠিক করে বিয়ের কাজ সম্পন্ন করার জন্য তাকে নিয়ে নুরুল ইসলাম বাংলাদেশে রওনা হন। উত্তর অনন্তপুর সীমান্তে ৯৪৭/৩ নম্বর পিলারের পাশে বাঁশের মই দিয়ে কাঁটাতারের বেড়া বাবা নুরুল ইসলাম পার হয়ে যান। কিন্তু মেয়ে ফেলানী পার হতে গেলে ভারতীয় চৌধুরীহাট ক্যাম্পের টহলরত বিএসএফ সদস্য ‘অমিয় ঘোষ’ তাকে গুলি করে হত্যা করে। নিহত ফেলানীর জামা কাঁটাতারে আটকে লাশ ঝুলে যায় এবং পরবর্তী পাঁচ ঘণ্টা এভাবেই ঝুলে থাকে। ফেলানীর মৃতদেহের ঝুলন্ত লাশের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয় এবং বিশ্বব্যাপী তীব্র সমালোচনার ঝড় উঠলে ২০১৩ সালের ১৩ আগস্ট ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহার জেলায় বিএসএফের ১৮১ সদর দফতরের জেনারেল সিকিউরিটি ফোর্সেস আদালতে ফেলানী হত্যার বিচার কাজ শুরু হয়। পরে ৫ সেপ্টেম্বর হত্যাকারী বিএসএফ সদস্য অমিয় ঘোষকে বেকসুর খালাস দেয়া হয়। ফেলানীর বাবা এ রায় প্রত্যাখ্যান করে ভারতীয় হাইকমিশনারের মাধ্যমে ভারত সরকারের কাছে ন্যায়বিচারের আবেদন জানার। ফলে ২০১৪ সালের ২২ সেপ্টেম্বর আবার বিচারকাজ শুরু হয়। বিচারকার্য শেষে ২০১৫ সালের ২ জুলাই আদালত আবারো অমিয় ঘোষকে বেকসুর খালাস দেন। ২০১৫ সালে বাংলাদেশের ‘আইন ও সালিশ কেন্দ্র’ এবং ভারতের ‘মানবাধিকার সুরক্ষা মঞ্চ’ (মাসুম) একটি ক্ষতিপূরণ মামলা করে। সেই সাথে ভারতের জাতীয় মানবাধিকার কমিশন সে দেশের সরকারকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে পাঁচ লাখ রুপি ফেলানীর পরিবারকে দেয়ার অনুরোধ করে। কিন্তু সে দেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ফেলানীর বাবাকে দায়ী করে বক্তব্য দেয়। ফলে মানবাধিকার সংগঠন ‘মাসুম’ ফেলানীর বাবার পক্ষে ভারতীয় সুপ্রিম কোর্টে রিট আবেদন করলে ২০১৫ সালের ৬ অক্টোবর রিটের শুনানি শুরু হয়। কিন্তু কয়েক দফা পিছিয়ে আজ পর্যন্ত সেই শুনানি সম্পন্ন হয়নি। অর্থাৎ এক যুগ পেরিয়ে গেলেও ফেলানী হত্যা মামলার সুষ্ঠু কোনো সুরাহা করা হয়নি।

