২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`
শেষ পর্ব

তারি দু’চারিটি অশ্রুজল

জয়নুল আবেদীন - ফাইল ছবি

এক সময় অর্থের অভাব ছিল, সুখ-স্বস্তি আর ফুর্তির অভাব ছিল না। নারায়ণগঞ্জের সাহিত্যানুশীলন থেকেই পরিচয় বরেণ্য সাহিত্যিক সাংবাদিকের সাথে। বন্দর সাধারণ পাঠাগার, নারায়ণগঞ্জ পৌর পাঠাগার ও পোস্টাল ক্লাবে বসত সাহিত্য আড্ডা। আড্ডায় রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, কবি আসাদ চৌধুরী প্রমুখও মাঝে মধ্যে উপস্থিত থাকতেন। সেই অনাবিল আনন্দ ও রঙ-রসের জগত ছেড়ে আদালত পাড়ার ধূসর জগত- ঠিক যেন ফকফকা চন্দ্রালোক ছেড়ে অমানিশায় প্রবেশ।

আমাদের উকিল সমিতি বই কিনবে। কী প্রকারের বই কিনবে? এ নিয়ে মতামত চাওয়া হয়। আমি মননশীল কিছু বই কেনার পরামর্শ দিই। কারণ, লাইব্রেরি ঠাসা আইনের বই। রস-কষহীন আইনের বই বাজেট ভাষণের চেয়েও তিক্ত। আমাদের দৈনন্দিন জীবনের কিছু অংশ যদি আইনবহির্ভূত থাকতে পারে তবে লাইব্রেরিতে মননশীল বই থাকতে পারবে না কেন? অর্থ প্রাপ্তির জন্যই আইন চর্চা, স্বর্গ প্রাপ্তির জন্য নয়। অর্থ জীবন সাজানোর সামগ্রী কিনতে পারে, সাজাতে পারে না। আইন, যুক্তি ও ভাষা দিয়ে মক্কেলের কথা বিচারককে বুঝানোই আইনজীবীর কাজ। জীবন সাজানোসহ যুক্তির ভাষাকে মহিমান্বিত করে সাহিত্য।

আমাদের আইনজীবী সমিতির অভিষেক অনুষ্ঠানের স্মরণে প্রতি বছর স্মরণিকা প্রকাশিত হয়। স্মরণিকায় সাহিত্যের পাতায় চন্দন কুমার সরকার, হারুন অর রশিদসহ আমরা ক’জন লেখতাম। আমার প্রথম লেখা ‘আইনজীবীর ভাষা’(গুগলে আছে) সাধারণ আইনজীবীদের মনে আনন্দ দিয়েছিল। ধূসর-পাণ্ডুর আদালতপাড়া। এখানে মন ও মননশীলতার ঠাঁই নেই। এ কারণেই হয়তো স্মরণিকায় বন্ধ হয়ে যায় সাহিত্যের পাতা।

নারায়ণগঞ্জ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে ১০ ডিসেম্বর ২০২১ স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী অনুষ্ঠান। সম্মাননার জন্য ডাকা হয়েছিল আমাকেও। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি এস এম মজিবুর রহমান (বিচারপতি বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট)। সম্মাননা ক্রেস্ট বিতরণ শেষে বিচারপতি যখন বক্তব্য দিতে ওঠেন তখন বেশ রাত। এত রাতে কে শুনবে তার কথা? যখন কথা বলতে শুরু করেন তখন পিনপতন নীরবতা। কী প্রাঞ্জল ভাষা! কি বাচনভঙ্গি! কি রস! কি মধু! ঘণ্টা পার হয়, রাত গভীর থেকে গভীরতর হয়- বাড়ে কনকনে শীত, বাড়ে শ্রোতা-দর্শকও।

৯ মার্চ একই ব্যক্তির সাথে আবার দেখা হয় বইমেলায়। মেঘনা পাবলিকেশন্সের ৬১২ নং স্টল। স্টলে স্ত্রী-কন্যাসহ বিচারক। হাতে ‘সালমার সংসার’ নামক গ্রন্থ। কফি পান করছেন প্রকাশক আবুল হোসাইনের পাশে বসে। এই দৃশ্য দেখে এপিজে আবদুল কালামের উক্তিটি মনে পড়ে গেল, ‘যখন মানুষের মনে সততা থাকে তখন তার চরিত্র সুন্দর হয়। চরিত্র সুন্দর হলে ঘরে শান্তি থাকে। আর ঘরে যখন শান্তি থাকে তখন একটি জাতি উন্নতি করে। সামনের দিকে এগিয়ে যায়।’

