১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`

তুরস্কের সিরিয়া ও পিকেকে ডিলেমা

তুরস্কের সিরিয়া ও পিকেকে ডিলেমা। - ছবি : সংগৃহীত

সিরিয়ায় নিরাপদ জোন তৈরির জন্য আরেকটি সামরিক অভিযান যেকোনো সময় ঘটতে পারে বলে আলোচনা হচ্ছে। তুর্কি প্রেসিডেন্ট এরদোগান নিজেই সংসদে এ ব্যাপারে আভাস দিয়েছেন। তিনি যেকোনোভাবেই তার সীমান্ত বরাবর কোনো কুর্দি রাষ্ট্র অনুমোদন করতে চাইছেন না। তিনি পাশ্চাত্যের একটি পক্ষের বৃহত্তর মধ্যপ্রাচ্য পরিকল্পনা সম্পর্কে অবহিত বলেই হয়তো তুরস্কের ৩০ ভাগ ভূখণ্ডকে ভেঙে নিয়ে কুর্দি রাষ্ট্রের সাথে সংযুক্ত করার প্রচেষ্টাকে অগ্রসর হতে দিতে চান না। এর মধ্যে এরদোগান ২০২৩ সালের নির্বাচনের ঘোষণা দিয়ে সেই নির্বাচনে শাসক জোট পিপলস ফ্রন্টের প্রার্থী ঘোষণা করেছেন নিজেকে। আসলে কেন কিভাবে কুর্দি ইস্যু তুরস্কের পররাষ্ট্রনীতিকে প্রভাবিত করছে সে সম্পর্কে জানা বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। তুরস্কের সিরিয়া ও ইরাক নীতি এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাথে সম্পর্কের ওপর এর প্রভাব বোঝা মধ্যপ্রাচ্যের এখনকার উন্নয়ন জানার জন্য বিশেষভাবে প্রয়োজন।

সিরিয়ায় তুরস্কের সামরিক অভিযান
২০১৬ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত সিরিয়ায় যেসব তুর্কি সামরিক অভিযান পরিচালিত হয়েছে তার মধ্যে প্রথম ছিল অপারেশন ইউফ্রেটিস শিল্ড। আগস্ট ২০১৬ থেকে মার্চ ২০১৭ পর্যন্ত সময়ে ইউফ্রেটিস নদী এবং আফ্রিন ক্যান্টনের মধ্যে উত্তর-পূর্ব তুর্কি-সিরিয়ান সীমান্তে এই অভিযান চালানো হয়। এতে তুর্কি সশস্ত্রবাহিনী দ্রুত ইউফ্রেটিস নদীর ধারে জারাবুলাস শহর দখল করে নেয়, তারপর আফরিন ক্যান্টন সীমান্ত পর্যন্ত ভূমির স্ট্রিপ সুরক্ষিত করতে পশ্চিম দিকে চলে যায়। ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে আল-বাব শহরের নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করে। এই অভিযানে অর্জিত উদ্দেশ্য ছিল, ইউফ্রেটিস নদীর পূর্বে অবস্থিত স্বঘোষিত ইসলামিক স্টেটের বাহিনীকে সরিয়ে দিয়ে ইউফ্রেটিস নদীর পূর্ব এবং পশ্চিমে কুর্দি ক্যান্টনগুলোকে সংযুক্ত করা অঞ্চলের একটি উপত্যকার নিয়ন্ত্রণ নেয়া।

তুরস্ক ২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত সময়ে অপারেশন অলিভ ব্রাঞ্চ পরিচালনা করে আফরিন ক্যান্টনে। এই অপারেশনে সিরিয়ায় প্রথমবারের মতো আঙ্কারা বায়রাক্তার টিভি২ ড্রোনের ব্যবহার করে। তুর্কি সশস্ত্রবাহিনী মার্চ ২০১৮ এ এক সপ্তাহেরও কম সময়ে সিরিয়ার কুর্দি মিলিশিয়া পিপলস প্রোটেকশন ইউনিট (ওয়াইপিজি) এর কাছ থেকে আফরিন দখল করে নেয়। এই অভিযানের অর্জিত উদ্দেশ্য হলো, আফরিন ক্যান্টন থেকে ওয়াইপিজিকে সরিয়ে দেয়া এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে কুর্দি বাহিনীর সাথে আরো সহযোগিতা করা থেকে বিরত রাখা। সে সাথে তুরস্কে থাকা সিরিয়ান শরণার্থীদের স্থানান্তরের জন্য একটি সম্ভাব্য গন্তব্য খোঁজা।

