২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫
`

বন্ধু দেশের অহঙ্কারী আস্ফালন

বন্ধু দেশের অহঙ্কারী আস্ফালন - ফাইল ছবি

গত ১৭ থেকে ২১ জুলাই পাঁচ দিনব্যাপী বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সদর দফতর ঢাকার পিলখানায় বিজিবি ও ভারতের বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্সের (বিএসএফ) মহাপরিচালক পর্যায়ের সীমান্ত সম্মেলন সম্পন্ন হলো। বছরে দু’বার সাধারণত এ ধরনের মহাপরিচালক পর্যায়ের সম্মেলন হয়ে থাকে।

একটি হয় ভারতে ও অন্যটি হয় ঢাকায়। এসব দ্বিপাক্ষিক আনুষ্ঠানিকতা রুটিন কাজ হওয়ার কারণে তেমন ভাইব্রেন্ট বা আলোড়ন সৃষ্টিকারী না হলেও প্রতিটি সম্মেলনে একটি বিষয় নিয়ে যথেষ্ট আলোচনা ও সমালোচনা হয়ে থাকে। সেটি হলো সীমান্তে নিরীহ বাংলাদেশীদের হত্যা। প্রতিবার বিজিবির মহাপরিচালক এ বিষয়টি উত্থাপন করেন এবং বিএসএফের মহাপরিচালক বলেন, এ হত্যাকাণ্ড শূন্যের কোঠায় নিয়ে আসা হবে। কখনো তারা বলেন না যে, সীমান্তহত্যা বন্ধ করা হবে। ‘শূন্যের কোঠায় হত্যাকাণ্ড নিয়ে আসা হবে’ এ ধরনের প্যাঁচানো কথার মানেই হলো, হত্যাকাণ্ড চলবে!

তবে এবারের সদ্য সমাপ্ত সীমান্ত সম্মেলন-উত্তর সংবাদ সম্মেলনে বিএসএফের ডিজি পঙ্কজ কুমার সিং অত্যন্ত ভয়ঙ্কর একটি কথা বলেছেন সীমান্ত হত্যাকাণ্ড নিয়ে। তিনি বলেছেন, সীমান্তে বাংলাদেশী যারা নিহত হচ্ছে তারা সবাই অপরাধী! এরা চোরাকারবারি, মাদক কারবারি ও পাচারকারী। এবার ভারত অত্যন্ত সোজা-সাপ্টা করেই বলে দিলো যে, নিহতরা অপরাধী। এ অসত্য ভাষণটির জন্য আমরা জাতি হিসেবে অপমানবোধ করছি। এর আগের সম্মেলনগুলোতে বিএসএফের ডিজি ইনিয়ে-বিনিয়ে প্যাঁচিয়ে বলার চেষ্টা করেছেন যে, অপরাধের সাথে জড়িত হওয়ার কারণে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। বিএসএফের বর্তমান ডিজি পঙ্কজ কুমার সিংয়ের এবারের সরাসরি নিরীহ নিহত বাংলাদেশীদের প্রতি অভিযোগ বেশ তাৎপর্যপূর্ণ বলে বোদ্ধারা মনে করছেন।

২০০৯ থেকে ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিএসএফের হাতে মোট ৫২২ জন বাংলাদেশী নির্মমভাবে নিহত হয়েছেন (প্রথম আলো, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২০)। গত ছয় মাসে জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত মোট পাঁচ বাংলাদেশী বিএসএফের গুলিতে নিহত হয়েছেন। আর গত বছর মোট ১৮ জনকে এভাবে হত্যা করা হয়েছিল। এ ধরনের হত্যাকাণ্ড না যতটা ভয়াবহ তার চেয়েও বেশি ভয়াবহ হলো নিহত সবাইকে ‘অপরাধী’ সাব্যস্ত করা। আসলে এটি হলো বৃহৎ প্রতিবেশী রাষ্ট্রের ছোট্ট দেশের প্রতি অহঙ্কারের চরম পরাকাষ্ঠা।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সীমান্তে এমন হত্যাকাণ্ডের ঘটনা একেবারেই বিরল। উপমহাদেশেও শুধু বাংলাদেশ সীমান্তেই বিএসএফ বিনা বাধায় হত্যাকাণ্ড ঘটাচ্ছে। ভারতের সাথে আরো পাঁচটি দেশের যৌথ সীমান্ত রয়েছে। কিন্তু আর কোথাও এমনটি ঘটছে না। পাকিস্তান সীমান্তে ভারত পাকিস্তানের একজনকে মারলে প্রতিউত্তরে পাকিস্তান শক্ত জবাব দেয় বলে সেখানে তা ঘটে না। চীন সীমান্তে গত ২০২০ সালে দুই সীমান্ত বাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় ভারতের প্রায় ২০ জন জওয়ান নিহত হয়েছিল।