থানা, হাসপাতাল আর আদালত বাইরে ভয়ানক কঠিন স্থান। অন্তঃসলিলা ফল্গু নদীর মতো কঠিন পাথর সরালেই বের হয়ে আসে কোমল নির্ঝর। সেই নির্ঝরের সন্ধান যারা পেয়েছেন তাদের মধ্যেও আছেন অনেক বিচারক ও আইনজীবী। দ্বিজেন্দ্র লাল রায় বা ডি এল রায় ছিলেন দিনাজপুরের সহকারী ম্যাজিস্ট্রেট। ডিএল রায় একাধারে বিশিষ্ট কবি, নাট্যকার ও সঙ্গীত স্রষ্টা। ‘ধন ধান্য পুষ্পে ভরা আমাদের এই বসুন্ধরা’ তারই রচিত। বঙ্কিম চন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ছিলেন ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট ও কালেক্টর। নবীন চন্দ্র সেনও ছিলেন ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট। সাবেক প্রধান বিচারপতি হাবিবুর রহমানের নাম উল্লেখযোগ্য। এই প্রবন্ধ লেখাকালেও মুহাম্মদ হাবিবুর রহমানের ‘কোরানসূত্র’ বইটি আমার সামনে ছিল। হাতে নিয়ে মলাট উল্টাতেই পরিচয় চোখে পড়ে, ‘মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান প্রেসিডেন্সি কলেজ, রাজশাহী কলেজ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও অক্সফোর্ড বিশ^বিদ্যালয়ে শিক্ষা লাভ করেন। লন্ডনের লিংকনস ইন থেকে ১৯৫৯ সালে তিনি ব্যারিস্টার হন। বিভিন্ন সময়ে ঢাকা ও রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয়ে ইতিহাস ও আইন বিভাগে অধ্যাপনা করেন। ১৯৬৪ সালে তিনি ঢাকা হাইকোর্ট বারে যোগদান করেন। ১৯৯৫ সালে বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি নিযুক্ত হন। তিনি ১৯৯৫ সালে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের তত্ত¡াবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ছিলেন। ১৯৮৪ সালে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেন। তিনি বাংলা একাডেমি ও এশিয়াটিক সোসাইটি অব বাংলাদেশের একজন ফেলো। তিনি লিংকনস ইনের অনারারি বেঞ্চার এবং অক্সফোর্ড বিশ^বিদ্যালয়ের উরস্টার কলেজের অনারারি ফেলো। তার (২৮ জানুয়ারি ২০০৩ পর্যন্ত) প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা ৩৩।’ তিনি একাধারে গবেষক, লেখক, শিক্ষাবিদ, আইনজীবী, রবীন্দ্র বিশেষজ্ঞ ও ভাষাসৈনিক।

নির্ঝরের সন্ধান যারা পেয়েছেন, যেসব আইনজীবী তাদের মধ্যে, চিরস্মরণীয় এক নক্ষত্রের নাম অ্যাডভোকেট রজনীকান্ত সেন। তিনি ১৮৯১ সালে রাজশাহীতে আইন পেশা শুরু করেন। তিনি নিজে যেমন সুন্দর তেমন সুন্দর তার সৃষ্টি। সঙ্গীত জগতের অন্যতম দিকপাল রজনীকান্ত সেনের নাতনী, ভারতের মহানায়িকা সুচিত্রা সেন। অ্যাডভোকেট অতুল প্রসাদ সেন। রংপুর থেকে আইন পেশা শুরু। তিনি একাধারে কবি গীতিকার ও গায়ক। ‘মোদের গর্ব মোদের আশা, আ মরি বাংলা ভাষা’ তার রচিত এই গানটি মুক্তিযুদ্ধে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছিল। এরকম একজনের পর একজনের নাম প্রকাশ করতে শুরু করলে প্রবন্ধের কলেবর দ্বিগুণ হয়ে পড়বে। গত মাসে সুপ্রিম কোর্টের এক বন্ধু আবুল খায়ের তার লেখা, ‘আদি ভারতবর্ষ থেকে বাংলাদেশ’ নামে একটি বই পাঠিয়েছেন। ৬০০ পৃষ্ঠার বইটির মূল্য ৯৯৯ টাকা। মেঘনা পাবলিকেন্স থেকে জুলাই মাসে প্রকাশিত বই, সুপ্রাচীন ভারতবর্ষ থেকে শুরু করে বঙ্গবন্ধু প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ নিয়ে শেষ করেন।

আদালতপাড়ায় অর্থের মাপকাঠিতে ওঠানামা করে সুখ-দুঃখের পারদ। পারদ ওঠানামার পেছনে ছুটতে ছুটতে কে কখন শেষ খেয়ায় চড়ে বসেন ঠিক নেই। ‘মানুষ বড়ই আশ্চর্যজনক ও বোকা। সে সম্পদ অর্জন করতে গিয়ে স্বাস্থ্য হারায়। তারপর স্বাস্থ্য ফিরে পেতে সম্পদ নষ্ট করে। সে বর্তমানকে ধ্বংস করে ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে, আবার ভবিষ্যতে কাঁদে অতীতের কথা স্মরণ করে। সে এমনভাবে জীবন অতিবাহিত করে যেন সে কখনো মরবে না। কিন্তু, সে এমনভাবে মরে যেন সে কখনো জন্মায়নি।’ পেছনের দিকে তাকিয়ে কখনো কখনো মনে হয়, আমি নিজেই যেন হজরত আলী রা:-এর উক্ত আশ্চর্যজনক বোকা। সুখপাখির সন্ধানে ১৯৮৫ সালে ঢাকা সিএমএম কোর্ট থেকে আইন পেশা শুরু, হোমনা এবং সোনারগাঁ উপজেলা হয়ে এখন জেলা কোর্ট নারায়ণগঞ্জে। ধূসর-পাণ্ডুর আদালতপাড়ায় যারা জোনাকির মতো সামান্য আলো জ্বেলেও পথ দেখিয়েছিল তারাই আমার কাছে স্মরণীয়-

