২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`

পাকিস্তানের চলতি সঙ্ঘাতের পরিণতি

ইমরান খান ও শাহবাজ শরিফ - ছবি : সংগৃহীত

পাকিস্তানে প্রভাবশালী পক্ষগুলোর মধ্যে সঙ্ঘাত কি ক্রমেই ‘ফিরতে না পারার’ গন্তব্যে চলে যাচ্ছে? ইমরান খানের সপ্তাহব্যাপী লংমার্চ অস্থিরতাকে তেমনই একটি পরিণতির দিকে নিয়ে যাচ্ছে বলে মনে হয়। দেশটিতে এ সময়ে সাংবাদিক খুন থেকে শুরু করে এমন কিছু ঘটনা ঘটছে যা এর আগে দেখা যায়নি। প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সামরিক এস্টাবলিশমেন্টকে চ্যালেঞ্জ করার মতো এক অবস্থায় গেছেন ইমরান খান ও তার দল। দেশটির শীর্ষ গোয়েন্দা প্রধান বিরল এক সংবাদ সম্মেলনে ইমরান খানকে দিন রাতে দ্বিচারী আচরণের জন্য অভিযুক্ত করেছেন। অনেকে আশঙ্কা করছেন, তার শান্তিপূর্ণ লংমার্চ রক্তাক্ত ও সঙ্ঘাতময় হয়ে উঠতে পারে। আর এতে পাকিস্তানের জন্য আরেক দফা রাজনৈতিক পরিবর্তন অনিবার্য হয়ে উঠতে পারে। রাজনৈতিক শক্তি মধ্য মেয়াদে হারাতে পারে তাদের কর্তৃত্ব। তবে পরস্পরবিরোধী পক্ষগুলোর মধ্যে তির্যক বাক্যবাণের সাথে সাথে আলোচনা সমঝোতার কিছু খবরও পাওয়া যাচ্ছে।

সঙ্ঘাত ও আলোচনা

আইএসআই প্রধান জেনারেল নাদিম আঞ্জুম সাংবাদিকদের কাছে ইমরান খানের প্রকাশ্য সমালোচনা করেছেন যা অভূতপূর্ব। এর মাধ্যমে এমন বার্তাই দিতে চেষ্টা করা হয় যে, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব রাজনীতিবিদদের ব্যাপারে ধৈর্যহীন পর্যায়ে চলে যাচ্ছেন। অর্থনৈতিক বিশৃঙ্খলার মুখে সেনাবাহিনী রাজনৈতিক নৈরাজ্য সহ্য করতে চাইছে না। ফলে ইমরানের পরিকল্পিত গণ-বিক্ষোভ সেনাবাহিনীকে রাজনীতিতে প্রকাশ্য ভূমিকায়ও নিয়ে আসতে পারে। ইমরান খান সম্ভবত বিষয়টি নিজেও আঁচ করতে পেরে প্রথম দিন আইএসআই প্রধানের বক্তব্যের জন্য সমালোচনা করলেও পরে সুর নমনীয় করে বলেছেন, তিনি শক্তিশালী সেনাবাহিনীর বিপক্ষে নন।

কারো কারো মতে, ইমরানের ঘোষিত কর্মসূচি পিটিআইকে এমন এক দিকে নিয়ে যাচ্ছে যেখান থেকে গতি ফেরানো সহজ নয়। দলের ভেতরও সমালোচনা আসছে যে কিছু নেতা ভুল পরামর্শ দিয়ে ইমরান খানকে হঠকারিতার দিকে নিয়ে যাচ্ছেন। বিবদমান পক্ষগুলোর মধ্যে আলোচনা না হলে বা তা ভেঙে পড়লে তা বিপজ্জনক। আইএসআই প্রধানের বক্তব্যে তেমনটি মনে হয়েছিল; কিন্তু ইমরান খান সর্বশেষ নিশ্চিত করেছেন যে সঙ্কটের সমাধানের জন্য ক্ষমতার বলয়ের সাথে তার সংলাপ চলছে। ইমরানের এই মন্তব্যটি প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের দেয়া বিবৃতির প্রতিক্রিয়ায় এসেছে যেখানে শাহবাজ দাবি করেছিলেন যে নভেম্বরে জেনারেল কামার জাভেদ বাজওয়ার অবসর নেয়ার পরে নতুন সেনাপ্রধান নিয়োগের বিষয়ে ঐকমত্যের ব্যাপারে ইমরান খানের একটি প্রস্তাব সরকার প্রত্যাখ্যান করেছে। পিটিআই চেয়ারম্যান বলেছেন, তিনি প্রধানমন্ত্রী শরিফকে আলোচনার প্রস্তাবই পাঠাননি, তিনি তাদের সাথেই কথা বলেছেন এবং এখনো বলছেন, যাদের সাথে শাহবাজ গাড়ির বুটে মিটিং করতে যেতেন। ইমরান এস্টাবলিশমেন্টের সমালোচনার জন্য ভারতীয় মিডিয়ার প্রচারকে দায়ী করে বলেন, তিনি একটি প্রতিষ্ঠান হিসাবে সেনাবাহিনীর সমালোচনা করেননি। কয়েকজন কর্মকর্তার অনুচিত পদক্ষেপের সমালোচনা করেছেন।

