২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

এত কান্না, এত অশ্রু, বাঙালি কবে দেখেছে?

লেখক : গোলাম মাওলা রনি - ফাইল ছবি

আজকের নিবন্ধটি যখন লিখছি তখন অনেক বিষয় মাথার মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছিল। ইচ্ছে ছিল- রাষ্ট্রক্ষমতায় যদি মিথ্যাবাদীদের আধিপত্য বাড়ে তবে আসমান-জমিনে কী ধরনের প্রাকৃতিক বিপর্যয় শুরু হয় তা নিয়ে একটি রসঘন আধ্যাত্মিক ধরনের নিবন্ধ লেখার। কিন্তু ২০২২ সালের আগস্ট মাসের শেষ দিনের পত্রিকাগুলোর শিরোনাম দেখার পর আমার মাথা থেকে আধ্যাত্মিকতার ভূত দৌড়ে পালায়।

জীবনযুদ্ধের নির্মম বাস্তবতা, পারিবারিক জীবনের বিভিন্ন ঘাত-অভিঘাত, প্রেম-বিরহ এবং বাংলাদেশের সাম্প্রতিক হালচালগুলো মাথায় চক্কর দিতে থাকে। এ অবস্থায় পবিত্র কুরআনের সূরা বাকারার ২০১ নম্বর আয়াতটির কথা হঠাৎ মনের আয়নায় ভেসে উঠল। উল্লিখিত আয়াতে পরম করুণাময় আল্লাহ তাঁর বান্দাগণকে একটি দোয়া শিখিয়ে দিয়েছেন, যেটিকে আল কুরআনের সর্বশ্রেষ্ঠ দোয়া হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে এবং রাসূলে আকরাম সা: এই দোয়াটি সবচেয়ে বেশি করতেন। আজকের দিনের প্রেক্ষাপটে আমার মনে হঠাৎ এই দোয়ার কথা কেন এলো তা বলার আগে দোয়াটি সম্পর্কে একটি কাহিনী বলে নেই। একবার আল্লাহর রাসূল সা: একজন রোগীকে দেখতে গেলেন। তিনি দেখলেন- লোকটি মরণাপন্ন এবং তার শরীর রীতিমতো হাড্ডিসার হয়ে পড়েছে। রাসূল সা: জিজ্ঞাসা করলেন- তুমি আল্লাহর কাছে কী দোয়া করেছিলে? উত্তরে লোকটি জানালেন, তিনি আল্লাহকে বলেছিলেন পরকালের শাস্তি দুনিয়াতে দিয়ে দেয়ার জন্য। আল্লাহর নবী লোকটির কথা শুনে বিস্মিত হলেন এবং বললেন- আল্লাহর শাস্তি সহ্য করার ক্ষমতা কি কারোর আছে? তুমি বরং এখন থেকে পড়তে থাকো- ‘রাব্বানা আতিনা ফিদ দুনিইয়া- হাসানাতাওঁ ওয়াফিল আ-খিরাতি হাসানাতাওঁ ওয়াক্বিনা আজাবান্না-র।

আয়াতটির সরল অর্থ হলো- হে রব দুনিয়াতে আমাদের জন্য কল্যাণ করো এবং পরকালেও কল্যাণ দাও, আর দোজখের শাস্তি থেকে বাঁচাও।’ এই আয়াতের যে মর্মবাণী আমাকে এই মুহূর্তে প্রভাবিত করছে সেটি হলো- দুনিয়ার কল্যাণের জন্য কাজ করা, প্রার্থনা করা মানুষের প্রথম এবং প্রধান দায়িত্ব ও কর্তব্য।

