২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

উপেক্ষিত উপকূলীয় অর্থনীতি প্রধান প্রসঙ্গ সুন্দরবন

উপেক্ষিত উপকূলীয় অর্থনীতি প্রধান প্রসঙ্গ সুন্দরবন - ছবি : সংগৃহীত

বাংলাদেশের উপকূল অঞ্চলের দৈর্ঘ্য ৭১০ কিলোমিটার, এর মধ্যে সুন্দরবন ১২৫ কিলোমিটার, নদীর মোহনা ও ছোট-বড় দ্বীপমালা ২৭৫ কিলোমিটার, সমতল ও সমুদ্রসৈকত ৩১০ কিলোমিটার। টেকনাফের নাফ নদীর মোহনা থেকে সাতক্ষীরার সীমান্ত নদী রায়মঙ্গল- কালিন্দী পর্যন্ত খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের মোট ১৪টি উপকূলীয় জেলায় বিস্তৃত বাংলাদেশের উপকূলেই দেশের প্রধান দু’টি সমুদ্রবন্দর চট্টগ্রাম ও মংলা, বিশ্বের সেরা গহিন গরান বন সুন্দরবন এবং বিশ্বের অন্যতম অখণ্ডিত (আন ব্রুকেন) সমুদ্রসৈকত বা বেলাভূমি কক্সবাজার অবস্থিত। দেশের ২৫ শতাংশ জনগণ যেমন এ উপকূলাঞ্চলে বসবাস করে, তেমনি জাতীয় অর্থনীতিতে জিডিপির কমবেশি প্রায় ২৫ শতাংশ অবদানও এ অঞ্চলের। অথচ দেশের অন্যান্য অঞ্চলের চেয়ে অর্থনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ হওয়া সত্ত্বেও এ অঞ্চল, এর অবকাঠামো ও বসবাসকারী জনগণের অর্থনৈতিক জীবন নানা দৈবদুর্বিপাক, বৈষম্য, অবহেলা আর অমনোযোগিতার শিকার। রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র দীর্ঘমেয়াদে সুন্দরবন তথা উপকূলীয় কৃষি অর্থনীতিতে যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করবে তা পুনর্নিরীক্ষণ প্রয়োজন এ জন্য যে, এ ব্যাপারে যে প্রতিবাদ উঠছে কিংবা এর সপক্ষে সরকারের তরফে যে যুক্তি তা সবার স্বার্থে স্পষ্ট হওয়া দরকার।

বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলের মানচিত্র
ভারত সাগরের উত্তর-পূর্বভাগে মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড ও মিয়ানমারের পশ্চিম উপকূলে ২০. ২৫ ও ২৩.২ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৮.৩৫ ও ৯২.২৪ পূর্ব দ্রাঘিমাংশে বঙ্গোপসাগরের ভৌগোলিক অবস্থান এমন যে, কথায় কথায় মেজাজ বিগড়ে যায়, মৌসুমি সঞ্চরণশীল মেঘের অবারিত অভিসার যেমন তাকে নাচায়, তেমনি জাতীয় কবি নজরুলের ক্ষুধিত বন্ধু সে তৃষিত জলধি যার চিত্ত শত ক্ষুধার উদ্রেক করে উপকূলবাসীর জীবন তছনছ করতে তার আনন্দ যেন বেশি। বলা নেই কওয়া নেই- প্রায় সে উত্তাল থাকে। তার মন পবনের ঠিকানা বাংলাদেশের আবহাওয়া দফতরে ঠাঁই পায় না। তার এই প্রায়-ই পাগলামি সুন্দরবন বরাবরই মাথায় পেতে নিয়ে সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, বরিশাল, বরগুনা ও পটুয়াখালীকে শেলটার দিলেও পাথরঘাটা থেকে ফেনীর ছাগলনাইয়া অবধি অরক্ষিত উপকূলকে উপদ্রুত রাখা বা করাতেই যেন তার তৃপ্তি। ১৭৯৭ থেকে শুরু করে ২০০৯ সালে আইলা পর্যন্ত সময়ের শুমার পর্যালোচনায় দেখা গেছে- মোট ৪৭৮ বার মাঝারি ও মোটা দাগের জলোচ্ছ্বাস, গোর্কি, হ্যারিকেন, সিডর, নার্গিসরা বাংলাদেশের উপকূলকে ক্ষতবিক্ষত করেছে। ১৯৭০ সাল পর্যন্ত ১৭৩ বছরে প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় আঘাত হেনেছে ৩২৯টি, এসেছে গড়ে পাঁচ থেকে ১০ বছর পরপর; কিন্তু স্বাধীন বাংলাদেশে বিগত ৪০ বছরে ১৪৯টি ঝড় বা জলোচ্ছ্বাস ঘটেছে ঘন ঘন। মাত্র এক বছরের ব্যবধানে সর্বশেষ সিডর আর আইলার আঘাতে স্বয়ং সুন্দরবনও পর্যুদস্ত হয়েছে। প্রাকৃতিক সম্পদে পরিপূর্ণ বাংলাদেশের উপকূলাঞ্চল প্রকৃতির বিরূপ আচরণের প্রথম ও প্রত্যক্ষ শিকার সব সময়।
কৃষিপ্রধান বাংলাদেশে উপকূলীয় অঞ্চলের অর্থনীতির সুরতহাল প্রতিবেদন পর্যালোচনা করলে এটি প্রতিভাত হয়ে ওঠে যে, জাতীয় অর্থনীতির আন্তঃসলিলা শক্তির উদ্বোধন যার হাতে সেই সবচেয়ে বেদনায় বিবর্ণ। বাংলাদেশের পরিসংখ্যান ব্যুরো অর্থনীতির অনেক প্রবণতার সূচক সন্ধানে কালাতিপাত করে; কিন্তু উপকূলীয় জেলা নিচয়ের আর্থসামাজিক চালচিত্রের, খানাপুরী থেকে শুরু করে ভূমি বণ্টন ব্যবস্থা, চাষাবাদের হালহকিকত, প্রাণিসম্পদের সালতামামি- অনেক কিছুর বাস্তবতার ব্যাখ্যা সংস্থাটির কাছে নেই। উপকূলীয় অঞ্চল যেন শুধু দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ের মাথাব্যথা সূত্রে সমুপস্থিত শুধু আকালের দিনে নাকালের মোহনায় ও একমাত্র মিডিয়ায়।