২০১৯ সালের অক্টোবরে তুরস্ক অপারেশন পিচ স্প্রিং নামে পরবর্তী অভিযান পরিচালনা করে। তেল আবিয়াদ এবং রাস আল-আইন শহরের মধ্যে উত্তর-পূর্ব তুর্কি-সিরীয় সীমান্ত এলাকায় এই অভিযান চালানো হয়। এই অভিযানে তুর্কি বাহিনী ও ফ্রি সিরিয়ান ন্যাশনাল আর্মির জোট দ্রুত সিরিয়ার ভূখণ্ডে চলে যায় আর কুর্দি বাহিনীকে সীমান্ত থেকে দূরে ঠেলে দেয়। ১০ দিন পর তুরস্ক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং রাশিয়ার সাথে পৃথক যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে পৌঁছার পর এই অভিযান শেষ হয়। এই অভিযানে অর্জিত উদ্দেশ্য ছিল, তুর্কি-সিরিয়ান সীমান্তে একটি স্বায়ত্তশাসিত কুর্দি সত্তা গঠনে বাধা দেয়া এবং তুরস্কে থাকা সিরিয়ান শরণার্থীদের জন্য আরেকটি সম্ভাব্য স্থানান্তর গন্তব্যের ব্যবস্থা করা।

২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত সময়ে তুরস্ক অপারেশন স্প্রিং শিল্ড নামে ইদলিব গভর্নরেটে পরবর্তী অভিযান চালায়। এই অভিযানের মাধ্যমে বিদ্রোহী বাহিনী দ্বারা নিয়ন্ত্রিত সিরিয়ার ভূখণ্ডের শেষ পকেট ইদলিব দখলে সিরিয়া সরকারের অগ্রযাত্রাকে থামিয়ে দেয় তুরস্ক। সিরিজ তুর্কি ড্রোন হামলার মধ্য দিয়ে অভিযানটি এক সপ্তাহের মধ্যে শেষ হয়ে যায় যখন এরদোগান গভর্নরেটে যুদ্ধবিরতির নিশ্চয়তা দেয়ার জন্য একটি চুক্তিতে স্বাক্ষর করতে মস্কোতে যান। এই অভিযানে অর্জিত উদ্দেশ্য ছিল, ইদলিবের দিকে সিরিয়ার আরব সেনাবাহিনীর অগ্রগতি বন্ধ করা এবং বেসামরিক নাগরিকদের গণহত্যা ঠেকানো। ২০১৫ এবং ২০১৭ এর মধ্যে চালানো অভিযানের প্রধান অগ্রাধিকার ছিল স্বঘোষিত ইসলামিক স্টেটের বিরুদ্ধে লড়াই করা। এ সময় ২০১৬ সালের জুলাইয়ের ব্যর্থ অভ্যুত্থান এবং তুরস্কের মাটিতে ইসলামিক স্টেটের একাধিক সন্ত্রাসী হামলায় তুরস্ক হুমকিতে পড়ে গিয়েছিল। ২০১৮ সাল থেকে তুর্কি নাগরিকদের এবং শরণার্থীদের মধ্যে সামাজিক উত্তেজনা আরো দৃশ্যমান হয়ে ওঠে।

অভ্যন্তরীণ ইস্যু অগ্রাধিকারে
সিরিয়ায় তুরস্কের সামরিক অভিযানের সময় ও সুযোগ গভীরভাবে অবলোকন করলে তুরস্কের অভ্যন্তরীণ অগ্রাধিকারও বিশেষভাবে দেখা যায়। আঙ্কারা তুরস্কে বসবাসকারী কুর্দিদের বিচ্ছিন্নতাবাদ দমন করতে সিরিয়ার সঙ্ঘাতকে ব্যবহার করে। পরের বছরগুলোতে, সিরিয়ায় ধারাবাহিক সামরিক অভিযান এরদোগানের লক্ষ্যকে সুসংহত করতে সাহায্য করে। তুরস্কের ভেতরে ও বাইরে কুর্দি বাহিনীকে দুর্বল করা সিরিয়ায় আঙ্কারার সামরিক হস্তক্ষেপের অন্যতম কারণ। যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউ দ্বারা সন্ত্রাসী সংগঠন হিসাবে স্বীকৃত, কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টি (পিকেকে) ও তুর্কি রাষ্ট্রের মধ্যকার দ্বন্দ্বে কয়েক দশক আগেই সিরিয়া ভূমিকা পালন করে। ১৯৮০ ও ১৯৯০ এর দশকে, সিরিয়া সরকার পিকেকে নেতা আব্দুল্লাহ ওকালানসহ কুর্দি ক্যাডারদের আশ্রয় ও সুরক্ষা প্রদান করে। ১৯৯০-এর দশকের শেষের দিকে, তুরস্কের উত্তর সিরিয়া আক্রমণ করার হুমকি অবশেষে সিরিয়ার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট হাফেজ আল-আসাদকে এই নীতি পরিত্যাগে বাধ্য করে। আর ওকালান, ১৯৯৮ সালের অক্টোবরে দামেস্ক ত্যাগ করতে বাধ্য হন, ১৯৯৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে কেনিয়ায় বন্দী হন।

