২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

বৈশ্বিক খাদ্যসঙ্কট ও আমরা

বৈশ্বিক খাদ্যসঙ্কট ও আমরা - ফাইল ছবি

আমাদের খাদ্য, কৃষিমন্ত্রী দাবি করে থাকেন, দেশে খাদ্যসঙ্কট নেই। খাদ্য সরবরাহেও কোনো ঘাটতি নেই। কিন্তু ভরা মৌসুমেও কেন খাদ্যশস্যের দাম বেড়ে গেল, চেষ্টা করেও তারা কেন দাম স্বাভাবিক রাখতে পারলেন না, খাদ্যবাণিজ্যের অধিপতিদের কেন বাগে রাখতে ব্যর্থ হলেন মাননীয় বাণিজ্য, কৃষি ও খাদ্যমন্ত্রী তার কোনো জবাব দিতে পারেন না। সরকারকে ভয় পায় না ব্যবসায়ীরা, এই প্রথম যদিও নয়, অতীতেও দু-চারবার দেখা গেছে, তবে এবার তাদের একরোখা মূল্যবৃদ্ধির ভাব এমন ছিল যা আগে দেখা যায়নি। কিন্তু কেন? সেটিই হচ্ছে প্রশ্ন। এই প্রশ্নের সূত্র ধরে সাধারণ মানুষকে বলতে শোনা গেল, বাণিজ্যমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রীসহ অনেক মন্ত্রী আছেন যাদের মূল পরিচয় ব্যবসায়ী। পাইকারি/খুচরা বাজারের ধনপতিদের বেশির ভাগই ওই মন্ত্রীদের নিজস্ব শ্রেণীর মানুষ। তাই তো দ্রব্যমূল্য লাগামছাড়া।

বৈশ্বিক খাদ্যনিরাপত্তা মারাত্মকভাবে হুমকির মুখে- এই তথ্য দিচ্ছে বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক সংস্থা। বিশ্বব্যাংক, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা, আইএমএফ, ডব্লিউএফপি, জাতিসঙ্ঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) মিলে আলোচনার পর বলেছে, পৃথিবীর ৮২টি দেশের ৩৫ কোটিরও বেশি মানুষ খাদ্য নিরাপত্তাজনিত সঙ্কটে ভুগছে। তারা মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে আছে। রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে যেমন এই সঙ্কট ঘনীভ‚ত হয়েছে, তেমনি এর সূচনা হয়েছিল ২০১৯ সালের উপান্তে কোভিড-১৯-এর মহামারীকালে। নানা রকম বিধিনিষেধ যেমন- খাদ্য রফতানি ও সরবরাহে সঙ্কট সৃষ্টি করে তেমনি সুযোগটা ব্যবহার করে বিশ্ব খাদ্যবাণিজ্যের অধিপতিরা।

মানুষের লোভ যে কেমন হীনভাবে প্রকাশ পায় কোভিড-১৯-এর সময় খাদ্যমূল্য বাড়িয়ে এবং ভ্যাক্সিনের দাম নির্ধারণের মাধ্যমে তা প্রমাণ করেছে তারা। আবার রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে যুদ্ধ বেধে যাওয়ার পর জ্বালানি তেলের আকাশছোঁয়া দাম বাড়িয়েছে তরল সোনা উৎপাদকরা, যা ব্যারেলপ্রতি ১৪০ ডলার পর্যন্ত উঠে যায়। এখন অবশ্য দাম কমে এসেছে কিছুটা। কিন্তু তা স্বাভাবিক সময়ের ধারে কাছেও আসেনি। ওপেককে অনুরোধ করা হয়েছে, যাতে তারা প্রতিদিন ১৩ কোটি ব্যারেল উৎপাদন করে বিশ্বের চাহিদা মোকাবেলায় সহায়তা দেয়।

