২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

সাংবাদিক আইকন শিরিন হত্যা

ফিলিস্তিনি সাংবাদিক শিরিন আবু আকলেহ - ছবি : সংগৃহীত

ফিলিস্তিনি সাংবাদিক শিরিন আবু আকলেহ ১১ মে, বুধবার সকাল ৭টায় জেনিনে ইসরাইলি সৈন্যদের গুলিতে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। মেরে ফেলার উদ্দেশ্যেই তাকে মুখে গুলি করা হয়েছিল, হাতে বা পায়ে নয়। ঘাড়ের পেছন দিক দিয়ে গুলি লেগে মুখ দিয়ে বেরিয়ে যায়। এ হত্যাকাণ্ডে খুব সম্ভব একজন এক্সপার্ট স্নাইপারকে নিয়োগ করা হয়। সত্য বলার অপরাধে তাকে খুন করা হয়েছে। যখন গুলি করা হয় তখন তিনি হেলমেট ও ভেস্ট পরিহিত ছিলেন। বুকে বড় করে লেখা ছিল ‘প্রেস’। তার পরিচয় জানতে কারো কষ্ট হওয়ার কথা নয়। শিরিনের লাশ রাস্তার ধারে পড়ে ছিল, হাসপাতালে নেয়ার প্রয়োজন হয়নি।

অনেকে প্রশ্ন করেছেন, ইসরাইলিরা কাকে গুলি করেছে, শিরিনকে নাকি আলজাজিরাকে? ফিলিস্তিনের কণ্ঠস্বরের দীর্ঘ দিনের অস্পষ্টতা ও নৈঃশব্দ্য ভেঙে ফেলার প্রত্যয় নিয়ে যে মহিলা দায়িত্ববোধের সাথে চালিত হয়েছিলেন, এ দিন তার সমাপ্তি ঘটে। ফিলিস্তিনিদের প্রতি ভালোবাসাই তার অকালমৃত্যুর কারণ। আলজাজিরার ইংরেজি সংবাদদাতা হিসেবে শিরিন শক্তি ও প্রেরণায় ভরপুর এক তারকা সাংবাদিক।

দশকের পর দশক ধরে ইসরাইল ফিলিস্তিনিদের যেভাবে নির্যাতন করছে, অভিযান চালাচ্ছে, জেলে ভরছে ও হত্যা করছে; তাই তুলে ধরতেন শিরিন। তিনি ১৯৯৭ সাল থেকে এই সত্য বলার দায়িত্ব কাঁধে নিয়েছিলেন। ফিলিস্তিনিরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাঁচে। তাদের মরতে হয় শুধু ওরা ফিলিস্তিনি বলে। তারা গাজায় থাকে নাকি জেরুসালেমে, তাতে কিছু যায়-আসে না। ওরা মুসলমান না খ্রিষ্টান, সেটিও অনেক সময় দেখা হয় না। তারা যে পেশায় থাকুক না কেন, তাদের জীবনের কোনো গ্যারান্টি নেই। ওরা বৃদ্ধ না তরুণ, নারী না পুরুষ কিছুই মৃত্যু আটকায় না। শিরিনের মৃত্যুও তেমনই, কিন্তু শিরিন তো এক আইকন।

শিরিনের হত্যার পর থেকে নিবন্ধ লেখা পর্যন্ত আরো ১১ জন ফিলিস্তিনিকে গুলি করে মারা হয়েছে। শিরিনের মৃত্যু আর ১০ জন ফিলিস্তিনির মতো গণমাধ্যমের চোখ এড়ায়নি। কারণ তিনি ছিলেন বিখ্যাত। ইউরোপ ও আমেরিকায় তার মৃত্যুর খবর প্রচারিত হয়েছে। তবে এ জন্য সব থেকে বেশি যেটি ভূমিকা রেখেছে তা হলো শিরিন আবু আকলেহ একজন আমেরিকান নাগরিক। মূলত এ কারণেই তার মৃত্যুকে গুরুত্বের সাথে দেখেছে পশ্চিমা বিশ্ব।

