২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

সৌদি সফরে শি, মার্কিন আধিপত্য কমবে কি

সম্প্রতি সৌদি আরব সফর করেছেন চীনা নেতা শি জিনপিং - ছবি : সংগৃহীত

মধ্যপ্রাচ্যে সাম্প্রতিক সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ঘটনার একটি হলো চীনা নেতা শি জিনপিংয়ের তিন দিনের সৌদি আরব সফর এবং সেখানে একটি ব্যাপকভিত্তিক আরব-চীনা শীর্ষ সম্মেলনে অংশগ্রহণ। সৌদি আরবের সাথে চীনের সম্পর্কোন্নয়নের প্রক্রিয়া গত কয়েক দশক ধরে চলে আসছে। কিন্তু এবারের ঘটনাটি এমন একসময়ে ঘটছে যখন যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা বৈশ্বিক প্রভাববলয়কে বিভাজিত করে যথাসম্ভব নিজেদের দিকে টানার চেষ্টা করছে। রাশিয়ার ইউক্রেন অভিযান বিষয়টিকে আরো ধারাল করে তুলেছে। ঠিক এমন একটি সময়ে রিয়াদ যে আরব দেশগুলোর চীনমুখী সম্পর্কোন্নয়নে নেতৃত্ব দিচ্ছে, এটি সাদামাটা কোনো বিষয় বলে মনে হয় না।

বলা হচ্ছে, এটি আরব দেশগুলোর একক আমেরিকান নির্ভরতার শৃঙ্খল থেকে বহুমুখী সম্পর্কের বিকল্প উন্মোচন করে দেবে। তবে পরিবর্তনের এই প্রক্রিয়াকে ওয়াশিংটন চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিতে পারে। সেক্ষেত্রে নতি স্বীকার করে ভবিষ্যৎ সৌদি নেতৃত্বকে স্বীকৃতি দেয়ার পরিবর্তে নীরব প্রতিশোধের রাস্তায়ও যেতে পারে। সেটি হলে পরিণতি কী হতে পারে তাও ভাবনার বিষয়। আজকের এই লেখা সেই গভীর বিষয়গুলোর প্রতি আলোকপাত করারই প্রয়াস।

কী হলো শি’র সফরে
গত শুক্রবার শি জিনপিংয়ের তিন দিনের আলোচিত সফর শেষে সৌদি আরব ও চীন ৪০টিরও বেশি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। সৌদি আরামকো ও চীনের শানডং এনার্জি গ্রুপ চীনে তেল পরিশোধন ও পেট্রোকেমিক্যাল স্থাপনাগুলোর মধ্যে সহযোগিতার সুযোগ অন্বেষণের জন্য একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছে। আরামকোর প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে যে তারা পুনর্নবীকরণযোগ্য জ্বালানি, হাইড্রোজেন শক্তি উন্নয়ন ও কার্বন নিঃসরণ হ্রাসে একসাথে কাজ করার উপায় খুঁজবে। ডিজিটাল অর্থনীতিতে দুই দেশ কৌশলগত অংশীদারিত্ব চুক্তিও স্বাক্ষর করেছে। চুক্তিটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, কোয়ান্টাম কম্পিউটিং, রোবট ও আরো অনেক কিছুর সাথে সম্পর্কিত।

শি’র সৌদি সফরের সময় সৌদি জ্বালানি কোম্পানি এসিডবিøউএ পাওয়ার ৯টি চীনা কোম্পানির সাথে কৌশলগত চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। চুক্তিগুলো সৌদি আরব ও চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড অবকাঠামো উদ্যোগের সদস্য রাষ্ট্রগুলোর পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি প্রকল্পগুলোর সাথে বিশেষভাবে সম্পর্কিত। এ ছাড়াও বিভিন্ন চীনা ও সৌদি কোম্পানি এক বৈঠকে ৩৪টি বিনিয়োগ চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। যারা চুক্তি স্বাক্ষর করেছে তাদের মধ্যে রয়েছে চীনা প্রযুক্তি জায়ান্ট হুয়াওয়ে, চীনা চালকবিহীন গাড়ি সংস্থা অটোএক্স ও অন্যরা। চুক্তিগুলোতে গ্রিন টেকনোলজি, ক্লাউড সার্ভিস, ইনফরমেশন টেকনোলজি এবং বিভিন্ন ধরনের অন্যান্য সেক্টর অন্তর্ভুক্ত। সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, রিয়াদ ও বেইজিং একটি ব্যাপক কৌশলগত অংশীদারিত্ব চুক্তি এবং পাশাপাশি অনির্দিষ্ট সংখ্যক অন্যান্য দ্বিপক্ষীয় চুক্তি এবং সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছে।