১, আশির দশকের ঘটনা। সিএমএম কোর্টের উত্তর-পশ্চিম দিকের তিন তলায় বসতেন ম্যাজিস্ট্রেট হেমায়েত উদ্দিন তালুকদার। সব দিক থেকে তিনি একজন জাঁদরেল বিচারক। আমার মতো আইনজীবীরা তার এজলাসের সামনে দিয়ে হাঁটাহাঁটি করতেও ভয় পেতাম। তিনি সবসময় সাধারণ মানুষ ও আইনজীবীদের কাছ থেকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে চলতেন। হাসতেও দেখিনি, তার পরেও তাকেই আমার ভালো লাগত। এ এজলাসেই প্রথম সিআর মামলা। ভেতরে ভেতরে খুব ভয় পাচ্ছিলাম। এমন সময় ডাক পড়ল আমার মামলার। আমি ঘটনার আগাগোড়া বর্ণনা করলাম। বিচারক হলফপূর্বক বাদির ডেফিনিশন নেয়ার জন্য আমাকে নির্দেশ দিলেন। ডেফিনিশন আবার কী? এসব বিষয়ে আমি কিছুই জানতাম না। তাই বারবার ঘটনাই বর্ণনা করছিলাম। বাদিকে কোনো কথা বলার সুযোগই দিচ্ছিলাম না। তা দেখে বিজ্ঞ বিচারক বলতে বাধ্য হলেন-

-বিজ্ঞ আইনজীবী সাহেব, আপনি দয়া করে থামুন।
আমি থামতেই তিনি মামলাটি আগাগোড়া দেখলেন। নিজেই মক্কেলকে জিজ্ঞাসাবাদ করলেন। আসামির বিরুদ্ধে সমন দিয়ে জানতে চাইলেন-
-আপনার সিনিয়র কে?
আমি চুপ করে রইলাম। আমার নীরবতা দেখে-
-বিজ্ঞ আইনজীবী সাহেব, এত কাঁচা হাতে মামলা করে মক্কেল জেতাতে পারবেন তো?
সেদিনের কথাটি ভুলিনি। এ ঘটনার বছর দেড়েক পরই সোনারগাঁ উপজেলা কোর্টে দায়েরকৃত সিআর মামলা নং-৪৬/৮৭ বিবাদিদের সাজা হয়। সাজা আপিল রিভিশন হয়ে মহামান্য সুপ্রিম কোর্টেও বহাল থাকে। মহামান্য সুপ্রিম কোর্টে লিভ অব আপিল নং-২৭৩/২০০০। প্রধান বিচারপতি মাহমুদুল আমীন চৌধুরী, বিচারপতি মইনুর রেজা চৌধুরী, বিচারপতি মোহাম্মদ গোলাম রাব্বানী ও বিচারপতি মোহাম্মদ ফজলুল করিম, প্রমুখের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ ৬ আগস্ট ২০০১ আদেশে পূর্ববর্তী নি¤œ আদালতের রায় আদেশ সঠিক হয়েছে মর্মে লিভ অব আপিল ডিসমিস করেন।’

২. ‘কালো কোট গায়ে চড়িয়ে, নামের সাথে অ্যাডভোকেট তকমা জুড়ে আইনাঙ্গনে ঢুকে বিজাতীয় ভাষার দাপটে দু’চোখে সর্ষেফুল দেখতে শুরু করি। সিনিয়র আইনজীবীর স্বাক্ষরযুক্ত ফিফটিফোর, ছিনতাই, অপহরণ ও মারামারি মামলার গোটা পাঁচেক দরখাস্ত মুখস্থ করার জন্য বাসায় নিয়ে আসি। বৈদ্যুতিক বাতির তলায় শুয়ে শুয়ে মুখস্থ করি। সাহস করে একদিন এক ফিফটিফোর মোকদ্দমায় ইংরেজিতে মুভ করতে শুরু করি। আমার মুভ শোনার পর ম্যাজিস্ট্রেট সাহেব সহাস্য বললেন-
-বিজ্ঞ আইনজীবী সাহেব, আপনার আসামির জামিন মঞ্জুর করলাম। তবে সেটি আপনার শুনানিতে সন্তুষ্ট হয়ে নয়, নিজে রেকর্ডপত্র দেখে।’ (বিচারের বাণী, পৃষ্ঠা-২০)