বঙ্গোপসাগরের তীরে ও বিশ্বের সেরা গহিন গরান বনের নীড়ে গড়ে ওঠা গাঙ্গেয় বদ্বীপ বাংলাদেশ যেন প্রকৃতির এক বিচিত্র বিলাস। তার মাথার ওপর হিমালয় পর্বত, সাইবেরিয়ার হিমবাহ ঠেকিয়ে চলে অবিরত, পায়ের নিচে বঙ্গোপসাগর তার ধোয়ায় পা প্রতিনিয়ত। সে কারণে কর্কটক্রান্তি রেখার ওপর দাঁড়িয়েও চরম নয় তার আবহাওয়া, নাতিশীতোষ্ণতার, মৌসুমি বায়ুর বরমাল্য বরিষণে বাংলা সতত সবুজ শস্যশ্যামল। আর তাই দ্বিজেন্দ্রলালের কথাই ঠিক- ‘ধন ধান্যে পুষ্পে ভরা আমাদের এই বসুন্ধরা’, তার সাথে এ কথাও আরো ঠিক- ‘এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি’। প্রকৃতি বাংলাদেশ আর তার তাবৎ বাসিন্দাদের ভালোবাসা দিয়ে রানীও করেছে আবার ভিখারিও বানিয়েছে। তাদের হঠাৎ এমন করে জাগিয়ে দেয় যে, ‘জ্বলে পুড়ে ছারখার তবু মাথা নোয়াবার নয়’ আবার হঠাৎ তাদের ঘুমের রাজ্যেও পাঠায়। তাদের অবস্থা পদ্মার পলিমাটির মতো ‘পানিতে ভিজে নরম কাদা আবার শুকিয়ে গেলে কঠিন খটখটে’। অসম্ভব চাহিদা অথচ অল্পতে তুষ্ট, সময় পেলে অকর্মণ্য অলসতায় সময় করে পার, ‘আমার বলার কিছু ছিল না’ বলে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকানোয়, অন্যের ওপর দোষ চাপানোয়, আক্ষেপ বেদনা প্রকাশেই প্রাণান্ত, সৃজনশীলতায় ধৈর্যের বড়ই অভাব। সাফল্যকে স্থায়ীকরণে-টেকসইকরণে মনোযোগে বিভ্রান্তি, আবার ব্যর্থতায় ম্রিয়মাণ বাংলাদেশের ক্রিকেট দল হঠাৎ ঝলসে ওঠে।