তুরস্ক ২০০৩ সালে প্রতিষ্ঠিত পিকেকের সিরীয় সহযোগী সংগঠন ডেমোক্র্যাটিক ইউনিয়ন পার্টির (পিওয়াইডি) উত্থান পর্যবেক্ষণ করে। তুরস্ক প্রাথমিকভাবে পিওয়াইডি এবং পিকেকেকে আলাদা করার চেষ্টায় পিওয়াইডি নেতা সালিহ মুসলিমের সাথে জড়িত হয়। ২০১২ সালে যখন পিওয়াইডির সামরিক শাখা, ওয়াইপিজি উত্তর সিরিয়ার বিশাল অংশের নিয়ন্ত্রণ নেয় তখন উভয়পক্ষের মধ্যে আস্থা নষ্ট হতে শুরু করে। মার্চ ২০১৫ সালে, এরদোগান ঘোষণা করেন যে, ‘তুরস্কে আর কুর্দি সমস্যা নেই’, আর সে সাথে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে শান্তি প্রক্রিয়ার সমাপ্তি ঘটান। ৭ দিন পর, কুর্দিপন্থী পিপলস ডেমোক্র্যাটিক পার্টির (এইচডিপি) নেতা সেলাহাতিন ডেমিরতাস, তুরস্কের সরকারব্যবস্থাকে নির্বাহী প্রেসিডেন্সিতে পরিবর্তন করার জন্য এরদোগানের প্রস্তাবিত সাংবিধানিক সংস্কারের বিরোধিতার ঘোষণা দেন।

জুন ২০১৫-এর তুর্কি সাধারণ নির্বাচন এই ভিন্ন রাজনৈতিক কৌশলগুলো পরীক্ষার সুযোগ সৃষ্টি করে। ২০০২ সালের পর প্রথমবারের মতো একেপির প্রতি সমর্থন হ্রাস পায়, এরদোগানকে জোট সরকার গঠনের জন্য আলোচনায় প্রবেশ করতে বাধ্য করে। ১৩ শতাংশের বেশি ভোট পেয়ে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বিরোধী দল (রিপাবলিকান পিপলস পার্টির পরে) হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয় কুর্দি সমর্থিত এইচডিপি। কুর্দিদের সাথে শান্তি প্রক্রিয়ার সমাপ্তির অর্থ হলো, আঙ্কারার একটি নির্বাহী রাষ্ট্রপতির প্রকল্পের সাথে এগিয়ে যাওয়ার জন্য সমর্থনের একটি নতুন উৎস সন্ধান। এর অংশ হিসেবে এরদোগান ন্যাশনালিস্ট মুভমেন্ট পার্টির (এমএইচপি) সাথে একটি নতুন জোট প্রতিষ্ঠা করেন, যার নেতৃত্বে রয়েছেন ডেভলেট বাহচেলি। জাতীয়তাবাদী এমএইচপির সাথে একেপির জোট শেষ পর্যন্ত ফলপ্রসূ হয়। ২০১৭ সালের গণভোটে, ৫১ শতাংশ তুর্কি নাগরিক প্রস্তাবিত সাংবিধানিক সংস্কারকে অনুমোদন করে। আর দেশের প্রথম নির্বাহী রাষ্ট্রপতি হন এরদোগান। জুন ২০১৮ নির্বাচনের ফলাফল একেপির পক্ষে অনুকূল ছিল কিন্তু দলটি সংসদীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি। এরদোগান এমএইচপির সাথে একেপির রাজনৈতিক ঐক্যকে একটি সংসদীয় জোট, তথা পিপলস অ্যালায়েন্সে রূপান্তর করেন।

তুর্কি সেনাবাহিনীর জন্য নতুন ভূমিকা
সিরিয়ায় তুরস্কের ২০১৬ এবং ২০১৮ সালের হস্তক্ষেপের একটি উদ্দেশ্য ছিল সেনাবাহিনীর জন্য তুরস্কের জনসমর্থন পুনর্গঠন করা। কাস ইউনিভার্সিটির সমীক্ষা অনুসারে, অভ্যুত্থান প্রচেষ্টার কয়েক মাস পরে এবং অপারেশন ইউফ্রেটিস শিল্ডের মাঝামাঝি ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে তুর্কি সশস্ত্রবাহিনীর প্রতি জনগণের আস্থা ৪৭.৭ শতাংশের ঐতিহাসিক নিম্নস্তরে নেমে আসে। সশস্ত্রবাহিনীর প্রতি আস্থা অপারেশন ইউফ্রেটিস শিল্ড এবং অপারেশন অলিভ ব্রাঞ্চের পরে প্রায় ৬০ শতাংশের স্বাভাবিক স্তরে ফিরে আসে। ২০২০ এবং ২০২১ সালে তার স্বাভাবিক স্তর ফিরে পাওয়ার আগে, ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে সেনাবাহিনীর ওপর আস্থা আবার কমে যায়। ততক্ষণে, সেনাবাহিনী যথেষ্ট পরিমাণে প্রযুক্তিগত অগ্রগতি দ্বারা সমর্থিত একটি উচ্চস্তরের কার্যকারিতায় ফিরে আসে।