এখানে প্রশ্ন আসে, তারকাঁটার বেড়া পারাপারের জন্য বাঁশের মই নিশ্চয়ই ভারতীয় অংশেরই কোনো চক্র ব্যবস্থা করে দিয়েছিল। সেই মই সরবরাহকারী কোথায়? সে বা তারা কেন ধরাছোঁয়ার বাইরে? ফেলানী হত্যার সুবিচার না হওয়াটা বিএসএফের জন্য একটি মাইলফলক হিসেবে কাজ করছে। অমিয় ঘোষ এককভাবে ফেলানীকে গুলি করে হত্যার দায়ে সুনির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত হয়েও আদালতে বেকসুর খালাস পেয়েছেন। ফলে বিএসএফের অন্য সদস্যরা এতে উৎসাহিত হয়ে পড়েছে। তারা এখন ‘ট্রিগারহ্যাপি’ বাহিনীতে পরিণত হয়েছে বাংলাদেশ সীমান্তে। এটা তো স্পষ্টতই দুর্বলের ওপর সবলের অত্যাচার। নইলে পাকিস্তান ও চীন সীমান্তে এভাবে ভিনদেশের নাগরিককে যথেচ্ছ হত্যার দুঃসাহস ভারত কখনো দেখাতে পারে না কেন? এভাবে সীমান্তে বাংলাদেশী হত্যার পেছনের উৎসাহদানকারী হিসেবে কাজ করছে ভারতের আদালত। ভারতীয় আদালতের এ ধরনের একদেশদর্শী অন্যায় রায় নতুন নয়। ভারতের বাবরি মসজিদ ভাঙা বিষয়ে রায়, গরুর গোশত খাওয়ার অপরাধে হিন্দু জাতীয়তাবাদীদের হাতে মুসলমান হত্যার বিচারের রায়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সংবিধান ভঙ্গ করে মুসলমানদের হিজাববিরোধী নির্দেশিকার বিরুদ্ধে বিচারে টালবাহানা, মুসলমান নারী বিলকিস বানুকে ধর্ষণের দায়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত গণধর্ষকদের মুক্তি দেয়া ইত্যাদি সর্বক্ষেত্রেই ভারতীয়রা মূলত মুসলমানবিরোধী আচরণই প্রদর্শন করেছে। এ ছাড়াও ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকারের বিভিন্ন শীর্ষ নেতার বাংলাদেশবিরোধী বক্তব্য প্রদান এবং প্রচার-প্রচারণা বিএসএফ সদস্যদের বাংলাদেশী নাগরিক হত্যায় সাহস ও শক্তি জোগাচ্ছে। এক দিকে ভারতের আইন-আদালত, ক্ষমতাসীন দলের নেতা ও বিএসএফ কর্মকর্তারা বাংলাদেশ সীমান্তে বিএসএফ সদস্যদের ‘দেখামাত্র গুলি’র নীতির ব্যাপারে চোখ বন্ধ করে থাকছেন; অন্য দিকে প্রতিনিয়ত প্রতিটি আনুষ্ঠানিক বক্তব্য বিবৃতিতে তারা সীমান্ত হত্যা শূন্যের কোটায় নিয়ে আসার আশ্বাস দিচ্ছেন। ভারতের প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে বাংলাদেশে ভারতের হাইকমিশনাররা এমনকি বিএসএফ কর্মকর্তারাও একের পর এক প্রতি বছরই আশ্বাস দিচ্ছেন। কিন্তু সীমান্ত হত্যা আর বন্ধ হয় না; বরং হত্যাকাণ্ড রুটিনমাফিকই চলছে। প্রতি বছর তারা বলে যাচ্ছেন, বাংলাদেশের সাথে ভারতের সম্পর্ক সর্বোচ্চ পর্যায়ে রয়েছে এবং থাকবে। এমনকি এমনও ঘটনা ঘটেছে, বিজিবি ও বিএসএফ মহাপরিচালক পর্যায়ে সীমান্ত সম্মেলনে বিএসএফের মহাপরিচালক ‘সীমান্ত হত্যা’ শূন্যের কোটায় নিয়ে আসার প্রতিশ্রুতি দেয়ার পরদিনই একই রকম সীমান্ত হত্যার ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। তা হলে এই সর্বোচ্চ পর্যায়ের সম্পর্কের ব্যারোমিটার কী হতে পারে? শুধুই কি সরকার টু সরকার সম্পর্ক? শুধুই কি ভারতকে বিভিন্ন সুবিধা দেয়ার সম্পর্ক? জনগণের সাথে কি এর কোনো যোগসূত্র নেই? এটিই কি আমাদের রক্তের রাখিবন্ধনের বা স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক?

