২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

উম্মাহর বিরোধ আর কতদিন

উম্মাহর বিরোধ আর কতদিন - প্রতীকী ছবি

মুসলিম উম্মাহর দু’টি প্রধান বলয় সুন্নি ও শিয়া জনপদ। তাদের মধ্যকার বিরোধ নিয়ে মুসলিম বিশ্ব ক্ষত-বিক্ষত। পশ্চিমা মিডিয়া বহুদিন ধরে মধ্যপ্রাচ্য ও এশিয়ার রাজনীতিকে ইরানের শিয়াইজম, সৌদি আরবের সালাফিজম ও সুন্নি মুসলমানদের মধ্যকার রাজনীতি ও সম্পর্ককে একটি আকার দেয়ার চেষ্টা করছে। ইজমের চরম ভাবধারা বাদ দিয়ে একটি মধ্যপন্থী ইসলাম ও গণতান্ত্রিক রাজনীতি চর্চার মূল ধ্যানধারণার জটিল ও বহুস্তরীয় কারণগুলোর সহজ ব্যাখ্যা দেয়ার প্রয়াস চালানো হচ্ছে। বৈশ্বিক শক্তিগুলো লক্ষ্য করেছে, মধ্যপ্রাচ্যে সুন্নি ও শিয়া মুসলমানদের মধ্যে বিভক্তি চৌদ্দ শ’ বছরের পুরনো, তাদের মধ্যে যে বিরোধ ছিল তা আশ্চর্যজনকভাবে আজো অব্যাহত। যদিও বিরোধ ধর্ম নিয়ে নয়- শাসনভার ও ক্ষমতা নিয়ে।

২০১৪ সালে ইরাকে যুদ্ধোত্তর সঙ্ঘাতের ব্যাখ্যা দিতে ওয়াশিংটন পোস্ট একটি ভিডিওতে দেখিয়েছে, শত শত বছর আগে সুন্নি ও শিয়াদের মধ্যে বিভক্তি ও পারস্পরিক ঘৃণার কথা। একইভাবে নিউ ইয়র্ক টাইমস ২০১৬ সালে মধ্যপ্রাচ্য সঙ্ঘাতকে শিয়া-সুন্নির জটিল সম্পর্কের ফসল হিসেবে বর্ণনা করেছে। টমাস ফ্রিডম্যান, যিনি একজন সাংবাদিক ও মধ্যপ্রাচ্য নিয়ে কাজ করেন, বলেছেন, রাসূল সা:-এর সঠিক উত্তরাধিকারী কারা তা নিয়েই মূল দ্ব›দ্ব। তিনি মনে করেন, ইয়েমেনের যুদ্ধের ক্ষেত্রেও এটি কাজ করেছে। যদি তা সত্য হয় তবে হয়তো ইয়েমেন যুদ্ধ আর সহজে শেষ হচ্ছে না। সপ্তম শতাব্দীর সঙ্ঘাতের মতো তা দীর্ঘস্থায়ী ধ্বংসাত্মক হবে। ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল মনে করে, রাজনৈতিক বিরোধ হলেও এটি মূলত ইসলামের কেন্দ্রীয় মতাদর্শগত বিভাজন থেকেও উদ্ভূত। এভাবে বড় বড় পত্রিকাগুলো মধ্যপ্রাচ্য ও মুসলমানদের সঙ্ঘাতের পেছনে শিয়া-সুন্নি বিরোধ ও মারদাঙ্গা মনোভাবকে দায়ী করেছে এবং নিজেদের পররাষ্ট্রনীতির ধারায় অন্যতম একটি উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করছে।