শি’র আগমনের পর, কিং আবদুল্লাহ ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি এবং চীনের সিনোভেশন ভেঞ্চারস কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসংক্রান্ত একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করে। সৌদি আরবের ন্যাশনাল সেন্টার ফর ভেজিটেশন কভার ডেভেলপমেন্ট এবং চীনা কোম্পানি এলিয়নও একই দিনে বনায়নের বিষয়ে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে।

চীনের সাথে দ্বিপক্ষীয় শীর্ষ বৈঠক শেষে সৌদি আরব একটি বিবৃতি দেয়। বিবৃতিতে উল্লেখযোগ্যভাবে ‘এক চীন নীতির’ প্রতি সৌদি আরবের সমর্থনের উল্লেখ করা হয়।

শি’র উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত বৃহত্তর আরব সম্মেলনে জর্দানের বাদশাহ দ্বিতীয় আবদুল্লাহ, ইরাকের প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ শিয়া আল-সুদানি, মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি, তিউনিসিয়ার প্রেসিডেন্ট কায়েস সাইদ, লেবাননের প্রধানমন্ত্রী নাজিব মিকাতি, আলজেরিয়ার প্রধানমন্ত্রী আয়মান বেনাবদার রহমান, লিবিয়ার প্রেসিডেন্সিয়াল কাউন্সিল চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ ইউনিস আল-মানফে, মরক্কোর প্রধানমন্ত্রী আজিজ আখানউচ, মৌরিতানিয়ার প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ উলদ চেখ এল গাজোয়ানি, ইয়েমেনের প্রেসিডেন্সিয়াল লিডারশিপ কাউন্সিলের চেয়ারম্যান রাশাদ মুহাম্মদ আল-আলিমি, ডি ফ্যাক্টো সুদানের নেতা লেফটেন্যান্ট জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান ও ফিলিস্তিনি নেতা প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস উপস্থিত ছিলেন।

চীন-আরব সম্মেলনের সময় শি বলেছেন, তিনি চান উপসাগরীয় রাষ্ট্রগুলো ডলারের বিপরীতে চীনের মুদ্রা ইউয়ানকে জ্বালানি চুক্তির জন্য ব্যবহার করুক। সৌদি আরব এরই মধ্যে চীনের কাছে ইউয়ানে তেল বিক্রির মূল্য নির্ধারণের কথা বিবেচনা করছে।

গুরুত্বপূর্ণ বার্তা কী
শি’র সফরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নটি হলো সৌদি আরব ও চীনের জন্য এই শীর্ষ সম্মেলনের বার্তা কী? কেন দু’টি দেশ এভাবে পরস্পরের সাথে সম্পৃক্ত হলো?

আটলান্টিক কাউন্সিলের মিডল ইস্ট প্রোগ্রাম ও স্কোক্রফট মিডল ইস্ট সিকিউরিটি ইনিশিয়েটিভের অনাবাসী সিনিয়র ফেলো জোনাথন ফুলটন মনে করেন, জুলাই মাসে বাইডেনের সফরের প্রতিপক্ষ হিসেবে শি’র সৌদি আরব সফরকে দেখা স্বাভাবিক, তবে এর আরো বড় এবং আরো আকর্ষণীয় ছবি রয়েছে। এ নিয়ে পঞ্চমবারের মতো কোনো চীনা প্রেসিডেন্ট সৌদি আরবে এসেছেন। ১৯৯৯ সালে জিয়াং জেমিনের সাথে শুরু হওয়া প্রতিটি সফরের সাথে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরো গভীর ও বিস্তৃত হয়েছে। দুই দেশের একে অপরের সাথে জড়িত থাকার জন্য বিস্তৃত স্বার্থ রয়েছে এবং এটি ওয়াশিংটনের কাছে সামান্যতম অনুভ‚ত হওয়ার চেয়েও বেশি তাৎপর্যপূর্ণ। যদি এটি কেবল সৌদিদের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে তাদের অসন্তোষের ইঙ্গিত দেয়ার বিষয় হয়, তবে হয়তো ওয়াশিংটন অবশেষে সম্পর্কটিকে ট্র্যাকে ফিরিয়ে আনতে পারত এবং রিয়াদ বেইজিংকে বাদ দিত। বাস্তবে এটি ঘটতে যাচ্ছে না।

