২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫
`

মধ্যপ্রাচ্যে গেম অব ড্রোনস

তুর্কি ড্রোন - ছবি : সংগৃহীত

মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো ঐতিহ্যগতভাবে বিশ্বের প্রথম কাতারের অস্ত্র আমদানিকারক, তবে অনেক দেশই এখন ক্রমবর্ধমান হারে দেশীয় সামরিক শিল্প বিকাশের ধারায় যুক্ত হয়েছে। এই বিকাশের ধারায় রয়েছে মানববিহীন যান- ড্রোন উৎপাদন।

নিজস্ব প্রযুক্তিতে ড্রোন নির্মাণ করে মাত্র কয়েক বছরের মধ্যে মধ্যপ্রাচ্য মৌলিকভাবে ভূরাজনৈতিক পরিবর্তন ও আঞ্চলিক যুদ্ধক্ষেত্রে গতিশীলতা আনতে সক্ষম হয়েছে। এই অঞ্চলের অনেক শক্তি দেরিতে হলেও বুঝতে পেরেছে, কম খরচে ও জনবল ক্ষয় না করে নির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে মানববিহীন বায়বীয় যানবাহন ব্যবহার করে নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করা তাদের জন্য, যাদের হাতে অঢেল তেলসম্পদ রয়েছে, কঠিন কাজ নয়। অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকেও ড্রোন উৎপাদন, এর মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ, শত্রুকে ধোঁকা দেয়া ও আক্রমণ করা, অনেক ক্ষেত্রে পর্যুদস্ত করা সহজ। এটি বিমানবাহিনীর সহযোগী হিসেবে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে যুদ্ধ পরিস্থিতি পাল্টে দিতে পারে।

বিশ্বে মানববিহীন ড্রোন প্রযুক্তি এখন যুদ্ধবিমান, জলযান, সাবমেরিন, মোটর গাড়ি ও রেলগাড়িতে ব্যবহার হচ্ছে। একই সাথে হাইড্রোজেন ফুয়েলের ব্যবহারও জনপ্রিয় হচ্ছে। মধ্যপ্রাচ্য এখন এসব অর্জন করতে চায় খুব তাড়াতাড়ি। যাদের কাছে প্রযুক্তি পাবে সেই পরাশক্তির দ্বারস্থ হবে এটিই তাদের সিদ্ধান্ত। কোনো একক শক্তির ‘গাঁটছড়া’ বন্ধনের দিন শেষ। মানববিহীন প্রযুক্তির সব ধরন আগামী যুদ্ধের ময়দানকে ‘প্রযুক্তির যুদ্ধে’ পরিণত করবে এবং কম্পিউটারে গেম খেলার মতো ঘরে বসেই যুদ্ধ পরিচালনা করবে। যার অনেকখানি অগ্রগতি ইতোমধ্যেই সম্পন্ন হয়েছে। ইরান, ইসরাইল ও তুরস্ক অভ্যন্তরীণ ড্রোন উৎপাদনে অবিসংবাদিত আঞ্চলিক নেতা হিসেবে এর মধ্যেই আত্মপ্রকাশ করেছে।

স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের সিনিয়র গবেষক পিটার ওয়েজম্যানের মতে, ইসরাইল ১৯৮০-এর দশক থেকে শীর্ষ ১০টি অস্ত্র রফতানিকারক দেশের মধ্যে মানববিহীন আত্মঘাতী ড্রোন, গাইডেড মিসাইল নির্মাণ ও বিপণনে নেতৃত্বের আসনে রয়েছে। তা ছাড়া ইসরাইল প্রচলিত অস্ত্রের পরিবর্তে নতুন ও কৌশলগত আধুনিক অস্ত্র উৎপাদনে অগ্রগামী। আরব সমালোচকরা মনে করেন, বন্ধ দরজার পেছনে ইসরাইলের সামরিক পদচারণা বিশ্ব খুব কমই জানতে পেরেছে।

