তোমার জান্নাত বা জাহান্নাম
- জয়নুল আবেদীন
- ১২ জুন ২০২২, ২১:১৮
শৈশব থেকেই ধূমপানের নেশা ছিল। দাদার গুড়গুড়ি হুক্কার ধোঁয়া চালু করতে গিয়ে ধূমপান চালু হয়ে পড়েছিল আমারও। মাঠে গিয়েও মাইট্টা হুঁকা বানিয়ে ধূমপান করতাম। হুঁকা থেকে পাতার বিড়ি। ময়ূর ও ফকিরচান বিড়ি সবসময় পকেটেই থাকত। আয়-রোজগার বেড়ে যাওয়ার সাথে সাথে ব্র্যান্ড বদলাতে শুরু করে। বিড়ি ছেড়ে ধরি সিগারেট- বক ও রমনা। বক সিগারেট ছিল যেমন কড়া তেমনি ঝাঁজালো। নিম্নমধ্যবিত্তের সিগারেট ছিল স্টার। চাকরির সময় পর্যন্ত স্টার চলত। আইন পেশায় প্রবেশ করে শুরু হয় গোল্ডলিফ। গোল্ডলিফ ছেড়ে কখন যে ৫৫৫ ধরেছি, মনে নেই। তখন ঘরের সঙ্গীর চেয়েও বেশি পেয়ার করতাম সিগারেটকে। যানবাহনে উঠতে-নামতে, কাজের ফাঁকে মাথা সোজা করতে, ঘুমানোর আগে ও ঘুম ভাঙতে এমনকি বাথরুমেও আঙুলের ফাঁকে থাকত জ্বলন্ত সিগারেট।
পকেটে সিগারেট না থাকলে সব শূন্য শূন্য ঠেকত। যে বছর পেট্রোনাস টুইন টাওয়ার বিশ্বের সর্বোচ্চ স্থাপনার মর্যাদা পেয়েছিল সে বছর মালয়েশিয়া গিয়েছিলাম। টুইন টাওয়ারের পেছনে লেকের ধারে আরাম করে বসতে গিয়ে দেখি, পকেটে সিগারেট নেই। টুইন টাওয়ারের শপিং কমপ্লেক্স তন্ন তন্ন করেও পাওয়া গেল না সিগারেট। সিগারেট না পেয়ে মাথা এলোমেলো হয়ে যাচ্ছিল। আমরা তখন হোটেল হিলটনে। টুইন টাওয়ার থেকে অনেক ঘুরে আসতে হয় হোটেলে। সরাসরি আসতে গেলে ঝোপঝাড়। ঝোপঝাড়ের নির্জনতা পেরিয়ে তাড়াতাড়ি এসে হোটেলে প্রবেশ না করে সিগারেটের খোঁজে বের হয়ে পড়ি। ফুটপাথে লোকজন না থাকায় বাম দিকে অনেকদূর এগিয়ে রাস্তার তে-মাথায় পৌঁছে একটা সড়ক ধরে উদ্ভ্রান্তের মতো হাঁটতে থাকি। কোথাও কোনো লোকজন, দোকানপাট দেখতে না পেয়ে ভয় ভয় করছিল। রাস্তা ভুল করার ভয়। রাস্তা পার হয়ে আরো কিছুদূর এগিয়ে এক জায়গায় কয়েকটি দোকান ও লোকজন দেখে ভয়ের ভাবটা কাটে। একটি চায়ের দোকানে দেখি, সাজানো সিগারেট। সিগারেট দেখে অক‚ল সমুদ্রে হালভাঙা পাল ছেঁড়া দিশেহারা নাবিকের হঠাৎ দারুচিনি দ্বীপের সন্ধানপ্রাপ্তির সুখের কথা মনে পড়ে গেল। এক প্যাকেট সিগারেট নিয়ে একটার মাথায় আগুন ধরিয়ে লম্বা লম্বা কদমে হোটেলমুখো হাঁটা দিয়ে মনের সুখে টানতে টানতে অল্পক্ষণেই খাটো করে ফেলি। সর্বশেষ সুখটান দিয়ে দুই গাল ভরে ধোঁয়া নিই। তুলার অংশটুকু ফুটপাথে ছুড়ে বুটের তলায় পিষে ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে, ‘লাস্ট কিস অব সিগারেট অ্যান্ড ফার্স্ট কিস অব ডার্লিং নো ডিফারেন্ট।’