আমাদের এই বাংলাদেশে কি পেট্রলের দাম কমেছে? কমেনি, কমানো হয়নি। এমনকি খাবার তেল সয়াবিনসহ সব ধরনের তেলেরই দাম বাড়ানো হয়েছে, কিন্তু কমানোর কোনো রীতি এ দেশে চালু নেই। ফলে ভোক্তা-ক্রেতার নাভিশ্বাস ওঠার জোগাড়। প্রতিদিনকার কাঁচাবাজারেও দ্রব্যমূল্য ক্রেতাদের নাগালের বাইরে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় নির্বিকার। তাদের আচরণ এমন যে, মনে হয় দেশের জনগণের বা জনগণের জন্য নন তারা, তারা কাজ করেন বিক্রেতা, আমদানিকারক, তেল পরিশোধনকারী মিলমালিকদের জন্য। তাদের পক্ষ হয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় খুচরা বিক্রির দাম নির্ধারণ করে দেয়। কিন্তু তারা খাদ্যশস্য উৎপাদক কৃষকের জন্য কোনো পদক্ষেপ নেয় না। এত কিছুর পরও দেশের সামগ্রিক খাদ্যসঙ্কট নিরসনে সরকারের তেমন কোনো উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা লক্ষ করা যায়নি চলতি সপ্তাহের আগে। এ সপ্তাহে খাদ্যমন্ত্রী বলেছেন, তারা ঘাটতির বিষয়ে সজাগ। ঘাটতি হবে না এতে তিনি নিশ্চিত। চলতি সপ্তাহে কেবল বিদ্যুৎসাশ্রয়ের জন্য একটি পরিকল্পনা প্রকাশ করেছে সরকার। সেই পরিকল্পনা কিভাবে বাস্তবায়িত হবে, তার বিস্তারিত কিছু বলা হয়নি।

গত ১৬ জুন বৈশ্বিক কয়েকটি সংস্থা জানিয়েছে- শ্রীলঙ্কার মতো মহাসঙ্কটের মধ্যে পড়তে যাচ্ছে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকার কয়েকটি দেশ। আইএমএফ প্রধান ক্রিস্টালিনা জর্জিভার বক্তব্যের সূত্র ধরে বিবিসি এক প্রতিবেদনে ঝুঁকিতে থাকা দেশের নামের যে তালিকা করেছে সেখানে আছে বাংলাদেশের নামও।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বছরের পর বছর ধরে বিপুল ঋণ করেছে শ্রীলঙ্কা। গত মাসে দেশটি বৈদেশিক মুদ্রা পরিশোধের ক্ষেত্রে নিজেদের দেউলিয়া ঘোষণা করে। এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে গত ২০ বছরে দেউলিয়া হওয়া প্রথম দেশ শ্রীলঙ্কা। আশঙ্কা করা হচ্ছে, ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতি, মুনাফার হার বৃদ্ধি, মুদ্রার অবমূল্যায়ন, উচ্চমাত্রার ঋণ ও বিদেশী মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাওয়ার মতো এসব বৈশ্বিক প্রতিক‚লতা এ অঞ্চলের অন্য দেশগুলোর অর্থনীতিতেও প্রভাব ফেলতে পারে।

আইএমএফ প্রধান বলেছেন, অন্য উন্নয়নশীল দেশগুলোতেও চার মাস ধরে টেকসই মূলধনের বহিঃপ্রবাহ দেখা যাচ্ছে। এতে তাদের উন্নত অর্থনীতিকে ছোঁয়ার স্বপ্ন ঝুঁকিতে পড়েছে।

এসব উন্নয়নশীল দেশের কয়েকটিতে ঋণদাতা হিসেবে চীনের আধিপত্য রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এসব দেশের ভাগ্যকে গুরুত্বপূর্ণ উপায়ে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে বেইজিং। তবে চীনের ঋণের শর্তগুলো কী এবং কিভাবে তারা ঋণ পুনর্গঠন করবে, তা অনেকটাই অস্পষ্ট।

ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের বিশ্লেষক অ্যালান কিনান মনে করেন, এ ক্ষেত্রে চীনের দায় রয়েছে। দেশটি এমন সব ব্যয়বহুল অবকাঠামো প্রকল্পকে উদ্বুদ্ধ করছে, যার বদলে কোনো বড় ধরনের অর্থনৈতিক অর্জন আসছে না।

বাংলাদেশে গত মে মাসে মুদ্রাস্ফীতির হার ৭ দশমিক ৪২ শতাংশে পৌঁছেছে, যা আট বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। রিজার্ভের পরিমাণ কমে যাওয়ায় জরুরি নয় এমন পণ্য আমদানি বন্ধ করতে দ্রুত ব্যবস্থা নিয়েছে সরকার। প্রবাসীদের কাছ থেকে রেমিট্যান্স পেতে বিভিন্ন বিধান শিথিল করা হয়েছে। কর্মকর্তাদের বিদেশে ভ্রমণও কমিয়ে দেয়া হয়েছে।

এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল রেটিংসের বিশ্লেষক কিম এং তান বিবিসিকে বলেন, আমদানি ব্যয় ও রফতানি আয়ের ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক ঘাটতিতে থাকা বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা সরকারকে ভর্তুকি বাড়াতে ব্যাপক প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়তে হবে। পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা অর্থনৈতিক সহায়তার জন্য ইতোমধ্যে আইএমএফ ও অন্য দেশের সরকারের দ্বারস্থ হয়েছে।