তুরস্ক অভ্যন্তরীণ ড্রোন সক্ষমতার দিক থেকে আরেকটি সফল রাষ্ট্র, এই অঞ্চলের অনেক দেশ আঙ্কারার সাফল্যের অনুকরণ করার চেষ্টা করছে। তুরস্কের বায়রাতকার টিবি-২ ইতিহাসে সর্বাধিক বিক্রীত ড্রোন। সিরিয়া ও লিবিয়ার পাশাপাশি আজারবাইজান ও ইউক্রেনে অত্যন্ত সফলভাবে এটি ব্যবহৃত হয়েছে।
প্রায় চার দশক ধরে, ইরান তার নিজস্ব ড্রোন তৈরি করছে এবং এই অঞ্চলজুড়ে তাদের প্রক্সিগুলোতে নিজস্ব ড্রোন অত্যন্ত সফল ও নিখুঁতভাবে ব্যবহৃত হয়েছে। ইয়েমেনের হিজবুল্লাহ ও হুতিরা ইরানি প্রযুক্তি ব্যবহার করছে। পাশাপাশি ইরাকের পপুলার মোবিলাইজেশন ফোর্সেস যা মূলত শিয়া মিলিশিয়াদের নিয়ে গঠিত তারাও ইরানি ড্রোন প্রযুক্তি পেয়েছে।

মধ্যপ্রাচ্যে ভবিষ্যৎ কোনো যুদ্ধে বা ইসরাইলের সাথে যুদ্ধে ইরান ও তাদের সমর্থিত গোষ্ঠীগুলো ইরানি ড্রোন প্রযুক্তি ব্যবহার করে ড্রোন নির্মাণ এবং ব্যবহার করবে যার কারণে যুদ্ধের আকার ও ধারণা পাল্টে যাবে।

গত ১২ সেপ্টেম্বর ইসরাইলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী বেনি গ্যান্টজ অভিযোগ করেছেন, ইরান তার কাশান বিমানঘাঁটিতে ইয়েমেন, ইরাক, সিরিয়া ও লেবানন থেকে আসা সহযোগী কর্মীদের ড্রোন ওড়ানোর প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। এর পরপরই, ২৭ সেপ্টেম্বর জাতিসঙ্ঘের সাধারণ পরিষদে, ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী নাফতালি বেনেট চমকে দিয়ে বলেন, ‘ইরান গত এক বছরে একটি নতুন মারাত্মক আগ্রাসী ইউনিট চালু করেছে- প্রাণঘাতী অস্ত্রে সজ্জিত হত্যাকারী ড্রোনের ঝাঁক যেকোনো সময় যেকোনো জায়গায় আক্রমণ করতে পারে।’

আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার কারণে ইরানের বিমান বাহিনী কয়েক দশক ধরে আধা পঙ্গু হয়ে পড়েছে, তবে ড্রোন উৎপাদন, উন্নয়ন তার আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের সাথে তাল মিলিয়ে চলার জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় উপাদান হয়ে উঠেছে। মিসাইল প্রযুক্তি তো রয়েছেই। ইরানের কুদস অ্যারোস্পেস ইন্ডাস্ট্রিজ এবং ইরান এয়ারক্র্যাফট ম্যানুফ্যাকচারিং ইন্ডাস্ট্রিজ ড্রোনের বিভিন্ন ভেরিয়েশন ও সিরিজ তৈরি করছে। তেহরান দাবি করেছে, তার সর্বশেষ মডেল, মোহাজের-৬-এর পরিসীমা ২০০ কিলোমিটার পর্যন্ত এবং ১২ ঘণ্টার ফ্লাইট টাইম, ইলেকট্রো-অপটিক্যাল ডিটেক্টর এবং লেজার-গাইডেড মিসাইল দিয়ে সজ্জিত করা যায়, যেগুলোর লক্ষ্য ট্র্যাক করা। এই ভেরিয়েন্ট বাধা অপসারণ করে বস্তুকে ধ্বংস করতে পারে। ইরানের অস্ত্রাগারে আত্মঘাতী ড্রোন শাহেদ-১৩৬ সহ উন্নত ড্রোনগুলোর বড় বড় বহর রয়েছে, যার পরিসীমা দুই হাজার ৫০০ কিলোমিটার পর্যন্ত। হুতিরা ইরানি ওয়াইদ ড্রোন ভেরিয়েন্ট ব্যবহার করেছে বলে জানা যায়।