শিরিন তার কাজে সুন্দর ও মর্যাদাপূর্ণ ছিল। তিনি ছিলেন নম্র ও বিনয়ী কিন্তু চিন্তাশীল। তিনি সাক্ষাৎপ্রার্থীদের সময় দিতেন। দুঃখী ফিলিস্তিনিদের সান্ত¡না দিতেন, ছুটির দিনগুলোতে অসহায়দের খোঁজ নিতেন। তার রিপোর্টিং ছিল সুন্দর ও প্রাণবন্ত।

শিরিন ফিলিস্তিন ও আরব-ভাষী বিশ্বের একটি পরিবারের নাম। গত ২৫ বছরে ফিলিস্তিনের ইতিহাসের অনেক সংজ্ঞায়িত মুহূর্ত সম্পর্কে তার অবিচলিত, শান্ত কণ্ঠে পরিবেশিত রিপোর্ট দর্শকদের বিশ্বাসের উৎস ছিল। এত দীর্ঘ দিনে তিনি ফিলিস্তিনের আইকনিক সাংবাদিকে পরিণত হন, বিশ্বাস ও ভালোবাসার বিন্দুতে পরিণত হন।

রামাল্লার আলজাজিরা অফিসটি মিডিয়া পেশাদারদের উপচে পড়া কেন্দ্রে পরিণত হয়েছিল। ফিলিস্তিনি সাংবাদিকদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা ক্রমাগত পেশিশক্তির হুমকি দ্বারা বেষ্টিত। এখানে চতুর্থ জেনেভা কনভেনশনের আইনকে লাঠি, নিষ্ঠুরতা বা আগুনের ফুলকি দিয়ে উড়িয়ে দেয়া হচ্ছে অহরহ।

ইসরাইল আলজাজিরা অফিসসহ গাজায় ৩৩টি মিডিয়া অফিস লক্ষ্য করে পরিকল্পিত হামলা চালিয়েছে। এখন পর্যন্ত সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ইসরাইলি সেনাদের ১০০টিরও বেশি ‘এসল্ট’ রেকর্ড করা আছে।

জরিপে দেখা যায়, ১৯৯২ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১৯৯ জন ফিলিস্তিনি সাংবাদিককে হত্যা করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র কখনো তা নিয়ে ইসরাইলের বিরুদ্ধে কথা তোলেনি। ২০১৮ সালের পর থেকে ১৪৪ ফিলিস্তিনি সাংবাদিক ইসরাইলি নির্যাতনের শিকার হয়েছে কিন্তু তার নিন্দায় কখনো পশ্চিমাদের পাওয়া যায়নি। উপরন্তু আরো অনেক সাংস্কৃতিক কর্মী সাত দশক ধরে হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন।

কুখ্যাত ঘটনাগুলোর মধ্যে একটি ছিল ১৯৭২ সালে বৈরুতে ‘মোসাদ’-এর ঔপন্যাসিক ঘাসান কানাফানির গাড়িতে বোমা হামলা। সেখানে তার ১৭ বছর বয়সী ভাগ্নি লামিসের জীবনের পরিসমাপ্তি হয়। লেবাননের ডেইলি স্টার কানাফানির মৃত্যু সংবাদে বলেছে, ‘ঘাসান কানাফানি ছিলেন সেই কমান্ডো, যিনি কখনো বন্দুকের গুলি নিক্ষেপ করেননি। তার অস্ত্র ছিল একটি বলপয়েন্ট কলম এবং তার কর্মক্ষেত্র সংবাদপত্রের পৃষ্ঠা। তিনি কমান্ডোদের বুলেটের চেয়ে বেশি শক্তিশালী ছিলেন, একটি কলম দিয়ে শত্রুকে আঘাত করতেন, সম্মানের চূড়া থেকে পতিত করতেন ঘৃণার অন্ধকার কূপে।