চীন সাধারণভাবে তার প্রায় ১৮ শতাংশ তেল সৌদি আরব থেকে পায়। ২০২১ সালে উভয়ের মধ্যে বাণিজ্য ছিল ৮০ বিলিয়ন ডলারের বেশি এবং চীনা কোম্পানিগুলো ২০০৫ সাল থেকে সৌদি আরবে ৩৬ বিলিয়ন ডলারের বেশি চুক্তি করেছে। আর ইসলামী বিশ্বে সৌদি আরবের ভ‚মিকা চীনের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার করে তোলে রিয়াদকে। কারণ চীনা সরকারের উইঘুর মুসলিম সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর মতো অনেক সমস্যা রয়েছে। আর সৌদি পক্ষ থেকে চীন হলো রাজ্যের ১ নম্বর বাণিজ্য অংশীদার, একটি প্রধান প্রযুক্তি সরবরাহকারী, একটি দীর্ঘমেয়াদি জ্বালানি গ্রাহক এবং জাতিসঙ্ঘের নিরাপত্তা পরিষদে একটি স্থায়ী আসনসহ একটি ব্যাপক কৌশলগত অংশীদার। দুই দেশ গত শতাব্দীজুড়ে তাদের সম্পর্ক নিবিড় করে চলেছে এবং এ সফর তারই ভিত্তিতে গড়ে উঠেছে। এটি অনুভ‚ত মার্কিন ভুল পদক্ষেপের প্রতিক্রিয়ার চেয়ে যে অনেক বেশি কিছু তাতে সংশয় নেই।

শি’র সৌদি আরব সফর তাৎপর্যপূর্ণ, তবে চীন-সৌদি সম্পর্কের স্বাভাবিক অগ্রগতির প্রতিফলনও এতে রয়েছে। সৌদি আরব ও চীনের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বহু বছর ধরে বৃদ্ধি পাচ্ছে, যদিও তারা মূলত তেল ও পেট্রোকেমিক্যাল খাতের মধ্যে সীমাবদ্ধ। ১৯৮৯ সাল থেকে সৌদি আরবের নজর ছিল চীনের ওপর, যখন আলী আল-নাইমি আরামকোর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ছিলেন। তিনি বিশ্বাস করতেন যে চীন এক দিন সৌদির অপরিশোধিত তেলের প্রধান বাজার হবে। তিনি যখন ১৯৮৯ সালে সম্ভাব্য বাজারের সন্ধান করতে চীন সফর করেন, তখন তিনি এর শিল্প বিকাশে শুধু মুগ্ধ হননি এবং রাস্তায় আরো গাড়ি না দেখা পর্যন্ত অপেক্ষা করার সিদ্ধান্ত নেন। ১৯৯২ সালে আরামকো চীনের সাথে তার প্রথম বিপণন চুক্তি স্বাক্ষর করে এবং চীনে একটি তেল শোধনাগার খোলার জন্য আলোচনা শুরু করে। এটি ২০০৩ সাল নাগাদ সৌদি আরব চীনের বৃহত্তম তেল সরবরাহকারী হয়ে ওঠে, যদিও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এই শিরোনামটি রাশিয়া ও সৌদি আরবের মধ্যে স্থানান্তরিত হয়েছে।