নেপাল, ভুটান ও মিয়ানমার সীমান্তে এমনটি খুব কমই ঘটে, কারণ সেসব দেশের নাগরিকদের ভারত সম্মান করে। ভারতের অন্যান্য সীমান্তে অন্য দেশের নাগরিককে হত্যা না করার প্রধানত দুটো কারণ বলে বিশ্লেষকরা মনে করেন। প্রথমত, পাকিস্তান ও চীন কঠিন প্রতিক্রিয়ার মাধ্যমে জবাব দেয়। আর নেপাল, ভুটান ও মিয়ানমারের নাগরিকরা প্রধানত মুসলমান নন। আমরা বাংলাদেশ ছোট্ট দেশ হলেও দুর্বল নই। কিন্তু আমাদের দেশীয় অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে আমাদের অনৈক্যের দুর্বলতার সুযোগে ভারতকে সরাসরি হস্তক্ষেপ করতে দেখা যায় ২০১৪ সালের সাধারণ নির্বাচনে যা প্রতিফলিত হয়েছিল।

ফলে আমরা ভারতকে একতরফা প্রেম-ভালোবাসা দিয়ে যাচ্ছি। আমাদের নেতারা ভারত তুষ্টিতে পাগলপ্রায়। কেউ বলেছেন ভারতের সাথে আমাদের স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক, কেউ বলেছেন ভারতের সাথে আমরা রক্তের রাখিবন্ধনে আবদ্ধ! আমরা প্রতিবারই শুনতে পাই, ভারতের সাথে সম্পর্ক এখন সর্বোচ্চ উচ্চতায়। প্রতিবারই এ সম্পর্ক উচ্চতায় উঠতে উঠতে আর কত উঁচুতে উঠবে আমরা বুঝতে পারছি না।

কিন্তু বাস্তবে দেখতে পাই, সীমান্তে নিরীহ বাংলাদেশীকে তারা গুলি করে হত্যা করছে নিয়মিত, আমাদের পেঁয়াজের সঙ্কটের সময় তারা পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করে সঙ্কটকে মহাসঙ্কটে রূপান্তরিত করছে, আমাদের দেশের নাগরিককে উইপোকার সাথে তুলনা করে বঙ্গোপসাগরে নিক্ষেপের হুমকি দিচ্ছে, তাদের দেশের বৈধ মুসলমান নাগরিককে অবৈধ বাংলাদেশী বলে পুশইন করার চেষ্টা করছে, আমাদের দেশের নাগরিকরা মূলত চিকিৎসার উদ্দেশে ভিসা নিতে তাদের দূতাবাসে গেলে তাদের টাউট বলে আখ্যায়িত করেছে এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের সন্ত্রাসীদের অস্ত্র, প্রশিক্ষণ ও লজিস্টিক সহযোগিতা দিয়ে ৩০ বছর বাংলাদেশীদের রক্ত ঝরিয়েছে ইত্যাদি।