জনসমর্থনের তুঙ্গে ইমরান, তবে-
এ মুহূর্তে ইমরান খান যে জনসমর্থনের তুঙ্গে রয়েছেন সেটি বোঝা যায় তার সর্বশেষ উপ নির্বাচনের ফলাফলে। তিনি খায়বার পাখতুন খোয়ার একটি উপ-নির্বাচনে নিকটতম প্রতিদ্ব›দ্বীর তুলনায় দ্বিগুণের বেশি ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। এর আগেও তিনি সাতটি আসনের উপনির্বাচনে ছয়টিতে বিজয়ী হন। কিন্তু ইমরানের প্রতি এই জনসমর্থন তাকে ক্ষমতায় যেতে সহায়তা করবে যদি এটি বহাল থাকতেই পরবর্তী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ইমরান নানা কর্মসূচির মাধ্যমে দ্রæত একটি নির্বাচনে যেতে চাচ্ছেন। কিন্তু তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ এবং গভীর ক্ষমতা বলয়ের একটি অংশ তা চাইছে বলে মনে হয় না। এটি এ কারণে যে, পাকিস্তানের অর্থনৈতিক ও ভূ-রাজনৈতিক যে বাস্তবতার কারণে ইমরানের বিরুদ্ধে শাসনতান্ত্রিক অভ্যুত্থানের আয়োজন করে প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক শক্তির জোটকে ক্ষমতায় নিয়ে আসা হয় সেই পরিস্থিতির এখনো কোনো পরিবর্তন হয়নি। ইমরান খান যখন ক্ষমতাচ্যুত হন তখন দেশটির বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল একেবারে নিম্ন পর্যায়ে। যুক্তরাষ্ট্র দেশটিকে ধূসর তালিকাভুক্ত করে রাখে, যার ফলে বিদেশী বিনিয়োগ একেবারে কমে যায়। বাইরের বাণিজ্যের বাজার হয়ে পড়ে সঙ্কুচিত। এর ফলে অক্টোবরে পাকিস্তানের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দাঁড়ায় ৭.৬ বিলিয়ন ডলারে। বছরে ৭২ বিলিয়ন ডলারের বেশি আমদানির বিপরীতে রফতানি করে আয় করে মাত্র ৩২ বিলিয়ন ডলার। এক বছরে চলতি হিসাবের ঘাটতি দাঁড়ায় ১৭ বিলিয়ন ডলারের বেশি। ১৩০ বিলিয়ন ডলারের বেশি বৈদেশিক ঋণের দায় মেটাতে হিমশিম খেতে হয় সরকারকে। পাকিস্তানে ক্ষমতার পরিবর্তনের পর পাশ্চাত্যের দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টে যায়। ধূসর তালিকা থেকে পাকিস্তানকে বের করে আনা হয়। আইএমএফ বাজেট সহায়তা প্রদানের প্রক্রিয়া শুরু করে। বৈদেশিক বাণিজ্যের বাজার আবার মুক্ত হতে শুরু করে। এসব ইতিবাচক পরিবর্তন যে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা শক্তির ইচ্ছানুসারে হয়েছে তাতে সন্দেহ নেই। এ কারণে ইমরান খান জনগণের সামনে শাহবাজ শরিফের সরকারকে আমদানি করা সরকার হিসাবে তুলে ধরছেন আর তাতে সাড়াও পেয়েছেন ভালো। কিন্তু প্রশ্ন হলো, এ পরিবর্তনে সমর্থন দেয়া ছাড়া বিকল্প কী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারত পাকিস্তানের এস্টাবলিশমেন্ট। পাকিস্তানকে বিপুল নিরাপত্তা এবং অবকাঠামো প্রকল্পে ঋণ সহায়তা দেয় চীন। কিন্তু চীনা অর্থপুষ্ট অধিকাংশ প্রকল্প এখন দায়যুক্ত আপাত রিটার্নহীন প্রকল্পে পরিণত হয়েছে। এর সুদাসল পরিশোধ পাকিস্তানের অর্থনীতির জন্য চাপ তৈরি করছে। পাকিস্তানে যে পরিমাণ রফতানি চীন করে আমদানি করে তার এক পঞ্চমাংশের মতো। এর উল্টো চিত্র হলো যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেত্রে। ফলে পাকিস্তান পাশ্চাত্য থেকে মুখ ফিরিয়ে আবার এককভাবে চীনমুখী হবে এমন বাস্তবতা নেই।

