২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

ছুটির পুনর্বিন্যাস প্রয়োজন

ছুটির পুনর্বিন্যাস প্রয়োজন - ছবি: সংগৃহীত

উন্নতি ও সমৃদ্ধির লক্ষ্যে পরিকল্পিত ব্যবস্থাপনা প্রয়োজন। এর ভেতরে ছুটি ব্যবস্থাপনা অন্যতম। ছুটি এক দিকে শারীরিক ও মানসিক অবসাদ দূর করে কর্ম উদ্দীপনার সৃষ্টি করে; অপর দিকে, অতিরিক্ত ছুটি শারীরিক ও মানসিক অবসাদ বাড়িয়ে দেয়; নেতিবাচক প্রভাব ফেলে সামগ্রিক কর্মকাণ্ডের ওপর।

আমাদের দেশের প্রচলিত ছুটির ব্যাপারে ভেবে দেখা প্রয়োজন। আমাদের বিদ্যমান ছুটির দিকে তাকালে দেখা যায়, সারা বছরে ১০৪ দিন সাপ্তাহিক ছুটি। ১০ দিন নৈমিত্তিক ছুটি (সিএল)। ১৪ দিন অসুস্থতাজনিত ছুটি। ৩০ দিন অর্জিত ছুটি। ১৪ দিন সরকারি ছুটি। আট দিন নির্বাহী আদেশে ছুটি। এ ছাড়াও রয়েছে চিত্তবিনোদনের ছুটি। সব মিলিয়ে একজন কর্মকর্তা-কর্মচারী মোট ১৮০ দিন ছুটি ভোগ করেন। এ ছাড়াও মাতৃজনিত ছুটি আরো ছয় মাস। কোথাও কোনো অসুবিধা ঘটলে, রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা ঘটলে ছুটির পরিমাণ আরো বেড়ে যায়। অসুস্থতাজনিত ছুটি ১৪ দিন হলেও অসুস্থতার কারণে এই ছুটি বাড়তেই থাকে। সব মিলিয়ে ১৮০ দিন ছুটি হলেও এর কার্যকারিতা অনেকসময় ২০০ দিন পর্যন্ত গড়িয়ে যায়। ১২ মাসে ছয় মাস ছুটি কাটিয়ে কোনো জাতি অর্থনৈতিক উন্নতি করতে পারে না; সামনে এগোতে পারে না।

বিভিন্ন সময় লম্বা ছুটির ফাঁদের কথা আমরা শুনি। বিশেষ করে ঈদের সময় তা দেখা যায়। ওই সময় শহরগুলো যেন একটা বিরান জনপদে পরিণত হয়। সবধরনের কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধ। অর্থনৈতিক কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ে। বহির্বাণিজ্য প্রায় শূন্যের কোঠায় চলে আসে। ছুটির পরে আবার নতুন করে অফিস আদালত শুরু হয়। গতি ফিরে পেতে কয়েকদিন সময় লেগে যায়। আমরা ৩৬৫ দিনের মধ্যে প্রায় ২০০ দিন ছুটিতে কাটিয়ে থাকি। ১৬৫ দিন কাজ করি। এর মধ্যে রাস্তায় যানজট, পানিজট ও অন্যান্য কারণে অর্ধেক সময় আমাদের জীবন থেকে চলে যায়। তাহলে যে সময়টুকু থাকে তা দিয়ে জাতীয় প্রবৃদ্ধির উন্নতি কতটুকু সম্ভব, তা পাঠক বিবেচনা করবেন। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ ছুটির দিনকে নিজেদের মতো করে গুছিয়ে নিয়েছে। ছুটিগুলোর পুনর্বিন্যাস করেছে। ছুটি সমন্বিত করেছে। আমাদেরও সময় এসেছে নতুন করে ছুটির ব্যাপারটি সমন্বিত করার।

বিভিন্ন দেশে সারা বছরই তাদের অফিস আদালত ও ব্যাংক খোলা থাকে। সরকারি ছুটির দিনগুলোতে ৩০ শতাংশ জনশক্তি কাজ করে ও ৭০ শতাংশ অবসরে যান। যারা কাজ করেন তারা ওভারটাইম পান এবং এই ছুটির দিনগুলো পরবর্তী ছুটির সাথে সমন্বয় করেন। এটি চক্রাকারে চলতে থাকে যেন সবাই এ সুবিধা নিতে পারেন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বছরে এক মাস ছুটি বাধ্যতামূলক। চাকরিতে যোগদানের দিন থেকে এটি গণনা করা হয় । ১১ মাসের মাথায় গিয়ে ছুটি শুরু হয়। এক মাস পর তিনি আবার কাজে যোগদান করেন। এক মাস ছুটি পাওয়ায় পরিবার-পরিজন নিয়ে সময়টাকে কার্যকরভাবে কাটাতে পারেন। ছুটির শেষে নতুন কর্মোদ্দীপনা নিয়ে কাজে যোগদান করেন। এর ফলে সারা বছর একটি প্রতিষ্ঠানের কেউ না কেউ ছুটিতে থাকেন। আবার সারা বছর কাজকর্ম চলতে থাকে। অপর দিকে বিভিন্ন ধর্মীয় ছুটির দিনে শুধু সেই ধর্মের অনুসারী কর্মকর্তা-কর্মচারী ছুটি ভোগ করেন। এ দিন তারা ছুটি ভোগ করেন তাদের মতো করে। কিন্তু অফিস আদালত সমস্ত প্রতিষ্ঠানের কাজ চলতেই থাকে।