বাংলাদেশের উপকূলীয় অর্থনীতির অন্যতম অবলম্বন হচ্ছে জোয়ার-ভাটা বিধৌত দুনিয়ার বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বা গরান বনভূমি সুন্দরবন। নানা ধরনের গাছপালার চমৎকার সমারোহ ও বিন্যাস এবং বন্যপ্রাণীর অনন্য সমাবেশে সুন্দরবন চিহ্নিত হয়েছে এক অপরূপ প্রাকৃতিক নিদর্শন হিসেবে। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের একটি উল্লেখযোগ্য কেন্দ্র হিসেবেও এটি বিবেচিত; এখান থেকে সংগৃহীত হয় নানা কাজে ব্যবহারোপযোগী বনবৃক্ষ, আহরিত হয় প্রচুর পরিমাণ মধু, মোম ও মাছ এবং সে সূত্রে বা উপলক্ষে কয়েক লাখ মানুষের হয় কর্মসংস্থান। পরস্পর সংযুক্ত প্রায় ৪০০ নদী-নালা, খালসহ প্রায় ২০০টি ছোট-বড় দ্বীপ ছড়িয়ে আছে এখানে।

আজ থেকে প্রায় ২০০ বছর আগে সুন্দরবনের মূল আয়তন ছিল প্রায় ১৬ হাজার ৭০০ বর্গকিলোমিটার। বর্তমানে সঙ্কুুচিত হয়ে এর আয়তন প্রায় এক-তৃতীয়াংশে পৌঁছেছে। ১৯৪৭-এ দেশ ভাগের সময় এর দুই-তৃতীয়াংশ পড়েছে এ-ধারে, বাকিটা ওধারে, ভারতে। বাংলাদেশ অংশে বনভূমির বর্তমান আয়তন হবে প্রায় চার হাজার ১১০ বর্গকিলোমিটার, এর প্রায় এক হাজার ৭০০ বর্গকিলোমিটার জলাভূমি। এখানে আছে চারটি প্রশাসনিক রেঞ্জ- বুড়িগোয়ালিনী, খুলনা, চাঁদপাই ও শরণখোলা; আর আছে ১৬টি ফরেস্ট স্টেশন। ১৮৭৫ সালে প্রথম সুন্দরবনকে সংরক্ষিত বন হিসেবে ঘোষণা করা হয়। বনভূমির প্রায় ৩২ হাজার ৪০০ হেক্টর এলাকাকে অভয়ারণ্য হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ১৯৯৯ সাল সুন্দরবনকে ইউনেসকো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ) আদেশ (সংশোধন), ১৯৭৪-এর পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৭৭ সালে সুন্দরবনের অভয়ারণ্যগুলো প্রতিষ্ঠিত হয়। পশ্চিম (৯ হাজার ৬৯ হেক্টর), দক্ষিণ (১৭ হাজার ৮৭৮ হেক্টর) এবং পূর্বে (৫৪৩ হেক্টর)Ñ এই তিন এলাকায় এটি বিভক্ত।

এখানে নানান ধরনের প্রাণী সবাই মিলেমিশে বাস করে। বংশ, প্রতিপত্তি আর ক্ষমতার নিরিখে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ হলো রয়েল বেঙ্গল টাইগার। অধিকন্তু এখানে আছে প্রায় ৫০ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ৩২০ প্রজাতির আবাসিক ও পরিযায়ী পাখি, প্রায় ৫০ প্রজাতির সরীসৃপ, আট প্রজাতির উভচর ও প্রায় ৪০০ প্রজাতির মাছ। রয়েল বেঙ্গল টাইগার ছাড়া এখানে স্তন্যপায়ী অন্যদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- চিত্রা হরিণ, মায়া হরিণ, রেসাস বানর, বনবিড়াল, লিওপার্ড, শজারু, উদ ও বন্যশূকর।