এসব সাংস্কৃতিক প্রতিরোধ একটি শক্তিশালী রূপ যা দারবিশ, কানাফানি ও শিরিন আবু আকলেহ খুব ভালোভাবে বুঝেছেন। তাই তাদের মৃত্যুর গুহায় প্রবেশ করতে হয়েছে অসময়ে। ফিলিস্তিনিরা তাদের দুঃখ গাথা বলার জন্য বিভিন্ন ধরনের লেখা, চলচ্চিত্র নির্মাণ, সঙ্গীত, রান্নাবান্না, শিল্পকলা ও সংবাদমাধ্যম ব্যবহার করেন। এসব নিষ্ঠুরভাবে ধ্বংস করা ইহুদিদের নৈমিত্তিক কাজের অঙ্গ; যাতে অন্যরা অনুকরণ-অনুসরণ না করে। এসব কারণে চলচ্চিত্র নির্মাতা মিরা নাজার, জাকির হোসেনের মতো সঙ্গীতশিল্পী, কামিলা শামসির মতো লেখকরা ইসরাইলের অনুষ্ঠান বাতিল করেন।

শিরিনকে হত্যার আগে ২৬ এপ্রিল, ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব জার্নালিস্টস আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে মামলা দায়ের করেছিল এই মর্মে যে ‘ফিলিস্তিনে কর্মরত সাংবাদিকদের ইসরাইল যে পদ্ধতিগতভাবে লক্ষ্যবস্তু করছে এবং মিডিয়া কর্মীদের হত্যা করছে, সেটি সঠিকভাবে তদন্ত করতে ব্যর্থ হওয়া যুদ্ধাপরাধের সমান।’

ফিলিস্তিনজুড়ে শিরিনের নির্মম হত্যাকাণ্ডে শোকের বহিঃপ্রকাশ ছিল ঐতিহাসিক। শিরিন একজন প্রিয় আইকন ছিলেন বলে নয়, বরং তার হত্যাকাণ্ডটি ছিল সম্পূর্ণ দায়মুক্তির একটি নিষ্ঠুর অনুস্মারক। পাঁচ দিন ধরে হাজার হাজার লোক জেনিন, নাবলুস, রামাল্লাহ ও জেরুসালেমের রাস্তায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে ও যথাযথ শ্রদ্ধা জানাতে জড়ো হয়েছে। আগামী প্রজন্ম মনে রাখবে, কিভাবে ইসরাইলি সৈন্যরা শিরিনের কফিন যারা বহন করছিল তাদের সাথেও কেমন নির্মম আচরণ করেছিল। কিভাবে তারা ফিলিস্তিনি পতাকার বিরুদ্ধে ঘৃণা ও শত্রুতায় উন্মত্ত হয়ে শিরিনের কফিনের কাপড় ছিঁড়ে ফেলেছিল। অথচ গণমাধ্যমের ওপর নিপীড়নের বিষয়ে আন্তর্জাতিক নীরবতা প্রকারান্তে ফিলিস্তিনি আখ্যানের ওপর আক্রমণ এটি ধরে নিতে হবে, বুঝতে হবে।

ইসরাইল ঘটনা অস্বীকার করে পরে তা থেকে পালানোর পথ খুঁজছিল। ওদিকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় তাদের স্বাভাবিক বিবৃতির বাইরে যায়নি। আস্তে আস্তে এটি দায়মুক্তির পর্যায়ে পড়বে। জোর করে বসতি স্থাপন করার জন্যও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ইসরাইলের সম্প্রসারণবিরোধী বক্তব্য দিয়েছে, জাতিসঙ্ঘ প্রস্তাব পাস করেছে, ইসরাইল কথা না শুনলে কি করার আছে তার কিছুই সিদ্ধান্তগুলোতে নেই। এগুলোর স্ট্যাটাস নিন্দা প্রস্তাবের মতো। ফলে ইসরাইল তার ইচ্ছামতো বসতি স্থাপন করতে থাকে এবং এখনো করে চলেছে। শিরিনের মৃত্যুও কিছু দিন পর নিঃস্তব্ধতায় চাপা পড়বে, ন্যায়বিচার অধরাই থাকবে।

ফিলিস্তিনি কবি মাহমুদ দারবিশ তার কবিতায় ফিলিস্তিন সম্পর্কে বলেছিলেন : এটি এক শহীদের আত্মা, যারা দোয়া করে তারাও শহীদ হয়, যিনি লিখেন তিনিও শহীদ হন। যারা শহীদদের কবরে নিয়ে যান তারাও শহীদ হন। দারবিশের এসব কথা ফিলিস্তিনের আসল পরিচয় বহন করে।