কিম এং তান আরো বলেন, বাংলাদেশকে সরকারি ব্যয়ের বিষয়টিকে পুনঃঅগ্রাধিকার দিতে হবে এবং ভোক্তা পর্যায়ে কেনাকাটার ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করতে হবে।’ ( প্রথম আলো, ১৮ জুলাই, ২২)

ক্রিস্টালিনা জর্জিভাকে পুঁজিবাদী বিশ্বের প্রতিনিধি হিসেবে আমরা ধরে নিতে পারি। কারণ তিনি পুঁজিরই ব্যবসায়ী ও তার বিনিয়োগের জায়গাগুলো যাতে অন্যের দখলে চলে না যায় তা দেখা এবং রক্ষা করা তারই দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। তারা চীনের বিনিয়োগকে সন্দেহের উপাদান হিসেবে দেখবেই, তাতে কোনো ভুল নেই। প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে সেই আচরণই স্বাভাবিক। কিন্তু চীন তার বিনিয়োগের বিষয়ে যে আলোচনাটা করবে তা প্রকাশ্য নয়, তারা তাদের সর্বোচ্চ লাভ দেখেই সেখানে যাবে, সেখানে সে দেশের জনগণের লাভ-ক্ষতি তার বিবেচ্য নয়। তবে তার আরো কিছু রাজনৈতিক ও গোপন অভিসন্ধি আছে বা থাকে, যা বড় বিনিয়োগের ক্ষেত্রে লক্ষ করা যায়। উদাহরণ হিসেবে শ্রীলঙ্কার বৃহৎ নৌবন্দরে বিনিয়োগ।

শ্রীলঙ্কান সরকার ওই নৌবন্দর চালাতে পারেনি। চীন সেই নৌবন্দরটি ৯৯ বছরের জন্য লিজ নিয়ে পরিচালনা করছে। শ্রীলঙ্কার ওই বন্দরটি আন্তর্জাতিক জলসীমার ও বাণিজ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এমনকি ভবিষ্যতে সামরিক কাজেও তা ব্যবহার করা সহজ হবে চীনের পক্ষে। উদীয়মান পরাশক্তির জন্য ভারত মহাসাগরের শ্রীলঙ্কান ওই বন্দর স্ট্র্যাটেজিক পয়েন্ট হিসেবে অতি গুরুত্বপূর্ণ। চীন সেই প্রয়োজনকে সামনে রেখেই সেখানে বড় বিনিয়োগ করেছে, যা প্রেসিডেন্ট গোতাবায়ে রাজাপাকসের সরকার পুরোপুরি উপলব্ধি করতে পারেনি। গত মাসে যখন শ্রীলঙ্কা সরকার তার অর্থনৈতিক দেউলিয়াত্ব ঘোষণা করে বৈদেশিক ঋণ পরিশোধে অপারগতা জানিয়েছে, তার আগে সরকারের সিকি, আধুলি ও পূর্ণমন্ত্রীদের রাজনৈতিক বাকোয়াজ জাতি শুনেছে। আইএমএফ প্রধান ও অন্যান্য বিশ্লেষকদের মতে, এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকার বেশ কিছু উন্নয়নশীল দেশও শ্রীলঙ্কান সিনড্রোমে ভুগছে। এ রোগ বিস্তারে চীনের ওপর দায় চাপালেও আসলে রাজনৈতিক নেতৃত্বের দেউলিয়াত্বই যে তার জন্য বড় দায়ী, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

একটি উদাহরণ দেয়া যাক। বাংলাদেশ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীদের আস্ফালন আমরা শুনেছি বিদ্যুৎ উৎপাদনের বিষয়ে। শেখ হাসিনার উদ্যোগ/ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ ... এই স্লোগান নিয়ে দেশের প্রতিটি ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছানোর উদ্যোগ নেয় সরকার। কিন্তু ওই স্লোগান যে চোখে ধুলা দেয়ার জন্য, তা আজ প্রমাণ হয়ে গেছে। পাওয়ার সেল/বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়নের সর্বশেষ হালনাগাদ ২৮ জুন, ২২-এর হিসাব অনুযায়ী, গোটা দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ২৫ হাজার ৫৬৬ মেগাওয়াট হলেও প্রকৃত উৎপাদন চাহিদা ১৪ হাজার ৭৮২ মেগাওয়াট (১৬ এপ্রিল, ২০২২), এই হিসাব ক্যাপটিভ ও নবায়নযোগ্য জ্বালানিসহ)।

