২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

জরুরি সরকারের কথা ভাবতে হবে

জরুরি সরকারের কথা ভাবতে হবে - ছবি : নয়া দিগন্ত

সরকার ব্যর্থ হলে নাগরিকরাও অপারগ হবে এমন কোনো কথা নেই। সরকার যে কাউকে খুনি বলে, অনেককে গুম ও হত্যা করে বেআইনি কাজ করেছে। শুধু তা-ই নয়, দেশের মানুষকে সার্বক্ষণিক আতঙ্কে রেখেছে। এমনকি জজ-বিচারকদের ভয়-ভীতিতে রাখতে দ্বিধা করেনি। খুন-খারাবি শুধু ব্যক্তিবিশেষের অপরাধ তা নয়। গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে গুমের জন্য সরকারেরও দায় আছে। সে জন্য সব গুম-হত্যার হিসাব চাওয়া হচ্ছে জাতিসঙ্ঘের পক্ষ থেকে।

জাতিসঙ্ঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল ব্যাচেলের ঢাকা সফরে এসে আন্তর্জাতিক মানের নিরপেক্ষ কমিশন গঠন করে হত্যা ও গুমের মতো মর্মান্তিক অপরাধের তদন্তের কথা বলেছেন। মানবাধিকার ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন তিনি। অস্বীকার করা যাবে না, সরকারিভাবে গোপন হত্যায় একটি বিশেষ সংস্থা গঠন করা হয়েছিল। জনগণকে অসহায় রেখে তাদের ওপর সব ধরনের নির্যাতন চালানোর এমন চিন্তা সরকারের থাকতে পারে তা অবিশ্বাস্য।

চারদিকে অসহায়ত্ব। কাদের বুদ্ধিতে দেশের শান্তিকামী নাগরিকদের ওপর ত্রাসের রাজত্ব চালানো হয়েছে তা একদিন প্রকাশ পাবে। স্বাধীনতার ইতিহাস বিকৃত থাকবে না। সরকার নিশ্চয় বুঝতে পারছে, সিন্ডিকেট তৈরি করে প্রশাসনের এমন কোনো স্থান নেই যেখানে সঙ্কট সৃষ্টি করা হয়নি। রাজনীতিতে আমাদের নেতারা গরম গরম বক্তৃতা করেন, কিন্তু বিপদ দেখে দ্রুত নিরাপদ স্থানে চলে গেছেন, তাও আমরা প্রত্যক্ষ করেছি। জনগণের ভোটাধিকার হরণের পর কোনো মানবাধিকার থাকে না। সৃষ্টি হয় অস্থিরতা। যার গর্ভে সহিংস রাজনীতির জন্ম। জনগণের প্রতি দায়বদ্ধ না থাকলে যা হওয়ার সেই পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে দেশে। বিভিন্ন ব্যর্থতা চাপা দিতে সত্য গোপন করা হয়।

সরকারি কর্মকর্তাদের নিষ্ঠুর গাফিলতিতে ঢাকার উত্তরায় গত সোমবার বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্পের উড়ালসড়কের গার্ডারের চাপায় প্রাইভেট কারের পাঁচ আরোহী নিহত হন। অবাক হতে হয়, কোনো সতর্কব্যবস্থা ছাড়াই রাস্তায় গার্ডার বসানোর কাজ চলছিল। প্রকল্পের কন্ট্রাক্ট যাকেই দেয়া হোক না কেন, পথচারীদের নিরাপত্তার দায়িত্ব সরকারের থেকে যায় যদি দায়বদ্ধতা বলে কিছু থেকে থাকে। ঘটনা ঘটার পর পুলিশ ও অন্যান্য কর্মকর্তার ভিড় জমে। কী উদ্দেশ্যে ভিড় জমান তাও অস্পষ্ট। এখন মর্মান্তিক এ ঘটনা নিয়ে কিছু লোকের ওপর হয়রানি চলবে। সতর্কতা অবলম্বনের দায়িত্বে উচ্চপর্যায়ের যারা ছিলেন তারা পাবেন দায়মুক্তি।