বিএসএফের ডিজির ভাষ্যমতে, যারা সীমান্তে নিহত হচ্ছে তারা সবাই অপরাধী! তিনি কিভাবে এটি নিশ্চিত হলেন যে, তারা অপরাধী? কোন মামলার মাধ্যমে আদালতে কি নিশ্চিতভাবে প্রমাণিত হয়েছে যে, ওই ব্যক্তিরা অপরাধী; তাই তাদের শাস্তি দিতে হত্যা করা হয়েছে? বিএসএফের চোখে কি এমন কোনো যন্ত্র আছে যা দিয়ে তাকালেই রিডিং আসে, এই ব্যক্তি অপরাধী? আর যদি অপরাধী বলে মনেও হয় তবুও কি বিচার ছাড়াই হত্যা করা যায়? যারা বাদি তারাই একই সাথে বিচারক ও শাস্তিদাতা? আসলে এটি কি ভারতের অহঙ্কারবোধ? নাকি আমাদের নতজানু পররাষ্ট্রনীতির প্রতিফলন? নাকি বিএসএফের জওয়ানরা এভাবে বাংলাদেশী নাগরিকদের গুলি করে করে তাদের ফায়ারিং অনুশীলন করে হাত পাকানোর জন্য উন্মুক্ত সনদ পেয়েছে? এ জন্যই কি তারা ফেলানী হত্যার বিচার করেনি? নিরীহ-নিষ্পাপ ১৫ বছরের কিশোরী ফেলানী কাঁটাতারের বেড়ায় কাপড় আটকে ঝুলে থাকাবস্থায় তাকে পাখি শিকারের মতো গুলি করে হত্যা করে বিএসএফের কাপুরুষ জওয়ানরা। গুলিবিদ্ধ ফেলানী পানি চেয়েও পায়নি। পরে চার ঘণ্টা তার লাশ বেড়ায়ই ঝুলে ছিল। সেই খুনি ১৮১ বিএসএফ ব্যাটালিয়নের জওয়ান অমিয় ঘোষের বিচার করে তাকে ভারতের আদালত নির্দোষ ঘোষণা করেছে। ফলে বিএসএফ বাংলাদেশী হত্যায় আরো উৎসাহিত হয়েছে। এগুলো নিঃসন্দেহে মানবতাবিরোধী অপরাধ, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড।

প্রশ্ন হলো- এমন একটি মন্তব্য শোনার পর আমরা কোনো পর্যায়েই এর প্রতিবাদ হতে শুনলাম না বা জানলাম না। নাকি প্রতিবাদ করা হয়েছিল যা মিডিয়ায় আসেনি? সব মিলে এটি কি আমাদের ক‚টনৈতিক দুর্বলতা নয়? যদি তাই হয় তবে আমাদের আত্মসমালোচনা করতে হবে- কোথায় আমাদের দুর্বলতা? কোন দুর্বলতার কারণে আমরা সামান্য প্রতিবাদটুকু করতে পারছি না? অথচ পঙ্কজ কুমারের এ বক্তব্যের সময় আমাদের ডিজি মহোদয় পাশেই বসা ছিলেন। বরং তাকে সাংবাদিকরা ওই বক্তব্যের সত্যতার কথা জিজ্ঞাসা করলে তিনি নীরব ছিলেন। এমনকি কূটনৈতিক ভাষাটুকু ব্যবহারের মাধ্যমেও এর প্রতিবাদ করেননি বা অস্বীকার করেননি! এটি জাতি হিসেবে আমাদের সবার ব্যর্থতা।

বিশ্লেষকরা মনে করেন, জাতি হিসেবে ঐক্যবদ্ধ থাকতে না পারার কারণেই আমাদের দুর্বলতাগুলো প্রকাশিত হচ্ছে। আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে রাজনীতি নিয়ে আমরা প্রয়োজনে যত খুশি ঝগড়া-বিতর্ক করব, কিন্তু জাতীয় বিষয়ে আমাদের অনৈক্য থাকলেই এভাবে জাতীয় দুর্বলতা প্রকাশ পেয়ে থাকে। আমরা কি পারি না জাতীয় বিষয়ে ঐক্যবদ্ধ থাকতে, আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে অন্য দেশকে নাক গলানোর সুযোগ না দিতে? আমাদের বিষয়ে কেউ অপমানজনক উক্তি করলে তার কড়া ভাষায় প্রতিউত্তর দিতে?