২০১৭ সালের নভেম্বরে লেবাননের প্রধানমন্ত্রী সাদ আল-হারিরির পদত্যাগের পর, সৌদি আরবের সুন্নি কিংডম ও ইরানের শিয়া প্রজাতন্ত্রের মধ্যে একটি সঙ্কটের হাইওয়ে তৈরি হয়। মধ্যপ্রাচ্যের বিষয়গুলোর রাজনৈতিক বিশ্লেষণ প্রায় সবসময়ই শিয়া রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সুন্নি রাষ্ট্রগুলোর সঠিকতা ও বড়ত্বকে তুলে ধরা হয়। এই বিশ্রী ও নির্বোধ ইস্যু থেকে বের হয়ে আসা তাই খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

একটি অধর্মীয় বিভাজন মধ্যপ্রাচ্য ও মুসলিম দেশগুলোতে সঙ্ঘাতের পুনরুত্থানে সহায়তা করছে। সুন্নি ও শিয়ার মধ্যকার সংগ্রাম সিরিয়ার গৃহযুদ্ধকে প্রশ্রয় দিয়েছে যা মধ্যপ্রাচ্যের মানচিত্র পাল্টে দেয়ার হুমকিতে পৌঁছে গেছে। ইরাক ভাঙার সহিংসতা উৎসাহিত করেছে, বেশ কয়েকটি উত্তেজনাপূর্ণ উপসাগরীয় দেশে ফাটল প্রশস্ত করেছে। ক্রমবর্ধমান সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষ আন্তঃদেশীয় জিহাদি নেটওয়ার্কগুলোর পুনরুজ্জীবনের সূচনা করেছে। পশ্চিমা থিংক ট্যাংক ও পশ্চিমা মিডিয়া আউটলেটগুলোর মধ্যে যেন একটি প্রতিক্রিয়ার লুপ রয়েছে, যেটি বাস্তবতা ও বিশ্লেষণ পদ্ধতির মধ্যে সংযোগ তৈরি করেছে।

অনেকে আবার মনে করেন, শিয়া-সুন্নি ইস্যু শুধু একটি দ্ব›েদ্বর সাপোর্ট তৈরি করে, এর বেশি নয়, দ্ব›দ্ব ও বিরোধের মূল বিষয় অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অন্য ইস্যুগুলো যেমন- নিপীড়ন, অবিচার, বৈষম্য, সুযোগ ও সম্পদের অসম প্রবেশাধিকার, বেমানান ও অযৌক্তিক আঞ্চলিক দাবি ইত্যাদি।

কয়েকটি দেশের পরিসংখ্যান বিভক্তি বুঝতে সহায়তা করবে; যেমন- লেবাননে ৩.৮ মিলিয়ন জনসংখ্যার ৩৮ শতাংশ শিয়া, ২৩ শতাংশ সুন্নি। ফিলিস্তিনে ২.৮ মিলিয়ন জনসংখ্যার ৯৮ শতাংশ সুন্নি, শিয়া নগণ্য। সৌদি আরবে ২৪ মিলিয়ন জনসংখ্যার ৯০ শতাংশ সুন্নি, ১০ শতাংশ শিয়া। ইরাকে ২৭ মিলিয়ন জনসংখ্যার ৬৩ শতাংশ শিয়া ও ৩৪ শতাংশ সুন্নি। ইরানে ৭০ মিলিয়ন জনসংখ্যার ৮৯ শতাংশ শিয়া ও ৯ শতাংশ সুন্নি। সিরিয়ায় ১৯.৯ মিলিয়ন জনসংখ্যার ৭৪ শতাংশ সুন্নি ও ১৫ শতাংশ শিয়া।