কী কী পরিবর্তন আনতে পারে এ সফর
প্রশ্ন হলো, এ সফর কি দুই দেশের অর্থনৈতিক সম্পর্কের কী কী পরিবর্তনকে চিহ্নিত করবে? সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ডেলিভারিই বা কী কী তারা নিয়ে আসছে? চীনা ও সৌদি কোম্পানি সবুজ শক্তি, তথ্যপ্রযুক্তি, অবকাঠামো এবং আরো অনেক কিছু কভার করে ৩৪টি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। সফরের আগের প্রতিবেদনে বলা হয় যে দুই দেশ ২৯ বিলিয়ন ডলার মূল্যের প্রাথমিক ২০টি চুক্তি স্বাক্ষর করবে। এটি স্পষ্ট যে জ্বালানি খাত চীন-সৌদি সম্পর্কের মেরুদন্ড। ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের কারণে বিশ্বব্যাপী তেল ও গ্যাস বাজারের চলমান পুনর্গঠনের মধ্যে এবং রাশিয়ান সমুদ্রে তেল সরবরাহের ওপর গ্রুপ অব সেভেন মূল্যের সীমাবদ্ধতার কারণে চীন তার জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চায় বলে শি’র সফরটি আসে।

সৌদি আরব বর্তমানে চীনের ১ নম্বর তেল সরবরাহকারী। এ অবস্থান বজায় রাখা কেবল চীনের কাছে সৌদি আরবের গুরুত্বকে বহুগুণ করে না, তবে এটি চীনকে তার রাশিয়ান তেল আমদানির দাম নিম্নস্তরে রাখার জন্য দুর্দান্ত দরকষাকষির ক্ষমতাও দেয়। এটি দেখেও অবাক হওয়ার কিছু নেই যে এই সপ্তাহে উভয়পক্ষ হাইড্রোজেনের ওপর একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছে, অন্যান্য অনেক চুক্তির মধ্যে, যেহেতু বেইজিং পরিষ্কার ও টেকসই শক্তি প্রযুক্তিতে একটি সুপার পাওয়ার হিসেবে মধ্যপ্রাচ্যে খ্যাতি অর্জনের জন্য চাপ দিচ্ছে।

আটলান্টিক কাউন্সিলের গ্লোবাল এনার্জি সেন্টারের অনাবাসী সিনিয়র ফেলো এলেন আর. ওয়াল্ড মনে করেন, চীনের জন্যও এই সহযোগিতার ভ‚কৌশলগত সুবিধা রয়েছে। অপরিশোধিত আউটপুট বাড়ানোর জন্য বাইডেন প্রশাসনের চাপের বিরুদ্ধে সৌদি যুবরাজের প্রতিরোধ ছিল চীনের কানে সঙ্গীত। চীনা নেতারা এটি আরো দেখতে চান। গালফ কো-অপারেশন কাউন্সিলের (জিসিসি) জ্বালানি খাতে চীন যত বেশি প্রভাব বিস্তার করতে পারবে, মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন আধিপত্যকে ভোঁতা করতে তত বেশি শক্তি পাবে।

চীন যে বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই) এবং সৌদি ভিশন ২০৩০-এর ‘সুসংগত’ করার জন্য অত্যন্ত গুরুত্ব দেয়, এর মানে এই নয় যে চীন-সৌদি সম্পর্ক ঝামেলামুক্ত। আলোচনায় চীন-জিসিসি বাণিজ্যের অনুপস্থিতি একটি উল্লেখযোগ্য দিক। এটি প্রকাশ করে যে, পারস্পরিক উচ্চ বাণিজ্যের পরিমাণ, প্রতিযোগিতা ও ব্যাপক জনসম্পর্ক থাকা সত্তে¡ও জিসিসি দেশগুলো এখনো চীনের সাথে তাদের অংশীদারিত্বের কিছু দিক নিয়ে দ্বিধাগ্রস্ত।

এ মুহূর্তে চীনের স্বার্থ কী
প্রশ্ন উঠতে পারে এ মুহূর্তে মধ্যপ্রাচ্যে চীনের স্বার্থ কী? শি’র এ সফর কিভাবে এ সম্পর্ককে আরো উন্নত করবে? জিসিসি দেশগুলো চীন সম্পর্কে দ্বিধাগ্রস্ত হলেও চীন-জিসিসি সম্পর্কের দীর্ঘমেয়াদি গতিপথের সাথে এই অস্থায়ী সম্পর্ককে এক করে ফেলা ভুল হবে। তবে ওয়াশিংটনে অনেকেই ভাবতে চান যে সম্পর্কটি কৌশলগত নয়, বরং কিছুটা লেনদেনমূলক। এ যুক্তিতে অর্থনৈতিক, প্রযুক্তিগত ও ক‚টনৈতিক ক্ষেত্রে চীন ও জিসিসির মধ্যে সহযোগিতার গুরুত্বকে ইচ্ছাকৃতভাবে অবমূল্যায়ন করার প্রবণতা রয়েছে।