তুর্কি অস্ত্র মাল্টিব্যারেল রকেট-লঞ্চার সিস্টেম থেকে শুরু করে মনুষ্যবিহীন ড্রোন এবং আকাশ থেকে মাটিতে নির্ভুল নির্দেশিত যুদ্ধাস্ত্র তুর্কি প্রতিরক্ষা শিল্পের গুরুত্বপূর্ণ সাফল্যের প্রমাণ দেয়। প্রতিরক্ষা শিল্পের রফতানি ২০০২ সালে ২৪৮ মিলিয়ন ডলার থেকে বেড়ে ২০১৯ সালে ৩ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়। এখন পোল্যান্ড, কাতার এবং ইউক্রেনসহ দেশগুলোতে ড্রোন রফতানি করছে তুরস্ক। তুর্কি ড্রোন লিবিয়ার গৃহযুদ্ধ এবং আর্মেনিয়া ও আজারবাইজানের মধ্যে ২০২০ সালের নাগার্নো-কারাবাখ যুদ্ধের মতো একাধিক যুদ্ধে মোড় পরিবর্তন করে দেয়। সিরিয়ায় তুরস্কের অভিযান তুর্কি সশস্ত্রবাহিনীর জন্য একটি অস্তিত্বগত পরিবর্তন হিসেবে চিহ্নিত হয়। দেশে সামরিক ও বেসামরিক ক্ষমতার মধ্যে একটি নতুন ভারসাম্য তৈরি হয়। সেনাবাহিনীর রাজনৈতিক অভিমুখও বদলাতে শুরু করে। যে জেনারেলরা ২০১৬ শুদ্ধিকরণ থেকে বেঁচে গিয়েছিলেন তারা শাসনের প্রতি তাদের আনুগত্য দেখানোর জন্য দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিলেন।

পররাষ্ট্রনীতি ফ্রন্ট
বৈদেশিক নীতির ক্ষেত্রে সিরিয়ায় তুরস্কের সামরিক অভিযানের ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনাপূর্ণ সম্পর্ক, রাশিয়ার সাথে একটি কৌশলগত পুনর্গঠন এবং শরণার্থী প্রবাহের ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ওপর নতুন সুবিধা হিসেবে দেখা দেয়। সামগ্রিকভাবে, সিরিয়ায় আঙ্কারার সম্পৃক্ততা শুধু এই অঞ্চলজুড়ে তার ঐতিহ্যবাহী অংশীদার ও প্রতিবেশীদের সাথে সঙ্ঘাত বা সম্প্রীতির কারণ হয়েছে, তাই নয়। এই সম্পৃক্ততা তুরস্ককে আরো আক্রমণাত্মক, জাতীয়তাবাদী ধারায় পরিচালনার জন্য নতুন নীতি সরঞ্জাম দিয়ে সজ্জিত করে।

২০১৫ সাল থেকে, সিরিয়া তুরস্ক এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সম্পর্কের মধ্যে অন্যতম বিতর্কিত বিষয়। সিরিয়ার কুর্দিদের প্রতি ওয়াশিংটনের সমর্থন আঙ্কারাকে এমনভাবে বিচ্ছিন্ন করেছে যা মার্কিন নীতিনির্ধারকরা অনুমান করতে ব্যর্থ হন। আজকের সবচেয়ে কণ্টকাকীর্ণ দ্বিপাক্ষিক বিষয় হলো তুরস্কের রাশিয়ান এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থার মোতায়েন, যার ফলে ওয়াশিংটন আঙ্কারার বিরুদ্ধে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা এবং এফ-৩৫ জয়েন্ট স্ট্রাইক ফাইটার প্রোগ্রাম থেকে তুরস্ককে বাদ দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।