দ্বিতীয়ত, দুনিয়ায় ভালো কাজ করা এবং সঠিক দায়িত্ব পালন সাপেক্ষে কেবলমাত্র আখিরাতের কল্যাণ আশা করা যায় অথবা প্রার্থনা করা যায়। আর জাহান্নামের আগুন থেকে নিষ্কৃতি বা শাস্তি অথবা মন্দ পরিণতি থেকে রক্ষা পাওয়ার আকুতি তৃতীয় ধাপে বর্ণনা করা হয়েছে মূলত দু’টি কারণে। প্রথমত, দুনিয়াতে অর্থাৎ বর্তমানকালে সঠিক কাজটি সঠিকভাবে সম্পন্ন করার পর একটি ভালো পরিণতির আশা করা। দ্বিতীয়ত, কাজটি যদি ঠিকমতো করা না হয় তবে জাহান্নামের আগুন যে অনিবার্য তা মনে করিয়ে দেয়ার জন্য এই প্রার্থনায় দুনিয়া এবং আখিরাতের সাথে জাহান্নামের আগুনের কথাও স্মরণ করে দেয়া হয়েছে এই কারণে, যেন মানুষেরা বর্তমান কালটিকে ভালো কাজে ব্যবহার করে।

সূরা বাকারার ২০১ নম্বর আয়াতের কল্যাণে আমার মনে হলো- আধ্যাত্মিকতার পরিবর্তে আজকের দিনের পত্র-পত্রিকার শিরোনাম নিয়ে বিস্তারিত লেখাই আমার এই মুহূর্তের প্রধান দায়িত্ব ও কর্তব্য। দেশের প্রধানতম পত্র-পত্রিকার প্রধান শিরোনামে একটি অবোধ বালিকার অশ্রুসজল আর্ত-চিৎকারের ছবি যেভাবে ছাপা হয়েছে, তা দেখার পর কোনো প্রাণীর মাথা ঠিক থাকার কথা নয়। এই বালিকার কান্নার শব্দের ভয়ঙ্কর পরিণতি ও তার অশ্রুজলের সুনামি পৃথিবীর যেকোনো বজ্রপাতের শব্দ এবং মহাসাগর-আগ্নেয়গিরির সুনামি অশ্রুপাতের চেয়েও মারাত্মক পরিণতি সৃষ্টি করার ক্ষমতা রাখে।

ক্রন্দনরত বালিকার দুঃখ অনুভবকারীদের গোত্র পরিচয় দিতে গিয়ে আমি মানুষের পরিবর্তে প্রাণী শব্দ ব্যবহার করেছি। অর্থাৎ বালিকার কান্নায় কেবল মানুষ নয়- বনের হিংস্র প্রাণী বাঘ-সিংহ, হায়েনা-গণ্ডার-ভল্লুক থেকে শুরু করে বিষধর সাপ পর্যন্ত মর্মবেদনা অনুভব করবে।

পত্রিকায় যে বালিকার ছবি ছাপা হয়েছে তার নাম সাদিকা। বয়স ৯ বছর। তার বয়স যখন তিন মাস তখন তার বাবা মো: সোহেল নিখোঁজ হন। জন্মের পর থেকে সে শুধু বাবার নাম শুনেছে এবং ছবি দেখেছে। আল্লাহ পৃথিবীর সব কন্যাকে যেভাবে সৃষ্টি করেছেন এবং কন্যার হৃদয়ে বাবার জন্য যে ভালোবাসার কারখানা বানিয়ে দিয়েছেন সেখান থেকে প্রতি মুহূর্তে সাদিকার মনে যে হিমালয়সম ভালোবাসা সৃষ্টি হয় সেই চাপ তার ছোট্ট হৃদয় বহন করতে পারে না। ফলে হৃদয়ের রক্ত অশ্রু হয়ে যেভাবে তার দু’খানি আঁখিকে প্লাবিত করে তার কিছু নমুনা পত্রিকাগুলো প্রকাশ করার চেষ্টা করেছে। গত ৩০ আগস্ট গুম প্রতিরোধ দিবসে ঢাকার শাহবাগে যে মানববন্ধন হয়েছিল সেখানে সাদিকা এসেছিল তার বাবার জন্য কাঁদতে!