হয়তো বা সামনের নির্বাচনের বিষয়ে আমাদের ভয়াবহ অনৈক্যের সুর তারা শুনতে পেয়ে সেটিকেই বড় একটি দুর্বলতা হিসেবে ধরে নিয়েছে। তা ছাড়া কোনো দল যদি সরাসরি ভারতের সহযোগিতায় ক্ষমতায় থাকতে বা আসতে চায় তবে তা তো অবশ্যই জাতীয় ভয়াবহ দুর্বলতা! এমন সন্ধিক্ষণে চীনের সাথে আমাদের চলমান দহরম-মহরম প্রদর্শিত হওয়ায় হয়তো বা তারা নাখোশ আছে, যা কি না আম খাইয়েও তাদের সন্তুষ্ট করা সম্ভব হয়নি। এ সময় আবার রাশিয়াকে সমর্থনের কারণে ভারতের প্রতি আমেরিকা বিরক্ত থাকলেও সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র ভারতকে দূরে ঠেলে দিচ্ছে না বলে খবর প্রকাশ করেছে। ফলে মোদি সরকার আপাতত নিশ্চিন্ত বলে আরো আত্মবিশ্বাসী হয়ে আমাদের মতো ছোট্ট বন্ধু প্রতিবেশীকে আরো চেপে ধরতে চাচ্ছে তাদের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে ফায়দা হাসিলের জন্য। আর বিএসএফকে এ ধরনের দায়মুক্তি দিয়ে ক্ষমতাসীনদের লাভের অঙ্কটা আরো বাড়ানোর প্রচেষ্টাও হতে পারে এমন বচনের অন্তর্নিহিত উদ্দেশ্য।

বাংলাদেশের সাথে ভারতের এ ধরনের ‘সীমান্তে দেখামাত্র গুলি’ করার মনোবৃত্তির বড় কারণ হলো ভারতের ‘পারসিভ্ড’ নিরাপত্তা হুমকি। এই হুমকি মূলত ধর্মীয় বলে বিশ্লেষকরা মনে করেন। তাদের ভয় হলো- বাংলাদেশের ইসলামাইজেশন ভারতে রফতানি হতে পারে যা কাশ্মিরকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলার শক্তি জোগাবে বলে তারা মনে করে। তারা হয়তো বা ভয় পায় যে, সীমান্তে গুলি করে হত্যা করে বাংলাদেশীদের ভয় না দেখালে ভারতে বাংলাদেশী মুসলমানদের অভিবাসনপ্রক্রিয়া ঘটবে এবং সেখানে মুসলমান সংখ্যা বেড়ে গিয়ে বর্তমান জনমিতির ভারসাম্য ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ফলে তাদের ভোটের রাজনীতিতে প্রভাব পড়বে এবং আঞ্চলিক মোড়লিপনায় ব্যাঘাত ঘটবে।

কারণ এমনিতেই তারা দু’টি মুসলিম দেশ পাকিস্তান ও বাংলাদেশের মধ্যে স্যান্ডুইচ অবস্থায় আছে বলে মনে করছে। এ কারণেই মূলত ভারতের মনে-প্রাণে চাওয়া ও প্রচেষ্টা, যেন এ দেশে সব সময়ই তাদের অনুগত একটি সেক্যুলার সরকার প্রতিষ্ঠিত থাকতে পারে। তাদের ধারণা, সেক্যুলার সরকারই বাংলাদেশের ইসলামাইজেশনকে থামিয়ে তাদের নিরাপত্তাভীতিকে দূর করতে পারবে। কাজেই আমরা যতই চিৎকার করে বলি না কেন, আমাদের পররাষ্ট্রনীতি হলো- ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব’, তবু তা ভারত বিশ্বাস করতে চায় না বলে মনে হয়। ফলে আমরা তাদের চাহিদামতো সব দিয়ে দেয়ার পরও আমাদের প্রতি তাদের অবহেলা বা মোড়লিপনা কমছে না।

আমরা কৃতজ্ঞতাভরে স্মরণ করি ১৯৭১ সালে ভারতের সহযোগিতায় সোনালি স্বাধীনতা পেয়েছিলাম। তাদের সহযোগিতা ছাড়া হয়তো দীর্ঘায়িত হতো আমাদের স্বাধীনতার প্রক্রিয়া। কিন্তু ক‚টনীতির এ দিকটি মনে রাখতে হবে যে, পৃথিবীতে কোনো দেশই নিজেদের স্বার্থ ছাড়া অন্যকে মরণপণ সাহায্য করে না! ভারতের সহযোগিতায় আমরা পেয়েছি স্বাধীনতার স্বাদ, আর ভারত পেয়েছে জন্মশত্রুকে বিকলাঙ্গ করে দিয়ে নিশ্চিত নিরাপত্তার অমিয় সুধা। কিন্তু আমাদের ৩০ লাখ নাগরিককে জীবন দিতে হয়েছে।