নদীর অববাহিকাই মানবসভ্যতার সূতিকাগার, কৃষিই প্রাচীনতম জীবিকা আর শ্যামল সবুজ প্রান্তরে প্রাণিসম্পদের সমারোহই জীবনায়নের স্পন্দন। বাংলাদেশের উপকূলাঞ্চল যে এসব সত্য ও সম্ভারে সমৃদ্ধ তা তো চর্যাপদের পাতা থেকেও জানা যায়। সমুদ্র, নদীমেখলা প্রকৃতি আর শ্যামল সবুজ পরিবেশের সংমিশ্রণে উপকূলাঞ্চল গোটা দেশের, সমাজের, অর্থনীতির জন্য অনিবার্য অবকাঠামো শুধু নয়, উন্নয়ন প্রয়াস প্রচেষ্টায় সার্বিক ভারসাম্য রক্ষাতেও জরুরি। এটি সুপ্রাচীন কাল থেকে, ইতিহাসের পথ ধরে এ সত্য সতত সব ভূগোলে স্বীকৃত থাকলেও প্রাচীন এ জনপদে তা যেন সবসময় নতুন করে মনে করিয়ে দিতে হয় যখন পালা করে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে পড়ে সবাই। বৈশ্বিক উষ্ণায়নের প্রভাবে পড়ে, তাপমাত্রার পবির্তনপ্রসূত তারতম্য সূত্রে সমুদ্রের তলদেশ স্ফীত হয়ে ওঠার ফলে পরিবেশে ভারসাম্যহীনতার যে ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে চলেছে বিশ্বের প্রায় সব সমুদ্র উপকূল বেষ্টনীতে বঙ্গোপসাগর তীরবর্তী বাংলাদেশের জন্য তা ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’য়ের অশনি সঙ্কেত দিয়ে চলেছে। বাংলাদেশের নিম্নাঞ্চল, বিশেষ করে অদূরবর্তী দ্বীপাঞ্চল সামান্য জলোচ্ছ্বাসের চুতানাতাতে তলিয়ে যাচ্ছে, তা উদ্ধারে বশংবদ কোনো কার্যক্রম সফল হচ্ছে না। সুন্দরবনের প্রাণিবৈচিত্র্য বিপন্ন হতে চলেছে এর প্রভাবে। বাংলাদেশের উকূলীয় অঞ্চলের কৃষি অর্থনীতির জন্য তা দারুণ দুঃসংবাদ বৈকি।
কৃষিপ্রধান বাংলাদেশের অর্থনীতিতে একটি গুণগত ও কার্যকারণগত পরিবর্তন সময়ের প্রেক্ষাপটে স্পষ্ট হয়ে উঠছে। স্বাধীনতা লাভের পাঁচ দশক পরে এসে দেশের সমাজ ও অর্থনীতিতে যতগুলো পরিবর্তন তথা সাফল্যজনিত সূচক শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে তার মধ্যে খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ম্ভরতা অর্জন অন্যতম। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময়ে দেশের জনসংখ্যা ছিল সাড়ে সাত কোটি । সে সময় চাষাবাদযোগ্য ২৫৫ লাখ একর জমিতে ১০০ লাখ টন ধান উৎপাদিত হতো, সে তুলনায় ২০০৮ সালে জনসংখ্যা ১৪ কোটি ৪০ লাখে দাঁড়ালেও এ সময় ২৬১ লাখ একর জমিতে ধান উৎপাদিত হয়েছে ২৯০ লাখ টন, অর্থাৎ প্রায় তিনগুণ। দ্বিগুণ বর্ধিত জনসংখ্যার জন্য তিনগুণ বর্ধিত খাদ্যশস্য উৎপাদন নিঃসন্দেহে খাদ্যে স্বয়ম্ভরতা অর্জনের ক্ষেত্রে একটি ইতিবাচক অগ্রগতি বা সাফল্য। ১৯৭০ থেকে ২০০৮ সময়ে বাজেটে ক্রমান্বয়ে কৃষি খাতে বরাদ্দের হিস্যা যথেষ্ট হ্রাস (১৯ থেকে ৭ শতাংশ!) পাওয়া সত্ত্বেও এই প্রবৃদ্ধি একটি নীরব বিপ্লবের সাক্ষ্য বহন করে আর এর অগ্রসাধক দেশের কৃষকসমাজ।
এ প্রেক্ষাপটে উপকূলীয় অঞ্চলের কৃষি অর্থনীতির অবদান তুলনামূলকভাবে নিম্নমুখী। উপকূলীয় অঞ্চলের কৃষি খাত প্রধানত শস্য ও অশস্য (নন ক্রপ) দু’ভাগে বিভক্ত। প্রথমত বারবার প্রাকৃতিক দুর্যোগকবলিত হওয়ায় খাদ্যশস্য উৎপাদন তুলনামূলকভাবে এ ক্ষেত্রে বৃদ্ধি পায়নি। একটি পরিশীলিত সমীক্ষা-গবেষণা পর্যালোচনায় দেখা যায়, ১৯৮৪ থেকে ১৯৯৭ সালের মধবর্তী মাত্র ১৩ বছরে জাতীয় পর্যায়ে যেখানে প্রায় দ্বিগুণ পরিমাণ শস্য (খাদ্য ও অর্থকরী ফসল) উৎপাদিত হয়েছে সেখানে উপকূলীয় অঞ্চলে একই সময়ে শস্য উৎপাদন বাড়েনি; বরং কমেছে। উজান থেকে পানিপ্রবাহ কমে যাওয়ায় পানিতে লবণাক্ততা বৃদ্ধি পাওয়ায় এখানে চাষাবাদযোগ্য জমির পরিমাণ ক্রমান্বয়ে হ্রাস পেলেও চাষাবাদ পদ্ধতি প্রক্রিয়ায় নানান পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়েও কাক্সিক্ষত ফল ততটা আসেনি যতটা অশস্য অর্থকরী খাতে অর্থাৎ মৎস্যচাষসহ প্রাণিসম্পদ চাষ ও বিকল্প পণ্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে এসেছে। অশস্য খাতে আপাত ব্যাপক সাফল্যের ফলে কৃষি থেকে গড়পড়তায় জিডিপিতে এখনো সমানুপাতিকহারে অবদান (২৫-২৩ শতাংশ) রেখে চলেছে এ অঞ্চল। অশস্য খাতের এ সাফল্য টেকসই করা যেমন প্রয়োজন, একই সাথে শস্য উৎপাদনে, জমির সঠিক ব্যবহারে, উপায়-উপাদান সরবরাহে, চাষ পদ্ধতিতে আধুনিক প্রযুক্তির সমাবেশ ঘটানোয়, এমনকি ভূমি প্রশাসনেও সংস্কার আবশ্যক।