৩. হোমনা উপজেলা কোর্টের ম্যাজিস্ট্রেটের নাম দেবকুমার চক্রবর্তী আর কোর্ট ইনসপেক্টরের নাম জীবন কুমার রায়। আমরা সংক্ষেপে বলতাম ডি কে চক্রবর্তী ও জীবন বাবু। বিজ্ঞ ম্যাজিস্ট্রেট সাহেব বহুদিন থেকে আমার ব্রিফহীন অবস্থা লক্ষ করছেন। তিনি কী মনে করে একদিন আমাকে তার খাস কামরায় ডেকে নেন। ম্যাজিস্ট্রেট ডি কে চক্রবর্তীকে খাস কামরায় একা পেয়ে আদাব দিয়ে প্রবেশ করি। তিনি আমাকে ইশারায় বসতে বলেন। আমি কাচুমাচু করে বসতেই কুশলাদি জিজ্ঞেস করে জানতে চান-
-যতদূর জেনেছি, আপনার লেখাপড়া ভালো। আপনার কোনো মামলা নেই, কারণ কি?
-উকিলদের মধ্যে আমি নতুন। আমার ধারণা, লোকজন নতুন উকিল দিয়ে মামলা করাতে চায় না।
-আপনিও নতুন, আপনার মুহুরিও নতুন, এটিও একটি ভুল হয়েছে। নতুন উকিলের পুরনো মুহুরি নেয়া উচিত।
-কথাটি সত্য। (মনে পড়ে ঢাকা কোর্টে মুহুরি কর্তৃক জিম্মি দশার কথা) এ অবস্থায় আমার বোধ হয় বেশি দিন হোমনা থাকা চলবে না। যে টাকা নিয়ে হোমনা এসেছিলাম সে টাকা ফুরিয়ে গেছে। আমাকে আবার ঢাকার যন্ত্রণায় ফিরে যেতে হবে।
-আপনার জন্য করুণা হয়, মামলা থাকলে যতদূর সম্ভব সাহায্য করতাম।
ডি কে চক্রবর্তী সম্পর্কে নানা মানুষ নানা কথা বলাবলি করত। আজকের কথায় তার চরিত্রে যে মানবিকতা দেখলাম তা সব কিছুকে ঢেকে দিলো। তাকে খুব আপনজন মনে হলো। (বিচারের বাণী, পৃষ্ঠা-৯৭)

৪. সোনারগাঁ উপজেলা কোর্টে আমার গ্রামের এক চৌকিদারের মামলা দিয়েই ওকালতি শুরু। তখন ম্যাজিস্ট্রেট ছিলেন আতাউর রহমান। আতাউর রহমান আমার নিজ জেলার লোক। ডাকাতি মামলায় আমি মনের মতো জামিন শুনানি করলাম। তিনিও মনোযোগ দিয়ে শুনলেন। শুনানির পর জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করে আসামি হাজতে প্রেরণ করেন। ম্যাজিস্ট্রেট সাহেব এজলাস থেকে নেমে খাস কামরায় গিয়ে কি মনে করে আমাকে ডেকে নেন। খাস কামরায় প্রবেশ করতেই ‘কোথায় আছি? কেমন আছি? জানতে চান।’ আমি সব কিছু জানাই। তিনি মন দিয়ে শুনলেন। আমার জন্য সমবেদনা প্রকাশ করেন। বলেন- আপনার বাড়ির কাছে সোনারগাঁ উপজেলা- আপনি এখানে চলে আসেন। হোমনা দুর্গম এলাকা। আপনার জন্য হোমনার চেয়ে সোনারগাঁ ভালো হবে।
-সোনারগাঁ আমাকে কে চিনে? কে আমার কাছে মামলা নিয়ে আসবে?
-হোমনা আপনার নিজের এলাকা। সবাই আপনার চেনা। সেখানেও তো কেউ আপনার কাছে মামলা নিয়ে যায়নি।
-আপনার কথাই সত্য স্যার।
-এলাকা পরিচিত হলে মামলা বেশি পাওয়া যায়, এ ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। ওকালতি ভালো করতে হলে, এলাকা যত অপরিচিত তত ভালো। মক্কেল দু’কারণে নতুন উকিলের কাছে আসে না। প্রথম কারণ, পুরনো উকিলের সাথে আইনযুদ্ধে নতুন উকিল এঁটে উঠতে পারবে না। দ্বিতীয় কারণটি মনস্তাত্তি¡ক। ঈর্ষা বিদ্বেষটা পরিচিতের মধ্যেই বেশি কাজ করে। আতাউর রহমান সাহেবের কথায় সোনারগাঁ আসি। আমার আইন পেশা নতুন বাঁক নেয় সোনারগাঁ আসার পরই।