প্রকৃত উৎপাদন কত সে তথ্য তারা জানে কিন্তু প্রকাশ করে না। না জেনে গর্ব করে বলতেন বাংলাদেশ বিদ্যুতে কেবল স্বয়ংসম্পূর্ণই নয়, এখন বিদ্যুৎ রফতানি করবে। প্রকৃত উৎপাদন ও সক্ষমতার মধ্যে তালগোল পাকিয়ে দেয়ার পেছনে আছে জনগণকে ধোঁকা দেয়ার মতলব। হিসাবটা জটিল করে তুলে জনগণের মাথা ঘুরিয়ে দেয়াই তাদের উদ্দেশ্য। এই ধোঁকারই সর্বশেষ পরিণতি লোডশেডিং করে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের চেষ্টা আর ভারত থেকে উচ্চমূল্যে বিদ্যুৎ কেনার তৎপরতাকে ন্যায্যতাদানের অপচেষ্টা। আগামী সেপ্টেম্বরে ভারত থেকে বিদ্যুৎ আনার সব আয়োজনই শেষ। সেই বিদ্যুৎ উচ্চমূল্যে কেনা হচ্ছে।

আমাদের মনে আছে, ২০০৮-এর নির্বাচনে বিজয় অর্জনের পরই ক্ষমতার শীর্ষ নেতৃত্ব থেকে বলা শুরু হয়েছিল, বিএনপি ক্ষমতা থেকে যাওয়ার আগে গোটা বিদ্যুৎ সেক্টর ধ্বংস করে গেছে। ওই প্রচারণার পরই আমরা দেখলাম- রেন্টাল, কুইক রেন্টাল বিদ্যুতের আমদানি। বিএনপি ক্ষমতা ছেড়ে দেয়ার পর সামরিক-গণতান্ত্রিক সরকারের দুই বছরে কেন দেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ অটুট ছিল?

একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনে সময় লাগে তিন-চার বছর। সেই হিসেবে তিন-চার বছর পর আর রেন্টাল, কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর সাথে যে অসম চুক্তি করা হয়েছে, তা বাতিল করা হবে। না, সেটি না করে সরকার প্রতি দুই বছর পরপর সেসব চুক্তি নবায়ন করে গেছে। তিন টাকা দরে গ্রাহককে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে রেন্টাল থেকে কেনা হচ্ছে ৮-১০ টাকা থেকে শুরু করে আরো উচ্চমূল্যে। এভাবে যখন নিজেদের সক্ষমতা নিঃশেষপ্রায় তখনই বিদ্যুৎ আমদানি করার চুক্তি করেছে ভারতের সাথে। অথচ ভোলার ডাবল সাইকেলের বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ রাখা হয়েছে গ্যাসের অভাবের কারণ দেখিয়ে। ডাবল সাইকেল বিদ্যুৎকেন্দ্রের ব্যয় কম। কম গ্যাসে বেশি বিদ্যুৎ পাওয়া গেলেও মধ্যরাতে কেন্দ্র বন্ধ রাখার নির্দেশ যায় ঢাকা থেকে। মূল লক্ষ্য যে ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানি করা, সেটি চরম দেশপ্রেমেরই (!) প্রকাশ। আগামী সেপ্টেম্বর থেকে ভারতীয় বিদ্যুৎ এলে নাকি সব লোডশেডিং শেষ হয়ে যাবে। আমরা তখন আবারো বিদ্যুতে ভাসতে থাকব। প্রতিটি ঘরে বিদ্যুৎ ঝলমল করবে।

বিদ্যুৎ নিয়ে সরকারপ্রধানের বক্তব্য আজকাল টিভিতে দেখি না। এখন বিদ্যুতের উপদেষ্টা, প্রতিমন্ত্রী, সচিব আর উৎপাদক, বিতরণকারী কোম্পানিগুলোর কর্তাদের সচল/সরব উপস্থিতি দেখতে পাচ্ছি। কী কী উপায়ে লোডশেডিং করা হবে, তার ব্যাখ্যা দেন তারা। বিশ্বব্যাপী জ্বালানির দাম বেড়ে যাওয়ায় বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর উৎপাদন বন্ধ রাখা হয়েছে। আর ভারতীয় বিদ্যুৎ কিনতে যে পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় হবে, সে টাকা কোথা থেকে আসবে?