ভূ-রাজনৈতিক উদ্বেগ ও বাস্তবতা

পাকিস্তানের ভূ-রাজনৈতিক উদ্বেগ ও বাস্তবতা বিবেচনার বাইরে রাখার কোন সুযোগ নেই। প্রথমত, স্নায়ুযুদ্ধের সময় যখন আমেরিকার লক্ষ্য ছিল কমিউনিজম ঠেকানো, তখন পাকিস্তান হয়ে ওঠে দক্ষিণ এশিয়ায় আমেরিকার ‘সবচেয়ে বিশ্বস্ত মিত্র’। ১৯৭৯ সালে আফগানিস্তানে সোভিয়েত আক্রমণের পর ইসলামাবাদের বিশেষ প্রয়োজন দেখা দেয় আমেরিকার। তারপর ৯/১১-পরবর্তী ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে’ আল কায়েদাকে পরাজিত করতে পাকিস্তানের ভূমি ব্যবহারের প্রয়োজন হয়। আফগানিস্তান থেকে মার্কিন প্রস্থানের মাধ্যমে সেই অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘটে। এই পর্যায়গুলো একটি অনিবার্য বাস্তবতা প্রকাশ করে। সম্পর্কের ইতিবাচক রূপান্তর প্রায় সবসময় দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের বাইরের ঘটনা দ্বারা চালিত হয়। এসব ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে।

আফগানিস্তান থেকে মার্কিন প্রত্যাহারের আগেও, চীন তার ক‚টনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পৃক্ততা বাড়ায় এবং তার রোড অ্যান্ড বেল্ট ইনিশিয়েটিভ চালু করার সাথে সাথে ভূ-রাজনৈতিক গতিশীলতা মৌলিকভাবে পরিবর্তিত হয়। পাকিস্তানসহ আঞ্চলিক রাষ্ট্রগুলোতে আমেরিকার স্বার্থ এবং প্রভাব উভয়ই হ্রাস পেতে শুরু করে। প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ পররাষ্ট্রনীতি এই অঞ্চল থেকে ধীরে ধীরে বিচ্ছিন্ন হওয়ার ইঙ্গিত দেয়। এটি চীনের সাথে পাকিস্তানের দীর্ঘস্থায়ী কৌশলগত সম্পর্কের উল্লেখযোগ্য তীব্রতার সাথে মিলে যায়। বিআরআই-তে প্রধান ভূমিকা এবং পাকিস্তানের অবকাঠামো, জ্বালানি ও উন্নয়ন প্রকল্পে উল্লেখযোগ্য চীনা বিনিয়োগ হয়।

এ সময়টাতে আমেরিকাকে একটি অসংলগ্ন অংশীদারের পাশাপাশি একটি অনিচ্ছুক আঞ্চলিক খেলোয়াড় হিসাবে দেখা হয়। আরো গঠনমূলক এবং স্থায়ী সম্পর্কের জন্য চীন নির্ভরযোগ্য হিসাবে সামনে চলে আসে। বাইডেন ক্ষমতায় আসার পর কিন্তু সেই অবস্থা এখন আর নেই। নতুন বাস্তবতায় চীন পাকিস্তানের কৌশলগত অগ্রাধিকার হলেও ইসলামাবাদ আমেরিকার সাথে একটি উন্নত ও স্থিতিশীল সম্পর্ক চায়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় রফতানি গন্তব্য, এফডিআই-এর একটি উৎস এবং বিশেষ করে আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর উল্লেখযোগ্য প্রভাবসহ একটি বৈশ্বিক শক্তি, যাদের সহায়তা পাকিস্তানের সঙ্কটে জর্জরিত অর্থনীতির জন্য কঠোরভাবে প্রয়োজন। তবে আমেরিকা-চীনা সঙ্ঘাতের কোনো পক্ষ হওয়া এড়াতে চায় পাকিস্তান। বাস্তব কারণেই পাকিস্তান-মার্কিন সম্পর্ক একধরনের ক্রসরোডে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, চীনকে ধারণ করার আমেরিকার নীতি এবং বেইজিংয়ের ক্রমবর্ধমান বৈশ্বিক শক্তিকে ভারসাম্যহীন করার জন্য অন্য দেশগুলোর সাথে যোগ দেয়ার কৌশল অনুসরণ করা পাকিস্তানের পক্ষে সম্ভব কি না। কোয়াডের পুনরুজ্জীবন, অকাস নিরাপত্তা অংশীদারিত্ব এবং এর ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল সবই চীন-বিরোধী জোটকে শক্তিশালী করার প্রচেষ্টার অংশ। এতে অংশ নেয়া ইসলামাবাদের পক্ষে কঠিন। একইভাবে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে চীনের কোনো উদ্যোগেও ইসলামাবাদ অংশ হতে পারবে না।