চলতি বছরের মে মাসে তাজিকিস্তানের দুশানবেতে কারখানা খুলে বিদেশের মাটিতে ড্রোন উৎপাদন ঘাঁটি বানিয়েছে ইরান। এখানে ইরান ড্রোনের আরেক ভেরিয়েন্ট আবাবিল-২ নির্মাণ করছে। এগুলো নজরদারি ড্রোন বা লোইটারিং অস্ত্র হিসেবে কাজ করতে পারে। এগুলো কামিকাজ আত্মঘাতী ড্রোন হিসেবেও সমধিক প্রসিদ্ধ। আবাবিল-২, কাসেফ-১ ও ২ কে-এর বিভিন্ন রূপ ইয়েমেনের হুতিরা সৌদি আরবের বিরুদ্ধে হামলায় ব্যাপকভাবে ব্যবহার করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। ইরানের এই মানববিহীন ড্রোন সম্পদ বিশ্বসেরা ও উন্নত এমন বলার সময় এখনো আসেনি। কেননা, যুক্তরাষ্ট্রের ড্রোনগুলো আরো উন্নত। বিশ্বব্যাপী অস্ত্র রফতানি নিষেধাজ্ঞার কারণে, ইরানের ড্রোনগুলো বিক্রি করার সীমিত বিকল্প রয়েছে, ইথিওপিয়া একটি উল্লেখযোগ্য ব্যতিক্রম।

ইরানে উত্তেজনা ও ভৌগোলিক নৈকট্য উপসাগরীয় দেশগুলোকে, প্রধানত সংযুক্ত আরব আমিরাত ও সৌদি আরবকে তাদের নিজস্ব সামরিক ক্ষমতা বিকাশের মাধ্যমে প্রতিক্রিয়া জানাতে বাধ্য করেছে বলে উভয় দেশ পশ্চিমা শক্তি বলে আসছে। উভয় দেশ তাদের নিজস্ব অস্ত্র শিল্প স্থাপনের জন্য বিদেশী প্রযুক্তি ও দক্ষতা অর্জনে প্রচুর বিনিয়োগ করেছে, এসব অস্ত্রের মধ্যে মিসাইল ও ড্রোন নির্মাণ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। জানা যায়, সংযুক্ত আরব আমিরাত দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে (বিশেষ করে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে রফতানির ওপর নির্ভর করে) এ ধরনের প্রযুক্তি অর্জন করেছে বলে জানা যায়, আর সৌদি আরব চীন ও তুরস্ক ড্রোন প্রযুক্তির সহায়তা নিয়ে নিজের সামরিক শিল্প উন্নয়ন করছে।

যাই হোক, আব্রাহাম চুক্তি ও তেলআবিবের সাথে আবুধাবির সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণ, সংযুক্ত আরব আমিরাতের জন্য সুযোগের এক নতুন জানালা খুলে দিয়েছে। গত কয়েক বছরে, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ইসরাইল একটি সম্পূর্ণ স্বায়ত্তশাসিত কাউন্টার- ড্রোন সিস্টেমের উন্নয়নে সংযুক্ত আরব আমিরাতের এজ এবং ইসরাইল অ্যারোস্পেস ইন্ডাস্ট্রিজের মধ্যে সহযোগিতা ও গবেষণার ফলে নতুন প্রজন্মের ড্রোন প্রস্তুত করেছে। গোপনীয়তার কারণে এখনো টেস্ট ফ্লাইটও পরিচালনা করেনি।

২০২০ সালে, আমিরাত উমেক্স, টগঊঢ প্রদর্শনীতে তার প্রথম স্থানীয়ভাবে তৈরি ড্রোন, গারমুশা উপস্থাপন করে। এই উল্লম্ব টেক-অফ অ্যান্ড ল্যান্ডিং ড্রোন, ছয় ঘণ্টা ফ্লাইট সময় এবং ১৫০ কিলোমিটারের পরিসীমাসহ ১০০ কিলোগ্রাম পর্যন্ত পেলোড বহন করতে পারে। এটি ইসরাইলের সাথে যৌথভাবে তৈরি বা নিজস্ব কৌশলগত কি না সেটি জানানো হয়নি।