৫. সিনিয়র সহকারী জজ দ্বিতীয় আদালতে দেওয়ানি মামলা নং-২৯২/২০০৬। বিচারক মোহাম্মদ জসিম। রায় প্রকাশের দুই-এক দিন আগে আমাকে এই মর্মে জানান, মালিকানা সংশ্লিষ্ট একটি সইমুহুরি দলিল প্রদর্শন চিহ্নিত করা হয়নি। যে মুহূর্তে বিষয়টি জানতে পারি সে মুহূর্তে বালাম এনে মেলানো সম্ভব নয়। তার পরামর্শ মোতাবেক পরবর্তী কোনো দলিলে অপ্রদর্শিত দলিলের পরিচয় লেখা থাকলে, পরবর্তী দলিলের প্রদর্শন সূত্রে অপ্রদর্শিত দলিলও বিজ্ঞ আদালত বিশ্বাস করলে প্রদর্শন করতে পারেন। অবগত হওয়ার পরপর নিয়ম মোতাবেক অপ্রদর্শিত দলিলটি প্রদর্শন করিয়েছিলাম। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সাথে চার শতাংশ সম্পত্তি নিয়ে ২০০৬ সালে শুরু হওয়া মামলাটি ১০ বছর পর রায় দিতে গিয়ে এই অজুহাতে খারিজ করতে পারতেন। পক্ষকে উচ্চ আদালতে গিয়ে হয়তো আরো বছর দশেক ঘুরতে হতো। ফলে মামলার সংখ্যাসহ বাড়ত ভোগান্তিও।

৬. একটি প্রিয়েমশন মামলা। করা হয়েছিল সংশোধিত নতুন আইনের ১৮ উপধারায়। এই ধারায় নারায়ণগঞ্জ কোর্টে সম্ভবত এটিই প্রথম মামলা। মামলার প্রতিপক্ষ সাবেক প্রতিমন্ত্রীর স্ত্রী ও একই আদালতের আইনজীবী। মামলাটি দায়ের করার পরই হৈ হৈ রব পড়ে যায়। হৈ হৈ শুরু হয় আমার আইন পেশার যোগ্যতা নিয়েও। সবার কাছে হাস্যাস্পদ হওয়ার ভয়ে মামলাটি প্রত্যাহার করতে গিয়ে জানতে পারি, মামলা সঠিক। সঠিক বলেই অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞায় প্রতিপক্ষকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছেন। তরফছানি প্রতিপক্ষ আপত্তিসহ আরজি খারিজের পিটিশন দেন। পিটিশন নামঞ্জুর করেন। মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম সাহেবের নামঞ্জুর আদেশ মহামান্য হাইকোর্টও বহাল রেখেছেন।

সাবেক প্রধান বিচারপতি মো: রুহুল আমিনের লিখিত বক্তব্য,এসব বিচ্যুতি দৃশ্যত সামান্য কিন্তু তাকে অবশ্যই মার্জনা করা যাবে না। কারণ ব্যক্তির বিশেষ অবস্থান বা মর্যাদাই এখানে মুখ্য বিবেচ্য। তাকে যদি মার্জনা করা হয়, তাহলে সমাজে এর ভয়ানক ক্ষতিকর প্রভাব পড়তে বাধ্য। জনগণ ওই ব্যক্তির ওপর বিশ^াস স্থাপন করেছিল। তাই ব্যক্তির উচিত ছিল, সেই বিশ^াসের মর্যাদা রক্ষা করা। কিংবা বলা যায়, যে ব্যক্তি বিশেষ পদমর্যাদায় (রাষ্ট্রীয়) আসীন ছিলেন, তার পক্ষে ওই ধরনের বিচ্যুতি মানানসই নয়।’ (প্রথম আলো, ৫ আগস্ট-২০০৭)