তবে প্রথমত তারা চেয়েছিল বাংলাদেশ তাদের একটি করদরাজ্যে পরিণত হবে, যা পরিষ্কার হয়েছিল ২৫ সালা চুক্তির মাধ্যমে। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর বলিষ্ঠ দেশপ্রেমিকসুলভ ভ‚মিকার কারণে তাদের সেই সাধ মাঠে মারা যায়। তখন তারা পরোক্ষভাবে তাদের সব স্বার্থ আমাদের কাছ থেকে আদায় করতে থাকল। তদুপরি, ফারাক্কা চুক্তি করলেও চুক্তি মোতাবেক পানি দিচ্ছে না, ফেনী নদীর পানি নিলেও তিস্তা চুক্তি একযুগ ধরে ঝুলিয়ে রেখেছে ঠুনকো অজুহাতে। খরার সময় পানি আটকে রাখে আর বর্ষার সময় বাঁধ কেটে দেয়। ফলে আমরা মরি খরা ও বন্যায়। এত কিছুর পরও আমরা তাদের সাথে সম্পর্কোন্নয়নের শত চেষ্টা করে যাচ্ছি। কিন্তু তার বিনিময় কি আমরা পেয়েছি?

বিএসএফের এ ধরনের আক্রমণাত্মক আচরণের আরেকটি বড় কারণ হলো- ভারতের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি। বর্তমান মোদি সরকারের রাজনীতি পুরোপুরি কট্টর হিন্দুত্ববাদের ওপর নির্ভরশীল। বিজেপি সরকার ক্ষমতায় দ্বিতীয় মেয়াদ পার করছে। কিন্তু তারা ভারতের কোনো ক্ষেত্রেই তেমন কোনো উন্নয়ন দেখাতে পারেনি। তাদের দুই মেয়াদে ভারতের অর্থনীতি, সামাজিক সংহতি ও সমৃদ্ধি, উন্নয়ন ইত্যাদি কোনো ক্ষেত্রেই উল্লেখযোগ্য কোনো অবদান নেই। তবে ভারতের সংখ্যালঘু মুসলমানদের নির্যাতন, নিপীড়ন, হত্যা, তাদের ধর্মীয় স্থাপনা ও সংস্কৃতি ধ্বংস করার তৎপরতা ইত্যাদি ক্ষেত্রে সফলতা মোদি সরকার দেখাতে সক্ষম হয়ে উগ্র হিন্দু জাতীয়তাবাদের উত্থান ঘটাতে সক্ষম হয়েছে। এ ক্ষেত্রে বিজেপি সরকারের সফলতা একেবারে শতভাগ।

এভাবেই তারা দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসতে সক্ষম হয়েছিল বলে বিশ্লেষকরা মনে করেন। ঠিক একই হিন্দুত্ববাদের টিকিটে মোদি তৃতীয় মেয়াদের জন্য আশার জাল বুনছেন। এ জন্যই মুসলিম অধ্যুষিত বাংলাদেশের জনগণের ওপর বিএসএফ এত খড়গহস্ত হয়ে পড়েছে। এমনই এক সন্ধিক্ষণে যখন বাংলাদেশ সরকার অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক টানাপড়েনে ঘর সামলানোর কাজে ব্যস্ত, যখন ক্ষমতাসীন সরকার আরো একটি নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে ক্ষমতায় আসার স্বপ্ন দেখছে, ঠিক তখন বিএসএফ প্রধান পঙ্কজ এমন ঔদ্ধত্যপূর্ণ মন্তব্য করে বাংলাদেশের মানুষকে অবজ্ঞা করলেন! আমাদের দেশবাসীকে এটি আহত করেছে। ফলে ভারত সরকারের প্রতি এখানে একটি নেতিবাচক মনোভাব তৈরি হতে পারে। কিন্তু ভারতের সাধারণ জনগণের সাথে আমাদের জনগণ টু জনগণ সম্পর্ক সবসময়ই ভালো ছিল এবং থাকবে। তবে ভারতের এ ধরনের অহঙ্কারী আচরণ আমাদের পরবর্তী নির্বাচনেও যথেষ্ট প্রভাব ফেলতে পারে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন।

লেখক : নিরাপত্তা বিশ্লেষক
Email: maksud2648@yahoo.com


আরো সংবাদ



premium cement