এতদিনে এটি পরিষ্কার, বিএসএফ কর্তৃক সীমান্ত হত্যা দ্বিপক্ষীয়ভাবে মৌখিক বা কূটনৈতিক পদক্ষেপে শেষ হবে না। ভারতীয় নেতারা ও কর্মকর্তারা এভাবে একদিকে কূটনৈতিক আশ্বাস দিয়ে যাবেন, অন্যদিকে হত্যাকাণ্ড চালিয়েই যাবেন। কাজেই এসব হত্যাকাণ্ড রোধে আমাদের সরকারকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। কারণ, সীমান্ত হত্যার দায় এবং এর নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া আমাদের সরকারকেই বহন করতে হচ্ছে। এটিকে সমালোচকরা সরকারের অসহায়তা বা হত্যাকাণ্ড বন্ধে সুদৃঢ় ইচ্ছার অভাব বলে মনে করতে পারেন। অর্থাৎ নাগরিকদের প্রতি সরকারের দায়বদ্ধতার ঘাটতির কথাই সমালোচকরা বলতে চান। আমরা ইতোমধ্যে ভারতের চাওয়া-পাওয়ার সবই মিটিয়ে দিয়েছি, তিস্তা-ফারাক্কায় পানি না পেলেও ফেনী নদীর পানি দিয়ে দিয়েছি। নেপাল ভূটানে বাণিজ্য করার জন্য মাত্র ৫২ কিলোমিটার ট্রানজিট না পেলেও আমাদের দেশের বুক চিরে চারদিক থেকে ভারতের এপার থেকে ওপারে মাল পরিবহনের জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছি। নদীবন্দর দিয়েছি। উত্তর-পূর্ব ভারতের সাত রাজ্যের নিরাপত্তার বিষয়ে তাদের প্রচণ্ড শিরঃপীড়া দূর করে দিয়েছি। আমরা বাংলাদেশ স্বাধীন না করলে এ অঞ্চলের চার হাজার কিলোমিটারের বেশি সীমান্ত অঞ্চল পাকিস্তানের কার্গিল বা চীনের লাদাখ সীমান্তের মতোই ভয়াবহ রকম উত্তপ্ত ও অস্থির থাকতে পারত। আমাদের বাংলাদেশের বদান্যতায়ই তাদের এই চার হাজার কিলোমিটার সীমান্ত নিরাপত্তার জন্য বছরে কোটি কোটি ডলার খরচ করে সেনা, সরঞ্জাম ও রসদ মোতায়েন করতে হয় না। সত্যিকারার্থে, আমাদের স্বাধীনতায় বিশ্বের দ্বিতীয় সবচেয়ে বড় বেনিফিশিয়ারিই হলো ভারত। ভারতের লাখ লাখ নাগরিক আমাদের দেশ থেকে ভারতের চতুর্থ বৃহত্তম রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছে। কাজেই এখানে ভারতের সাথে দরকষাকষির যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে আমাদের। এত কিছুর পরও কেন প্রতিনিয়ত আমাদের সীমান্তের হতদরিদ্র মানুষগুলো সীমান্তে কাঠ সংগ্রহ করতে গিয়ে বা দুই পারের চোরাকারবারি ব্যবসায়ীদের গরু পারাপার করতে গিয়ে বিনাবিচারে অমানবিকভাবে হত্যার শিকার হবে? এসব প্রশ্ন শক্তভাবে ভারতের সামনে উত্থাপন করতে হবে?

একটি সভ্য দেশ হিসেবে জাতিসঙ্ঘের সদস্যরাষ্ট্র হিসেবে ভারত আন্তর্জাতিক সীমান্তে অনিয়মিত অভিবাসীদের মানবাধিকার নিশ্চিত করতে বাধ্য। ভারতকে জাতিসঙ্ঘ পরিষদের ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত ৬৯তম সাধারণ অধিবেশনে উপস্থাপিত সনদ (অ/৬৯/২৭৭) মোতাবেক আন্তর্জাতিক সীমান্তে সীমান্ত লঙ্ঘনকারী মানুষের মানবাধিকার সংক্রান্ত নীতিমালা ও নির্দেশিকা মেনে চলতে হবে। জাতিসঙ্ঘ প্রণীত ওই গাইডলাইনে বলা হয়েছে- (https://www.ochr.org/sites/dsfaull/files/documents/issue/migration/OHCHR Recommeded Principles Guidelines.pdf)