সেবা বনাম ব্যবসায়
ভয়ানক ক্ষতিকর প্রভাবের কারণেই ‘সেবা’ শব্দটিই বিদায় নিয়েছে আদালতপাড়া থেকে। ‘সেবা’ স্থানটি এখন ‘ব্যবসায়’-এর দখলে। এই মনোবৃত্তি প্রায় সেবা প্রতিষ্ঠানে। ২০১০ সালের টিআইবি রিপোর্টে ঘুষ লেনদেনে, ‘সেবা খাতের মধ্যে বিচার বিভাগেই দুর্নীতি বেশি হয়।’ টিআইবি রিপোর্ট দৃষ্টে কখনো কখনো মনে হয়, সেবা খাতের ‘সেবা’ শব্দটির স্থলাভিষিক্ত হয়ে রয়েছে ‘ব্যবসায়’। ২০১২-এর আইসিটি স্কাইপি কেলেঙ্কারি হলো আন্তর্জাতিক মানের বড় কেলেঙ্কারি। ‘স্কাইপি কেলেঙ্কারি ফাঁস হওয়ার পর চরম অস্বস্তিতে পড়েছিল আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সাথে সংশ্লিষ্টরা। দেশে বিচার ব্যবস্থার ইতিহাসে এমন কেলেঙ্কারি আর কখনো হয়নি বলেও তারা মন্তব্য করেন। ওই ঘটনার পরের বছর আবারো ট্রাইব্যুনাল ঘিরে আলোচনা। এবারের বিষয় মামলার ‘রায়ের খসড়া ফাঁস’। ‘আগেরটির তদন্ত হয়নি তাই আরেক কেলেঙ্কারি’ শিরোনামে ৪ অক্টোবর ২০১৩ বিস্তারিত প্রকাশিত হয় প্রথম আলো পত্রিকায়। এ প্রসঙ্গে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম প্রথম আলোকে বলেছিলেন, ‘এটি সত্যি, স্কাইপি কথোপকথন ফাঁস হওয়ার সাথে জড়িতদের খুঁজে বের করে শাস্তির আওতায় আনা গেলে ‘রায়ের খসড়া ফাঁস’ হওয়ার মতো ঘটনা নাও ঘটতে পারত।’ স্কাইপি কথোপকথন ফাঁসের তদন্ত কেন করা হলো না? এ প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদ প্রথম আলোকে বলেছিলেন, ‘মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার শুরুর থেকে ট্রাইব্যুনালকে নিয়ে দেশে-বিদেশে চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র চলছে। এটি থামানো খুব দুরূহ ব্যাপার’। যে সাংবাদিক স্কাইপিফোন কথাবার্তার বিবরণ নিয়ে দৈনিক আমার দেশ পত্রিকায় রিপোর্ট করেছিলেন সে সাংবাদিক নিপীড়নের ভয়ে পালিয়ে গিয়েছিলেন লন্ডন।

‘সাংবাদিকরা সোর্স প্রকাশে বাধ্য নয়’ শিরোনামে প্রকাশ, ‘হাইকোর্ট বলেছেন, গণমাধ্যম রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ। গণতন্ত্রের অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটি বলতে দ্বিধা নেই যে, সাংবাদিকদের তথ্যের উৎস (সোর্স) প্রকাশ না করার ক্ষেত্রে আইন সুরক্ষা দিয়েছে (দৈনিক দেশ রূপান্তর, ২৪ অক্টোবর-২০২২)। মহামান্য উচ্চ আদালতের এই আদেশ নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। এতে কিছুটা হলেও ত্রুটি-বিচ্যুতি থেকে নিজেদের সংশোধন করার চেষ্টা করবেন। টিআইবি রিপোর্টে সাংবাদিকদের নিরাপত্তাসহ নিপীড়ন থেকে রক্ষার জন্য (১০ অক্টোবর-২০২২) ‘তথ্য অধিকার আইন বাস্তবায়নে মানসিকতার পরিবর্তন জরুরি’ মর্মে সুপারিশ করা হয়েছে। দাবিসহ এরকম সুপারিশের পর গত জুন মাসে ‘দ্য প্রেস কাউন্সিল (সংশোধন) অ্যাক্ট-২০২২-এর খসড়ায় নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। এ বিষয়ে গত নভেম্বর ৬ দৈনিক নয়া দিগন্ত পত্রিকায় এক প্রবন্ধে এম আবদুল্লাহ বলেন-

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, গণমাধ্যমকর্মী আইন, ডাটা প্রোটেকশন আইন, ২৯টি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানকে ‘গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিকাঠামো’ ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশসহ নানা নিয়ন্ত্রণমূলক আইন ও বিধিবিধানের বেড়াজালে ক্রমেই সঙ্কুচিত করে তোলা হয়েছে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা। তার ওপর প্রেস কাউন্সিল আইনের সংশোধনীতে সংবাদমাধ্যম নিয়ন্ত্রণের নানা বিধিবিধান যুক্ত করায় সাংবাদিক সমাজে ক্ষোভ ও উৎকণ্ঠার সৃষ্টি হয়েছে।’

রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ সংবাদমাধ্যম নিয়ন্ত্রণের জন্য বিধিবিধান আরোপসহ স্বাধীনতা সঙ্কুচিত করার আগে মনে রাখা উচিত, কখনো কখনো আইন ফ্রাঙ্কেনস্টাইন দানবের মতো। যার সুরক্ষার জন্য করা হয় তার নিজের জীবনই অরক্ষিত হয়ে ওঠে। ২০০১ সাল থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত সময়ে সিপিআই সূচকে সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ছিল প্রথম। ২০০৬ সালে তৃতীয় ও ২০০৭ সালে সপ্তম এবং ২০১০ সালে ১২তম। অর্থাৎ, দিন দিন সার্বিক অবস্থার উন্নতি হলেও বিচার বিভাগের তেমন উন্নতি লক্ষণীয় নয়। জরিপে অংশ নেয়া ৮৮ শতাংশ মানুষ বলেছেন, ‘সেবা খাতগুলোর মধ্যে তারা সবচেয়ে বেশি দুর্নীতির শিকার হন বিচার বিভাগে।’ দেশে প্রতি পরিবার গড়ে ঘুষ দিয়েছে ছয় হাজার ৬৩৬ টাকা- টিআইবির সর্বশেষ রিপোর্ট (দৈনিক প্রথম আলো, ১ সেপ্টেম্বর-২০২২)। এ অবস্থায় প্রতিকারের পরিবর্তে সুরক্ষা আইন করা হলে আরো কমবে সেবার মান। কমতে কমতে সেবার মান যেদিন শূন্যের কোটায় চলে যাবে সেদিন কী হবে?