প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা তুরস্কের সাথে জোটকে মধ্যপন্থী, গণতান্ত্রিক ইসলামিক সরকারের সাথে সংলাপের কৌশলের ভিত্তি হিসেবে দেখলেও তখন থেকেই সিরিয়া নিয়ে দুই পক্ষে মতপার্থক্য দেখা দিতে শুরু করে। ওবামা যখন ২০১৩ সালে সিরিয়ার শাসকদের রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার রেডলাইন হবে ঘোষণা করা সত্ত্বেও পরে সে অনুসারে কাজ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, তখন এরদোগানের কাছে এটি স্পষ্ট হয় যে, সিরিয়ার ভবিষ্যতের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তুরস্কের পরিকল্পনায় ভিন্নতা রয়েছে। এরদোগান এবং প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে সম্পর্কটি নিশ্চিতভাবেই সুসংহত ছিল। দুই নেতা প্রায়ই সরাসরি কথোপকথন করতেন এবং ট্রাম্প এমনকি সিরিয়া থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের বিষয়ে তার নিজের প্রশাসনের পরামর্শের বিরুদ্ধে, এরদোগানের পক্ষে ছিলেন।

জানুয়ারি থেকে মার্চ ২০১৮ পর্যন্ত, অপারেশন অলিভ ব্রাঞ্চে আংশিক লক্ষ্য ছিল ওয়াইপিজিকে সমর্থন করা থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে নিরুৎসাহিত করা। এরপর আঙ্কারা এবং ওয়াশিংটনের মধ্যে জুন ২০১৮ সালে মানবিজের চার পাশে যৌথ টহল চালানোর চুক্তি হয়, যেটি তখন আর কুর্দিদের নিয়ন্ত্রণে ছিল না।

২০১৮ সালের গ্রীষ্মে, আঙ্কারা সিরিয়ায় তৃতীয় তুর্কি অভিযানের অনুমতি দেয়ার জন্য ওয়াশিংটনের ওপর চাপ বাড়াতে শুরু করে। এবার তুর্কি-সিরিয়ান সীমান্তের উত্তর-পূর্ব অংশে ওয়াইপিজি নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলগুলোকে লক্ষ্য করে এটি পরিকল্পনা করা হয়। ততক্ষণে, তুর্কি এবং মার্কিন সরকারের সিরিয়া নীতিগুলো কৌশলগত এবং ভূ-রাজনৈতিকভাবে আর সাদৃশ্যপূর্ণ থাকেনি। ইসলামিক স্টেটকে দমন করার সাথে সাথে সিরিয়ায় তুর্কি সরকারের মূল উদ্দেশ্য থেকে যায় ওয়াইপিজিকে দুর্বল করা। অন্য দিকে, ওয়াশিংটন আঙ্কারার উদ্দেশ্য এবং সিরিয়ার বিভিন্ন বিরোধী গোষ্ঠীর সাথে জোট বা রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের সাথে এরদোগানের ক্রমবর্ধমান ইতিবাচক সম্পর্ককে অবিশ্বাস করতে শুরু করে। মার্কিন-তুরস্ক সম্পর্কের যেকোনো ভবিষ্যৎ সংশোধন নির্ভর করবে সিরিয়া সঙ্কটের ইতিবাচক সমাধানের ওপর। তুরস্ক তার দক্ষিণ প্রতিবেশীর ভবিষ্যতে কী ভূমিকা পালন করতে চায় এবং সেখানে শক্তিশালী কুর্দি উপস্থিতি কতটা সহ্য করতে পারে তা নির্ধারণ করতে হবে।

তুরস্ক-রাশিয়া সহযোগিতা ও প্রতিযোগিতা
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তুরস্ক ও রাশিয়ার মধ্যে পরিবর্তিত সম্পর্ককে ব্যবচ্ছেদ করেছেন বেশ কয়েকজন বিশেষজ্ঞ। তারা দুই দেশের সম্পর্কের বর্ণনা করেছেন ‘সহযোগিতামূলক প্রতিযোগিতা বা প্রতিযোগিতামূলক সহযোগিতা’ এবং ‘সুবিধার বিয়ে’ থেকে ‘বিপক্ষ সহযোগিতা’ হিসেবে। ২০১১ সাল থেকে, সিরিয়া অন্যতম প্রধান থিয়েটার যেখানে মস্কো এবং আঙ্কারার মধ্যে সম্পর্ক উন্মোচিত হয়েছে। শুরু থেকেই, রাশিয়ার প্রাথমিক আগ্রহ ছিল আসাদ সরকারকে টিকিয়ে রাখা। অন্যদিকে তুরস্কের উদ্দেশ্য দামেস্কে শাসন পরিবর্তন থেকে ওয়াইপিজি বাহিনীকে দুর্বল করার দিকে পরিবর্তিত হয়।