পুরান ঢাকায় একই দিনে আগুনে পুড়ে মৃত্যু হয়েছে ছয় হোটেলশ্রমিকের। কোথায় কোন ঝুঁকি আছে তা তদারকির সময় সরকারের নেই। মোট কথা, জনজীবনের নিরাপত্তা সরকারের কাছে গুরুত্ব পাচ্ছে না। শুধু ক্ষমতাসীনদের নিরাপত্তা ও রাজকীয় জীপনযাপন ঠিক থাকলেই হলো। ছোট-বড় সিন্ডিকেট করে সরকারদলীয় লোকেরা বাজার নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। দফায় দফায় জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। বেঁচে থাকতে মানুষকে চড়ামূল্যে খাদ্যদ্রব্য কিনতে হচ্ছে। প্রতিবাদ যতই হোক না কেন, নিত্যপণ্যের দাম ঊর্ধ্বমুখী।

সরকার এখন মহাদুশ্চিন্তায়। তাদের অবস্থা নড়বড়ে। স্বেচ্ছাচারিতার কারণে ওইসব সরকারের করুণ পতন হয়; যে সব সরকার নিয়মতান্ত্রিক পথে ও শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা ছাড়তে নারাজ। এরাই দেশ শাসনকে মনে করেন জবরদখলের ব্যাপার। তারা রাষ্ট্রের মালিক বনে যান। রাষ্ট্রীয় কোষাগার তাদের দখলে চলে যায়। জনগণের অর্থের অপচয় তাদের কাছে মামুলি বিষয়। জনগণের অর্থ ভাগাভাগি করতে বাধে না। নিজেদের সাফল্যের দাবির পক্ষে কোটি কোটি পোস্টার-ছবি ছাপিয়ে রাজধানী ঢাকাকে মিউজিয়ামে পরিণত করা হয়েছে। শুধু জনস্বার্থে জনগণের অর্থ খরচ করতে যত অভাব-অনটন। আর্থিকভাবে দেউলিয়া সরকারের উপদেশÑ জনগণকে সাশ্রয়ী হতে হবে।

বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ দেশের আর্থিক সঙ্কটের কথা বলতে গিয়ে বলেছেন, আগামী দু’-এক বছর দুর্ভোগ সহ্য করতে হবে। যারা নিজেদের অযোগ্যতায় ১৫-২০ বছর ধরে বিভিন্ন ক্ষেত্রে মহাসঙ্কট সৃষ্টি করেছেন তাদের ক্ষমতায় রেখে জনগণের ভোগান্তি যে শেষ হবে না; তা সহজেই অনুমেয়। জনদুর্ভোগ যে বাড়বে তা তিনি স্মরণ করিয়ে দেন। তবে তিনি স্বীকার করেছেন, দীর্ঘ দিনের অব্যবস্থাপনা বর্তমান সঙ্কট সৃষ্টির জন্য বহুলাংশে দায়ী। অনির্বাচিত সরকার যেকোনো স্বাধীন জাতির জন্য লজ্জাজনক। সবচেয়ে দুঃখের বিষয়- জনগণের প্রতি অনির্বাচিত সরকারের দায়বদ্ধতা থাকে না। ফলে অবহেলিত জীবনই জনগণের ভাগ্যে পরিণত হয়েছে।

নির্বাচন নিয়ে তর্ক-বিতর্ক আমাদের কাছে এ মুহূর্তে অবান্তর মনে হয়। নির্বাচনের এখনো এক বছরের বেশি সময় বাকি। মানুষের জীবন-মরণ প্রশ্ন বর্তমান সঙ্কট। বেঁচে থাকতে অনেককে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র বিক্রি করতে হচ্ছে। বিদ্যমান ব্যবস্থা এমন যে, সরকার নির্বাচনের আগে, নির্বাচনকালীন ও নির্বাচন-উত্তর তিন মাস ক্ষমতায় বহাল থাকবে, এমনকি নির্বাচনে অলৌকিকভাবে পরাজিত হলেও। এটি ক্ষমতা হস্তান্তরপ্রক্রিয়া হতে পারে না। দুর্নীতি আর অব্যবস্থাপনায় ডুবন্ত সরকারকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখা জনগণকে ভয়াবহ সঙ্কট থেকে রক্ষার পথ নয়। শুধু অর্থসঙ্কটই জনগণের একমাত্র সমস্যা তা নয়। নিরাপত্তাহীনতা ও গুম-খুন শেষ হয়নি। গ্রামীণ জনপদে চলছে পেশিশক্তির দৌরাত্ম্য।