বিজ্ঞানের ভাষায়, কোনো শূন্যস্থানই শূন্য থাকে না। অ্যানালগ বিশ্বের দুর্বল বিচার পদ্ধতির স্থান ডিজিটাল বিশে^র দখলে চলে যাচ্ছে। মানুষের ব্রেন dangerous বা ভয়ঙ্কর সময়টা পার হতে পারলেই (যদি এর মধ্যে বৈশি^ক উষ্ণতা, রাজনৈতিক উষ্ণতার মহাবিপর্যয় না ঘটে) মুখোমুখি হবে নতুন এক ডিজিটাল বিশ্বের। সনাতন পদ্ধতির ‘ল’-এর স্থান দখল করবে Law of natural gift. বিচার বিভাগের পুরনো পদ্ধতির স্থান দখল করতে শুরু করেছে আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি। বিচারব্যবস্থা ই-জুডিশিয়ারির আওতায় নিয়ে আসার জন্য ইতোমধ্যে রিটও করেছেন কেউ কেউ। ই-জুডিশিয়ারির আওতায় বিচারব্যবস্থাই তথ্যপ্রযুক্তির আওতায় চলে আসবে। তথ্যপ্রযুক্তির আওতায় চলে এলে মামলা জটসহ কমবে দুর্নীতিও। অপরাধী চিহ্নিত করতে পুলিশ এক সময় অনেকটাই সোর্সনির্ভর ছিল। দিন দিনই সরে এসেছে সোর্সনির্ভরতা থেকে। এখন কোথাও ঘটনা ঘটা মাত্রই শুরু হয় ওই এলাকায় ব্যবহৃত মুঠোফোনের কল ও ক্ষুদে বার্তা আদান-প্রদানের তথ্য বিশ্লেষণ। ডিএনএ পরীক্ষা, রাসায়নিক পরীক্ষা, ফিঙ্গারপ্রিন্ট বা বায়োমেট্রিক পদ্ধতি, এনআইডি, দূরনিয়ন্ত্রক রোবটের মতো আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে সূত্রবিহীন ঘটনার তদন্তে বেরিয়ে আসছে অপরাধীরা। অপরাধী চিহ্নিত করতে ডিজিটাল পদ্ধতি শতভাগ নির্ভরশীল ও কার্যকর। খুন, ধর্ষণ, চুরি, ডাকাতি সন্ত্রাসে রিমান্ডে নিয়ে পিটিয়ে স্বীকারোক্তি আদায়ের সনাতন পদ্ধতিও শেষ পর্যায়ে। একজনের বায়োমেট্রিক পরীক্ষাই বলে দেবে, ঘটনার সময় হাতের ১০টি আঙুল কখন কোথায় ছিল। স্কাইপিফোন কথাবার্তা ফাঁস হওয়ার পর বন্ধ হয় অন্যায় টেলিফোন কথোপকথনও। জমাভাগ, খতিয়ান পরীক্ষাসহ মালিকানার কাগজপত্রও ডিজিটালাইজড তথা তথ্যপ্রযুক্তির আওতায় নেয়ার কাজ শুরু হয়ে গেছে। মানুষের তৈরি আইন দিয়ে শরীরকে ‘পাসপোর্ট’-এর আওতায় রাখা সম্ভব হলেও মন, পবন ও নেট আওতায় রাখা সম্ভব হচ্ছে না। অপরাধের অন্যতম কারণ যে অর্থ, ডিজিটালাইজড দেশে নগদ অর্থ লেনদেন নেই বললেই চলে। এক সময় গোটা বিশ^ হয়ে পড়বে ডিজিটালাইজড। এ বছর চিকিৎসাবিজ্ঞানে নোবেল পেয়েছেন সুইডেনের বিজ্ঞানী সোয়াস্তে প্যাবো। হাজার বছর আগের বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া কোনো প্রাণীর জীবাশ্ম থেকে ডিএনএ আবিষ্কারের বিস্ময়কর কাজটি করেছেন সুইডিস বিজ্ঞানী প্যাবো। প্রাণের বিকাশ কিভাবে ঘটবে তার সবটাই লিপিবদ্ধ আছে এই ডিএনএতে। ডিএনএ থেকে একজনের জেনেটিক প্রোফাইল তৈরি সম্ভব। জেনেটিক প্রোফাইল থেকে জীবনবৃত্তান্ত বের করার খুব কাছাকাছি পৌঁছে গেছে মানুষ।