আটলান্টিক কাউন্সিলের মধ্যপ্রাচ্য প্রোগ্রামের অনাবাসী ফেলো আহমেদ আবৌদুহ মনে করেন, চীন ভ‚কৌশলগত স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তা নিয়ে সম্পৃক্ত কারণ এটি বেইজিংয়ের অর্থনৈতিক স্বার্থের লিভারের মতো। এটি মধ্যপ্রাচ্যকে বিশ্বের খুব কম অঞ্চলের মধ্যে একটি করে তোলে যেখানে চীন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ ও পছন্দ একই রকম মনে হয়। চীন স্থিতাবস্থাকে চ্যালেঞ্জ করতে নয়, বরং এতে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী। এটি চীনকে যত দিন সম্ভব এই সিস্টেমে ফ্রি-রাইডিং করতে আগ্রহী করে তোলে। তবে এটি চীনের জন্যও দুর্বলতার একটি উৎসও হতে পারে। চীনে জিসিসির তেল রফতানি এই অদ্ভুত বাঁধনের একেবারেই প্রতীক। চীন জিসিসি থেকে তেলের চালান নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। তবে এটি নিশ্চিত করতে পারে না যে চালানগুলো সঙ্ঘাতের সময় নিরাপদে চীনা বন্দরগুলোতে পৌঁছাবে, কারণ উপসাগর ও ভারত মহাসাগরের সামুদ্রিক শিপিং লেনের ওপর বেইজিংয়ের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই, যা মার্কিন সামরিক বাহিনী দ্বারা বিশেষভাবে প্রভাবিত।

মার্কিন সম্পর্ককে কতটা প্রভাবিত করবে
গত গ্রীষ্মে জো বাইডেনের সৌদি আরব সফরের পর থেকে এ অঞ্চলে অনেক কিছু ঘটেছে। এ পটভ‚মিতে শি’র সফর সৌদি আরবের সাথে মার্কিন সম্পর্ককে কিভাবে প্রভাবিত করবে সেটি একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন? এ প্রসঙ্গে আটলান্টিক কাউন্সিলের গ্লোবাল চায়না হাবের অনাবাসী ফেলো টুভিয়া গেরিংয়ের বক্তব্য বিশেষভাবে প্রণিধানযোগ্য। তার মতে, বেশির ভাগ উপসাগরীয় দেশ স্বীকার করে যে তাদের শান্তি ও নিরাপত্তা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে তাদের সম্পর্কের ওপর নির্ভরশীল এবং তারা সম্পূর্ণরূপে জানে যে, চীন অদূর ভবিষ্যতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্থান নিতে অক্ষম বা অনিচ্ছুক। একই সময়ে তারা জটিল শক্তি অবকাঠামো এবং বেসামরিক ও আর্থিক কেন্দ্রগুলোতে ইরানের প্রক্সিদের দ্বারা ধারাবাহিক সন্ত্রাসী হামলার জন্য হোয়াইট হাউজের দুর্বল প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে উদ্বিগ্ন। তেহরান এখন পারমাণবিক অস্ত্র অর্জনে আগের চেয়ে কাছাকাছি, তবে বাইডেন প্রশাসন রাজনৈতিক স্বাধীনতা ও মানবাধিকারের মতো সমস্যা নিয়ে উদ্বিগ্ন। যখন অনেক উপসাগরীয় দেশ জীবাশ্ম-জ্বালানি পরবর্তী ভবিষ্যতের জন্য তাদের নিজ নিজ দৃষ্টিভঙ্গিতে উদ্বেগের মধ্যে রয়েছে; তখন ওয়াশিংটন চীনের সাথে তাদের বিকল্পগুলোকে সীমিত করার চেষ্টা করছে এবং তাদের নয় এমন লড়াইয়ে একটি পক্ষ বেছে নিতে বাধ্য করছে।