এই টানাপড়েনের সুস্পষ্ট প্রভাব রয়েছে পাকিস্তান-মার্কিন সম্পর্কের ওপর। যত দিন মার্কিন-চীন সম্পর্ক স্থবির থাকবে, তত দিন এটি ওয়াশিংটনের সাথে সম্পর্ক পুনর্নির্মাণের জন্য পাকিস্তানের প্রচেষ্টার ওপর প্রভাব ফেলবে। যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে সম্পর্কের ভারসাম্য বজায় রাখতে চাইবে ইসলামাবাদ, কিন্তু দেশটি কোনো চীনবিরোধী জোট বা কৌশলের অংশ হতে পারবে না। এটি ওয়াশিংটনের সব ক্ষেত্রে মিত্র হিসাবে পাবার পথে সীমাবদ্ধতা তৈরি করবে। এই সম্পর্কে আরেকটি জটিল দিক হলো ভারতের সাথে ওয়াশিংটনের ক্রমবর্ধমান কৌশলগত এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক। যুক্তরাষ্ট্র, চীনকে ধারণ করতে পাল্টা হিসাবে প্রজেক্ট করার জন্য এই অঞ্চলে তার পছন্দের অংশীদার ভারতকে কোয়াডের সদস্য করেছে। অধিকৃত জম্মু ও কাশ্মিরে ভারতের অবৈধ অধিভুক্তিতে নীরব থাকাও ইসলামাবাদের জন্য অস্বস্তিকর। তাছাড়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভারতের সামরিক বাহিনীকে কৌশলগত সক্ষমতায় সহায়তা আঞ্চলিক ভারসাম্যহীনতা তীব্র করে তুলছে যা পাকিস্তানের নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ বাড়িয়ে তুলছে। এটি পালাক্রমে পাকিস্তানকে তার কৌশলগত সক্ষমতা বাড়ানোর দিকে চালিত করছে। এটি একটি বাধ্যবাধকতা, কারণ ওয়াশিংটন যখন তার পাল্টা চীন নীতিতে ভারতকে সশস্ত্র করে চলেছে, তখন ভারতের স্থল, আকাশ এবং সমুদ্র ক্ষেত্রে সামরিক সম্পদের ৭০ শতাংশ পাকিস্তানের বিরুদ্ধে মোতায়েন রয়েছে।