অপরাধ না করার কারণ দু’টি
প্রথমত, অপরাধ গোপন করার সুযোগ না পাওয়া। তর্কের খাতিরে কেউ কেউ বলতেই পারে, প্রযুক্তিরও রয়েছে একটি নেতিবাচক দিক। অ্যানালগ যুগে গামছা পরে মালকোচা দিয়ে শরীরে তেল মেখে কাঁচা ঘরে সিঁধ কেটে ধান-চাল, শিল নোড়া চুরি করার প্রচলন ছিল- তথ্যপ্রযুক্তির যুগে হয় ডিজিটাল চুরি। ২০১৬ সালে উত্তর কোরিয়ার হ্যাকাররা বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে এক বিলিয়ন ডলার হ্যাক করার পরিকল্পনা করে এবং এ কাজে প্রায় সফল হতে চলেছিল। কিন্তু ভাগ্যক্রমে ৮১ মিলিয়ন ডলার ছাড়া বাকি অর্থের ট্রান্সফার আটকে যায়। কিন্তু কিভাবে বিশে^র বিচ্ছিন্ন ও দরিদ্র একটি দেশ এ রকম বড় আকারের সাইবার হ্যাকিং দল তৈরি করল? এ প্রশ্নের উত্তর দ্বিতীয় কারণ।

দ্বিতীয় কারণ
মানুষের ব্রেন সর্বাধুনিক কম্পিউটারের চেয়েও কমপক্ষে ১০ লাখ গুণ বেশি ক্ষমতাসম্পন্ন। মানুষ তাদের ব্রেনের মাত্র ৪ থেকে ৫ শতাংশ ব্যবহার করছে। আর প্রতিভাবান-সফল ব্যক্তিরা এই ব্রেনের ক্ষমতার ১০ থেকে ১৫ শতাংশ ব্যবহার করেছেন। অর্থাৎ, বিশ্ব এখনো A little learning is a dangerous thing-এর পর্যায়ে। বিশ্বখ্যাত, এ মাসটির নিউরোসাইন্টিস্ট প্রফেসর ফ্রান্সিস স্মিথের ভাষায়, ‘মানুষ যেদিন বুঝতে পারবে, ‘সে সৃষ্টির সেরা এবং অনন্য’, সেদিন নিজকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাবে না; বরং এখনকার চেয়ে নিজকে বেশি শ্রদ্ধা করবে। পৃথিবীকে স্বর্গের অংশ হিসেবে অনিষ্ট করার পরিবর্তে অন্যের কল্যাণ চাইতে শুরু করবে। অন্যের কল্যাণ চাইলে আপনার কল্যাণ হবে। অন্যের অকল্যাণ চাইলে নিজেরই অকল্যাণ হবে। নবী করিম সা: বলেছেন, ‘... বেঁচে থাকো অন্যের দোষ খোঁজা থেকে এবং অন্যের ওপর গোয়েন্দাগিরি করা থেকে, বেঁচে থাকো (মন্দ কাজে) প্রতিযোগিতা করা থেকে, বেঁচে থাকো অপরকে হিংসা ও ঘৃণা করা থেকে এবং একে অপরকে পরিহার করা থেকে; এমনভাবে থাকো যেন তোমরা পরস্পর ভাই এবং আল্লাহর দাস।’ (বুখারি, খণ্ড ৮, অধ্যায়-৭৩, হাদিস নং-৯২) প্রফেসর ফ্রান্সিস স্মিথের ভাষা আর এই হাদিসের ভাষা অভিন্ন অর্থ- যার মর্ম, Law of natural gift বা ‘প্রকৃতির প্রতিদান’ (বিস্তারিত জানার জন্য ‘প্রকৃতির প্রতিদান’ লিখে গুগলে খোঁজ নিন)।

লেখক : আইনজীবী ও কথাসাহিত্যিক
E-mail : adv.zainulabedin@gmail.com


আরো সংবাদ



premium cement
পাকিস্তানে আফগান তালেবান আলেম নিহত যুক্তরাষ্ট্রের সাহায্য না করলে এ বছরই রাশিয়ার কাছে হারতে পারে ইউক্রেন : সিআইএ প্রধান রাশিয়ার সামরিক শিল্পক্ষেত্রে প্রধান যোগানদার চীন : ব্লিংকন ইরাকে সামরিক ঘাঁটিতে 'বিকট বিস্ফোরণ' শেখ হাসিনা সব প্রতিবন্ধকতা উপড়ে ফেলে দেশকে এগিয়ে নিয়ে চলেছেন: পররাষ্ট্রমন্ত্রী গাজায় ইসরাইলি গণহত্যা বন্ধে বিশ্ববাসীকে সোচ্চার সৌদি আরবে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত ব্যক্তির মৃত্যু নীলফামারীতে তিন হাজার ১৭০ চাষির মাঝে বিনামূল্যে কৃষি উপকরণ বিতরণ কারাগারে কয়েদির মৃত্যু উজ্জ্বল হত্যার বিচার দাবিতে সরিষাবাড়ীতে মানববন্ধন পাবনায় দুই গ্রুপের সংঘর্ষে নিহত ১ আহত ২১

সকল