সামগ্রিকভাবে, উভয়পক্ষই বিভিন্ন উপায়ে সম্পর্ক থেকে উপকৃত হয়েছে। তুরস্ক সিরিয়ার সাথে তার সীমান্ত থেকে কুর্দি উপস্থিতি মুছে ফেলতে সক্ষম হয়েছে এবং সঙ্ঘাতের অবসান ঘটাতে পারে এমন যেকোনো রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় ভূমিকা পালন করতে ভালো অবস্থানে রয়েছে। উপরন্তু, এরদোগান পুতিনের সাথে তার সম্পর্ককে কাজে লাগাতে এবং জ্বালানি ও পর্যটনের মতো গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক খাতে রাশিয়ার সমর্থন নিশ্চিত করার সময় তার আন্তর্জাতিক অবস্থানকে বাড়িয়ে তুলতে সক্ষম হয়েছেন। বিপরীতভাবে, রাশিয়া প্রায় পুরো সিরিয়ার ওপর আসাদের নিয়ন্ত্রণ পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছে। দেশের উত্তর থেকে মার্কিন সৈন্যরা পিছু হটলে, মস্কো ওয়াইপিজিকে সিরিয়ার শাসনের কাছাকাছি নিয়ে আসার জন্য কুর্দিদের সাথে আঙ্কারার উত্তেজনাকে কাজে লাগিয়েছে।

এরদোগানের আগস্ট ২০১৬ এর সেন্ট পিটার্সবার্গ সফর ২০১৫ সালের নভেম্বরে তুরস্কের একটি রাশিয়ান বিমান ভূপাতিত করার কারণে সৃষ্ট দুই দেশের পূর্বের বিবাদের সমাধান করেছিল। সেন্ট পিটার্সবার্গ বৈঠকের পরপরই নতুন অংশীদারিত্বের প্রথম ফল হয়েছিল, যখন রাশিয়ানরা সিরিয়ার ভূখণ্ডে তুরস্কের প্রথম অনুপ্রবেশকে সহ্য করে। অপারেশন ইউফ্রেটিস শিল্ড সিরিয়ায় খেলার নতুন শক্তির গতিশীলতা উন্মোচন করে।

অপারেশন ইউফ্রেটিস শিল্ড আঙ্কারার সিরিয়া নীতিতে একটি আনুষ্ঠানিক ইউ-টার্নও চিহ্নিত করে। ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে, তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুত কাভুসোগলু স্পষ্ট করে বলেন যে, তুরস্ক আসাদকে ক্ষমতাচ্যুত করার প্রাথমিক উদ্দেশ্য ছেড়ে দিচ্ছে এবং আস্তানা শান্তিপ্রক্রিয়ার কাঠামোর মাধ্যমে সিরিয়া সঙ্কটে বৃহত্তর ভূমিকা পালন করাকে বেছে নিচ্ছে। এই কাঠামোগত সংলাপ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে জেনেভা শান্তি আলোচনার একটি বিকল্প ছিল।

আস্তানা প্রক্রিয়া সিরিয়ার পরিস্থিতি ঠিক করতে ভূ-রাজনৈতিক ভঙ্গি সক্রিয় করার চেয়ে অনেক কম কার্যকর ছিল। রাশিয়া, তুরস্ক এবং ইরানের মধ্যে ধারাবাহিক চুক্তিগুলো সিরিয়ার কিছু অংশে কিছুটা স্থিতিশীলতা এনেছে। কিন্তু এই চুক্তিগুলো সিরিয়ার পরবর্তী সংঘর্ষের জন্য একটি ব্যাপক পদ্ধতির সম্ভাবনাকেও ম্লান করেছে। ইদলিবের বর্তমান পরিস্থিতি তারই প্রমাণ। ২০১৭ সালে চারটি ডি-এস্কেলেশন জোনের মধ্যে একটি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত ইদলিব সিরিয়ার সশস্ত্র বিদ্রোহের শেষ শক্ত ঘাঁটি হিসাবে রয়ে গেছে। সময়ের সাথে সাথে, তুরস্ক এবং রাশিয়ার মধ্যে প্রায় এক ডজন চুক্তি কার্যকরভাবে সিরিয়ার সরকার কর্তৃক ইদলিব গভর্নরেট এ একটি পূর্ণ-স্কেল আক্রমণ এবং তুরস্কে শরণার্থীদের একটি অনিবার্য আগমনকে ঠেকিয়েছে।

২০১৯ সালের শেষের দিকে এবং ২০২০ সালের শুরুর দিকে তুরস্ক এবং রাশিয়ার মধ্যে উত্তেজনা কিছুটা খারাপের দিকে মোড় নেয়। এই ক্রমবর্ধমান প্রতিযোগিতামূলক সম্পর্কের একটি থিয়েটার ছিল লিবিয়া, যেখানে তুরস্ক এবং রাশিয়া জাতিসঙ্ঘ-স্বীকৃত, ত্রিপোলি-ভিত্তিক জাতীয় চুক্তির সরকার এবং জেনারেল খলিফা হাফতারের নেতৃত্বে বিদ্রোহী বাহিনীর মধ্যে, সংঘর্ষের বিপরীত দিকে বসেছিল। তুরস্কের সামরিক সহায়তার বিনিময়ে, ত্রিপোলিতে ন্যাশনাল অ্যাকর্ড সরকার তুরস্কের অনুক‚লে পূর্ব ভূমধ্যসাগরে একটি সামুদ্রিক সীমানাকে স্বীকৃতি দিতে সম্মত হয়।