গাজায় আল-জালা মিডিয়া ভবনটি বছরখানেক আগে ধ্বংস করা হয়। এখানে আলজাজিরা ও অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের দফতর ছিল। ইসরাইল কেবল ভবনটি ধ্বংস করেনি, সাংবাদিকদের কাজ, ফটোগ্রাফ, ভিডিও, নিউজ আর্কাইভ, সংরক্ষিত নথি এসবও ধ্বংস করে দেয়। এ জন্য ইসরাইলকে কোনো ঝামেলায় পড়তে হয়নি এবং পশ্চিমা বিশ্ব সোচ্চার হয়নি। ইসরাইলকে তার আন্তর্জাতিক আইন ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য দায়ী করতে রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব রয়েছে সব মহলের।

ফিলিস্তিনিদের যেমন তাদের দখলদারদের বিরুদ্ধে লড়াই করার মতো কোনো সমতুল্য সেনাবাহিনী নেই, তেমনি ফিলিস্তিনিদের বিশ্বব্যাপী দূতাবাসের মাধ্যমে তাদের প্রামাণ্য চলচ্চিত্র বিতরণের মতো সম্পদও নেই। ইন্ডিয়ান ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার, আইসিসির মতো প্রতিষ্ঠানগুলো ইসরাইলি দূতাবাসের সাথে তার চলচ্চিত্রগুলো প্রদর্শনের সহযোগিতা করছে এবং ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের সাথে সমন্বয় করা হোক বা না হোক আমরা কোনো ফিলিস্তিনি চলচ্চিত্র উৎসব দেখতে পাই না।

মৃৎশিল্প, সূচিকর্ম বা স্থাপত্য, ফিলিস্তিনি সংস্কৃতির প্রতিটি ইঞ্চি ইসরাইলিরা চুরি করেছে একই সাথে তাদের উপস্থিতির দীর্ঘায়ুর রোড ম্যাপ বানিয়েছে। বাড়িঘর ও গ্রন্থাগার থেকে ফিলিস্তিনি বই চুরি করা ছিল ফিলিস্তিনের সংস্কৃতিকে আক্রমণ করার প্রথম দিকের উপায়গুলোর মধ্যে একটি। এখনো কোথাও ফিলিস্তিনিরা কোনো ম্যানুয়েল বা ইলেকট্রনিক আর্কাইভ, সংগ্রহশালা তৈরি করতে পারে না, হয়তো এসব নিয়ে যাওয়া হয় নতুবা ধ্বংস করে দেয়া হয়। ইসরাইলি শাসনের অধীনে, ফিলিস্তিনিরা কেমন বই ও শিল্প ব্যবহার করতে পারে বা তৈরি করতে পারে তা সেন্সর করা থেকে শুরু করে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানগুলো বন্ধ করে দেয়া ইসরাইলিদের রুটিন কাজ।

২০০৯ সালে ফিলিস্তিনে সাহিত্য উৎসব হয়। ইসরাইলি নিরাপত্তা বাহিনী জেরুসালেমের ফিলিস্তিনি জাতীয় থিয়েটার আল ‘হাকাবতি’তে আক্রমণ করে তছনছ করে অনুষ্ঠান বন্ধ করে দেয়, যাতে কবিতা পাঠের আসর না হয়। ওই অনুষ্ঠানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নামী লেখকরা এসেছিলেন। অথচ জাতীয় থিয়েটারে কোনো অনুষ্ঠান হতে পারেনি। কবিতা দীর্ঘ দিন ধরে ইসরাইলের জন্য বিশেষভাবে হুমকিস্বরূপ হয়ে উঠেছিল, এ কারণেই তারা মাহমুদ দারবিশকে গৃহবন্দী করে রেখেছিল এবং যখন তিনি জীবিত ছিলেন তখন তার কবিতা নিষিদ্ধ করা হয়েছিল।

২০০২ সালে চলচ্চিত্র নির্মাতা মোহাম্মদ বকরির জেনিন, ইসরাইলি চলচ্চিত্র সেন্সরশিপ বোর্ড নিষিদ্ধ করে। চলচ্চিত্রটির উপজীব্য ছিল জেনিন শরণার্থী শিবিরে ইসরাইলি আক্রমণের বিবরণ ও মানবিক ভয়বহতা। তা ছাড়া ফিলিস্তিনি সম্প্রদায়ের ওপর সামরিক অভিযানের বাস্তববাদী দৃষ্টিভঙ্গি চিত্রিত করা হয় এ ছবিতে। জেনিন শরণার্থী শিবিরটি সেই জায়গা যেখানে ইসরাইলি সেনাবাহিনী শিরিন আবু আকলেহকে হত্যা করে।

