২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

অফিসার অব দ্য কোর্ট

অফিসার অব দ্য কোর্ট - ছবি : সংগৃহীত

বার ও বেঞ্চ মিলেই ‘অফিসার অব দ্য কোর্ট’। এক সময় অফিসার অব দ্য কোর্টের আওতায় ছিল বিচারক, কেরানি, আদালতের কর্মী (পিয়ন-পেশকার), পুলিশ অফিসার ও অ্যাটর্নি। ইংলিশ আইন অভিধানের সংজ্ঞায় ‘Any person who has an obligation to promote justice and uphold the law, including judges, clerks, court personnet, police officers, and attorny- (who must be truthful in court and obey court rules) উল্লিখিত বিচারক থেকে শুরু করে অ্যাটর্নি সবাই সততার সাথে আদালতের আইন-কানুন মেলে চললেও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা হবে না- যতক্ষণ এর সাথে আইনজীবীর সততা যুক্ত না হবে। তখনই অমরজিৎ শিং বনাম শ্রীমতি প্রমোদ গুপ্ত মামলায় দিল্লি হাইকোর্ট ‘Amarjit singh Kalra (through Lrs) Vs Smt. Pramod Gupta (through Lrs) ...on 30 Sep 2004 advocate out side the Court. But, so far as his practice in the Court is concerned, the Court has the supervisory ... value. it is considered that an advocate is an offier of the Court.’ ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য আইনজীবীদের প্রয়োজন হলে চিকিৎসকরা বাদ পড়বেন কেন? ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য সহযোগিতা দরকার চিকিৎসকেরও। অনেকের বিশ্বাস- মৃগনাভি কস্তুরীর মতো পবিত্র, সুবাসিত ও গুরুত্বপূর্ণ অফিসার অব দ্য কোর্ট বিশেষ্যটি যে কারণে এই পদের সাথে who must be truthful in court and obey court rules বাক্যটি যুক্ত করা হয়েছে। পদের সম্মান রক্ষায় সবাই সচেতন হওয়া আবশ্যক।

অফিসার অব দ্য কোর্টের মধ্যে কেউ কেউ এই পদের মর্যাদা রক্ষা করতে পারেন না। তাদের সংখ্যা নগণ্য হলেও বহুল প্রচলিত প্রবাদ- এক মণ দুধে এক ফোঁটা চোনার মতোই বিপজ্জনক। এক ফোঁটা চোনা পড়লেই দুধ আর খাওয়ার উপযুক্ত থাকে না। কেউ বিপথগামী হতে দেখলেই আচার্য চাণক্যের বিষের সংজ্ঞাটির কথা মনে পড়ে। চাণক্যের কাছে একজন জানতে চেয়েছিলেন ‘বিষ’-এর সংজ্ঞা কি? তখন তিনি একটি ভারী সুন্দর উত্তর দিয়ে বলেছিলেন, ‘প্রয়োজনের চেয়ে অতিরিক্ত যা কিছু সবই বিষ। ক্ষমতা, সম্পদ, লোভ, প্রশংসা, ভালোবাসা, খিদে, নিন্দে, সব কিছুই হতে পারে।’ যেমন- দুই দশক আগের কথা। নারায়ণগঞ্জ আদালতপাড়া এক এমবিবিএস চিকিৎসকের সার্টিফিকেটে ছেয়ে গিয়েছিল। যৌন ও স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ জনৈক চিকিৎসক বিক্রি করতেন জখমি সার্টিফিকেট। প্রতিপক্ষকে হয়রানি করার জন্য ‘শার্পকাটিং গ্রিভিয়াস’ সার্টিফিকেটের জুড়ি নেই। লোকজন ৮-১০ কিলোমিটার দূর থেকে কয়েকটি সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল পার হয়ে যৌন রোগের ডাক্তারের কাছে আসতেন জখমের সার্টিফিকেটের জন্য। এক সময় টনক নড়ে কর্তৃপক্ষের। পরে নিয়ম করা হয়, তদন্তকারী কর্মকর্তা ছাড়া জখমি সার্টিফিকেট দেয়া বন্ধ। ফলে লাগাম পড়ে যৌন চিকিৎসকের সার্টিফিকেটবাণিজ্যে। (নয়া দিগন্ত, ৪ সেপ্টেম্বর ২০২০)