সুন্নি-শিয়া প্রিজম সুনির্দিষ্ট সংজ্ঞা ছাড়া বিভ্রান্তিকর ধারণা। এটিকে বিভেদের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার সঠিক নয়। এটি আরো অস্পষ্টতা তৈরি করে এবং ২০০৩ সালের পর ইরাকের মতো দুঃখজনক মানবিক পরিণতির সাথে ভুলের দিকে পরিচালিত করে। তারপরও এটি বারবার ব্যবহার করা হয়েছে। আমরা কি আসলেই শিয়া ও সুন্নির একটি সার্বজনীন সংজ্ঞা এবং তার ব্যবহারিক দিকের আকার তৈরি করতে সক্ষম? একই কুরআন ও সুন্নাহর ভেতরে কারা এই বিভাজন তৈরি করল? মৃত্যুর পর প্রথম প্রশ্ন হবে, তোমার দ্বীন কি? উত্তরটি কি আমাদের জানা আছে? বিভক্ত উম্মাহ ঐক্যবদ্ধ না হলে ইয়েমেন, সিরিয়া, লেবানন, কুর্দি, ইরাক, ইরান, বাল্টিস্তান, আফগানিস্তান, ওয়াজিরিস্তান, কাজাকিস্তানসহ আরো অনুরূপ দেশে যে সঙ্ঘাত চলমান রয়েছে তা চলতে থাকবে, গোলামির সঙ্কট দূরীভ‚ত হবে না। এসব বিভেদ মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়াতেও সক্রিয়, সেখানেও যেকোনো সময় দাবানল জ্বলতে পারে।

মধ্যপ্রাচ্যে রাজনীতি, স্বার্থ, পরিচয়, ক্ষমতার বণ্টন, প্রতিযোগিতা, শেখডোম ও সঙ্ঘাতের মিডিয়া বিশ্লেষণে এই বিভেদকে অপ্রয়োজনীয় বিভ্রান্তিকর বলেই মনে হয়। সাম্প্রদায়িকতা, শিয়া ও সুন্নিবাদ ব্যবহার করে এমন যেকোনো কাভারেজকে উপেক্ষা করা আমাদের পক্ষে ভালো। প্রাচীন ঘৃণা, ঐতিহাসিক অভিযোগ বা সমষ্টিগত সুন্নি-শিয়া স্মৃতির মূলে সমসাময়িক আঞ্চলিক দ্ব›দ্বকে উপস্থাপন করে এমন সব আখ্যানকে আমাদের প্রত্যাখ্যান করা উচিত।

আরব বিশ্বজুড়ে সুন্নি ও শিয়া মুসলমানদের মধ্যে সংঘর্ষ বিশ্বজুড়ে সঙ্ঘাতের অন্যতম কারণ। এটি বিভিন্ন দেশে বছরের পর বছর ধরে চলছে। সাদ্দাম হোসেনের ফাঁসি সমস্যাটিকে একটি নতুন স্তরে নিয়ে যায়। সুন্নিরা তাদের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উৎসব ঈদুল আজহার প্রাক্কালে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের সময়কে ইচ্ছাকৃতভাবে অপমান হিসেবে দেখেছিল, অপর দিকে বিশ্বব্যাপী শিয়ারা সাদ্দামের মৃত্যুকে উদযাপন করেছে, বলেছে একজন নিপীড়ক বিদায় নিয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং পশ্চিমা বিশ্ব এ পরিস্থিতি স্থিতিশীল করার চেষ্টায় রত, যা তারা নিজেরাই তৈরি করতে প্রধান ভ‚মিকা পালন করেছিল। জর্দানের বাদশাহ আব্দুল্লাহ সতর্ক করে বলেছিলেন, এই অঞ্চলজুড়ে একটি ‘শিয়া ক্রিসেন্ট’ স্থাপন করা হয়েছে। তিনি ইরাকে ইরানের ক্রমবর্ধমান প্রভাব, লেবাননে হিজবুল্লাহর প্রতি ইরানের সমর্থন এবং তেহরান ও সিরিয়ার মধ্যে শক্তিশালী জোটের কথা উল্লেখ করেছিলেন। ইরাকে দু’টি সমান্তরাল যুদ্ধ চলছিল- একটি আমেরিকান নেতৃত্বাধীন দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ, অন্যটি সাম্প্রদায়িক যুদ্ধ। দ্বিতীয়টি এখনো শাখা-প্রশাখায় পল্লবিত। আট বছর ধরে চলা ইরাক-ইরান যুদ্ধ একটি সুন্নি-শিয়া সঙ্ঘাত ছিল। যার অর্থনৈতিক দুর্ভোগ এখনো দু’টি দেশকে তাড়িত করছে।

মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য চ্যালেঞ্জ হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ অনেক বিষয় রয়েছে, সবচেয়ে বড় ও সবচেয়ে কঠিন শিয়া ক্রিসেন্ট ইস্যু। তেহরানের জ্ঞানী আয়াতুল্লøাহরা এটিকে বিচক্ষণতার সাথে ভাসাতে সক্ষম হয়েছেন। ইরানি নেতারা আঞ্চলিক প্রভাব প্রসারিত করার জন্য প্রচুর জাতীয় মূলধন-সময়, অর্থ ও কর্মীদের ব্যয় করে চলেছে। ক্রিসেন্ট হলো মাধ্যাকর্ষণের কৌশলগত কেন্দ্র। ইরানি সরকার ও তার ইসলামিক রেভ্যুলিউশনারি গার্ড শিয়া ক্রিসেন্টের উপাদানগুলো সফল করার কাজে ন্যস্ত।

শিয়া ক্রিসেন্ট মূলত লেবানন, সিরিয়া, ইরাক ও ইয়েমেনসহ বিস্তীর্ণ এলাকার শিয়া জনগোষ্ঠী। এখানে ইরান যথাযথভাবে নোঙর করেছে, হিজবুল্লাহ, হামাস, হুথি ও দক্ষিণ ইরাকি মিলিশিয়া গ্রুপগুলোকে সাপোর্ট করছে। এই জনগোষ্ঠী ও আঞ্চলিক দল, মধ্যপ্রাচ্যের বৃহত্তর সুন্নি মুসলিম বলয়কে বিভক্ত করার অভিযোগ রয়েছে। ইরানভিত্তিক দলগুলো ইরানকে এই অঞ্চলজুড়ে সামরিক অভিযান পরিচালনায় সহায়তা করছে।

শিয়া ক্রিসেন্ট-জুড়ে তাদের নীতি পরিচালনায় কাসেম সোলেইমানিসহ অনেক অপারেটরকে নির্মূল করা সত্তে¡ও ইরানিরা এখনো দারুণ সক্রিয়। ক্রিসেন্ট এখনো আমেরিকা ও তার মিত্রদের জন্য চ্যালেঞ্জ। সুন্নিরাও উদ্বিগ্ন, কেননা লড়াই শেষ হয়নি, কিছুই উপেক্ষা করা যায় না। যুদ্ধ ও অবরোধে ইরানকে ঘায়েল করা যায়নি, কোনো আন্তর্জাতিক আলোচনাতেও পরাস্ত করা সম্ভব হয়নি। বারাক ওবামা ইরানের প্রশাসন পরিচালনা করার হাস্যকর প্রচেষ্টা চালিয়েছিলেন। ট্রাম্পও বাগে আনতে না পেরে একতরফা পরমাণু চুক্তি বাতিল করেন এবং কাসেম সোলেইমানিকে হত্যা করে নিজে মিডিয়ায় জানান এবং অজস্র অবরোধের ধারা প্রবাহিত করেন।