তবে এই সপ্তাহে শি’র সফর প্রমাণ করেছে যে সৌদি আরব এবং এ অঞ্চলের অন্য দেশগুলো বিকল্প ছাড়া নয়। আর তারা উভয়পক্ষের কাছ থেকে সেরা লাভের জন্য বিশ্বব্যাপী স্টেকহোল্ডারদের জন্য তাদের বর্ধিত কৌশলগত গুরুত্বকে কাজে লাগাতে থাকবে। সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রিন্স ফয়সাল গত সপ্তাহে বলেছেন, ‘আমরা মেরুকরণে বিশ্বাস করি না বা এক অংশীদার এবং অন্যের মধ্যে বেছে নেয়ায় বিশ্বাস করি না... সৌদি অর্থনীতি দ্রæত বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং আমাদের সব অংশীদার প্রয়োজন। এমনকি নিরাপত্তার ক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সমন্বিত প্রতিরোধ ক্ষমতার কোনো পরম বিকল্প না থাকলেও চীন এরই মধ্যে প্রতিযোগিতামূলক মূল্যে উন্নত অস্ত্র ব্যবস্থার বিকল্প অফার করছে।’

মধ্যপ্রাচ্যের বাস্তবতা গত কয়েক দশকে অনেক পাল্টে গেছে। এ অঞ্চলে চাইলেই ওয়াশিংটন যেকোনো পরিবর্তন আনতে পারবে এমনটি মনে হচ্ছে না। তবে যুক্তরাষ্ট্র এ অঞ্চলের নানা ক্ষেত্রে যেভাবে বহু দশক ধরে সংশ্লিষ্ট ছিল সেখানে চীন রাতারাতি পৌঁছাতে পারবে এমনটি মনে হয় না। আর নতুন পরিস্থিতির চাহিদা পূরণে একক কোনো ভ‚মিকা পালনের অবস্থা রাশিয়ারও নেই। ফলে মধ্যপ্রাচ্যের শক্তিমান দেশগুলো চাইবে যার যার প্রভাব কাজে লাগিয়ে নিজস্ব স্বতন্ত্র বলয় তৈরি করতে। এটি এত দিন একান্তভাবে যুক্তরাষ্ট্র যতটা অনুমোদন করে ততটার মধ্যে সীমিত ছিল। এখন সেখান থেকে সৌদি আরব আমিরাত এমনকি তুরস্কও বেরিয়ে আসতে চাইছে। তবে এসব দেশের কেউই এ মুহূর্তে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে প্রত্যক্ষ সঙ্ঘাতে জড়াতে চাইবে না। এখন দেখার বিষয় হলো আমেরিকান গভীর ক্ষমতাবলয় বিষয়টি কিভাবে দেখে। নিজেদের নিয়ন্ত্রক আসন থেকে কতটা বিচ্যুতি তারা মেনে নেয়। বিশেষভাবে জ্বালানি তেলের মূল্য ডলারের পরিবর্তে দ্বিপক্ষীয় মুদ্রায় পরিশোধের বিষয়টি যখন তাদের অর্থনৈতিক আধিপত্যকে সরাসরি চ্যালেঞ্জ করবে তখন কী হবে তাদের প্রতিক্রিয়া।

mrkmmb@gmail.com


আরো সংবাদ



premium cement
জামালপুরে সাব রেজিস্ট্রারকে হত্যার হুমকি মামলায় আ’লীগ নেতা গ্রেফতার গাজায় অনাহার যুদ্ধাপরাধ হতে পারে : জাতিসঙ্ঘ ‘প্রত্যেককে কোরআনের অনুশাসন যথাযথভাবে অনুসরণ করতে হবে’ মতলব উত্তরে পানিতে ডুবে ভাই-বোনের মৃত্যু প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগের শেষ ধাপের পরীক্ষা শুক্রবার লম্বা ঈদের ছুটিতে কতজন ঢাকা ছাড়তে চান, কতজন পারবেন? সোনাহাট স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ ত্যাগ করলেন ভুটানের রাজা জাতীয় দলে যোগ দিয়েছেন সাকিব, বললেন কোনো চাওয়া-পাওয়া নেই কারওয়ান বাজার থেকে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে ডিএনসিসির আঞ্চলিক কার্যালয় এলডিসি থেকে উত্তরণের পর সর্বোচ্চ সুবিধা পেতে কার্যকর পদক্ষেপ নিন : প্রধানমন্ত্রী নারায়ণগঞ্জ জেলার শ্রেষ্ঠ ওসি আহসান উল্লাহ

সকল