ইসরাইলি দূতাবাসের সাথে আইআইসির সহযোগিতা ইসরাইলকে তার চলমান অপরাধগুলো গোপন করতে সহায়তা করে। জিরো মোটিভেশনের মতো হাস্যরসের চলচ্চিত্র প্রদর্শনের মাধ্যমে, দখলদার ইসরাইলি সেনাবাহিনীকে মানবিক করে তোলে, অনেকটা ইহুদিবাদী প্রকল্পের মতো। নাটকের দিক থেকে বেথলেহেমের মতো চলচ্চিত্র রয়েছে, যা ইসরাইলি সামরিক বাহিনীর একটি ভিন্ন দিক দেখায়: তাদের বন্ধুদের ও পরিবারের তথ্যদাতা হতে বাধ্য করে শিশুদের ওপর নির্যাতন, যার ফলে তাদের কারাবাস ও হত্যার দিকে পরিচালিত করা হয়। ইসরাইলি পাসওভার ছবিটি দেখতে পারেন, সেখানে উৎসবের দিনে ফিলিস্তিনি কমান্ডোদের নির্মমতা দেখানো হয়েছে। আপনি খুব সহজে ইউটিউবে ইসরাইলি ডকুমেন্টারি পাবেন কিন্তু ফিলিস্তিনিদের প্রামাণ্য চিত্র পাবেন না। এভাবে ফিলিস্তিনজুড়ে অসম সাংস্কৃতিক যুদ্ধ চলমান। তা ছাড়া পুরনো স্থানের নাম বদল, ফিলিস্তিনিদের স্মৃতিফলক মুছে ফেলা নিত্যদিনের ঘটনা।

এবার মার্কিন রাজনীতিবিদ ও কূটনীতিকরা শিরিন হত্যার বিষয়টিকে তেমন এড়াতে পারছেন না, তারা এ নিয়ে দুঃখপ্রকাশ করেছেন এবং তদন্তের জন্য ইসরাইলকে চাপ দিয়েছেন। ইসরাইল তদন্ত করবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছে। নিউ ইয়র্ক টাইমস রিপোর্ট করেছে যার শিরোনাম ছিল, ‘শিরিন আবু আকলেহ, ট্রেইলব্ল্যাজিং ফিলিস্তিনি সাংবাদিক, ৫১ বছর বয়সে মারা যায়’। পাঠকরা এ শিরোনামের তীব্র প্রতিবাদ করেছিল। শিরোনামে মার্কিন ও পশ্চিমা মূলধারার প্রচারমাধ্যমের চরিত্র প্রতিফলিত হয়েছে, শিরিন আবু আকলেহ মারা যাননি, তাকে হত্যা করা হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্র শিরিনের বিষয়টিকে গুরুত্বের সাথে দেখছে মনে হয় না। কারণ তার আমেরিকান পাসপোর্ট থাকতে পারে কিন্তু তিনি তো আর সত্যিকারের আমেরিকান নন। তিনি তো ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের সাংবাদিক ড্যানিয়েল পার্লের মতো সত্যিকারের সাংবাদিক নন। ড্যানিয়েল পার্লের হত্যাকাণ্ড অনেক গুরুত্বপূর্ণ হলেও শিরিন হত্যাকাণ্ড নিয়ে তাদের দায়সারা প্রতিক্রিয়াই অনেক। মার্কিন স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি টুইটারে লিখেছেন, ‘সাংবাদিক শিরিন আবু আকলেহ হত্যাকাণ্ড বড় এক ট্র্যাজেডি।’ তিনি ট্র্যাজেডি না লিখে অপরাধ লিখলেই বেশি ন্যায্য হতো।

লেখক : অবসরপ্রাপ্ত যুগ্মসচিব ও গ্রন্থকার


আরো সংবাদ



premium cement