‘২০২০ সালের মার্চ থেকে করোনায় একদিকে যেমন চলছে ধ্বংসের তাণ্ডবলীলা, অন্য দিকে উন্মোচিত হয়েছে স্বাস্থ্যব্যবস্থার অনেক নগ্ন দিক। দিনের শুরুতে সংবাদপত্রের পাতা খুললেই দেখা যায় স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রীর সঙ্কট, হাসপাতালে হাই-ফ্লো অক্সিজেন ও আইসিইউ-এর অভাব, পর্যাপ্ত বেড নেই, বিভিন্ন হাসপাতাল ঘুরে ভর্তি হতে না পেরে রাস্তাতেই রোগীর মৃত্যু, স্বাস্থ্যবিধি না মেনে বিনোদন ও পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে জনসমাগম, স্বাস্থ্য খাতে ও ব্যবস্থাপনায় নানা দুর্নীতি ইত্যাদি।’ (দৈনিক যুগান্তর, ৭ এপ্রিল ২০২২)

আমাদের দেশে চিকিৎসকদের বিচার পদ্ধতি জটিল। অপরাধের তুলনায় সাজাও লঘু। তা দেখে রিট করেছিলেন আমাদেরই একজন আইনজীবী। ‘ভুয়া চিকিৎসকের সর্বোচ্চ সাজার বিধান চেয়ে রিট’ শিরোনামে গত ২১ ডিসেম্বর ২০২০ আইন আদালতের নিজস্ব সংবাদদাতার রিপোর্ট থেকে প্রকাশ, ভুয়া চিকিৎসকের সর্বোচ্চ সাজার বিধানসহ (যাবজ্জীবন ও মৃত্যুদণ্ড) যথেষ্ট পরিমাণ আর্থিক জরিমানার বিধান করার নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট আবেদন করা হয়েছে। রিটে দেশের মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও নিরাপত্তার লক্ষ্যে বিবাদিদের বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল আইন ২০১০ এর ধারা ২৮(৩) ও ২৯(২) সংশোধন করে ভুয়া চিকিৎসকদের সাজা তিন বছর ও জরিমানা এক লাখ টাকা থেকে বৃদ্ধি করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড অথবা মৃত্যুদণ্ডসহ জরিমানা বৃদ্ধির জন্য কেন সুপারিশ করা হবে না, এই মর্মে রুল জারির আর্জি জানানো হয়েছে।

আইন সচিব, স্বাস্থ্য সচিব, বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের সভাপতি, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক, বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের রেজিস্ট্রারসহ সংশ্লিষ্টদের বিবাদি করা হয়েছে। রিটটি করেন আইনজীবী মো: জে আর খান রবিন। কারণ, কোনো কোনো দেশে চিকিৎসকদের জন্য রয়েছে সর্বোচ্চ সাজার ব্যবস্থা। যেমন- চীনের ঘটনা, ওষুধ প্রশাসনের সাবেক প্রধান চেং সিয়াওইউ নিম্ন মানের ওষুধ অনুমোদন দেয়ায় আদালত তার বিরুদ্ধে ফাঁসির রায় দেন। আপিল আদালতও এ রায় বহাল রেখেছিলেন। সাম্প্রতিক সময়ে এ রায় কার্যকরও হয়।’ (বিচারের বাণী, পৃষ্ঠা-২৮৪)

অফিসার অব দ্য কোর্টের সাথে আইনজীবীর সহযোগিতা অনস্বীকার্য (Undeniable). তাই, এখন শুধু বেঞ্চ নয়, বারের সবাই আমরা অফিসার অব দ্য কোর্ট। খেতাব গ্রহণ করলেই হবে না, তৎসঙ্গে অবশ্যই সততা ও নিষ্ঠার সাথে আদালতের নিয়ম-শৃঙ্খলা মেনে চলতে হবে। শুধু তাই নয়, ‘বিচারক’ শব্দের মতো ‘আইনজীবী’ শব্দের আগেও বাধ্যতামূলকভাবে ‘বিজ্ঞ’ শব্দ যুক্ত করতে হয়। বিজ্ঞ শব্দের সম্মান রক্ষা করতে হবে। কারণ আমাদের কারো কারো কাছে ‘উত্তম আইন পেশা’ শব্দগুলো ‘নিকৃষ্ট আইন ব্যবসায়’ শব্দে রূপান্তর হয়ে গেছে। আইনজীবীর মর্যাদার কথা ভুলে- জীবন ধারণের একান্ত প্রয়োজনেই হোক কিংবা উচ্চাকাক্সক্ষার কারণেই হোক- যারা পেশার মান, ধর্ম ও চরিত্র বর্জন করে অর্থকে প্রাধান্য দিয়ে থাকি তারাই সঙ্কীর্ণমনা, ভিত্তিহীন ও অযোগ্য বিচারকদের কলুষিত হওয়ার পথ সুগম করে দিই।