লিবিয়ার ফ্রন্টে ‘উন্নয়ন’গুলো ইদলিবের ক্রমবর্ধমান বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সাথে হাত মিলিয়েছে। মে ২০১৯ থেকে শুরু করে এবং তারপরে ডিসেম্বরের পর থেকে আরো তীব্রভাবে, রাশিয়ার সমর্থিত সিরিয়ার সরকারি বাহিনী গভর্নরেট পুনরুদ্ধার করার জন্য ধারাবাহিক আক্রমণ পরিচালনা করে। ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২০-এ উত্তেজনা বৃদ্ধি পায়, যখন রাশিয়ানদের দ্বারা সমর্থিত সিরিয়ার বিমানবাহিনী, আবার একটি বিমান হামলা চালায় যাতে বালিউন গ্রামে কমপক্ষে ৩৩ জন তুর্কি সৈন্য নিহত হয়। এটি ইদলিবে সিরিয়ান সরকারের অগ্রগতি ঠেকাতে অপারেশন স্প্রিং শিল্ড চালু করে আক্রমণের প্রতিক্রিয়া জানায়। আবারো, এরদোগান এবং পুতিনের মধ্যে একটি চুক্তির মাধ্যমে সামরিক অভিযান শেষ হয়। তুরস্ক একটি যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হওয়ার মাধ্যমে সামরিক গতি হারিয়েছে কিন্তু সিরিয়ার সরকারের নিয়ন্ত্রণ থেকে ইদলিব গভর্নরেটের বেশির ভাগ অংশ রাখতে সক্ষম হয়।

সিরিয়ার গৃহযুদ্ধের প্রাথমিক পর্যায় থেকে তুরস্কে সিরীয় শরণার্থীদের প্রশ্নের সমাধান করা তুর্কি সরকারের একটি অগ্রাধিকার-এবং সিরিয়া ও ইইউ উভয়ের প্রতি আঙ্কারার নীতির একটি প্রধান চালক। এই লক্ষ্যটি এরদোগানের জন্য বৈধতার একটি উৎসও হয়েছে, যিনি বারবার সিরিয়ায় তুরস্কের সামরিক সম্পৃক্ততার ন্যায্যতা প্রমাণ করতে এবং পূর্ব ভূমধ্যসাগরে সমুদ্র সীমানা পুনর্বিবেচনার জন্য তহবিল পেতে এবং ইইউকে চাপ দেয়ার জন্য একটি হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছেন।

উত্তর সিরিয়ায় তুরস্কের হস্তক্ষেপের পিছনে গভীর কারণ যে, পিকেকে এবং এর আঞ্চলিক শাখাগুলোর বিরুদ্ধে লড়াই তা সাম্প্রতিক তুরস্কের ইতিহাসে নতুন কিছু নয়। সিরিয়ার অভিযানের মাত্রা এবং উচ্চাকাক্সক্ষা অবশ্য নতুন। যদিও সিরিয়ার গৃহযুদ্ধের বৈশিষ্ট্য তুরস্কের অনুভূত শত্রুদের জন্য বিশেষভাবে উর্বর ভূমি তৈরি করেছে, আঙ্কারা প্রতিক্রিয়া হিসেবে যে কৌশল নিয়েছে তা এর আগে খুব কমই দেখা গেছে। এর মধ্যে রয়েছে সিরিয়ার উদ্বাস্তুদের স্থানান্তরিত করার জন্য সীমান্তে বেশ কয়েকটি নিরাপত্তা বলয় তৈরিতে বিনিয়োগ করা।

অবশেষে, সিরিয়ায় তুরস্কের হস্তক্ষেপ আঙ্কারার ভাবমূর্তি এবং আন্তর্জাতিক ভূমিকাকে বাড়িয়ে দিয়েছে। এই অপারেশন রাশিয়া এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে আলোচনার টেবিলে তুরস্কের জন্য একটি আসন সুরক্ষিত করেছে। এর মাধ্যমে আঙ্কারা নিজেকে মধ্যম শক্তি হিসেবে চিত্রিত করেছে এবং এই অঞ্চলে কার্যকর চুক্তিতে পৌঁছানোর জন্য মস্কো এবং ওয়াশিংটন উভয়ের জন্য অপরিহার্য অংশীদারে পরিণত হয়েছে।