সাদিকা তার বাবার জন্য কাঁদছে। সাদিকার মা নিলুফার ইয়াসমিনও তার স্বামীর জন্য কাঁদেন। কিন্তু নিখোঁজ হওয়া ভাগ্যহত সোহেল কি কাঁদতে পারেন? অথবা তিনি কি কাঁদার পর্যায়ে রয়েছেন অর্থাৎ তিনি কি জীবিত নাকি মৃত তা তো আমরা জানি না। তিনি যদি বেঁচে থাকেন তবে আমি নিশ্চিত, তিনি তার কন্যার কান্না তো দূরের কথা- কন্যার নামটি পর্যন্ত জানেন না। আর তিনি যেখানে যে অবস্থায় রয়েছেন সেখানে কেউ কাঁদে না, কাঁদার মতো মন থাকে না। ৯-১০ বছরের গুম হওয়া একজন আদমসন্তান তার সব আবেগ-অনুভ‚তি হারিয়ে কী যে এক নিদারুণ বীভৎস জীবনযাপনে বাধ্য হচ্ছেন তা কেবল ভুক্তভোগীরাই বুঝতে পারবেন। অন্য দিকে, তিনি যদি মারা যান বা তাকে মেরে ফেলা হয়ে থাকে সে ক্ষেত্রে ধর্মীয় মতামত হলো- আল্লাহর ফেরেশতারা নির্দিষ্ট দিনে তার কাছে তার স্ত্রী-কন্যার ভালো-মন্দ, হাসি-কান্না-বেদনার খবরাখবর পৌঁছে দেয়।

সাদিকার কান্নার দৃশ্য ছাড়াও আরেকটি ছবি পত্রিকার শিরোনাম হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদে বক্তব্য দিচ্ছেন। সেখানে তিনি সরকারের সাফাই গাইতে গিয়ে বলেছেন, যা যা করা দরকার সরকার তা করে যাচ্ছে। ছবিতে তার যে অভিব্যক্তি ফুটে উঠেছে তার সাথে যদি শিরোনামের অন্য ছবি অর্থাৎ সাদিকার অঝোরে কান্নার দৃশ্যের তুলনা করেন তবে আপনার মনে দুনিয়া এবং আখিরাতের দুঃখ-কষ্ট, বেদনা-হতাশা, ভয় এবং আতঙ্কের পাশাপাশি সূরা বাকারার ২০১ নম্বর আয়াতের তৃতীয় অংশ এমন রসায়ন সৃষ্টি করবে যা আপনি কোনোদিন ভাষায় প্রকাশ করতে পারবেন না।

সাদিকার কান্নার সাথে যদি বাংলাদেশের শত শত গুম হওয়া পরিবারের কান্না যোগ করেন এবং তাদের কান্নাজাত অশ্রুজল পরিমাপ করেন তবে দেখতে পাবেন যে, আমরা ইতিহাসের সবচেয়ে নিকৃষ্ট সময়টি অতিক্রম করছি। চলমান সময়কে আমার কাছে নিকৃষ্টতর মনে হচ্ছে এ কারণে যে, আমরা সব কিছুর মধ্যেই পাপাচার-অনাচার-মিথ্যাচারের ত্রিমাত্রিক তাণ্ডব ও রসায়ন দেখতে পাচ্ছি।

সমাজ-সংসার-বন-বাদাড় সব জায়গাতে এখন দু’টি সম্প্রদায়। একটি হলো জুলুমবাজ- আর অপরটি হলো মজলুম। এই দু’টি শব্দ আমাদের জীবন-যৌবন, ব্যবসায়-বাণিজ্য, ঘর-সংসার, আহার-নিদ্রা, আশা-আকাক্সক্ষা, স্বপ্ন সব কিছুতে ত্রিমাত্রিক প্রতিক্রিয়া তৈরি করে ফেলেছে। আর সেটি হলো হতাশা ভয় এবং বেঁচে থাকার স্বপ্ন ধূলিসাৎ।