আমেরিকার ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলের দিকগুলোতে পাকিস্তানের জন্য নিরাপত্তার প্রভাব রয়েছে, বিশেষ করে যেহেতু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দক্ষিণ চীন সাগরে চীনের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকে ভারত মহাসাগর পর্যন্ত প্রসারিত করেছে। এখন ভূ-কৌশলগত প্রতিদ্বন্দ্বিতার ক্ষেত্র হিসেবে পাকিস্তানকে ভারত মহাসাগরে সামরিক উপস্থিতি বাড়াতে এবং সক্ষমতা জোরদারে বাধ্য হচ্ছে। দুই দেশের জন্য এখন চ্যালেঞ্জ হলো পাকিস্তান-চীন কৌশলগত সম্পর্ক এবং মার্কিন-ভারত অংশীদারিত্বের মধ্যে পারস্পরিক উপকারের ভিত্তিতে সম্পর্ক পুনর্গঠনের জায়গাটা খুঁজে বের করা। ভারতের বিরোধিতা সত্তে¡ও পাকিস্তানের এফ-১৬ বহরের খুচরা জিনিসপত্র বিক্রির বিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক সিদ্ধান্ত এটিকে তুলে ধরে। ইসলামাবাদ পাকিস্তানের অন্তর্নিহিত গুরুত্বের একটি নতুন ভিত্তি চায় এবং তৃতীয় দেশের সাথে সম্পর্কের বিন্যাস হিসাবে সেটিকে দেখতে চায় না। এর দৃষ্টিভঙ্গি নিরাপত্তার ঐতিহ্যগত ফোকাস ছাড়িয়ে অর্থনৈতিক, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্পর্ক এবং বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও শিক্ষায় সহযোগিতার দিকে এগিয়ে যায়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও সাম্প্রতিক বিবৃতিতে নিশ্চিত করেছে যে তারা পাকিস্তানের সাথে শক্তিশালী এবং গঠনমূলক সম্পর্ক চায়। তবে অভিপ্রায়ের ঘোষণার চেয়েও টেকসই ভিত্তিতে সম্পর্ক পুনর্বিন্যাস করার জন্য তাদের স্বার্থ কোথায় একত্রিত হয় তা শনাক্ত করতে উভয় পক্ষের উদ্যোগের প্রয়োজন হবে।

ইমরান কি নতুন বাস্তবতা মেনে নেবেন

এখন প্রশ্ন হলো, ইমরানের বিপুল জনসমর্থনের মুখে দ্রুত নির্বাচন দেয়ার পর পাকিস্তানের এই সাবেক ক্রিকেট অধিনায়কের দল আবার ক্ষমতায় গেলে কি দেশটির সঙ্কট কেটে যাবে। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপে সরকার পরিবর্তনের কথা বলে ব্যাপক জনসমর্থন অর্জন করেছেন। এই অবস্থায় তিনি আবার ক্ষমতায় আসার পর পাশ্চাত্য যে অর্থনৈতিক সহায়তা পাকিস্তানকে দেয়া শুরু করেছে সেটি বহাল থাকবে কি না। এসব বিষয়ে ইমরান খান যদি একটি সমঝোতায় না আসেন তাহলে অচলাবস্থা থেকে যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে গভীর ক্ষমতা বলয় তাকে ক্ষমতায় আসতে সহায়তা করবে কি না সংশয় থেকে যেতে পারে।

পাকিস্তানের রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের সাথে কথা বলে মনে হয়েছে, দেশটির গভীর ক্ষমতাবলয় সম্ভবত রাজনৈতিক হানাহানির অবসান না ঘটলে একটি অন্তর্বর্তী সময়ের জন্য অরাজনৈতিক তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে ক্ষমতায় বসানোর চিন্তা করছে। ইমরান খানকে অনাস্থা ভোটের মাধ্যমে যখন ক্ষমতা থেকে বিদায় করা হয় তখন তিনি একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের হাতে ক্ষমতা দিতে চেয়েছিলেন; কিন্তু ক্ষমতার রদবদলের জন্য যারা দেশে বিদেশে কলকাঠি নাড়িয়েছিলেন তারা গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে শাসনতান্ত্রিক ক্যুর মাধ্যমে প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক কোয়ালিশনকে সামনে নিয়ে আসতে চেয়েছে। এস্টাবলিশমেন্ট সেই পরিকল্পনায় সায় দেয় এবং তা বাস্তবায়ন করে। ইমরানের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে এস্টাবলিশমেন্টের প্রতি ক্ষোভের একটি বড় কারণ এটি বলে জানা যাচ্ছে। প্রশ্ন হলো ৬ মাস আগে ইমরান চাওয়ার পরে যেটিতে প্রভাবশালীরা করতে সম্মত হয়নি সেদিকে কেন আবার এগোনোর চিন্তা করা হচ্ছে। এর একটি কারণ হতে পারে দুর্বল জনসমর্থনহীন একটি জোট সরকারকে ক্ষমতায় রাখতে গিয়ে এর দায়ভার এবং সমালোচনা এস্টাবলিশমেন্টকে বিতর্কিত করে তুলছে। এ অবস্থায় অরাজনৈতিক তত্ত্বাবধায়ক সরকার রাষ্ট্রের অর্থনীতি ও অন্যান্য ক্ষেত্রে স্থিতি ফিরাতে সহায়ক হতে পারে।