২০০৪ সালে যখন হার্ট অ্যাটাক হয় তখনো ঠোঁটে ছিল সিগারেট। আক্রান্ত অবস্থায় হাসপাতালে নেয়ার পর যখন চেতনা ফিরে পাই তখন সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের কার্ডিওলজি প্রধান সাফি মজুমদার হার্ট অ্যাটাকের জন্য দায়ী করেছিলেন সিগারেটকে। তার শেষ কথা ছিল, ‘হয় প্রাণের মায়া ছাড়ুন; নয়তো সিগারেটের মায়া- এ দুইয়ের একটার মায়া ছাড়তেই হবে।’ রিং পরানোর পর সিগারেটের মায়া ছাড়ি। সিগারেট ছেড়ে ধরেছিলাম পান। পানের সাথে জর্দা। পান-জর্দা চালুসহ জনৈক কার্ডিওলজি ডাক্তারের কাছে বছরে দু’বার চেকআপ করাতাম। পরে এক বছর পরপর চেকআপ করি। এক সময় বন্ধ করে দিই চেকআপ। খাওয়াসহ চলাফেরার জন্য যেসব আদেশ নির্দেশ দিয়েছিলেন, উপেক্ষিত হতে থাকে আদেশ নির্দেশও।
আমার স্ত্রী সালমার সমস্যা নিয়ে ২০১৭ সালের আগস্টে চেন্নাই ছিলাম। সেখানে এনজিওগ্রাম ছাড়া প্রায় ফুল বডি চেকআপ করিয়েছি। গলব্লাডারের পাথর ছাড়া জটিল কিছু ধরা পড়েনি। সাহসটা বেড়ে যায় সেখান থেকেই। চেন্নাই থেকে ফুরফুরে মেজাজে বাড়ি আসার পর বেপরোয়া হয়ে পড়েছিলাম খানাপিনা ও চাল-চলনে। শুরু হয় সমস্যা। যে কয়টা সমস্যা পীড়া দিচ্ছিল তা হলো- ১. অল্প শ্রমে বেশি কাতর হয়ে পড়া। ২. সিঁড়ি দিয়ে তড়িঘড়ি উঠলে কিংবা ভরপেটে হাঁটতে গেলে বুকের ভেতর জ্বালা করা। ডিসেম্বর মাস আদালত বন্ধ। প্রতি ডিসেম্বরেই সফরে বের হই। গিন্নি সালমা পীর বাড়ির মেয়ে। ইচ্ছা আজমির সফর। সপরিবারে কলকাতা হয়ে আজমির। আমার সাম্প্রতিক সমস্যার কারণে সফরসূচির শীর্ষে ছিল হার্টের পরীক্ষা। মুকুন্দপুর হোটেল সম্র্রাটের সামনেই ‘রবীন্দ্রনাথ... কার্ডিয়াক’ হাসপাতাল। হোটেলে মালামাল রেখে হাসপাতালের গেটে গিয়ে খোঁজ খবর নিয়ে জানতে পারি, হাসপাতালের বেশির ভাগ রোগী বাংলাদেশী।
হাসপাতালের সব ধরনের রোগের চিকিৎসার ব্যবস্থা থাকলেও হার্টের রোগীই বেশি। অনেক রোগী ভোর ৫টার দিকে লাইন ধরতে দেখা যায়। পরদিন চা খাওয়া শেষ করে ভোর সাড়ে ৬টার দিকে হাসপাতালের সামনে যাই। হাসপাতালের দরজা খোলে সাড়ে ৮টায়। রিসিভারের রুম খোলে ৯টায়। ২৫০ টাকা নিবন্ধন ফি। চিকিৎসকের ভিজিট ৬০০ টাকা। রেজিস্ট্রেশনের