শিয়া ও সুন্নিদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়া সঙ্ঘাত অগ্রাধিকারে পরিবর্তন আনবে। এমনকি এটি ফিলিস্তিনের মতো উত্তেজনার ঐতিহাসিক উৎস থেকে মনোযোগ সরিয়ে নিতে পারে। দশকের পর দশক ধরে শান্তিপূর্ণভাবে সহাবস্থান করে আসা সম্প্রদায় ও ধর্মগুলোকে সহিংসতার চক্রে টেনে আনা হচ্ছে। ইরান ও সৌদি আরবের নেতারা এই চাপ অনুভব করছেন। মিসর, সিরিয়া, সুদান ও উত্তর আফ্রিকায় সুন্নিদের শিয়া ধর্মে রূপান্তরিত করার প্রচেষ্টায় ইরানের ভ‚মিকা সৌদি বাদশাহর ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে। সৌদি বাদশাহ এসব বিষয়ে ইরানকে প্রকাশ্যে সতর্ক করে দিয়েছেন। সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আরো স্পষ্টভাবে বলেছে, তেহরানকে হস্তক্ষেপ বন্ধ করতে হবে। ইরান উপসাগরীয় অঞ্চলে শিয়া সংখ্যালঘুদের, বিশেষ করে সৌদি আরব ও কুয়েতের শরণার্থীদের ভবিষ্যৎ নিয়ে ক্রমবর্ধমানভাবে উদ্বিগ্ন। তেহরানও মনে করছে, এ ধরনের সংঘর্ষ থেকে লাভের চেয়ে বেশি কিছু হারানোর আছে।

ইরান উপসাগরীয় দেশগুলোর সাথে, বিশেষ করে সৌদি আরবের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নের চেষ্টা করছে অংশত আমেরিকার ভয়ে। জাতিসঙ্ঘের একটি পরিকল্পিত নিষেধাজ্ঞা তেহরানকে পারমাণবিক ইস্যুতে বহির্বিশ্বের সাথে আচরণে নমনীয়তা দেখাতে প্ররোচিত করছে বলে মনে হয়। ইরানিরা তাদের খেলতে হবে এমন গুরুত্বপূর্ণ কার্ডগুলো ছুড়ে ফেলতে চায় না, যা সুন্নিপ্রভাবিত অঞ্চলে তাদের বিচ্ছিন্নতা আরো বাড়িয়ে তুলবে। এখানেই সুন্নি-শিয়া বিরোধ আসে এবং যেখানে বিভিন্ন দ্ব›দ্ব একে অপরের সাথে সংযুক্ত হয়ে পড়ে। যার যোগফল শেষ পর্যন্ত একটি প্রকাণ্ড শূন্য।

ফিলিস্তিনে হামাস আন্দোলন তেহরানের সাথে সম্পর্ক পুনর্বিবেচনা করতে বাধ্য হবে যদি ইরান ইরাকে শিয়া নেতৃত্বাধীন জোটের প্রতি তার স্পষ্ট সমর্থন অব্যাহত রাখে। জর্দানে মুসলিম ব্রাদারহুডও তাই করবে। লেবাননে যুদ্ধের সময়, হিজবুল্লাহ প্রাথমিকভাবে আরব বিশ্বের প্রধান সুন্নি ধর্মীয় সংগঠনগুলোর সমর্থন পেয়েছিল! কিন্তু এই সমর্থন ভেঙে পড়তে শুরু করেছে। তুরস্কের এরদোগান এই বিরোধটি ভেঙে ফেলার উদ্যোগ নিতে চান। উভয় শিবিরে বার্তা পাঠিয়ে আহ্বান জানিয়েছেন, চৌদ্দ শ’ বছরের বিরোধের ফলাফলটি দেখান।

ইরাকে আমেরিকার পুনর্গঠন কার্যক্রমেও শিয়া-সুন্নি সঙ্ঘাত বৃদ্ধি পায়। ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরের ঘটনার পর, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার বেশ কয়েকটি মিত্র বিশ্বাস করে, মধ্যপ্রাচ্য ও উপসাগরীয় অঞ্চলের সুন্নি দেশগুলো আলকায়েদা এবং এর সহযোগীদের মতো সংগঠনগুলো প্রতিনিধিত্ব করার চরম অবস্থার মুখোমুখি হতে সক্ষম নয়। পশ্চিমারা মনে করে, এ অঞ্চলে শিয়াদের সাথে জোট গঠন করা ভালো। জর্জ বুশ যখন ইরাক আক্রমণ ও সাদ্দামকে উৎখাত করার পরিকল্পনা করেছিলেন, তখন এই পদ্ধতিটি আরো কঠোর হয়ে ওঠে। যুদ্ধের অনেক অপ্রত্যাশিত পরিণতির মধ্যে একটি ছিল- আমেরিকানরা তার শিয়া ইরাকি মিত্রদের ওপর ইরানের প্রভাবের তীব্রতায় বিস্মিত বোধ করেছিল। হোয়াইট হাউজ সুন্নিদের রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় আমন্ত্রণ জানিয়ে এর প্রতি ভারসাম্য বজায় রাখার পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছিল।