ভয়াবহ এক আর্থিক দুরবস্থার বিরুদ্ধে সারা দেশে গণআন্দোলন গড়ে উঠছে। দুর্ভোগ সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে যাওয়ায় মানুষজন ক্ষুব্ধ। রাজনীতি ফের রাজপথের সঙ্ঘাত-সংঘর্ষ আর রক্তপাতের দিকে এগোচ্ছে দেখে সবাই উদ্বিগ্ন। সব দিক থেকে সাধারণ মানুষকে অভাব-অনটন ও নিরাপত্তাহীন রাখার নাম সরকার নয়। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণে ব্যর্থ ও শুধু নিজেদের নিয়ে ব্যস্ত থাকা সরকারের পক্ষে জনগণকে আশার বাণী শোনানোর সব চেষ্টা ব্যর্থ হবে। যাদের রক্তের বিনিময়ে এ দেশের জন্ম, সে দেশে তাদের যেন বেঁচে থাকার অধিকারও নেই। ঘরে-বাইরে কোথাও আইনের শাসন নেই।

নাগরিকদের অসহায় রাখার ভোটচুরির ব্যবস্থা ভাঙতে হবে। দেশে সুশাসনের প্রতিটি প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করা হয়েছে। মহাবিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা পেতে যোগ্য সরকার গঠন অসম্ভব হয়ে পড়েছে। ব্যক্তি বা গোষ্ঠীকেন্দ্রিক শাসনের নাম সরকার নয়। এ ধরনের সরকারের সাথে কেবল সিন্ডিকেটের তুলনা চলে।

সরকার কত দ্রুত অচল হয়ে সরকারবিহীন অবস্থা সৃষ্টি করছে তা-ও উপলব্ধি করতে অপারগ। আসলে সরকার চলছে না। চলছে সরকারি লোকজনের নির্লজ্জ হইচই। এটি সবাইকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে তাদের নির্বুদ্ধিতা। অন্য কিছু বলা সম্ভব নয় বলে বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস আবারো উল্লেখ করেছেন, নির্বাচনে সবার সমান ভ‚মিকা থাকা উচিত। তার এ কথার অর্থ প্রতিভাত হয় এভাবে- সরকারকে ক্ষমতার বাইরে থেকে অন্যদের মতো সমঅবস্থানে দাঁড়িয়ে নির্বাচনে লড়তে হবে। যেখানে সংসদীয় গণতন্ত্র রয়েছে সেখানে এটি নির্বাচনের পূর্বশর্ত। আমাদের বিদ্যমান ব্যবস্থায় অবাধ নির্বাচনের কথা ভাবার সুযোগ নেই। সরকারি কর্মকর্তারা সম্মিলিতভাবে ভোটডাকাতির নির্বাচন চালিয়ে যাচ্ছেন।

দেশ বাঁচাতে হলে বিদ্যমান মহাসঙ্কট সামলাতে সৎ ও যোগ্য বক্তিদের নিয়ে জরুরি সরকার গঠনের প্রয়োজনীয়তা অবধারিত হয়ে পড়েছে। যত দিন যাচ্ছে তত স্বাধীনচেতা মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। তারা জানিয়ে দিচ্ছেন, বর্তমান সরকারের ওপর তাদের আস্থা নেই। তাই এখন নির্বাচনের জন্য অপেক্ষা করা মানে দেশকে মহাদুর্যোগে নিপতিত করার নামান্তর। জনগণ এত ক্ষিপ্ত যে, তারা নিজেরা কিছু করে বসতে পারে।

আসলে বর্তমান সরকারের গণতান্ত্রিক শাসন প্রতিষ্ঠার কোনো চিন্তা নেই। তারা কমিউনিস্ট নিয়মে সবাইকে দলীয় রাজনীতি করতে উৎসাহ দিয়ে সরকারের অংশ করে দেশে ত্রাসের রাজনীতির পথ অনুসরণ করে চলবে। সরকার রাষ্ট্রীয় কর্মচারীদের দলীয় কর্মী হিসেবে ব্যবহার করে দুর্নীতির রাজত্ব চালিয়ে যাওয়ার এখনো স্বপ্ন দেখছে।

অর্থনীতিতে যখন ধস শুরু হয়েছে; ঠিক সে পরিস্থিতিতে সরকার চিন্তা-ভাবনা ছাড়া জ্বালানি তেলের মূল্য গড়ে ৪৭ শতাংশ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত তৎক্ষণাৎ কার্যকর করেছে। একবারে এত দাম বাড়ানোর ঘটনা ইতঃপূর্বে কখনো ঘটেনি। এর ফলে সর্বক্ষেত্রে জিনিসপত্রের দামের ঊর্ধ্বগতি থামানো যাচ্ছে না। চাঁদাবাজদের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যাচ্ছে না। জনগণের প্রতিদিনের জীবনযাত্রায় অসহনীয় চাপ পড়ছে, যে কারণে দেশব্যাপী প্রতিবাদের ঝড় উঠছে। পুলিশের ওপর নির্ভর করে সরকার আর বেশি দিন মানুষকে দাবিয়ে রাখতে পারবে না।