সময় রোগের বিবরণসহ কোনো চিকিৎসক চয়েজ আছে কি না জানতে চাওয়া হয়। আমাদের পছন্দের চিকিৎসক ছিলেন কে কে আগারওয়াল। রেজিস্ট্রেশন করে চিকিৎসকের নাম চিহ্নিত করার পর পাসপোর্টের ছায়ালিপি জমাসহ ফাইল খোলেন। রোগীর প্রেশার ও ওজন পরিমাপ করে ফাইলসহ প্রার্থিত চিকিৎসকের কাছে পাঠান। চিকিৎসকের রিসিপসনিস্টের কাছে ফাইল জমা দিয়ে অপেক্ষা করতে শুরু করি। স্টিলের চেয়ার। পর্যাপ্ত স্থান। পাশে চা ও কফিশপ। কাঁধে স্প্রে মেশিন ও হাতে ব্যাট (মশা মারার) নিয়ে এক লোক আসেন। রিসিপসনিস্টের চেয়ারের তলায় ব্যাট ঢুকিয়ে খই ফোটার মতো মশা মেরে ওষুধ স্প্রে করে যান। সাড়ে ১০টার দিকে ডাক্তার আসেন। দু’জনের পরই আমার ডাক পড়ে। পঞ্চাশোর্ধ্ব একহারা গড়ন Dr. Kishen Kumar Agarwal (K.K Agarwal), তার প্রশ্ন,
-আপনার সমস্যা?
(সমস্যা বলার পর, প্রেশার পরীক্ষাসহ চোখ-জিহ্বা দেখেন)
-কোনো নেশা আছে?
-পানের নেশা আছে।
-পানের সাথে জর্দা চলে?
-জি চলে।
-এখন থেকে একদম চলবে না। জর্দার সাথে ওষুধ চলবে না।
(আগের ইতিহাস জানতে চান। আগের ইতিহাস শোনার পর)
-মায়া ছাড়তেই হবে, হয় জানের- নয় পানের।
আরো কিছু কথা শোনার পর রক্ত, এক্স-রে, ইসিজি ও ইকো এই চারটি পরীক্ষার ফলসহ দেখা করতে বলেন। কলকাতার পান বাংলাদেশ পানের মতো নয়। আমাদের হোটেলের সামনেই কয়েকটি পানের দোকান। আসার পথে বাসা থেকে বের হয়ে সোজা ক্যান্টনমেন্ট চলে আসি। কিছুক্ষণ পরই শুরু হয় ইমিগ্রেশন পার হওয়ার আনুষ্ঠানিকতা। ট্রেনে উঠার আগে পান কেনার সুযোগ পাইনি। বিমানের মতোই কলকাতা পর্যন্ত ট্রেনের যাত্রীদেরও সিলগালা করা হয়। মাঝখানে কেনাকাটার সুযোগ নেই। হোটেলের সামনে যখন পৌঁছি তখন রাত ৯টা। তৌহিদ যখন হোটেল দেখাসহ দাম চুকাচ্ছিল, আমি তখন পানের দোকান খুঁজছিলাম। কাছেই পেয়ে গেলাম। প্রতি খিলি ২০, ১৫ ও ১০ টাকা। তারপরও লাইন। আমার আগেই লাইনে ছিল তিন-চারজন মেয়ে। উঠতি বয়সী মেয়েরা লাইন ধরে ২০ টাকা খিলি পান কিনছিল। ২০ টাকা খিলি পান; বিস্মিত হয়ে দেখছিলাম। দেখলাম, মাঝারি আকারের গোটা দুয়েক পান নিয়ে মসলা রাখতে শুরু করে। চুন-সুপারি ছাড়াও সামনের কৌটা থেকে নানা রঙ ও প্রকারের মসলা যোগ করতে শুরু করে। গোটা চল্লিশেক কৌটার প্রায় সবক’টি থেকে মসলা যোগ করতে করতে দুই পানের ওপর মসলার স্তূপ বানিয়ে ফেলে। দুই পান দিয়ে মসলা ঢাকতে গিয়ে পানের