ক. অনিয়মিতভাবে কোনো ব্যক্তির অন্য দেশের সীমান্তে প্রবেশ করলে বা প্রবেশের চেষ্টা করলে তাকে ক্রিমিন্যাল অফেন্স হিসেবে বিবেচনা করা যাবে না।
খ. এ ধরনের সীমান্ত চোরাকারবারি বা অনিয়মিত সীমান্ত অতিক্রমকারীদের ওপর বল প্রয়োগের ক্ষেত্রে তা অবশ্যই অপরাধের সমানুপাতিক হতে হবে।
গ. সীমান্তের কর্তাব্যক্তিদের ক্ষমতা প্রয়োগের বিষয়টি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের মাধ্যমে স্বচ্ছভাবে সংজ্ঞায়িত হতে হবে।
ঘ. সীমান্তরক্ষীর শক্তি প্রয়োগ, মারণাস্ত্র অথবা অন্যান্য অস্ত্র বহন অবশ্যই আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের মাধ্যমে পরিচালিত হতে হবে এবং শক্তির অপপ্রয়োগ বা অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগের কার্যক্রম যথাযথভাবে আইনের মাধ্যমে পরিচালিত করতে হবে।
ঙ. আন্তর্জাতিক সীমান্তে যেকোনো অনুপ্রবেশকারীর ওপর সংঘটিত যেকোনো ধরনের অতিরিক্ত বল প্রয়োগ অথবা মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা তদন্তসাপেক্ষে বিচারের আওতায় আনতে হবে।

ভারত সরকার এই নীতিমালার প্রতি সম্মান প্রদর্শন না করলে এ বিষয়ে আমাদের জাতিসঙ্ঘে যেতে হবে সীমান্তে মানবাধিকারচর্চা নিশ্চিত করার জন্য। একই সাথে আমাদের কাছে অনেক দ্বিপক্ষীয় টুলস রয়েছে যেগুলো আমরা ব্যবহার করতে পারি। আঞ্চলিক ভূরাজনীতিরও অনেক উপাদান আমাদের হাতে রয়েছে ভারতের সাথে বোঝাপড়া করার জন্য। তা ছাড়া দ্বিপক্ষীয় ভালোবাসা ও প্রেমপ্রীতি তো রয়েছেই। সব সুযোগকে কাজে লাগিয়ে আমাদের সীমান্ত হত্যা বন্ধ করতে হবে। সীমান্তে রাখাল, কৃষকসহ হতদরিদ্র মানুষগুলো যারা হত্যার শিকার হচ্ছেন, তাদের আত্মীয়স্বজন ও এলাকাবাসীর সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন-ধর্মঘট করার শক্তি ও সাহস কোনোটাই নেই। কিন্তু তাদের নির্বিচারে বর্বরোচিতভাবে নিহত হওয়ার বিষয়টি গোটা বাংলাদেশের নাগরিকদের আহত করে, কষ্ট দেয় যা দেশের সরকারের ভাবমর্যাদা ও সমর্থনের বিপক্ষে যায় এবং একটি নেতিবাচক পারসেপশন তৈরিতে শক্তি জোগায়। কাজেই বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন সরকারকে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতেই হবে। তবে যত দিন আমাদের দেশের ভীষণভাবে বিভাজিত রাজনীতির ঐক্য না ঘটবে, যত দিন আমরা আমাদের নিজেদের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে ভারতের হস্তক্ষেপ বন্ধ না করব; তত দিন পর্যন্ত আমরা সীমান্তে বিএসএফের বাংলাদেশী নাগরিক হত্যা বন্ধ করার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপগুলো নিতে সক্ষমতা অর্জন করতে পারব না।

লেখক : নিরাপত্তা বিশ্লেষক
Email: maksud2648@yahoo.com


আরো সংবাদ



premium cement