আরেকটি অভিযান আসন্ন?
প্রেসিডেন্ট এরদোগান সিরিয়ার কুর্দি এসডিএফ নিয়ন্ত্রিত তাল রিফাত ও মানবিজে আরেকটি অভিযান চালানোর ঘোষণা দিয়েছেন সম্প্রতি। তিনি এ মাসের গোড়ার দিকে বলেছেন, তুরস্কের দক্ষিণ সীমান্ত বরাবর ৩০ কিলোমিটার ‘নিরাপদ জোন’ তৈরির জন্য তাল রিফাত ও মানবিজ থেকে ওয়াইপিজি গেরিলাদের সরিয়ে দেয়া হবে। তুর্কি সংসদে একেপির এক সভায় এরদোগান পরিষ্কার বলেন যে, ইউফ্রেটিস নদীর দুই পাড়ে সিরীয় কুর্দি সশস্ত্র দল ওয়াইপিজির নিয়ন্ত্রণমুক্ত করতে পদক্ষেপ নেবে আঙ্কারা। এরপর নিরাপদ জোনে সিরীয় শরণার্থীদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে।

তাল রিফাত ও মানবিজ দখলে আনা হলে তাতে কয়েক লাখ সিরীয় শরণার্থীর পুনর্বাসনের সুযোগ তৈরি হবে। একই সাথে দক্ষিণ সীমান্ত থেকে তুরস্কের আক্রমণের শঙ্কা দূর হবে। ২০১৯ সালে প্রেসিডেন্ট পুতিনের সাথে এরদোগানের এক চুক্তিতে দক্ষিণ সীমান্ত বরাবর সিরিয়ায় ৩০ কিলোমিটার প্রশস্ত একটি নিরাপদ জোন তৈরির ব্যাপারে চুক্তি হয়। একই বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সাথেও পৃথক সমঝোতা হয়। তুরস্কের নতুন অভিযান নানা কারণে আসন্ন বলে মনে করা হচ্ছে। প্রথমত, তুরস্কে অবস্থানরত প্রায় ৪০ লাখ সিরীয় শরণার্থীর ব্যাপারে তুর্কি জনমত ক্রমবর্ধমান হারে বৈরী হয়ে উঠছে। বিগত স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ইস্তাম্বুল ও আঙ্কারার মতো দুটি বড় শহরে একেপির পরাজয়ের পেছনে এটিকে একটি কারণ বলে মনে করা হয়।

দ্বিতীয়ত, ২০২৩ সালের জুনে তুরস্কে যে প্রেসিডেন্ট ও সংসদ নির্বাচন হতে যাচ্ছে তাতে ক্ষয় হয়ে যাওয়া জনসমর্থন পুনরুদ্ধারে তুরস্কের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার এই অভিযান এরদোগানের জন্য ইতিবাচক হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এরদোগানের প্রতি সমর্থন সাম্প্রতিক জরিপ অনুসারে ৪০ শতাংশে ‘নেমে এসেছে’ বলে উল্লেখ করা হয়। তৃতীয়ত, সিরিয়ায় ‘আস্তানা শান্তিপ্রক্রিয়া’ অনুসারে রাজনৈতিক সমঝোতায় তুরস্কের জন্য সীমান্ত অঞ্চলে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা অনিবার্য হয়ে উঠছে বলে মনে করা হয়। চতুর্থত, সিরিয়ায় তুরস্কের এ ধরনের অভিযানে ইউরোপ আমেরিকা থেকে বিরোধিতা করা হয়। কিন্তু ইউক্রেন যুদ্ধ এবং সুইডেন-ফিনল্যান্ডের ন্যাটোতে যোগদানের ইস্যুকে কেন্দ্র করে তুরস্কের ব্যাপারে ইউরোপ আমেরিকাকে নমনীয় নীতি নিতে হবে। এ সুযোগে দেশটির দক্ষিণের সীমান্ত এলাকা ওয়াইপিজি মুক্ত করতে পারলে এটি তুরস্কের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ নিরাপত্তা অর্জন হতে পারে।

এরদোগানের নির্বাচনের যে চ্যালেঞ্জ সামনে রয়েছে তা জয় করতে হলে ঝুঁকি গ্রহণের কোনো বিকল্প নেই। এই ঝুঁকির প্রধান ক্ষেত্র হলো সিরিয়া। এক্ষেত্রে তিনি দু’পক্ষের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষার যে কৌশল নিয়েছেন তা সফল হলে ২০২৩ সালের নির্বাচনে তিনি আরেক দফা জয় নিশ্চিত করতে পারবেন বলে মনে হয়।

mrkmmb@gmail.com


আরো সংবাদ



premium cement