খিলি ভাতের লোকমার মতো মোটা হয়ে যায়। লাইনে দাঁড়িয়ে হিসাব-নিকাশ করার পর শুধু চুন, সুপারি ও জর্দা যোগে ১০ টাকা দামের দুই খিলি পান দিতে বলি। খুবই রসাল হয়েছিল পান দু’টি। চিকিৎসকের সাথে কথা বলার সময় তেমনই রসাল দুই খিলি পানের এক খিলি আমার পকেটে ছিল। এক খিলি মুখে পুরে হাসপাতাল ঢুকেছিলাম- ইচ্ছে ছিল, বের হয়েই অন্য খিলি মুখে পুরব। চিকিৎসকের কক্ষ থেকে বের হয়ে পানের খিলি হাতে নিয়ে দ্বিধাদ্ব›দ্ব শুরু হয়ে যায়। মনে পড়ে সাফি মজুমদারের কথা, ‘হয় প্রাণের মায়া, নয় সিগারেট’; একইভাবে কার্ডিয়াক স্পেশালিস্ট আগারওয়ালের কথা, ‘মায়া ছাড়তেই হবে, হয় জানের- নয় পানের’।
পকেট থেকে বের করে পানটি হাতে নিই। ১৫ মিনিট যুদ্ধ চলে মনের ভেতর। কাছের বিনে ছুড়ে ফেলি পানের খিলিটি। হাতের পান বিনে ফেলে প্যাথলজি পরীক্ষার জন্য এক পা দু’পা করে এগোতে থাকি। কাউন্টারে আট হাজার ৫০০ টাকা জমা দিয়ে প্যাথলজির সংশ্লিষ্ট বিভাগে নম্বরসহ কুপন নিয়ে অপেক্ষা করতে থাকি। রিপোর্টসহ বেলা ৪টার দিকে সাক্ষাৎ করি চিকিৎসকের সাথে। চিকিৎসক রিপোর্ট দেখে আরো কিছু প্রশ্ন করেন। চিকিৎসক চ‚ড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেয়ার আগে এনজিওগ্রামের পরামর্শ দেন। আমি এনজিওগ্রাম করতে নারাজ। গোঁ ধরেছে সালমা। এনজিওগ্রাম করাবেই। নারাজের কারণ, আমার বর্তমান বয়স ষাটের ঊর্ধ্বে। জোড়াতালি দিয়ে বেঁচে থাকার শখ নেই। তা ছাড়া এই রাজরোগটা আমি পুষে রাখতে চাই। কারণ একজন লোক সংসারে যত কদরেরই হোক না কেন, সব দিক থেকে অকর্মণ্য হয়ে যখন মাসের পর মাস বিছানা নেয়; তখন আর কদর থাকে না। কদরহীন হয়ে সংসারের বোঝা হতে শুরু করে। সংসারের বোঝা হওয়ার চেয়ে সোজা হয়ে বিদায় নেয়ার উত্তম সুযোগকে হাতছাড়া করতে চাই না। তাই প্রতিবাদ করে সালমাকে জানাই, ‘এনজিওগ্রাম করার পর বøক অবশ্যই পাবে। আমার বিশ্বাস, দেহের শিরা-উপশিরা হলো নদী-নালার মতো। ভাঙে ও গড়ে। ভাঙা-গড়ার মাধ্যমে নদীর পানি সাগরে যাবেই। হঠাৎ কোনো নদী বন্ধ হয়ে গেলে যে কারণে প্লাবনের কারণ হয়, সে কারণে হঠাৎ কোনো শিরা বন্ধ হয়ে গেলে প্লাবন (হার্ট অ্যাটাক) হয় দেহেও। শিরার রক্তপ্রবাহ যখনই পরীক্ষা করা হবে তখনই কিছু না কিছু ত্রুটি-বিচ্যুতি পাওয়া যাবে। পরীক্ষা না করে সাবধানে চলা ভালো। এখন থেকে আর বেপরোয়া নয়। তোমরা যা খেতে দেবে, বিনাবাক্যে মুখ বুজে খেয়ে নেব। ঘরে সাপ থাকার মতো আর কী; ঘরে সাপ আছে জানার চেয়ে না জেনে সাবধান হওয়া উত্তম।’