আরব আমিরাত অল্প সংখ্যক সামরিক ড্রোন তৈরি করেছে এবং এগুলো লিবিয়ায় ব্যবহৃত হয়েছে। তবে মনে হচ্ছে, তাদের লক্ষ্য ভবিষ্যতে ড্রোন বাজারে বড় ভূমিকা নেয়া। সৌদি আরবের আকাক্সক্ষা আরো উঁচুতে, বিশেষ করে ২০১৯ সালে সৌদি আরামকো তেল প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্রে ইরানি ড্রোন হামলা ও ইয়েমেনের হুতিদের পরিচালিত ধারাবাহিক হামলার পর রিয়াদ তার ড্রোন, অ্যান্টি-ড্রোন সক্ষমতা বিকাশের জন্য তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নিয়েছে, এমনকি পরমাণু রিঅ্যাকটর বসানোর জন্য যুক্তরাষ্ট্রের দরবারে ব্যর্থ হয়ে রাশিয়ার সাথে চুক্তি করেছে এবং পরমাণু চুল্লির কাজ শুরু করে দিয়েছে।

যদিও সৌদি আরব ও আমিরাত দীর্ঘদিন ধরে উইং লুংয়ের মতো চীনা ড্রোনের ওপর নির্ভর করে আসছে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে রিয়াদ দ্রুত তার নিজস্ব অভ্যন্তরীণ ক্ষমতা বিকাশ করেছে। সৌদি সমর প্রকৌশলীরা নতুন ধাঁচের ‘সাইমুম’ ড্রোন চালু করেছেন।

আঙ্কারা ও রিয়াদের মধ্যে বছরের পর বছর ধরে শীতল সম্পর্ক থাকা সত্ত্বেও সম্প্রতি দুই দেশ তাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের উন্নতি করেছে, ফলে সৌদি আরব তুর্কি সশস্ত্র ড্রোন কেনার জন্য ক্রয়াদেশ দিয়েছে।
সৌদি আরবের দু’টি নির্মাণ প্রতিষ্ঠান, ইন্ট্রা ডিফেন্স টেকনোলজিস ও অ্যাডভান্সড ইলেকট্রনিক্স কোম্পানি, তুর্কি ভেস্টেল সাতুনমারের কাছ থেকে ড্রোন লাইসেন্স নিয়ে তুর্কি-নির্মিত কারায়েল-এসইউ ড্রোনের উৎপাদন শুরু করেছে।

মিসরও বসে নেই, তারা নিজস্ব ছোট আকারের ড্রোন নির্মাণ করছে। মিসরনুট ট্যাকটিক্যাল ড্রোন ও থেবস ৩০ বানিয়েছে। মিসরের স্থানীয় সংস্থা ইন্ডাস্ট্রিয়াল কমপ্লেক্স ইঞ্জিনিয়ারিং যুদ্ধের জন্য রোবটের ডিজাইন করেছে। এই কোম্পানি ইতোমধ্যেই ‘জুন-৩০’ উৎপাদন করেছে যা আমিরাত ডিজাইন করা ইয়াভোন-২০ অনুরূপ।

দেশীয় ড্রোন উৎপাদন বৃদ্ধির হিসাব-নিকাশ প্রমাণ করছে, মধ্যপ্রাচ্য ভবিষ্যতে একটি প্রধান বিশ্ব ড্রোন উৎপাদক হাবে পরিণত হওয়ার পথে রয়েছে। চীন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইসরাইল ও তুরস্কের নির্মাতারা ইতোমধ্যে তাদের ড্রোন পণ্য বিশ্বের অনেক দেশের বাজার দখল করেছে। তুরস্ক, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও সৌদি আরবও বড় রফতানিকারক হয়ে উঠবে। কেন না, তুলনামূলক তাদের দেয়া দাম বাজার দরের চেয়ে কম থাকবে। ফলে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের পক্ষে ড্রোন বাজার ধরে রাখা কঠিন হবে। একচেটিয়া কর্তৃত্ব আর থাকবে না।