খ্যাতিমান বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এভাবে জ্বালানি তেলের অস্বাভাবিক দাম বাড়িয়ে জনগণের ঘাড় না ভেঙে বিকল্প পথ অনুসরণের কথা সরকার বিবেচনা করতে পারত। এই গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের ব্যাপারে কোনো মুক্ত বিতর্ক হয়নি, কারো বিকল্প ধারণা উপস্থাপনের সুযোগও দেয়া হয়নি। গরিব জনগোষ্ঠীর জন্য যদিও কিছু সরকারি সাহায্য দেয়া হচ্ছে; কিন্তু তা বিতরণে চলছে দলীয় রাজনীতি। ফলে দুর্নীতি ঠেকানো যাচ্ছে না। সবাই এসব সাহায্য পাচ্ছেন না। গ্রাম-গঞ্জের পরিস্থিতি সম্পর্কে এমন খবর আসছে, দলীয় নেতাকর্মীর দাপটে মাঠপ্রশাসন নিষ্ক্রিয়।

জনগণের আর্থিক দুরবস্থাতেও শোষণ-বঞ্চনার মাধ্যমে অর্থ আদায়ের চেষ্টা চলছে সর্বতোভাবে। প্রতিটি সরকারি সেবায় আকাশচুম্বী অর্থ আদায় করা হচ্ছে, তবু নিয়মিত সেবা মেলা দুষ্কর। কিভাবে জনগণের ওপর নতুন কর আরোপ করা যায়; সে পাঁয়তারাও থেমে নেই। রাষ্ট্রের হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করা হয়েছে। অথচ লুণ্ঠনকারীদের টাকা ফেরত দিতে বলা হয় না। জনগণ দাবি তুলেছে, তাদের টাকা আদায় করতে হবে।

সরকার বলতে এটি বোঝায় না যে, ক্ষমতা দখল ও দুর্নীতির বখরা ভাগাভাগিতে ক্ষমতাসীনদের সাথে বিরোধী দলকে আপস করতে হবে। কারা সরকার পরিচালনা করবেন; তা নির্ধারণে অবাধ নির্বাচন হচ্ছে জনগণের অধিকার। এটি সরকারের সাথে রাজনৈতিক দলগুলোর দরকষাকষির বিষয় নয়। সরকার এ ব্যাপারেও সচেতন নয় যে, পরিবর্তনের মুহূর্ত যখন আসে; তখন পরিবর্তন অনিবার্যভাবে ঘটে যায়। শান্তিপূর্ণভাবে পরিবর্তন আনতে না পারলে অন্য পথে আসে। এ রকম অঘটন কারো কাছে কাম্য নয়। ক্ষমতাসীনদের যেকোনোভাবে ক্ষমতায় থাকার চিন্তা বাদ দিতে হবে।

সরকার হচ্ছে একটি ব্যবস্থা, বর্তমান ব্যবস্থার পরিবর্তন বলতে বুঝতে হবে শাসনতন্ত্রসম্মত গণতান্ত্রিক পরিবর্তন। ব্যক্তি বা গোষ্ঠীকেন্দ্রিক শাসন কোনো সরকারি শাসন নয়। এ ধরনের পরিবর্তন যখন হবে, তখন হবে। কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলো দিয়ে এ ধরনের পরিবর্তন সম্ভব তা-ও বিশ্বাস করা যায় না। তবু গণতান্ত্রিক শাসন মেনে গণতান্ত্রিক পন্থায় সরকার পরিচালনায় তাদের অভ্যস্ত করতে হবে। শুধু পরিবর্তনের জন্য পরিবর্তন আর নয়। সরকারের জন্য শান্তিপূর্ণ সর্বোত্তম বিকল্প হচ্ছে পদত্যাগ করে যোগ্য, দেশপ্রেমিক, সাহসী ও দুর্নীতিমুক্ত ব্যক্তিদের সমন্বয়ে একটি জরুরি সরকারের প্রয়োজন মেনে নেয়া।

লেখক : সিনিয়র আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট


আরো সংবাদ



premium cement

সকল