গত ১৯ জুলাই থেকে দেশে লোডশেডিংয়ের সূচনা হলো। অথচ ২০০৮ সালে বিদ্যুতের ঘাটতি মোকাবেলা করার জন্য রেন্টাল বিদ্যুৎ কেনার এক অসম ও রাজনৈতিক লুটেরা চুক্তি করা হয়। ডিজেল, ফার্নেস অয়েলভিত্তিক ওইসব পুরনো লক্কড়মার্কা মেশিনে বিদ্যুৎ উৎপাদিত হোক বা না হোক, সরকার কোম্পানিগুলোকে প্রতি মাসেই তাদের উচ্চমূল্যের দাম পরিশোধ করে চলেছে। দুই বছরের জন্য চুক্তি করে সেই চুক্তি গত ১৪ বছর ধরে রিনিউ করে চলেছে এবং ওই কোম্পানিগুলো ও সরকারের বিরুদ্ধে কোনোরকম আইনি ব্যবস্থা যাতে কোনো নাগরিক নিতে না পারে, তার জন্য ইনডেমনিটি দেয়া হয়েছে। ওই চুক্তিগুলোতে যে চরম অন্যায় ও যুক্তিহীন শর্ত আছে তাকে ধামাচাপা দেয়ার জন্যই ইনডেমনিটি দেয়া হয়েছে। এ ধরনের আরো কিছু ঘটনা আছে যা দেশের সচেতন জনগণও জানে না। জনগণের অধিকার খর্ব হয় এমন কিছু করার অর্থই হচ্ছে সংবিধান লঙ্ঘন। রেন্টাল বিদ্যুৎ কেনার চুক্তিগুলো তারই একটি।

উচ্চমাত্রার ঋণ, মুদ্রার অবমূল্যায়ন, মুনাফার হার বৃদ্ধি, ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতি ও রিজার্ভ কমে যাওয়া কী করে সরকার সামাল দেবে? রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে গেছে। প্রবাসীরা কেন দেশে টাকা পাঠানো কমিয়ে দিয়েছেন, তার পেছনে কী কাজ করছে তা বুঝতে হবে সরকারকে। বৈদেশিক মুদ্রার আয় খাতে রফতানিই ছিল বড় প্রবাহ। কিন্তু সেই প্রবাহও কমেছে। গার্মেন্ট সেক্টরে যে আয় তার বেশির ভাগই আমদানিকৃত ফেব্রিকসের জন্য ব্যয় হয়, ব্যয় হয় এক্সেসরিজের জন্যও মোটা আকারের বৈদেশিক মুদ্রা।

আমরা কি জানি, আমাদের গার্মেন্টের বিভিন্ন উচ্চপদে ৩৬ হাজার ভারতীয় শ্রমিক কাজ করেন। তারা বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ে যান দেশ থেকে। এই খাতে দক্ষ জনশক্তি কেন তৈরি করা হয়নি বা হচ্ছে না, সেটি সরকারই ভালো বলতে পারে। রিজার্ভ কমে আসার পেছনে এই ব্যয় কম দায়ী নয়।

একটি কথা চালু আছে আমাদের দেশে, তা হলো- বিন্দু বিন্দু জলে সিন্ধু (নদ) সৃষ্টি হয় বা হয়েছে। আমাদের বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয়ের বিন্দুগুলোতেও ব্যয়ের সিন্ধু নদ সৃষ্টির কথাটি আমরা ভুলে বসে আছি। এসব ভুল কেন হচ্ছে তা দেখতে হবে সরকারকে। কিন্তু জনগণের স্বার্থ দেখার রাজনৈতিক চোখ সরকারের আছে বলে মনে হয় না।


আরো সংবাদ



premium cement
ছুটির দিনেও ঢাকার বাতাস অস্বাস্থ্যকর কালিয়াকৈরে ছিনতাইকারীর অস্ত্রের আঘাতে স্বর্ণ ব্যবসায়ী বাবা-ছেলে আহত কাপাসিয়ায় চোর সন্দেহে গণপিটুনিতে নিহত ২ রাশিয়ার ২৬টি ড্রোন ধ্বংসের দাবি ইউক্রেনের উত্তর কোরিয়ার সাথে আলোচনার ক্ষেত্র তৈরি করতে চাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র মাগুরায় বজ্রপাতে ২ যুবকের মৃত্যু মিয়ানমারে সামরিক বাহিনী ‘অস্থায়ীভাবে’ ক্ষমতায় রয়েছে : জান্তা প্রধান গাজীপুরে কাভার্ডভ্যানের চাপায় মোটরসাইকেলচালক নিহত উত্তরপ্রদেশে কারাগারে মুসলিম রাজনীতিবিদের মৃত্যু : ছেলের অভিযোগ বিষপ্রয়োগের দক্ষিণ আফ্রিকায় বাস খাদে, নিহত ৪৫, বাঁচল একটি শিশু ইসরাইলের রাফা অভিযান পরিকল্পনা স্থগিত

সকল