সময়ের পেক্ষাপটে উপকূলীয় অঞ্চলের কৃষি অর্থনীতিতে যে পরিবর্তন সূচিত হচ্ছে তার গতিপ্রকৃতি বিচার-বিশ্লেষণ জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে এ জন্য যে, একে যথাসময়ে যথাপ্রযত্ন প্রদান করা সম্ভব না হলে, উষ্ণায়নের প্রভাবক ক্ষয়ক্ষতিকে যথানিয়ন্ত্রণ ও মোকাবেলা করা সম্ভব না হলে সমূহ সম্ভাবনাময় একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশের আবদান থেকে অদূর ভবিষ্যতে জাতীয় অর্থনীতি শুধু বঞ্চিতই হবে না, সময়ের অবসরে জলবায়ুর পরিবর্তন প্রভাবে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে এটি গোটা দেশ ও অর্থনীতির জন্য দুর্ভাবনা-দুর্গতির কারণও হয়ে দাঁড়াতে পারে। দেশের অন্যতম তিনটি সামুদ্রিক বন্দর, প্রাকৃতিক সম্পদের স্বর্গ সুন্দরবন ও পর্যটন সম্ভাবনাসমৃদ্ধ কক্সবাজারকে কার্যকর অবস্থায় পাওয়া জাতীয় অর্থনৈতিক উন্নয়ন অভিযাত্রার জন্য যে কত জরুরি তা তো বলার অপেক্ষা রাখে না। নিকট অতীতে সিডর, আইলা, মহাসেন, ফণী, বুলবুল, সুন্দরবন ও সুন্দরবন সংলগ্ন এলাকার মানুষ এবং অন্যান্য প্রাণিসম্পদের ওপর যে দুর্বিষহ ও নেতিবাচক প্রভাব প্রতিক্রিয়া লক্ষ করা যায় তাতে উপকূলীয় কৃষি অর্থনীতি নিয়ে নতুন করে ভাববার অবকাশ দেখা দিয়েছে।

লেখক : সরকারের সাবেক সচিব এবং এনবিআরের প্রাক্তন চেয়ারম্যান


আরো সংবাদ



premium cement
শ্যালকদের কোপে দুলাভাই খুন : গ্রেফতার ৩ তীব্র গরমে কী খাবেন আর কী খাবেন না এবার তালতলী উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতির আপত্তিকর ভিডিও ভাইরাল বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীকে বক্তব্য প্রত্যাহার করে ক্ষমা চাইতে বললেন এমপি জয় পঞ্চপল্লীর ঘটনায় ন্যায়বিচারের স্বার্থে যা দরকার দ্রুততম সময়ের মধ্যে করার নির্দেশ সরকার ভিন্ন মত ও পথের মানুষদের ওপর নিষ্ঠুর দমন-পীড়ন চালাচ্ছে : মির্জা ফখরুল ধুনটে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে বৃদ্ধের মৃত্যু বাকৃবির এক্স রোটারেক্টরর্স ফোরামের বৃত্তি প্রদান অনুষ্ঠিত পাবনায় মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড, হিট স্ট্রোকে মৃত্যু ১ দাগনভুঞায় বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কটুক্তির ঘটনায় আ’লীগ নেতাকে শোকজ দখলে থাকা ৪ গ্রাম আজারবাইজানকে ফিরিয়ে দেবে আর্মেনিয়া

সকল