এ কারণে ইমরান খানের একের পর এক নির্বাচনে জয়ী হওয়া এবং লংমার্চ ও অন্যান্য সমাবেশে ব্যাপক জন অংশগ্রহণের প্রেক্ষিতে দেশটির বৃহত্তর জনগণের মুখোমুখি সামরিক প্রতিষ্ঠানগুলো সম্ভবত হতে চাইছেন না। তবে তারা সব রাজনৈতিক পক্ষকে চাপেও রাখতে চাইছে। যার কারণে ইমরান খানকে নির্বাচনের অযোগ্য ঘোষণা করা হয়েছে পাকিস্তান নির্বাচন কমিশনকে দিয়ে। আবার তার সরকারকে পাঞ্জাবের ক্ষমতায় ফিরে আসার পথে বড় বাধা তৈরি করা হয়নি। প্রতিদ্ব›দ্বী রাজনৈতিক শক্তিগুলোর কোনোটিই অপরপক্ষের বিরুদ্ধে একতরফা সুবিধাজনক অবস্থানে নেই।

এসব দেখে মনে হচ্ছে, এস্টাবলিশমেন্ট দেশটির সার্বিক পরিস্থিতির উন্নয়নে সামরিক সমর্থনপুষ্ট একটি বেসামরিক অন্তর্বর্তী সরকারকে দৃশ্যপটে নিয়ে আসতে পারে। এই সরকার বর্তমান প্রেসিডেন্টকে রেখে হবে নাকি তাকে বিদায় করে হবে সেটি এখনো নিশ্চিত বলা মুশকিল। জেনারেল কামার জাভেদ বাজওয়ার আগামী মাসে অবসর গ্রহণের কথা। তিনি বলেছেন, আর এক্সটেনশন নেবেন না। কিন্তু পরবর্তী সেনাপ্রধানের নাম এখনো ঘোষণা করা হয়নি। আবার এর মধ্যে তিনি অতি গুরুত্বপূর্ণ এক সফর সেরে এসেছেন যুক্তরাষ্ট্রে। ঘটনা পরম্পরায় মনে হয় বাজওয়া পরবর্তী রাজনৈতিক পরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ কেউ হতে পারেন। সেটি কিভাবে তা বলা যাচ্ছে না। তবে অস্পষ্ট এক রাজনৈতিক পরিবর্তনের সম্ভাবনার মধ্য দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে পাকিস্তান। এ সময় চীনের চাইতেও যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের প্রভাব পাকিস্তানে বেশি বলে মনে হচ্ছে। তবে সাময়িকভাবে যাই হোক না কেন, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াই দেশটিতে স্থিতি নিয়ে আসবে। আর পাকিস্তানের সামরিক প্রতিষ্ঠানকে কোনোভাবে জনগণ বা রাজনৈতিক শক্তির মুখোমুখি দাঁড় করানো দেশটির অখণ্ডতা সার্বভৌমত্বের জন্য কল্যাণকর হবে না। সে সাথে পাশ্চাত্য ও চীনের সাথে একধরনের ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্ক এবং ওআইসির সাথে কৌশলগতভাবে পথ চলার একটি প্রক্রিয়া বের করতে হবে, যা দেশটির শান্তি স্থিতি অগ্রগতি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে।

mrkmmb@gmail.com


আরো সংবাদ



premium cement
ফুলগাজীতে ছাদ থেকে পড়ে স্কুলছাত্রের মৃত্যু দোয়ারাবাজারে শিশু হত্যা মামলার আসামিসহ গ্রেফতার ২ কাউখালীতে পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যু চুয়েট শিক্ষার্থীদের সড়কে অবস্থান অব্যাহত, ঘাতক বাসচালক গ্রেফতার তামাক পণ্যে সুনির্দিষ্ট করারোপের দাবিতে এনবিআর চেয়ারম্যানের কাছে ২৫ সংসদ সদস্যের চিঠি প্রাণিসম্পদ প্রদর্শনীতে মহিষের আক্রমণে বাবা-ছেলেসহ আহত ৪ গফরগাঁওয়ে গৃহবধূর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার তীব্র মাত্রায় হিংস্র হয়ে উঠেছে সরকার : মির্জা ফখরুল মিরসরাইয়ে মৃত্যুর ১৫ দিন পর ব্যাংক কর্মকর্তার কবর থেকে লাশ উত্তোলন দেশে দেড় হাজার মেগাওয়াট লোডশেডিং, দুর্ভোগে মানুষ রংপুরে মহানবী সা:-কে নিয়ে কটূক্তি করায় ছাত্রলীগ কর্মী গ্রেফতার

সকল