অনেক প্রচেষ্টার পর ইরাকি সরকারি বাহিনী ও শিয়া নেতৃত্বাধীন নিরাপত্তা সংগঠনগুলো জনগণকে আতঙ্কিত করছে এমন বিষয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেলে, আমেরিকানরা সাদ্দামের অধীনে কাজ করা সেনাবাহিনী ও পুরো গোষ্ঠীকে ভেঙে দেয়ার নীতি গ্রহণ করে। ইরাক ও লেবানন উভয় ক্ষেত্রেই ইরানের ভূমিকার কারণে ওয়াশিংটন তার সুন্নি মিত্র সৌদি আরব, মিসর ও জর্দানের ওপর আরো একবার নির্ভর করতে বাধ্য হয়। ওয়াশিংটন সিরিয়া ও ইরানকে ইরাকে দ্বৈত খেলা খেলতে দেখেছে। এক দিকে তারা সুন্নি বিদ্রোহীদের সামরিকভাবে সমর্থন করে, অন্য দিকে তারা শিয়াদের ক্ষমতায় থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য রাজনৈতিক সমর্থন দেয়। সব সময় সুবিধার জোট তৈরি হয়, বড় শক্তিগুলো এ অঞ্চলের বিভিন্ন অংশে তাদের উচ্চাকাক্সক্ষার গুলতি ছুড়তে থাকে আর সুন্নি-শিয়ার শত্রুতা বাড়তে থাকে। মধ্যপ্রাচ্য এখন সাম্প্রদায়িক ও গৃহযুদ্ধের দিকে ধাবিত হচ্ছে। যুদ্ধ শুরু হলে শুধু তারাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে না, বৈশ্বিক যুদ্ধের দামামা আরো অন্যখানে বেজে উঠবে।

লেখক : অবসরপ্রাপ্ত যুগ্মসচিব ও গ্রন্থকার


আরো সংবাদ



premium cement
ছুটির দিনেও ঢাকার বাতাস অস্বাস্থ্যকর কালিয়াকৈরে ছিনতাইকারীর অস্ত্রের আঘাতে স্বর্ণ ব্যবসায়ী বাবা-ছেলে আহত কাপাসিয়ায় চোর সন্দেহে গণপিটুনিতে নিহত ২ রাশিয়ার ২৬টি ড্রোন ধ্বংসের দাবি ইউক্রেনের উত্তর কোরিয়ার সাথে আলোচনার ক্ষেত্র তৈরি করতে চাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র মাগুরায় বজ্রপাতে ২ যুবকের মৃত্যু মিয়ানমারে সামরিক বাহিনী ‘অস্থায়ীভাবে’ ক্ষমতায় রয়েছে : জান্তা প্রধান গাজীপুরে কাভার্ডভ্যানের চাপায় মোটরসাইকেলচালক নিহত উত্তরপ্রদেশে কারাগারে মুসলিম রাজনীতিবিদের মৃত্যু : ছেলের অভিযোগ বিষপ্রয়োগের দক্ষিণ আফ্রিকায় বাস খাদে, নিহত ৪৫, বাঁচল একটি শিশু ইসরাইলের রাফা অভিযান পরিকল্পনা স্থগিত

সকল