জুলুমবাজ এবং মজলুমের সংখ্যার আধিক্যে আমাদের সমাজের হাজার বছরের শ্রেণিভেদ, পেশা, পদ-পদবি যথা- নাপিত, ধোপা, মুচি, জ্ঞানী-গুণী, পণ্ডিত, পীর-ফকির-মুরিদ, জেলে, মাঝি, দর্জি, কৃষক, ব্যবসায়ী, আমির-ওমরাহ, টাউট-বাটপার, চোর-ডাকাত ইত্যাদি হাজার হাজার শ্রেণিপেশার লোকজন সব ভেদাভেদ ভুলে দুই মেরুতে এসে অবস্থান নিয়েছে। এক মেরুর বাসিন্দারা জুলুমবাজ- অন্য মেরুর বাসিন্দাদের নাম মজলুম। সবচেয়ে অবাক করা বিষয় হলো, এই দু’টি শ্রেণী আবার বিভিন্ন দল-উপদলে বিভক্ত হয়ে জুলুম ও মজলুমের যে বর্ণ বৈচিত্র্য, প্রকারভেদ এবং বৈশিষ্ট্য তৈরি করেছে তা রীতিমতো বিস্ময়কর। এখানে জুলুম ও মজলুম শব্দ দু’টি রেললাইনের মতো একই সমান্তরালে নির্দিষ্ট দূরত্বে কেবলই চূড়ান্ত পরিণতির দিকে এগোচ্ছে। এখানে আরো একটি বিষয় উল্লেখ করা যেতে পারে আর তা হলো-

জুলুমের যে শ্রেণিবিন্যাস ঠিক তার সাথে মিল রেখে মজলুমের শ্রেণিবিন্যাসের সংখ্যা পরিমাণ বিস্তৃতি হুবহু একই প্রকৃতির হচ্ছে। যেমন ধরুন, এক শ্রেণীর জুলুমবাজ রয়েছে যারা হাত-পা অথবা পঞ্চ ইন্দ্রিয় দ্বারা কোনো জুলুম করে না। তাদের অঙ্গভঙ্গি অথবা অর্থ বিত্ত ক্ষমতা বা অস্তিত্বও সরাসরি জুলুমকর্মে অংশ নেয় না। অথচ এই জুলুমবাজরা মানুষের ঘুমন্ত অবস্থায় অশরীরী আত্মার মতো আক্রমণ চালায়। ফলে এদের অত্যাচারে অদ্ভুত এক মজলুম শ্রেণী পয়দা হয়ে গেছে যারা জাগ্রত অবস্থায় শক্তিশালী। কিন্তু ঘুমাতে গিয়ে রোজ রাতে দুঃস্বপ্নের কবলে পড়ে নিদারুণভাবে অত্যাচারিত হয়। দুনিয়ার কোনো দোয়া দরুদ-দাওয়া এসব মজলুমকে দুঃস্বপ্নের কবল থেকে বাঁচাতে পারে না।

জুলুমবাজ ও মজলুমের পরস্পরবিরোধী কর্মকাণ্ডে আমাদের সমাজের মানবিক স্তর নামতে নামতে এমন এক পর্যায়ে চলে গেছে সেখান থেকে সব কিছু দেখা যায় কিন্তু মানুষ খুঁজে পাওয়া যায় না। আজকের সমাজে কল্পনা শক্তি নেই। নেই গল্প গুজব আনন্দ ফুর্তি কিংবা স্বপ্ন। তখনকার প্রেমিক-প্রেমিকা পরস্পরের দিকে তাকিয়ে তাদের আলো বসন্তের বাতাসে অথবা কোকিলের ক‚জন খুঁজে না। এখনকার যুগে কোনো কবি নেই যে, নজরুলের মতো লিখবে ‘তুমি সুন্দর তাই চেয়ে থাকি প্রিয় সে কি মোর অপরাধ!’ নজরুল আসমান থেকে সাতটি রং এনে প্রিয়তমার পা দু’খানি রাঙিয়ে দেয়ার যে স্বপ্ন দেখেছিলেন তা এই যুগে যদি কোনো দুর্বৃত্তের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হতো অর্থাৎ দুর্বৃত্তকে যদি বলা হতো, প্রিয়তমাকে কী দিতে চাও। সে বলত, শেয়ার মার্কেট লুট করে, ডলার কারসাজি করে এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ লুট করে প্রিয়তমাকে একখানি মধুকুঞ্জ বানিয়ে দেবো। চলমান সমাজের স্বপ্নহীন নির্মম বাস্তবতা এবং চিন্তা প্রেম ভালোবাসার অনুর্বরতা কিন্তু এক যুগ আগেও ছিল না। অভাব ছিল, দরিদ্রতা ছিল কিন্তু মানবতা ও জীবনের জয়গান ছিল। সুখ ছিল, শান্তি ছিল এবং সহানুভ‚তিপূর্ণ জীবনবোধ ছিল এবং তা কেমন ছিল তার একটি উদাহরণ দিলেই বিষয়টি বুঝতে পারবেন। বছর পঁচিশেক আগের কথা।