দ্বিতীয় কারণ, যতবারই এনজিওগ্রাম করেছি ততবারই এনজিওপ্লাস (রিং সংযোজন) করা আবশ্যক হয়েছে। ২০০৪ সালে প্রথম হার্ট অ্যাটাক হয়েছিল। দেশের সর্বাধিক ব্যয়বহুল শিকদার হাসপাতালে নিয়ে এনজিওপ্লাস্ট করা হয়। বছর কয়েক পর চেকআপের সময় ফের সন্দেহ। সন্দেহ দূর করতে আবশ্যক এনজিওগ্রাম। সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে এনজিওগ্রাম করাকালে ধরা পড়ে, আগের রিং ডিসপ্লেসসহ নতুন স্থানে ব্লক শুরু। আমাকে অপারেশন থিয়েটারে শায়িত রেখেই খবর দেয়া হয় সালমাকে। টাকার অঙ্ক শুনে সালমার মাথা এলোমেলো হয়ে যায়। ওর সাথে আছে মাত্র ৩০ হাজার টাকা। আর দুই লাখ টাকা পাবে কোথায়? সম্ভাব্য কয়েক জনের কাছে ফোন করে। এমনকি যারা উচ্চহারে সুদের ব্যবসা করে তাদের সাথেও যোগাযোগ করে। কোথাও ইতিবাচক সাড়া না পেয়ে ডাক্তার সাহেবের কাছে, ‘আপনি এক কাজ করেন, টাকার জন্য আমাকে ২৪ ঘণ্টা সময় দেন। আমি ২৪ ঘণ্টায় আপনার টাকা শোধ করব।’
তৃতীয় কারণ, আমি সামান্য সুঁইয়ের ঘাইও সহ্য করতে পরি না। এনজিওগ্রামের জন্য শরীরের বিশেষ কোনো স্থানে বিশেষ করে ডান পা ও কোমরের সংযোগস্থল ফুটো করে পাইপ ঢুকানো হয়। যে জায়গা দিয়ে পাইপ প্রবেশ করানো হয়; সে স্থানকে ব্যথামুক্ত (pain free) করে নিতে হয়। ব্যথামুক্ত করার জন্য দিতে হয় একাধিক অ্যানেস্থেসিয়া ইনজেকশন। এই অ্যানেস্থেসিয়া ইনজেকশনটাই আমার কাছে অসহনীয়। রানের গোড়ার কাছে সুঁই নিয়ে গেলেই পা টানতে শুরু করি। সুঁইকালে যতই বলা হয়, ‘রিলাক্স রিলাক্স’ ততই আমি কঠিন হয়ে পড়ি। ব্যথা সহ্য করায় দাঁতে দাঁত চেপে শরীর পাথর বানিয়ে ফেলি। বারবার ‘রিলাক্স রিলাক্স’ নির্দেশের পরও শরীর রিলাক্স করাতে ব্যর্থ হওয়ায় সোহরাওয়ার্দীর এক ডাক্তার এনজিওগ্রাম করতেই অস্বীকার করেছিলেন।
-যুক্তিসহ তিনটি কারণ বলার পরও সালমার কাছে আমার কোনো কথাই ধোপে টিকছে না। সালমার এক কথা-
-কোনো কথা শুনতে চাই না। জান বাঁচানো ফরজ।
-কোথায় পেয়েছ, জান বাঁচানো ফরজ? কুরআনে ‘জান বাঁচানো ফরজ’ কথাটি সরাসরি আসেনি। এটি ইসলামী ফিকাহবিদদের একটি ফতোয়া। সূরা বাকারার ১৯৫ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, ‘তোমরা নিজেরা নিজেদের সর্বনাশ করো না’। এ আয়াত থেকে ইসলামী ফিকাহ বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, আত্মরক্ষা বা জান বাঁচানো ফরজ। দেশ ভ্রমণও ফরজ। জান বাঁচানো ফরজ তর্কিত, দেশ ভ্রমণ ফরজ সরাসরি।