স্কুল-কলেজগুলো বছরে একই সময়ে নির্দিষ্ট দিনের জন্য ছুটিতে যায়। ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী- তারা এক মাস ছুটি পরিকল্পিতভাবে উপভোগ করতে পারেন। পরিবারকে সময় দিতে পারেন যেটি আমরা পারি না। কারণ এক দিকে হয়তো অফিস ছুটি হয়েছে অপর দিকে, সন্তানদের স্কুল-কলেজ খোলা থাকে। আবার স্বামী ছুটি পেয়েছেন, স্ত্রীর অফিস খোলা। যে উদ্দেশ্যেই ছুটি সে উদ্দেশ্যই বাস্তবায়িত হচ্ছে না। এ জন্য ছুটির সমন্বয় প্রয়োজন এবং ছুটিকে আরো সুসংহত করা প্রয়োজন। স্কুল-কলেজগুলোতে ইংরেজি মাধ্যমে একরকম ছুটি, সরকারি স্কুলে একরকম, বেসরকারিতে আরেকরকম। এটি একই সাথে হওয়া দরকার যেন ওই সময়টা সবাই নিজ নিজ পরিকল্পনা অনুসারে কাজে লাগাতে পারেন। আমাদের দেশে বিভিন্ন কারণে কোথাও এক দিন, কোথাও দু’দিন, কোথাও পাঁচ দিন ছুটির ব্যবস্থা রয়েছে। এই ছুটিগুলো কাজে লাগানো যায় না। এ জন্য ছুটি আরো সমন্বিত ও পরিকল্পিত হওয়া প্রয়োজন। জাতীয় উন্নতি ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির কাজে আমরা সবাই যেন সমভাবে অংশগ্রহণ করতে পারি।

আমাদের দেশের সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে সবেতন ছুটি হয় বছরে এক মাস। অনেকে এই ছুটিগুলো জমা করে রাখেন বছরের পর বছর ধরে। কিন্তু ছুটিতে যান না। একজন ব্যক্তি বছরের পর বছর কাজ করতেই থাকবেন, কোনো ছুটি ভোগ করবেন না; এটি তো হয় না। তার ও তো ক্লান্তি অবসাদ থাকতে পারে। আর থাকাটাই স্বাভাবিক। এই ক্লান্তি অবসাদ নিয়ে কারো পক্ষে কাজ করা কঠিন। বাধ্যতামূলক ছুটির দিনগুলোতে প্রত্যেক কর্মকর্তা-কর্মচারীকে ছুটিতে যেতে হবে। ছুটি ছুটিই। ছুটি তো প্রয়োজনের জন্য। এই প্রয়োজনের জন্য ছুটিকে যদি আমরা জমা রাখি তারও একটি সীমা থাকা উচিত। সাকুল্যে ছয় মাস ছুটি জমা রাখা যেতে পারে। দেখা যায়, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বিশেষ করে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে বছরের পর বছর ছুটি পাওনা থাকে। তারা যখন অবসরে যান তখন এই ছুটিকে ‘ক্যাশ’ করে নিয়ে যান। এটি ঠিক নয়। এতে ছুটির উদ্দেশ্য সফল হয় না। ছুটির উদ্দেশ্যই হচ্ছে, শারীরিক ও মানসিক কর্মোদ্দীপনা সৃষ্টি করা। এটি করতে হলে আমাদের প্রচলিত ছুটির নিয়মগুলোকে জাতীয় স্বার্থে পুনর্বিন্যাস করা প্রয়োজন।

লেখক : অধ্যাপক ও চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞ
Email- shah.b.islam@gmail.com


আরো সংবাদ



premium cement
২০২৪-এর নির্বাচন : স্বৈরশাসনের হাতছানি গাজায় সাহায্য বাড়াতে ইসরাইলকে নির্দেশ আইসিজের দিল্লি হাইকোর্টে কেজরিওয়ালের বিরুদ্ধে জনস্বার্থ মামলা খারিজ বস্ত্র-পাট খাতে চীনের বিনিয়োগ চায় বাংলাদেশ জামালপুরে সাব রেজিস্ট্রারকে হত্যার হুমকি মামলায় আ’লীগ নেতা গ্রেফতার গাজায় অনাহার যুদ্ধাপরাধ হতে পারে : জাতিসঙ্ঘ ‘প্রত্যেককে কোরআনের অনুশাসন যথাযথভাবে অনুসরণ করতে হবে’ মতলব উত্তরে পানিতে ডুবে ভাই-বোনের মৃত্যু প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগের শেষ ধাপের পরীক্ষা শুক্রবার লম্বা ঈদের ছুটিতে কতজন ঢাকা ছাড়তে চান, কতজন পারবেন? সোনাহাট স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ ত্যাগ করলেন ভুটানের রাজা

সকল