তুরস্কের মূল ড্রোন উৎপাদক বেইকার জানায়, ২০২০ সালে তারা ৩৬ কোটি ডলারের ড্রোন রফতানি করেছে যা কোম্পানিটির ২০২১ সালের মোট রফতানি আয়ের ৮০ শতাংশের বেশি।

ড্রোনের দ্রুত বিস্তার আরব দেশগুলোতে অতিরিক্ত নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করেছে। ইরাকে মার্কিন ঘাঁটি লক্ষ্য করে কামিকাজ ড্রোন ব্যবহার করা হয়েছে। বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলো সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানার জন্য বিস্ফোরকসজ্জিত ড্রোন ব্যবহার করছে।

ড্রোন সহজলভ্য হওয়ায় এখন রাষ্ট্র ও বিদ্রোহী গোষ্ঠী সঠিকভাবে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারছে। ফলে সামরিক নিরাপত্তা পরিধি ও কৌশল পরিবর্তিত হয়েছে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই অঞ্চলে ড্রোনের অনিয়ন্ত্রিত বিস্তারের পাশাপাশি স্থানীয় উৎপাদনে কিছু ইতিবাচক দিকও রয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে পশ্চিমা পণ্যের ওপর নির্ভরতা হ্রাস করছে এবং দক্ষ কর্মীবাহিনী তৈরি হচ্ছে। ফলে সংশ্লিষ্ট আরো সামরিক ও হাই অ্যান্ড শিল্প গড়ে উঠে পুরো মধ্যপ্রাচ্য একটি গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলে পরিণত হবে। কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে, মেধাবীদের বিদেশমুখিতা দূর হবে। টেকনোলজির বিকাশে শিক্ষাব্যবস্থা আধুনিক হবে, উচ্চতর লেখাপড়ার জন্য সাধারণ পরিবারের সদস্যদের সুযোগ সৃষ্টি হবে।

ইসরাইল, তুরস্ক ও ইরান তাদের কার্যকারিতা প্রমাণ করেছে। দ্বিতীয় ধাপে রয়েছে সৌদি আরব ও আমিরাত। দৌড়ের তৃতীয় ধাপে রয়েছে মিসর, বাহরাইন ও ওমান। প্রযুক্তির উন্নয়ন ও ব্যবহারের ফলে আঞ্চলিক রাষ্ট্রগুলো অস্ত্র আমদানির ওপর কম নির্ভরশীল হবে। তবে ড্রোন সামরিক সক্ষমতার মূল উপাদান হয়ে উঠছে এমন ভাবার কোনো যুক্তি নেই।

দেখতে হবে ড্রোন উৎপাদন যেন ব্যাকফায়ার না করে। রাজনৈতিক অবস্থার পরিবর্তন অর্থনৈতিক সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। তা ছাড়া বেসামরিক নাগরিকদের হত্যার কাজে ড্রোনের ব্যবহার সমর্থনযোগ্য নয়, যেমনটি ঘটেছিল ইথিওপিয়ার টাইগ্রে যুদ্ধের সময়। ড্রোন প্রতিযোগিতা বিপর্যয়ও ডেকে আনতে পারে। ইসরাইল ইরানি ড্রোন বিশেষজ্ঞদের হত্যা করেছে এবং ড্রোন কারখানাগুলোতে বোমা বর্ষণ করেছে। প্রায় ২০ বছর ধরে ইসরাইলি মোসাদ ইরানি পরমাণু বিজ্ঞানীদের একের পর এক বিভিন্ন উপায়ে হত্যা করেছে। এতে করে যেকোনো সময় বৃহৎ পরিসরে আঞ্চলিক যুদ্ধ শুরু হতে পারে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, পরমাণু বিস্তার রোধের মতো ড্রোনের বাজার ও চাহিদা নিয়ন্ত্রণেও একটি নিয়ন্ত্রক সংস্থা এবং চুক্তির প্রয়োজন হয়ে পড়েছে।

লেখক : অবসরপ্রাপ্ত যুগ্মসচিব ও গ্রন্থকার


আরো সংবাদ



premium cement