২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

বানভাসি মানুষের পাশে দাঁড়ান

বানভাসি মানুষের পাশে দাঁড়ান - ছবি: সংগৃহীত

শতাব্দীর সর্বনাশী বন্যায় সিলেট এবং সুনামগঞ্জ জেলার লাখ লাখ মানুষ আজ গৃহহীন। শুধু সিলেট-সুনামগঞ্জ নয়; কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, বগুড়া, জামালপুর ও সিরাজগঞ্জসহ উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোতেও বন্যায় লাখো লাখো মানুষ পানিবন্দী। বহু বাড়িঘর এমনকি প্রধান সড়কও পানিতে তলিয়ে গেছে বন্যায়। নদ-নদীর বিরামহীন ভাঙনে মানুষের জীবন বিপন্ন। সহায় সম্বল হারিয়ে তারা আজ দিশেহারা। গতকালও যাদের অর্থবিত্ত ছিল, সংসারে সুখ ছিল; তারা আজ বন্যায় সর্বস্বান্ত। বন্যার পানি শুধু বাড়িঘরই নেয়নি, নিয়েছে গরু-ছাগলসহ বিভিন্ন গবাদিপশু।

যারা সামনে কোরবানির জন্য গরু-ছাগল পালন করেছিল তারাও দিশেহারা। এক দিকে তাদের গরু রাখার জায়গা নেই, অপর দিকে এসব পশুর খাবার নেই। মানুষ এখন নিজের খাবার খুঁজবে নাকি গবাদিপশুর খাবার জোগাবে? এটি এখন বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। খাবার পানি নেই। পানির উৎসগুলো বানের পানিতে তলিয়ে গেছে। উনুন নেই, নেই উনুন জ্বালানোর ব্যবস্থা। উনুন পানির নিচে। খড়ি ভেজা। সরঞ্জাম থাকলেও খাবার রান্না করার মতো কোনো ব্যবস্থা নেই। ধনী-গরিব রিকশাওয়ালা, শ্রমিক সব এক কাতারে দাঁড়িয়ে। প্রাকৃতিক বিপর্যয় যে মুহূর্তের মধ্যে জনগণকে ভাসিয়ে অসহায় করে ফেলতে পারে তা চর্মচক্ষু দিয়ে না দেখলে বোঝার উপায় নেই।

ঘরে খাবার নেই, মাথা গোঁজার ঠাঁই নেই, খাবার পানি নেই, নেই অসুস্থদের চিকিৎসার সুযোগ। যোগাযোগব্যবস্থা থাকলেও বিপর্যস্ত। কাল যাদের সহায় সম্বল সবই ছিল আজ তারা নিঃস্ব। তাদের এই বিপদে মানবিকতার ডাকে আমাদের সবার সাধ্যমতো সাড়া দেয়া প্রয়োজন। দেশের ১৮ কোটি মানুষ যদি তাদের সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয় তাহলে অসহায়, দুস্থ, বানভাসি ক্ষুধার্ত মানুষগুলো একটু বাঁচার স্বপ্ন দেখতে পারে। আপনার আমার একটু সাহায্যের পসরা হয়তো তাদের দুঃখ কষ্ট দূর করতে পারবে না, কিন্তু তাদের বেঁচে থাকার সংগ্রামে উঠে দাঁড়ানোর সাহস জোগাতে পারে। তাই আসুন, আমরা যে যতটুকু পারি, যেভাবে পারি বিপদগ্রস্ত মানুষগুলোর পাশে দাঁড়াই।

তিলে তিলে তাল হয়। আপনার আমার সামান্য কিছু সাহায্য দুস্থ বানভাসি ভাইবোনদের ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টাকে ঘুরিয়ে দিতে পারে। আজ দলমত নির্বিশেষে ধর্মীয় ভেদাভেদ ভুলে আর্তমানবতার পাশে দাঁড়ানো বড়ই প্রয়োজন। প্রতি বছরই কোনো না কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগে শিকার লাখো মানুষ। বৈশ্বিক তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার ফলে ঝড়, বন্যা, খরার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ আমাদের জীবনকে বিষিয়ে তুলেছে। অথচ এ ব্যাপারে কার্যকর উদ্যোগ নেই। এবারের বন্যার পূর্বাভাস ছিল। কিন্তু কোনো ধরনের প্রস্তুতি কিংবা ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। বন্যায় এ পর্যন্ত ৪০ জনের বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন।

আমাদের এই কথা ভুললে চলবে না, ‘ডুবেছে মানুষ, সন্তান মোর মার’। সামনে বিভিন্ন রোগের প্রাদুর্ভাব ও বিস্তারের শঙ্কা; এটাকে সামগ্রিকভাবে মোকাবেলা করতে হবে। একই সাথে আমি ব্যবসায়ী ভাইদের কাছে সবিনয় নিবেদন জানাচ্ছি, আপনারাও আপনাদের লাভের কথাটা কিছু দিনের জন্য ভুলে যান। অসহায় নিপীড়িত মানুষের পাশে দাঁড়ান। আপনারা অতীতেও দাঁড়িয়েছেন। আমরা বিশ্বাস করি, এবারো দাঁড়াবেন। বানভাসি মানুষকে ভাবতে দিন, তাদের বিপদের দিনে সমগ্র জাতি তাদের সাথে রয়েছে। অতীতে বিভিন্ন জাতীয় দুর্যোগের সময় গোটা জাতি সব ভেদাভেদ ভুলে ঐকতানের যে উদাহরণ সৃষ্টি করেছিল এখনো সময় এসেছে তা পুনরাবৃত্তির।
লেখক : চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞ
Email- shah.b.islam@gmail.com


আরো সংবাদ



premium cement