বিচারের বাণী ছড়িয়ে দেয়া ও টাকা কামানো- এ দু’টি আপ্তবাক্যের মধ্যে আমরা আজ কোনটিকে প্রাধান্য দিচ্ছি? সবার কর্তব্য- অন্যের ভুল আবিষ্কার করার আগে নিজের ভুল আবিষ্কারের চেষ্টা করা। ‘ভুল করেছি’ শব্দ দু’টি জীবনে যে যত বেশি ব্যবহার করেছে সে তত কম ভুল করেছে। কোনো এক মোকদ্দমার শুনানিকালে মহামান্য হাইকোর্ট অ্যাটর্নি জেনারেলের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনি কি সৎ? আপনি সৎ হলে দেশ সৎ’। লর্ড ডেনিং তার রোড টু জাস্টিস গ্রন্থে বলেন, ‘আইনজীবী তার মক্কেলের সাথে সৎ হবেন, সৎ হবেন তার প্রতিপক্ষের সাথে, তিনি সৎ হবেন আদালতের সাথে ও সর্বোপরি তিনি অবশ্যই সৎ হবেন তার নিজের সাথে।’ (বিচারের বাণী, পৃষ্ঠা : ১৪-১৫)

আমাদের কোর্টের এক বিচারক আসতেন ঢাকা থেকে। আমিও এক সময় আসতাম ঢাকা থেকে। আসা-যাওয়াকালে মাঝে মধ্যে দেখা হয়ে যেত। বিচারক একজন ভালো পাঠক, আমিও লেখক। পাঠকে লেখকে সখ্য গড়তে সময় লাগে না। একবার কোর্ট বসার পূর্বক্ষণে সেরেস্তায় আমার উপস্থিতি টের পেয়ে তার খাস কামরায় ডেকে পাঠান। খাস কামরায় ঢুকতেই-

-জয়নাল সাহেব, আপনার তুষার কন্যার সাথে সাক্ষাৎ শেষ করেছি। অপূর্ব, অপূর্ব লেগেছে আপনার তুষার কন্যাকে। তুষার কন্যার শেষ কয়টি কথা, ‘এই বইয়ের কোনো পাঠক তুষার কন্যা দেখতে চাইতে নেপাল যাবেন। নেপাল গেলে পোখারা যেতে ভুলবেন না। পোখারা গেলেই দেখা হবে মচ্ছপুচ্ছের সাথে। তাকে বলবেন, আমি তাকে ভুলিনি। ভুলব না কোনো দিন।’ তিনি তুষার কন্যার শেষ কয়েকটি লাইন শেষ করে আমাকে উদ্দেশ্য করে হাসতে হাসতে বলেন-
-আইনজীবীরা শুধু আইনজীবী নন, সুরসিক লেখকও বটে।
তার কথার পৃষ্ঠে আমিও হাসতে হাসতে বলি-
-আইনজীবীরা শুধু বুদ্ধিজীবী নন, কৌশলীও বটে। তাদের কেউ কেউ যেকোনো কৌশলে কার্য উদ্ধার করে থাকেন। কৌশলে কাজ উদ্ধারের বিষয়টি আপনারাও টের পান না। এই তো সেদিন, আমাদের কোর্টের এক আইনজীবী পার্শ্ববর্তী জেলায় বিচারাধীন এক মামলার জামিন শুনানি করতে যান। যে কোর্টে মামলা সে কোর্টের বিচারকের সাথে সাক্ষাৎ করার অনুমতি পেয়ে কথায় কথায় বলেন-
-আপনি একজন সিনিয়র বিচারক হয়ে এখনো ওই চেয়ারে পড়ে আছেন? আইনমন্ত্রীকে ধরে একটি প্রমোশন নিয়ে নিন। আইনমন্ত্রীর সচিব আমার খুব কাছের লোক। আমরা সবসময় পাশাপাশি বসি। আপনার নাম ঠিকানা আমার কাছে দিয়ে দিন। এক মাসের মধ্যেই খবর পেয়ে যাবেন।

-আপনি কী ব্যাপারে এসেছেন?
-স্যার একটি জামিনের ব্যাপারে- মামলাটি আপনার কোর্টেই বিচারাধীন।
-ঠিক আছে শুনানি করেন, দেখি কী করা যায়।

বিজ্ঞ আইনজীবী সেদিন কার্য উদ্ধার করে চলে আসেন। মাস দু’য়েক পর আমাদের কোর্টেরই অপর একজন আইনজীবী একই আদালতে গেলে বিজ্ঞ বিচারক তার কাছে আইন সচিবের বন্ধুর বিষয় জিজ্ঞেস করে জানতে পারেন, আইন সচিবের সাথে তার চেম্বার থাকা তো দূরের কথা, কোনো দিন তার সাথে কথাও হয়নি। আইন সচিব সাহেব হয়তো তাকে চেনেনও না। (বিচারের বাণী, পৃষ্ঠা-১৬০)

আইন আদালত ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ‘নকল আসামিকে সাজা খাটানোর অভিযোগে রিমান্ডে আইনজীবী’ শিরোনামে এক খবরে প্রকাশ- আসল আসামির পরিবর্তে নকল আসামিকে সাজা খাটানোর অভিযোগে আইনজীবী শরীফ শাহরিয়ার সিরাজীর একদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। জালিয়াতির ঘটনায় আইনজীবীর বিরুদ্ধে কোতোয়ালি থানায় মামলা হয়েছে। এর আগে মিথ্যা পরিচয় দিয়ে অন্যের হয়ে আসামি হোসেন ওরফে নকল সোহাগের পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।

র‌্যাব সূত্রে প্রকাশ, ২০১০ সালের ২৬ নভেম্বর রাজধানীর কদমতলীতে টিটু নামের একজনকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এ হত্যায় দায়ের করা মামলায় প্রধান আসামি সোহাগ। সোহাগ ২২ ডিসেম্বর গ্রেফতার হয়ে ২০১৪ সালের ১৬ মে জামিনে বের হয়ে আত্মগোপন করে। ২০১৭ সালে পলাতক অবস্থায় যাবজ্জীবন সাজা দেন আদালত। নিজেকে বাঁচাতে হোসেন নামে আরেক ব্যক্তিকে আদালতে পাঠায় সোহাগ। এ জন্য চুক্তি হয় মাসিক পাঁচ হাজার টাকা। আদালত হোসেনকে সোহাগ ভেবে জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠান। অন্যদিকে আসল সোহাগ দেশ থেকে পালিয়ে দুবাই যাওয়ার উদ্দেশে নতুন করে প্রতারণার আশ্রয় গ্রহণ করে। বিদেশ যাওয়ার উদ্দেশে টিকা দিতে এসে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের হাতে গ্রেফতার হয় সোহাগ। মামলা হয়। মামলায় নকল ও আসল সোহাগসহ আসামি করা হয় দুই আইনজীবীকেও।

আমাদের কোর্টের এক সুদর্শন আইনজীবী। বাঁকা পথে টাকাকড়ি অর্জন করেন বলে ‘আঁতেল’ খেতাব পেয়েছেন বহু আগেই। নানা উপায়ে প্রচুর ভূসম্পত্তিসহ জেলা সদরের আমলাপাড়া এলাকায় বাড়ি দখল করে বসবাস করছেন বলেও স্থানীয় দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশ। গত ৯ মে ২০০৭ সালে নারায়ণগঞ্জ আইনজীবী সমিতির কার্যনির্বাহী পরিষদের সভায় তাকে সমিতির সদস্যপদ থেকে স্থায়ীভাবে অব্যাহতি, জজ ও ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আইনজীবী হিসেবে নিষিদ্ধ করা হয়। সভায় আরো সিদ্ধান্ত হয়, বার কাউন্সিলে শিগগিরই আবেদনের মাধ্যমে তার আইনজীবী সনদ বাতিলের জন্য প্রস্তাব পাঠানো হবে।

তার বিরুদ্ধে ১৯৯৬ সালে সনদ প্রাপ্তির পর গত ১১ বছরে জালিয়াতি, টাকা আত্মসাৎ, জাল দলিল সৃজন ইত্যাদি অসংখ্য অভিযোগ। শুধু তাই নয়, লালমিয়া হত্যাকাণ্ড নিয়ে সোনারগাঁ থানার মামলা নং ২১ (৩) ২০০৫। লালমিয়ার স্ত্রী রাশিদা বাদি। ওই আইনজীবী সুকৌশলে বাদিপক্ষে মামলা পরিচালনা করার কথা বলে অন্যায়ভাবে টাকা আদায়সহ আসামিদের সাথে আঁতাত করেছিল। রাশিদা নারায়ণগঞ্জ বার লাইব্রেরিতে নালিশ করার পর ৯ মে ২০০৭ সভায় এই আদেশ দেয়া হয়েছিল যা গত ১০ এপ্রিল ২০০৭ দৈনিক শীতলক্ষ্যা পত্রিকায় বিস্তারিত ছাপা হয়েছিল।

এর পরও বাঁকা পথে টাকা উপার্জন বন্ধ হয়নি। সেশন নং-১০৫৮/২০১৭ এনআই অ্যাক্টের ১৩৮ ধারা ৩১ জানুয়ারি ২০২২ এক বছরের কারাদণ্ডসহ চেকে উল্লিখিত সমপরিমাণ টাকা জরিমানা। বর্তমানে সে হাজতে আছে। যে পরিজনের জন্য এত কিছু করতে গিয়ে এখন হাজতবাস করছে সে পরিজন আপিল করারও প্রয়োজন বোধ করছেন না। তার হাজতবাস দেখে খুলনার এরশাদ শিকদারের কথা মনে পড়ে। এরশাদ শিকদারের মামলার বিচারক ছিলেন জনাব হাসান ইমাম। হাসান ইমাম সাহেব অবসর গ্রহণের পর আইন পেশা শুরু করেন। আমার সাথে একই প্রতিষ্ঠানের লিগাল অ্যাডভাইজারও ছিলেন। এরশাদ শিকদারের নিষ্ঠুরতার বর্ণনা দিতে গিয়ে বলতেন, যাদের জন্য এরশাদ শিকদার এত বেপরোয়া হয়েছিল বিপদের সময় তাদের কাছে পায়নি। তাই ফাঁসির মঞ্চে দাঁড়িয়ে তাদের উদ্দেশে- ‘আমি তো মরেই যাব, চলে যাবো, রেখে যাবো সবি/আছনি কেউ সঙ্গের সাথী, সঙ্গে নি কেউ যাবি’ গানটি গেয়ে গেছেন।

পিয়ন-পেশকারও অফিসার অব দ্য কোর্টের অংশ। নিজেদের পদ-পদবি ভুলে গিয়ে বেপরোয়া হয়ে উঠে কেউ কেউ। একবার হিড়িক পড়েছিল ভুয়া মামলায় সাজা ও গ্রেফতারি পরোয়ানা দিয়ে প্রতিপক্ষকে শায়েস্তা করা। তখন আমি উপজেলা কোর্টে। সিলেট এলাকার এক জটিল মামলায় গ্রেফতার হয়ে আসে জনৈক মেম্বার। অপরাধের ধারার সাথে অপরাধীর কোনো মিল নেই। বিস্তারিত শোনার পর ম্যাজিস্ট্রেট সাহেব-
-বুঝতে পারি, পরোয়ানা ফল্স অ্যান্ড ফ্যাব্রিকেটেড। স্পেশাল ট্রাইব্যুনালে বিচার্য মামলা। আমার কিছুই করার নেই।

ওই ঘটনার সপ্তাহখানেক পর মেম্বার আমার চেম্বারে আসেন। তার কাছ থেকে জানা যায়, সংশ্লিষ্ট আদালতে এ ধরনের কোনো মামলাই ছিল না। আইন আদালত নিজস্ব প্রতিবেদক থেকে প্রকাশ, ‘আদালতের নথি জালিয়াতি করে ভুয়া মামলায় সাজা ও গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির বিষয়ে অভিযোগ তুলেছেন ভুক্তভোগী আইনজীবী মফিদুল ইসলাম। সংবাদ সম্মেলন করে বলেন, ‘একটি অসাধু চক্র নিরীহ মানুষকে হয়রানির মাধ্যমে অবৈধভাবে কোটি কোটি টাকার মালিক হচ্ছে। খুলনা নারী ও শিশু আদালতের পেশকার দাউদ এ রকম জালিয়াতির মাধ্যমে উপার্জিত টাকা দিয়ে খুলনা শহরে তিনটি বাড়ি, নামে-বেনামে সম্পত্তি ও অবৈধ টাকার মালিক বনে গেছেন। (বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট, ২০ অক্টোবর ২০২০) এসব দেখেই হয়তো, সাবেক প্রধান বিচারপতি মো: রুহুল আমিন বলেছিলেন, ‘দুর্নীতিবাজদের সামাজিকভাবে বয়কট ও ঘৃণা করতে হবে। আদালতের সুনাম পুনরায় ফিরিয়ে আনতে হবে। বিচারক ও আইনজীবীদের অবশ্যই আদালতের প্রতি শ্রদ্ধার মনোভাব সৃষ্টি করতে হবে। তা হলে মানুষ সুফল ভোগ করতে পারবে। বিচারের বাণী আর নীরবে কাঁদবে না।’ (দৈনিক মানবজমিন, ১ মে ২০০৭)

লেখক : আইনজীবী ও কথাসাহিত্যিক
E-mail : adv.zainulabedin@gmail.com


আরো সংবাদ



premium cement