আমি এবং আমার বন্ধুরা পরস্পরকে তখন টাকা-পয়সা পদ-পদবি বা ক্ষমতা দিয়ে মূল্যায়ন করতাম না। আমরা শিক্ষা-দীক্ষা, ভালো মানুষী, ধর্মকর্ম এবং একটি সুন্দর পরিবারকেই মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব ও সফলতার মাপকাঠি মনে করতাম। আমাদের সেই মন-মানসিকতার মাপকাঠি অনুযায়ী জনৈক বন্ধুকে আমরা সুখী মানুষ হিসেবে মনে করতাম।

আমাদের বন্ধুদের এক আড্ডায় আমি হঠাৎ করে সেই সুখী বন্ধুকে বললাম, আপনার দৃষ্টিতে সবচেয়ে কোন লোকটিকে সুখী বলে মনে হয়? ভদ্রলোক আফসোস করে বললেন যে, আমার দেখা সেরা সুখী মানুষটিকে আমি মাত্র দু’বার দেখেছি। কিন্তু তার নামধাম পরিচয় কিছুই জানি না। আমরা বিস্তারিত জানতে চাইলে তিনি বললেন, তার সন্তান-সম্ভবা স্ত্রীর প্রসবকালে তিনি অপারেশন থিয়েটারের বাইরে অপেক্ষা করছিলেন। এমন সময় লক্ষ করলেন যে, তার পাশের ভদ্রলোক বুকে হাত দিয়ে মাঝে মধ্যে ‘উহ আহ ইয়া আল্লাহ। ওমা! ও বাবা’ বলে চিৎকার করছেন। তিনি আরো লক্ষ করলেন যে, অপারেশন থিয়েটারের ভেতর থেকে জনৈক মহিলার প্রসবকালীন যন্ত্রণার আর্ত-চিৎকার ভেসে আসছে এবং ভদ্রলোক সেই চিৎকারের সাথে তাল মিলিয়ে কখনো বুকে হাত দিয়ে অথবা তলপেটে হাত রেখে সমানতালে চিৎকার করছেন।

উল্লিখিত দৃশ্য দেখে আমার বন্ধুটি স্থির থাকতে পারলেন না। যদিও তার স্ত্রীর প্রসব নিয়ে তিনি চিন্তিত ছিলেন তবুও ভদ্রলোকের চিৎকারের কায়দা-কানুন দেখে তিনি ফিক করে হেসে দিলেন। এতে ভদ্রলোক ভয়ানক ক্ষেপে গেলেন। তিনি তার প্রসব বেদনায় কাতর স্ত্রীর আর্তচিৎকারের সাথে তাল মিলিয়ে চিৎকার করতে করতে আমাদের বন্ধুটিকে বললেন- এই মিয়া হাসেন ক্যান- ও মা! ও বাবা! এই মিয়া আপনার মায়া দয়া নেই- উ-উ-উ! ইয়া আল্লাহ....। আমার বন্ধুটি পরিস্থিতি সামাল দেয়ার জন্য সেখান থেকে বাথরুমে চলে গেলেন এবং প্রাণভয়ে অনেকক্ষণ হেসে যখন ফিরে এলেন তখন দেখলেন, ভদ্রলোক মনের আনন্দে নাচানাচি শুরু করেছেন এবং পুত্র-সন্তান লাভের আনন্দে সব কিছু ওলট পালট করার চেষ্টা করছেন।

আমাদের সুখী বন্ধুটির দৃষ্টিতে উল্লিখিত মানুষটিকেই দুনিয়ার সেরা সুখী মানুষ বলে মনে হয়েছিল। আজ পঁচিশ বছর পর কোনো হাসপাতালে ‘কেয়ামত’ হয়ে গেলেও কোনো স্ত্রীর প্রসব বেদনায় ওভাবে কোনো স্বামী মর্মব্যথী হয়ে আর্ত-চিৎকার করবেন, তা কল্পনা করা যায় না।

লেখক : সাবেক সংসদ সদস্য


আরো সংবাদ



premium cement