-আপনি আপনার হাদিস-দলিল নিয়ে দেশ ভ্রমণ করতে থাকেন, আমি আমার ছেলেকে নিয়ে কালই বাড়ি চলে যাচ্ছি।
-মেয়েদের এই এক স্বভাব। যুক্তিতে হারতে শুরু করলেই রণে ভঙ্গ দিয়ে ভিন্ন প্রসঙ্গে চলে যায়। তা ছাড়া এনজিওগ্রাম আর এনজিওপ্লাস্টের খরচ কত পড়বে, ভাবতে পারো? আজমির ভ্রমণের সব টাকা দিয়েও হবে না।
-টাকা যত লাগে আমি দেবো। একজন স্ত্রীর কাছে সবার ঊর্ধ্বে স্বামীর জানের নিরাপত্তা।
-জিগাই, তোমার তো আলাদা চাকরি-ব্যবসায় নেই।
-আছে, সংসার খরচের যে টাকা দেন; তা থেকে বাঁচাই। ঈদপর্বে আমাকে যা দেন তাও রেখে দিই বিপদ-আপদে খরচ করার জন্য। মনে আছে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের কথা? টাকার জন্য ডাক্তার যখন আমাকে ডাকেন তখন ওটির দরজার ফাঁক দিয়ে একবার তাকিয়েছিলাম, দেখি ফ্লোর ভেসে গেছে রক্তে। রক্ত দেখে পাগল হয়ে গিয়েছিলাম। আপনাকে অপারেশন থিয়েটারে শুইয়ে রেখে তিন লাখ টাকার জন্য কী করেছিলাম? মাসে ১০ শতাংশ লাভ দিয়েও টাকা পাইনি। সে দৃশ্য মনে পড়লে এখনো ভয়ে শিউরে উঠি।
সে দিনের পর থেকে আপদকালীন টাকা সবসময় আমার কাছে থাকে। আপনাকে আমি ভালো করেই চিনি, আপনার কাছে আপনার জানের নিরাপত্তার চেয়ে আনন্দভ্রমণটা বড়। তাই সাথে করে দুই লাখ টাকা নিয়ে এসেছি। (‘সালমার সংসার’ গ্রন্থের ২৭৬ থেকে ২৮১ পৃষ্ঠা সংক্ষিপ্ত)। সালমার বহু দিনের সখ আজমির দর্শন। সখের টাকা আমার চিকিৎসায় ব্যয় করতে দেখে মনে পড়ে নবী করিম সা:-এর একটি উক্তি। একবার এক মহিলা রাসূল সা:-এর কাছে আসেন নিজের প্রয়োজনে। যাওয়ার সময় রাসূল সা: জিজ্ঞেস করলেন, ‘তোমার কি স্বামী আছে?’ মহিলা উত্তর দিলেন জি, আছে। রাসূল সা: বললেন, ‘তার সাথে তোমার সম্পর্ক কেমন?’ মহিলা বললেন, আমি সাধ্যমতো তার সাথে উত্তম ব্যবহার করার চেষ্টা করি। তখন রাসূল সা: বললেন, ‘হ্যাঁ, তার সাথে তোমার ব্যবহারের বিষয়ে সতর্ক থেকো, কারণ সে-ই তোমার জান্নাত বা জাহান্নাম।’ (মুয়াত্তা মালেক-৯৫২; মুসনাদে আহমাদ-৪/৩৪১)
লেখক : আইনজীবী ও কথাসাহিত্যিক
E-mail : adv.zainulabedin@gmail.com
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা